বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংকট
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on October 4, 2024
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, বাংলাদেশ
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
স্বাধীনতার গুরুত্ব এবং স্বাধীনতার সুরক্ষা
ব্যক্তির ন্যায় যে কোন জাতির জীবনেও সবচেয়ে বড় ভাবনাটি হলো স্বাধীন ভাবে বাঁচার ভাবনা। কারণ, নিছক বাঁচা এবং স্বাধীন ভাবে বাঁচার মাঝে পার্থক্যটি বিশাল। এ পৃথিবীতে গরু-ছাগলও বাঁচে ও বেড়ে উঠে। কিন্তু সে বাঁচা ও বেড়ে উঠার মাঝে কোন স্বাধীনতা থাকে না। গরু-ছাগল বাঁচে ও বেড়ে উঠে নিছক জবাই হওয়ার জন্য। কিন্তু ব্যক্তি ও জাতির জীবনে অতি ব্যয়বহুল হলো স্বাধীনতা নিয়ে বাঁচা। বহু দেশের জনবল ও অর্থবলের বিপুল ভাগ ব্যয় হয় স্রেফ স্বাধীনতা বাঁচার খরচ জোগাতে। স্বাধীনতা নিয়ে বাঁচাতে অনেক সময় অর্থনৈতিক সংকটে পড়তে হয়; জান ও মালের উপর হামলাও আসে। এ কাজে নবীজী (সা:)’র অর্ধেকের বেশী সাহাবাদের শহীদ হতে হয়েছে। নবীজী (সা:) নিজেও আহত হয়েছেন। কিন্তু ভিক্ষুকের ন্যায় বাঁচাতে তেমন কোন ঝুঁকি নেই। কারণ, ভিক্ষুকের জীবনে রাজনৈতিক এজেন্ডা থাকে না, ফলে কোন শত্রুও থাকে না। বাংলাদেশে বহু লক্ষ ভিক্ষুক তো বেঁচে আছে কোনরূপ ঝুঁকি বা সংঘাতে না জড়িয়েই। জীবনে রাজনীতি আসে, রাজনীতির সাথে বিরামহীন লড়াই আসে এবং সে লড়াইয়ে জান ও মালের বিশাল কুরবানী আসে তো স্বাধীনতা নিয়ে নিয়ে বাঁচার তাড়না থাকায়।
কিন্তু কেন সে স্বাধীনতা? এবং কিরূপে স্বাধীনত? স্বাধীনতা বাঁচানোর লড়াইটি আসে বিশেষ একটি এজেন্ডা তথা রাজনৈতিক স্বপ্ন পূরনের তাড়না থেকে। কিন্তু সবার স্বপ্ন ও বাঁচার এজেন্ডা এক নয়। একজন কাফির বা বেঈমান যে স্বপ্ন দেখে বা যে এজেন্ডা নিয়ে বাঁচে, একজন ঈমানদারে স্বপ্ন ও এজেন্ডা তা থকে সম্পূর্ণ ভিন্নতর। ফলে ভিন্নতর হলো উভয়ের রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি ও রাষ্ট্র নির্মাণের এজেন্ডাও। মু’মিনের জীবনে মূল এজেন্ডাটি হলো পরিশুদ্ধ মানুষ, পরিশুদ্ধ সমাজ ও পরিশুদ্ধ রাষ্ট্র নির্মাণের। কারণ, পরিশুদ্ধ হওয়ার মধ্যেই মানব জীবনের মূল সফলতা। তাই বলা হয়েছে:
قَدْ أَفْلَحَ مَن تَزَكَّىٰ
অর্থ: “নিশ্চয়ই সাফল্য পাবে সে ব্যক্তি, যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করলো” –(সুরা আলা, আয়াত ১৪)।
কিন্তু কি সে পরিশুদ্ধি? এবং কিরূপে সে পরিশুদ্ধি? পরিশুদ্ধি এখানে যেমন আক্বীদা-বিশ্বাস ও দর্শনের পরিশুদ্ধি, তেমনি কর্ম, চরিত্র, সংস্কৃতি, রাজনীতি, সমাজনীতি ও অর্থনীতিসহ সর্ববিষয়ের পরিশুদ্ধি। এবং সে পরিশুদ্ধির পথ দেখাতেই এসেছেন লক্ষাধিক নবী-রাসূল। নাযিল হয়েছে আসমানী কিতাব। এবং সে লক্ষ্য পূরণে মহান আল্লাহতায়ালার নাযিলকৃত সর্বশেষ গ্রন্থ হলো পবিত্র কুর’আন। তাই যারা এ জীবনকে সফল করতে চায়, তাদের বাঁচার মূল এজেন্ডা হতে হয় পবিত্র কুর’আনকে সঠিক ভাবে বুঝা এবং কুর’আনে বর্ণিত পরিশুদ্ধির প্রক্রিয়ার অনুসরণ নিয়ে বাঁচা। এবং যারা কুর’আনকে আঁকড়ে ধরে তারাই পায় মহান আল্লাহতায়ালাকে। তাই বলা হয়েছে:
وَمَن يَعْتَصِم بِٱللَّهِ فَقَدْ هُدِىَ إِلَىٰ صِرَٰطٍۢ مُّسْتَقِيمٍۢ ١٠١
অর্থ: “এবং যে ব্যক্তি দৃড় ভাবে আঁকড়ে ধরলো আল্লাহকে তথা তাঁর কুর’আনকে, তাকে অবশ্যই দেখানো হবে সিরাতাল মুস্তাকীম।” -সুরা আল-ইমরান, আয়াত ১০১)।
তাই নবীজী (সা:)’র কাজ ছিল তাঁর সাহাবাদের বন্ধনকে কুর’আনের সাথে মজবুত করা। এটিই তাঁর গুরুত্বপূর্ণ সূন্নত। অথচ আজকের মুসলিমদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা এখানেই। তাদের সকল ব্যর্থতা জন্ম এ ব্যর্থতা থেকে। যারা কুর’আন বুঝতে সমর্থ নয়, তারা কুর’আনে সাথে তথা মহান আল্লাহতায়ালার সাথে সম্পর্ক মজবুত করবে কিরূপে? মহান আল্লাহতায়ালার সাথে সম্পর্ক মজবুত করার স্বার্থেই মিশর, ইরাক, সুদান, মরক্কো, আলজিরিয়া, লিবিয়া, তিউনিসিয়ার মত দেশের মানুষ মাতৃভাষা ছেড়ে কুর’আনের ভাষাকে নিজেদের ভাষা রূপে গ্রহণ করেছিল। এ পৃথিবী পৃষ্ঠে পরিশুদ্ধিকরণ ও দূষিতকরণের সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার হলো রাষ্ট্র। কারণ রাষ্ট্রের হাতে থাকে শিক্ষাব্যবস্থা। ইসলামী রাষ্ট্র পরিশুদ্ধির সে কাজটি করে শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে। রাষ্ট্র হাতে না থাকলে হাজার হাজার মসজিদ-মাদ্রাসা গড়ে তেমন লাভ হয়না। তখন পরিশুদ্ধি করণের কাজটি হয়না। বাংলাদেশ তারই উদাহরণ। মহান নবীজী (সা:)কে তাই রাষ্ট্রের উপর নিজের দখল প্রতিষ্ঠা দিতে হয়েছিল। ১০টি বছর তিনি রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন। এটিই নবীজী (সা:)’র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সূন্নত। এ সূন্নত পালিত না হলে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের পরিশুদ্ধের অন্যান্য সূন্নতগুলিও পালিত হয়না। তখন পূর্ণ দ্বীন পালনের কাজটিও হয়না। তাই মু’মিনের জীবনে স্বাধীনতার অর্থ ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণের স্বাধীনতা। এ স্বাধীনতা না থাকে সত্যিকার ঈমানদার রূপে বেড়ে উঠার কাজটি হয়না। অনৈসলামী রাষ্ট্র মাত্রই কেড়ে নেয় নিজেকে ও রাষ্ট্রকে পরিশুদ্ধ করার স্বাধীনতাকে এবং সে রাষ্ট্র গড়ে তোলা হয় দূষিত করণের প্রক্রিয়া। কোন রাষ্ট্রে পরিশুদ্ধকরণ সে প্রক্রিয়া না থাকাটিই বড় পরাধীনতা। । সে পরাধীনতা থেকে বাঁচার লড়াই তাই পবিত্র জিহাদ।
তাই ঈমানদারের কাছে স্বাধীনতার অর্থ স্রেফ মত প্রকাশের বা রাজনীতি করার স্বাধীনতা নয়, দল গড়ার স্বাধীনতাও নয়। বরং সেটি হলো পূর্ণ ইসলাম পালনের স্বাধীনতা। এবং পূর্ণ ইসলাম পালনের জন্য অপরিহার্য হলো মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার সাথে পূর্ণ একাত্ব হওয়া। সে জন্য জরুরি হলো সে এজেন্ডাকে সঠিক ভাবে জানা। পবিত্র কুর’আনে মহান আল্লাহতায়ালা তাঁর নিজের যে এজেন্ডার কথা একাধিক বার বর্ণনা করেছেন। সেটি হলো “লি’ইউয’হিরাহু আলাদ্দীনে কুল্লিহি” অর্থাৎ সকল ধর্ম ও সকল জীবন-দর্শনের উপর ইসলামের পূর্ণ বিজয়। মুসলিম হওয়ার অর্থ হলো, মহান আল্লাহতায়ালার সে এজেন্ডা পূরণে আপোষহীন সৈনিক হওয়া -যেমন হয়েছিলেন নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবাগণ। এমন একটি এজেন্ডা নিয়ে বাঁচার তাড়নাই মু’মিনকে মহান আল্লাহতায়ালার আমৃত্যু সৈনিকে পরিণত করে। সে তখন “ইন্না লিল্লাহ ও ইন্না ইলাইহি” (অর্থ: বাচা একমাত্র আল্লাহর জন্য,এবং ফিরতেও হবে আল্লাহতেই) -এ দর্শনের শো-কেস’য়ে পরিণত হয়। অর্থাৎ তাঁর বাঁচা, তার মৃত্যু ও তাঁর প্রতিটি কর্ম তখন একমাত্র মহান আল্লাহতায়ালার জন্য হয়। তখন তার রাজনীতিতে ব্যক্তি স্বার্থ, জাতীয় স্বার্থ, গোত্রীয় স্বার্থ, শ্রেণী স্বার্থ ও দলীয় স্বার্থের ভাবনা আসে না। তখন তার রাজনীতি, বুদ্ধিবৃত্তি ও লড়াই পরিণত হয় পরিশুদ্ধি করণের পবিত্রতম হাতিয়ারে। তখন তার প্রতিটি কথা, প্রতিটি ভাবনা, প্রতিটি কর্ম ও প্রতিটি কুর’বানী ইবাদতে পরিণত হয়। তার পূরা জীবন এভাবেই ইবাদতময় হয়ে উঠে।
তাই মুসলিমের জীবনের স্বাধীনতাটি বাঙালি, বিহারী, ইরানী বা আরব রূপে বাঁচার স্বাধীনতা নয়। কোন পতাকা বা মানচিত্র নিয়ে বাঁচার স্বাধীনতাও নয়। ভাষা ও জন্মভূমির পরিচয় নিয়ে বাঁচাটি স্বাধীনতা হলে নবীজী (সা:)কে কেন মক্কার জন্মগত নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও মক্কা ছাড়তে হলো? মদিনার আনসারদের নিয়ে কেন তিনি জন্মভূমি মক্কার অধিবাসীদের বিরুদ্ধে বার বার রক্তাক্ত যুদ্ধ লড়লেন এবং হত্যা করলেন বহু মক্কাবাসীকে? একমাত্র বদরের যুদ্ধেই হত্যা করেছিলেন তাদের সত্তর জনকে। মুসলিমের স্বাধীনতা হলো মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশিত ভিশন ও মিশন নিয়ে বাঁচার স্বাধীনতা। সেটি রাষ্ট্রের বুকে মহান আল্লাহতায়ালার সার্বভৌমত্ব, শুরা ভিত্তিক শাসন, শিক্ষাঙ্গণে কুর’আনী জ্ঞানচর্চা, আদালতে শরিয়তী বিধান এবং দুর্বৃত্তির নির্মূল ও সুবিচারের প্রতিষ্ঠার জিহাদ নিয়ে বাঁচার স্বাধীনতা।
একটি দেশে ইসলাম পালনের স্বাধীনতা কতটা সুরক্ষিত হলো তার উপর বিচার হয় সে দেশের প্রকৃত স্বাধীনতা। পৃথক পতাকা,পৃথক মানচিত্র এবং স্বাধীনতার গালভরা বুলি -এ বিচারে গুরুত্বহীন। পৃথিবীতের এমন পতাকা, এমন মানচিত্র এবং স্বাধীনতার এমন গালভরা বুলি বহু পরাধীন দাস-রাষ্ট্রেরও আছে। এদিক দিয়ে বলা যায়, বাংলাদেশে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার শাসনামলে লুন্ঠিত হয়েছিল মুসলিমদের সে স্বাধীনতা। ঈমানদারগণ এদেশে পরিণত হয়েছিল পরাধীন প্রজায়। দেশটিতে লাগামহীন স্বাধীনতা পেয়েছিল ইসলামের শত্রুপক্ষ। সে স্বাধীনতাটি ছিল বাংলাদেশের মাটিতে ইসলামের রাজনৈতিক দর্শন ও ইসলামপন্থীদের পরাজিত রাখার। নবীজী (সা:)’র যুগে ইসলামের শত্রুপক্ষ অনুরূপ ইসলামবিনাশী স্বাধীনতা পেয়েছিল মক্কাতে। আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের শাসনামলে ইসলামের শত্রুপক্ষের তেমন স্বাধীনতা উদযাপিত হয়েছে বাংলাদেশেও,সেটি দাড়ি-টুপিধারীদের লগিবৈঠা দিয়ে পিটিয়ে হত্যার মধ্য দিয়ে -যেমনটি হয়েছিল ২০০৬ সালে ২৮ অক্টোবর ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তরের সড়কে। ২০১৩ সালের ৫ মে’র রাতে ঢাকার সাপলা চত্বরে পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে গণহত্যা চালানো হিফাজতে ইসলামের মুসল্লীদের বিরুদ্ধে। সে স্বাধীনতার প্রয়োগ হয়েছে পবিত্র কুর’আনের তাফসির বন্ধ করে, জিহাদ বিষয়ক বই বাজেয়াপ্ত করে এবং ইসলামপন্থীদের উপর জুলুম নির্যাতন করে।
মক্কায় জন্ম নিয়েও নবীজী (সা:), হযরত আবু বকর (রা:), হযরত উমর (রা:)র ন্যায় সাহাবীগণ নিজেদের জন্মভূমিতে ছিলেন পরাধীন। মক্কার বুকে ধর্ম প্রচার ও ধর্ম পালনের পূর্ণ স্বাধীনতা ছিল কাফেরদের, কিন্তু সে স্বাধীনতা মুসলিমদের ছিল না। এমন কি তারা মুসলিমদের প্রাণে বাঁচার স্বাধীনতা দিতেও রাজী ছিল না। মক্কার কাফেরদের কাছে স্বাধীনতার অর্থ ছিল মৃর্তিপূজার স্বাধীনতা; সে সাথে মূর্তিপূজার বিরোধীদের নির্মূলের স্বাধীনতা। তাদের সে স্বাধীনতার উৎসব পালিত হতো হযরত খাব্বাব (রা:)’র ন্যায় সাহাবীদের জ্বলন্ত অঙ্গারের উপর শুইয়ে। স্বাধীনতা পালিত হতো হযরত ইয়াসির ও হযরত সুমাইয়ার মত নিরপরাধ ঈমানদারদের নৃশংস ভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে। এরূপ জুলুম-নির্যাতন থেকে বাঁচার তাগিদে নবীজী (সা:)র ন্যায় অতি শান্তিবাদী ব্যক্তিও যুদ্ধ এড়াতে পারেননি। সে যুদ্ধ ছিল শত্রুপক্ষের আরোপিত যুদ্ধ,এবং যুদ্ধের মধ্য দিয়ে কাফেরগণ মুসলিমদের অস্তিত্ব বিলীন করতে চেয়েছিল। অথচ ঈমানদারের কাছে স্বাধীনতার অর্থ স্রেফ বেঁচে থাকা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বাধীনতা নয় বরং আল্লাহতায়ালার জমিনে আল্লাহতায়ালার দ্বীন-পালন ও দ্বীন প্রতিষ্ঠার স্বাধীনতা। সে স্বাধীনতা বাঁচাতে নবীজী (সা:) ও তাঁর সাহাবায়ে কেরামকে আমৃত্যু লড়তে হয়েছে। শতকরা ৬০ ভাগের বেশী সাহাবাকে শহীদ হতে হয়েছে। স্বাধীনতা বাঁচানোর এ লড়াইটিই হলো পবিত্র জিহাদ। বাংলাদেশী মুসলিমদের কাছে স্বাধীনতার ভিন্নতর কোন অর্থ নেই। তাই ইসলামের শত্রুপক্ষের সাথে ঈমানদারের ভিন্নতা শুধু ধর্মীয় বিশ্বাস ও ধর্মপালন নিয়ে নয়,বরং স্বাধীনতার অর্থ এবং এজেন্ডা নিয়েও।
শত্রুর এজেন্ডা: মুসলিমদের মেরুদন্ড ভাঙ্গা
আল্লাহতায়ালা ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনার সাথে মুসলিম জীবনে শুধু নামাজ-রোজা আসে না, ইসলামকে বিজয়ী করার স্বপ্নও আসে। ফলে স্বপ্ন পূরণের রাজনীতিও আসে। পৃথিবীতে মেরুদ্ন্ডহীন বহু জাতি ও বহু উপজাতি বহু হাজার বছর যাবত বেঁচে আছে কোন রূপ যুদ্ধ-বিগ্রহে না জড়িয়েই। দেশী বা বিদেশী শত্রুর সাথে বিবাদ বা সংঘাতের শুরুটি মূলত স্বাধীন ভাবে বাঁচার ইস্যুতে। স্বাধীন ও স্বনির্ভর ভাবে বাঁচাটি যেমন পঙ্গু ও বিকলাঙ্গ মানুষের দ্বারা ঘটে না,তেমনি স্বাধীনতা আসে না মেরুদন্ডহীন দুর্বল জাতির জীবনে। ইসলামের শত্রুপক্ষ এজন্যই বাংলাদেশকে মেরুদন্ডহীন ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করতে চায়। ভারত সেটিই চায়। তাই মুজিব-আমলে মেরুদন্ড ভাঙ্গার সে কাজটিই প্রয়োরিটি পেয়েছিল ভারতীয় রাজনীতিতে। সে লক্ষ্য পূরণে ভারতীয় লুন্ঠন সেদিন ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছিল। বিলুপ্ত করা হয়েছিল বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সীমান্ত। ফলে শায়েস্তা খানের বাংলাকে রাতারাতি “ভিক্ষার তলাহীন ঝুলি”তে পরিণত করা হয়েছিল। ১৯৭৪ সালে পরিকল্পিত ভাবে সেদিন সৃষ্টি করা হয়েছিল এক ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ -যাতে প্রাণ যায় বহু লক্ষ বাংলাদেশীর। সে দুর্ভিক্ষে প্রাণ বাঁচাতে মানুষ সন্তানকে বিক্রয় করেছে। ভাতের অভাবে বুমি খেয়েছে। এবং কাপড়ের বদলে জাল পড়েছে। সে দুর্ভিক্ষ কালে শেখ মুজিব তার পুত্রদের বিয়ে দিয়েছেন সোনার মুকুট পড়িয়ে।
যে অরণ্যে হিংস্র পশুর বাস তার আশোপাশে বসবাসে জীবন হারানোর ঝুঁকিটি প্রতি মুহুর্তের। সেখানে বাঁচতে হলে সর্বক্ষণের প্রস্তুতি চাই। তেমনি প্রতিমুহুর্তে স্বাধীনতা হারানোর ঝুঁকি নিয়ে বাঁচতে হয় যখন প্রতিবেশী দেশটি শত্রু রাষ্ট্র হয়। কারণ সভ্য মানুষের কাছে দারিদ্র্য সহনীয়, কিন্তু অসহ্য হলো শত্রুর দাসত্ব। সে কারণেই স্বাধীনতা বাঁচাতে পাকিস্তান তার জাতীয় বাজেটের সিংহভাগ ব্যয় করে বিশাল সেনাবাহিনী পালতে। বিপুল অর্থব্যয়ে দেশটিকে পারমাণবিক বোমা ও দুরপাল্লার মিজাইল বানাতে হয়েছে। লাভটি হলো, সে দেশের নাগরিকদের ভারতীয় সেনাদের গুলিতে লাশ হয়ে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলতে হয় না -যেমনটি হয় বাংলাদেশের সীমান্তে। নিজ দেশের সেনানিবাসে লাশ হয় না সে দেশের সেনাবাহিনীর অফিসারগণ –যেমনটি ২০০৯ সালে ঢাকার পিলখানায় হয়েছে ৫৭ জন অফিসার। দেশটির প্রধানমন্ত্রীকে কোন মন্দিরে গিয়ে মূর্তিকে মা-দুর্গ বলে পৌত্তলিক হতে হয় না। ইসলামী দলের কোন নেতার পায়ে ডাণ্ডাবেড়ি পড়িয়ে তাকে হাজাতে উঠাতে হয় না। বাংলাদেশে সরকারের পক্ষ থেকে এগুলি করা হয় প্রতিবেশী হিন্দুত্ববাদী শত্রুকে খুশি করতে।
শক্তিশালী সেনাবাহিনীর থাকার আরো ফায়দা হলো, নিজ দেশের ভিতর দিয়ে প্রতিবেশী দেশকে করিডোরও দিতে হয় না। নিছক প্রাণে বাঁচাটি ব্যয়বহুল নয়। নর্দমার কীট বা গর্তের ইদুরটি যেমন দীর্ঘদিন প্রাণ নিয়ে বেঁচে থাকে, তেমনি পরজীবী কাপালিক এবং নদীতে ভাসা বেদেনীরাও বেঁচে থাকে। এরূপ বাঁচায় যেমন অর্থব্যয় ও সংঘাত যেমন নেই, তেমনি আত্মসম্মানও নেই। এমন আত্মসম্মানহীন ব্যক্তিদের কাছে শক্তিশালী সেনাবাহিনী গড়ে তোলা বরং অপচয় মনে হয়। দেশের স্বাধীনতা যে এ ভাবে বাঁচে না -সে বিষয়টি বুঝার সামর্থ্য এদের নাই। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সবচেয়ে বড় শত্রু হলো এমন চেতনাধারী কাপালিকগণ। এরাই বাংলাদেশকে প্রতিরক্ষাহীন করছে। এরা আর্থিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিপালনটি পায় ভারতের হাতে। অথচ ইসলামে সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত নামাজ-রোজা নয়; মসজিদ-মাদ্রাসা গড়াও নয়। বরং সেটি হলো শত্রুর প্রতিরোধে অর্থ, শ্রম ও রক্তের বিনিয়োগ। ইসলামে সেটি জিহাদ -যা খুলে দেয় শাহাদতের মাধ্যমে জান্নাতের দরজা।
শত্রুর বিনিয়োগ মনুষ্য বাজারে
আগ্রাসী শত্রুর দেশ-দখল প্রকল্পটি শুধু সামরিক ভাবে হয় না। হয় রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ভাবেও। বরং সামরিক দখলদারী হয় সেরূপ বহুমাত্রিক দখলদারীকে সুনিশ্চিত করতে। সামরিক ভাবে দেশ দখল অনেক সময় তাদের কাছে প্রচণ্ড ব্যয়বহুল মনে হয়। এরই ফলে বাংলাদেশে ভারতীয় বিনিয়োগ বেড়েছে শিল্পে বা অর্থনীতিতে নয়, বরং মনুষ্য বাজারে। এরই ফল দাঁড়িয়েছে, বাংলাদেশের হাটেবাজারে শুধু গরু-ছাগলই বিক্রি হয় না, বিপুল হারে মানুষও বিক্রি হয়। দেশের রাজনীতিতে, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে, এনজিও পাড়ায়, বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকায় এবং টিভিতে ভারতপন্থী ও ইসলামবিরোধীদের প্রবল আধিপত্য কি সেটাই প্রমাণ করেনা? বিক্রিত এ বিপুল সংখ্যক মনুষ্যজীবই ফারাক্কা বাঁধ ও টিপাইমুখ বাঁধের মধ্যে বাংলাদেশের কল্যাণ দেখে। এমন কি কল্যাণ দেখে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ভারতের জন্য করিডোর, সড়ক পথ ও রেল পথ দানে। কল্যাণ দেখে ভারতের হাতে বন্দরের সুবিধা তুলে দেয়াতে। সে সাথে মহা-অকল্যাণ দেখে ইসলামের উত্থানে। ফলে এ মুহুর্তে বাংলাদেশের সীমান্তে কোন ভারতীয় সামরিক হামলার প্রয়োজন আছে কি? ভারতের হাতে বিজয় তুলে দিতে এসব বিক্রিত বাংলাদেশীরাই প্রচণ্ড বিক্রমে যুদ্ধ লড়ে যাচ্ছে।
লন্ডনের ইকোনমিষ্ট পত্রিকা রিপোর্ট ছেপেছিল, ২০০৮সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনা ও তাঁর দলকে বিজয়ী করতে ভারত সরকার বস্তা বস্তা টাকা বিতরণ করেছে। ভারত যে শুধু ২০০৮ সালে অর্থ বিতরণ করেছে তা নয়, ১৯৫৪, ১৯৭০’য়ের নির্বাচনেও করেছে। যদি না করে থাকে তবে বুঝতে হবে ভারত সরকার ও তার গোয়েন্দারা ঘাষ খায়। ভারত বিশ্বের সবচেয়ে বড় অস্ত্র-ক্রেতা। ভারতের লক্ষ্য, সিঙ্গাপুর থেকে সোমালিয়া ব্যাপী সমগ্র ভারত মহাসাগর জুড়ে সামরিক আধিপত্য গড়ে তোলা। ভারতের পেটের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান। পেটে বেদনা রেখে সেটি সম্ভব নয়। ফলে বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির ময়দান দখল নিতে ভারত অর্থব্যয় করবে না -সেটি বুঝা কি এতোই কঠিন? কাশ্মীরে ভারত ৬ লাখের বেশী সৈন্য মোতায়েন করে রেখেছে দীর্ঘকাল যাবত। যে কোন সরকারের কাছে এটি খুবই ব্যয়বহুল। এরূপ আরো কিছুকাল চলতে থাকেলে ভারতের অর্থনীতি দুর্বল হতে বাধ্য। সে তুলনায় বাংলাদেশে ১০ লাখ এজেন্ট প্রতিপালন করা তাদের কাছে নস্যিতুল্য। পশ্চিম বাংলা ও আসামে পুলিশ প্রতিপালনেও এর চেয়ে বেশী ব্যয় হয়। কাশ্মীরের জনসংখ্যা মাত্র ৯০ লাখ,অথচ বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি। পশ্চিম বাংলা, আসাম, বিহার ও উড়িষ্যার সম্মিলিত বাজারের চেয়েও বৃহৎ হলো বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বাজার। কারণ বাংলাদেশের মানুষের মাথা পিছু আয় পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলির মাথা পিছু আয়ের প্রায় দ্বিগুণ। ফলে ক্রয় ক্ষমতা এ এলাকার ভারতীয়দের চেয়ে অনেক বেশী। বাংলাদেশ ভারতের প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলারের বাজার (২০২৩ সালে হিসাব মতে)। ভারত চায় তার সে অর্থনৈতিক অধিকৃতি ধরে রাখতে। মনে রাখতে হবে সে অর্থনৈতিক অধিকৃতি প্রতিষ্ঠার স্বার্থেই ইংরেজরা বহু হাজার মাইল দূর থেকে বাংলার বুকে ছুটে এসেছিল ও পলাশীতে যুদ্ধ লড়েছিল। প্রতিবেশী হয়ে ভারত কি সুবিধা ছেড়ে দিবে? সে লক্ষ্য পূরণে যে কোন সামরিক হামলার চেয়ে দালাল প্রতিপালন অনেক কম ব্যয়বহুল। ভারত সেটি বুঝে। তাই বাংলাদেশে ভারত মনযোগী হয়েছে দালাল প্রতিপালনে। তাদের সে স্ট্রাটেজী বিপুল ফলও দিচ্ছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতপন্থী শিবির তাই এখন আর শুধু আওয়ামী লীগ নয়,বহু বামপন্থী, মার্কিনপন্থী এবং ইসলামপন্থীও এখন এ শিবিরে যোগ দিয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীন অস্তিত্বের বিরুদ্ধে মূল হামলাটি আসছে তাদের পক্ষ থেকেই।
অধিকৃত দেশ
কাশ্মীর অধিকৃত সামরিক ভাবে। কারণ, এছাড়া ভারতের হাতে দ্বিতীয় রাস্তা নেই। সেখান থেকে ৬ লাখ ভারতীয় সৈন্য অপসারণের সাথে সাথে বাংলাদেশের চেয়েও বৃহৎ এ এলাকাটি পাকিস্তানে যোগ দিবে -সেটি ভারত জানে। ভারতীয় অস্ত্র কাঁধে নিয়ে ভারতের পক্ষে যুদ্ধ করার লোক সেখানে নেই। মন্দিরে গিয়ে দুর্গাকে মা বলার মত শেখ হাসিনার ন্যায় মুসলিম নেতা-নেত্রীও সেখানে নাই। ফলে সে যুদ্ধটি ভারতীয় হিন্দুদের নিজেদেরই লড়তে হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে ভারতীয় অস্ত্র কাঁধে নিয়ে তাদের পক্ষে যুদ্ধ করার লোকের সংখ্যা একাত্তরেও যেমন হাজার হাজার ছিল, এখনো তাদের সংখ্যা কম নয়। এদেশটি মীরজাফর উৎপাদনে যে অতি উর্বর সেটি শুধু ১৭৫৭ ও ১৯৭১’য়েই প্রমাণিত হয়নি। এখনো হচ্ছে।
ভারতের পক্ষে এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্রই একমাত্র ষড়যন্ত্র নয়। ভারতের হাতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক অঙ্গণ অধিকৃত বহু আগে থেকেই। এরূপ অবস্থায় সামরিক দখলদারী ভারতের জন্য শুধু বিপুল ব্যয়ভারই বাড়াবে, বাড়তি কোন সুবিধা দিবে না। এমন রাজনৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিক দখলদারীর লক্ষ্যে ভারত কাজ করছে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রথম দিন থেকেই। এ প্রসঙ্গে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থার গোপন তথ্য ইদানিং প্রকাশ পাচ্ছে। সাবেক গুপ্তচরদের পক্ষ থেকে এখন সেগুলো প্রকাশ করার লক্ষ্য হলো, নিজ দেশের নিরাপত্তা নিয়ে পাকিস্তান সরকার কতটা অনাড়ি ছিল এবং ভারতীয় গুপ্তচরগণ কতটা চৌকশ ছিল -সেটি প্রমাণ করা। প্রকাশ পাচ্ছে, ভারত কিভাবে হাজার হাজার এজেন্ট পূর্ব পাকিস্তানে পাঠিয়েছিল -সে তথ্যটি। সেটি শুধু ষাটের দশকে বা একাত্তরে নয়, বরং পঞ্চাশের দশক থেকেই। শেখ মুজিব নিজে ভারতীয় গুপ্তচর সংস্থার সাথে কতটা সম্পৃক্ত ছিল সেটিও এখন প্রকাশ পাচ্ছে।
স্বাধীনতার প্রতিরক্ষা কিরূপে?
বাংলাদেশে স্বাধীনতার প্রতিরক্ষায় মূল শক্তি মূলত দুটি। এক).সামরিক বল; দুই).ইসলামী চেতনার বল। এ দুটি বিলুপ্ত হলে বিলুপ্ত হবে বাংলাদেশের স্বাধীন মানচিত্র। তখন পশ্চিম বাংলা থেকে বাংলাদেশের কোন পার্থক্য থাকবে না। তখন অপ্রয়োজনীয় হবে দেশের সীমান্ত। তবে আসল শক্তি একটিই,সেটি হলো ইসলামী চেতনা। সেনাবাহিনীরসৈনিকদের মন থেকে ইসলামী চেতনা বিলুপ্ত হলে তারাও উৎসাহ হারাবে দেশের প্রতিরক্ষায়। তারা নিজেরাই তখন শত্রুশক্তির সহযোগীতে পরিণত হবে।
তাই এ মুহুর্তে বাংলাদেশের ভৌগলিক মানচিত্রে হাত দেয়াটি শত্রু শক্তির স্ট্রাটেজী নয়। তারা বরং ব্যস্ত বাংলাদেশের মানুষের চেতনার মানচিত্রে পরিবর্তন আনা নিয়ে। সেটি ডি-ইসলামাইজেশন ত ইসলাম থেকে দূরে সরানোর মাধ্যমে। সেটি সাধিত হলে শত্রুর যুদ্ধটি ইসলাম থেকে দূরে বাংলাদেশীরাই তারাই করে দিবে -যেমনটি একাত্তরে করেছে। এক্ষেত্রে পাকিস্তানের ইতিহাস থেকে শিক্ষণীয় বিষয় অনেক। যতটা ব্যর্থ হয়েছে রাজনৈতিক,সামরিক ও অর্থনৈতিকভাবে, তার চেয়ে বহুগুণ বেশী ব্যর্থ হয়েছে পাকিস্তানীদের মাঝে ইসলামী চেতনাকে জাগ্রত করতে। ফলে অধিকাংশ পাকিস্তানী ব্যর্থ হয়েছে ইসলামের মূল দর্শনটি বুঝতে এবং মুসলিম রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষায় নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে। কাফির শক্তির হাত থেকে দেশের প্রতিরক্ষার কাজটি পবিত্র জিহাদ সেটি খুব সংখ্যক পাকিস্তানীই বুঝতো বা জানতো। ফলে পাকিস্তান ধ্বংস হয়েছে সংখ্যাগরিষ্ট পাকিস্তানীদের হাতে। শত্রুরা এ ক্ষেত্রে কইয়ের তেলে কই ভেজেছে মাত্র।
রাষ্ট্রের সার্বভৌম মালিক আল্লাহতায়ালা; সরকারের কাজ হলো মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে খেলাফতের তথা প্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব পালন। মুসলিম রাষ্ট্রের একতা ও সংহতির বিরুদ্ধে বিদ্রোহের অপরাধটি গুরুতর অপরাধ। অপরাধ এখানে রাষ্ট্রের সার্বভৌম মালিক মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের। এমন কি কোন জাতীয়তাবাদী, প্রজাতন্ত্রি বা রাজতন্ত্রি রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শাস্তিও অতি কঠোর। অনেক দেশেই সেটি প্রাণদণ্ড। মুসলিম দেশভাঙ্গার যুদ্ধটিও মূলত আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে যুদ্ধ। এমন যুদ্ধে জড়িত হওয়ার শাস্তিও তাই প্রাণদণ্ড। এজন্যই মুসলিম রাষ্ট্রের বিনাশের সাথে কোন কালেই কোন জ্ঞানবান ঈমানদার জড়িত ছিল না। উসমানিয়াখেলাফত ধ্বংসের সাথে যেমন নয় তেমনি একাত্তরে পাকিস্তান ধ্বংসের সাথেও নয়। এটি ছিল ইসলামী জ্ঞানশূণ্য ও ইসলামে অঙ্গীকারশূন্য ক্ষমতালোভী জাতীয়তাবাদী, গোত্রবাদী, রাজতন্ত্রবাদী, সমাজবাদী, সেক্যুলারিস্ট, কম্যুনিস্ট ও শত্রুপক্ষের দালালদের প্রজেক্ট, কোন মোল্লা, আল্লামা, পীর-মাশায়েখ বা কোন ইসলামপন্থী দলে র নেতা-কর্মীদের নয়। পাকিস্তান ভাঙ্গার একাজে সাহায্যও এসেছে ভারতের ন্যায় কাফের দেশ থেকে, কোন মুসলিম দেশ থেকে নয়। বাংলাদেশের আওয়ামী বাকশালীর সেটি বুঝে। তাই যখন ভারতসেবী আওয়ামী বাকশালীরা সকল ইসলামপন্থীদের ঢালাওভাবে রাজাকার বলে, তখন তারা মিথ্যা বলে না।
দেশের স্বৈরাচারী জালেম সরকারের নির্মূলে যে লড়াই -ইসলাম সেটিকে পবিত্র জিহাদ বলে, কিন্তু ভূগোল ভাঙ্গার যে লড়াই -সেটিকে হারাম বলে। কারণ মুসলিম দেশ ভাঙ্গার কাজটি মহান আল্লাহতায়ালার হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। তাঁর নির্দেশটি হলো, বিভক্তির বদলে ঐক্য গড়ার। দেশ ভাঙ্গার অর্থই উম্মাহর বিরুদ্ধে বিশাল নাশকতা। তাতে শক্তিহীন হয় উম্মাহ; বিজয় বাড়ে শত্রুর। মুসলিমদের আজকের বিপর্যয়ের কারণ, তারা বাঁচছে মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ নিয়ে। এবং তারা হারিয়েছে সিরাতাল মুস্তাকীম। কারণ, সিরাতাল মুস্তাকীমে চললে মুসলিম উম্মাহ কখনোই ৫০টির বেশী টুকরোয় বিভক্ত হতো। বিভক্তি তো পথভ্রষ্টতার পথ।
ইসলামী চেতনাই প্রতিরক্ষার মূল দেয়াল
ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশকে প্রতিরক্ষা দিতে পারে বাঙালি মুসলিমের ইসলামী চেতনা। কারণ, একমাত্র প্রবল ইসলামী চেতনাই ভারতীয়দের সাথে বাঙালি মুসলিমদের একাত্ম হওয়াকে অসম্ভব (incompatible) করে; তাদের ভাষা, গায়ের রং, পোষাক-পরিচ্ছদ নয় । চেতনায় ইসলাম না থাকলে বাঙালি মুসলিমগণ ১৯৪৭ সালেই ভারতের পেটে বিলীন হয়ে যেত। হৃদয়ের গভীরে থাকা ইসলামী চেতনাই বাঙালি মুসলিমদের ১৯৪৭ সালে ভারতীয়দের থেকে ভিন্ন স্বাধীন রাজনৈতিক পরিচয় দিয়েছিল। বাঙালি মুসলিমদের বাধ্য করেছিল ভারতের বদলে পাকিস্তানে যোগ দিবে। আশাব্যঞ্জক বিষয় হলো, ১৯৭১’য়ে পাকিস্তান ভেঙ্গে গেলেও ১৯৪৭’য়ের সে চেতনা এখনো বাঙালি মুসলিমদের মাঝে বেঁচে আছে। এজন্যই একাত্তরে পাকিস্তান ভাঙ্গলেও বাংলাদেশ ভারতের সাথে মিশে যায়নি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা বাঁচাতে হলে এ ইসলামী চেতনাকে অবশ্যই বলবান করতে হবে। বুঝতে হবে চেতনার ভিন্ন মানচিত্রই ভিন্ন ভূ-রাজনৈতিক মানচিত্রের জন্ম দেয়। সেটি পাকিস্তানের ক্ষেত্রে যেমন সত্য, তেমনি সত্য হলো, স্বাধীন বাংলাদেশের বেঁচে থাকার মাঝে। এ চেতনার মৃত্যু ঘটলে বাংলাদেশের স্বাধীন মানচিত্র বাঁচানো কঠিন হবে।
বাংলাদেশ বাঁচলে আজ হোক কাল হোক ইসলামী শরিয়ত বাস্তবায়নের সুযোগ আসবেই। কিন্তু ভারতভূক্ত হলে সে সুযোগ কোন কালেই আসবে না। তখন বিপন্ন হবে পূর্ণ মুসলিম রূপে বাঁচা ও বেড়ে উঠা। বাংলাদেশের মত একটি মুসলিম দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করা এজন্যই একজন ঈমানদারের কাছে পবিত্র ইবাদত। সে ইসলামী চেতনা বাঙালি জাতীয়তাবাদী, বামপন্থী ও সেক্যুলারিস্টদের মাঝে থাকে না। ফলে তারা যেমন একাত্তরে পাকিস্তানের রক্ষক হতে পারেনি, রক্ষক হবে না স্বাধীন বাংলাদেশেরও। তারা জানে, বাংলাদেশের ভারতভূক্তিতে তাদের হারানোর কিছু নাই। বরং ভারতে পাবে বিপুল সংখ্যক আদর্শিক সতীর্থদের (ideological cousins)। তাদের রাজনীতির মূল লক্ষ্য তো পার্থিব স্বার্থসিদ্ধি তথা ক্ষমতালাভ। ক্ষমতালাভের সে পথটি যদি বিদেশী শত্রুর সেবাদাস হওয়ার মধ্যদিয়ে সহজ হয় -তবে তাতে তারা পিছপা হবে না। অতীতে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশেরা বিপুল সংখ্যক দালাল পেয়েছে এদের মধ্য থেকে। এসব সেক্যুলারিস্টগণই বাংলাদেশে মার্কিনপন্থী, রুশপন্থী, চীনপন্থী ও ভারতপন্থী রাজনীতির জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিধ্বংসে এরাই হলো মূল ভাইরাস।
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- ভারতীয় আগ্রাসনের হুমকি: বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুরক্ষা কীরূপে?
- ভারতীয় ষড়যন্ত্র রুখতে হবে
- সম্প্রতি বাংলাদেশে যা দেখলাম
- বাঙালি মুসলিমের স্বপ্নবিলুপ্তি ও সংকট
- বাঙালি মুসলিমের শক্তি এবং ভারতের বাংলাদেশ ভীতি
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018