দেশ ও মানুষ নিয়ে সাম্প্রতিক ভাবনা-২

১.

কোন ডাকাত যদি বলে সে সমাজ থেকে অপরাধ দুর করবে -এর চেয়ে বড় মশকরা আর কি হতে পারে? ডাকাতের ন্যায় অপরাধীগণ শুধু অপরাধ বাড়াতেই জানে, অপরাধের নির্মূল নয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে তাই সবচেয়ে বড় কৌতুক হলো, ভোট ডাকাতি করে যে শেখ হাসিনা দেশকে হাইজ্যাক করলো সে নাকি দেশকে দুর্নীতি মুক্ত করবে।

২.

চুরি, ডাকাতি, খুন ও ব্যভিচারের ন্যায় নানারূপ পাপের পথে নামার মূল কারণটি হলো পরকালের ভয় না থাকা। সে বিষয়টিই মহান আল্লাহতায়ালা সুস্পষ্ট করেছেন সুরা  মুদাছছেরের ৫৩ নম্বর আয়াতে।

৩.

আখেরাতের ভয় ব্যক্তিকে পাপ থেকে দূরে রাখে। তাই যারা চোর-ডাকাত, ভোট-ডাকাত ও গুম-খুনের রাজনীতির অনুসারি তারা যে আখেরাতের ভয়শূণ্য বেঈমান -তা নিয়ে কি সামান্যতম সন্দেহ থাকে? বাংলাদেশে তাদেরই রাজত্ব চলছে। পবিত্র কোরআনের বিশাল ভাগ ব্যয় হয়েছে বস্তুতঃ আখেরাতের ভয়কে তীব্রতর করতে। যারা না বুঝে কোর’আন তেলাওয়াত করে -তাদের মনে সে ভয় জাগে না।

৪.

মানুষের মাঝে সম্পদ, সন্তান, বিদ্যা-বুদ্ধি ও স্বাস্থ্যের ন্যায় আল্লাহতায়ালার নানা রূপ নিয়ামতের যে ভিন্ন ভিন্ন বন্টন তা নিয়ে যে ক্ষোভ –তা থেকেই জন্ম নেয় হিংসা-বিদ্বেষ। এটি মহান আল্লাহতায়ালার প্রজ্ঞা ও নীতির বিরুদ্ধে বিদ্রোহ। তাই এটি বিশাল পাপ। এটি বস্তুতঃ বেঈমানীর লক্ষণ। এ বন্টন নিয়ে রাজী থাকা এবং সন্তুষ্টির যে প্রকাশ –সেটিই হলো শুকরিয়া। এটি ইবাদত।

৫.

সাম্প্রতিক এক বক্তৃতায় শেখ হাসিনা জনগণকে তার উপর ভরসা করতে বলেছেন। অথচ এক্ষেত্রে তার নিজের আচরণটি লক্ষণীয়। তিনি জনগণের ভোটের উপর ভরসা না করে গভীর রাতে ভোট ডাকাতি করে গদিতে বসেছেন। কথা হলো, ডাকাতের উপর ভরসা করা কি কোন বু্দ্ধিমানের কাজ হতে পারে? এটি তো বেওকুপদের কাজ। কোন বুদ্ধিমান সভ্য ও সাহসী মানুষ কি কখনো ডাকাতের উপর ভরসা করে? তারা তো হাতের কাছে যা পায় তা দিয়ে ডাকাত তাড়াতে রাস্তায় নামে। হাসিনা যে ভাবে ক্ষমতায় এলো সেটি কি নেপাল, শ্রীলংকা বা ভূটানে সম্ভব হতো? তাই হাসিনা বাংলাদেশীদের জন্য বিশ্ব মাঝে যা বাড়িয়েছে তা উন্নয়ন নয়, বরং সীমাহীন অপমান।

৬.

দেশে কতটা কলকারখানা, রাস্তাঘাট ও বিল্ডিং হলো সেটি উন্নয়নের মাপকাঠি নয়।বরং সেটি হলো দেশে কতজন মনুষ চোর-ডাকাত, খুনি বা ধর্ষক না হয়ে সৎ মানুষ রূপে বেড়ে উঠলো সেটি। মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে এ প্রশ্ন কখনোই তোলা হবে না যে, দেশে কতটা কলকারখানা, রাস্তাঘাট ও বিল্ডিং গড়া হয়েছিল এবং সে গড়ার কাজে তোমার কি ভূমিকা ছিল।  বরং এ প্রশ্ন অবশ্যই উঠবে, কতজন সৎ মানুষ রূপে বেড়ে উঠেছিল সেটি।

৭.

মুসলিম বাঁচে, লড়াই করে ও প্রাণ দেয় কোন নেতা বা দলের স্বপ্ন পূরণে নয় বরং একমাত্র মহান আল্লাহর ইচ্ছা পূরণে।এরূপ বাঁচাতেই ঈমানদারী। “ইন্না লিল্লাহি ও ইন্না ইলাইহি”র এটিই অর্থ। একমাত্র মহান আল্লাহর ইচ্ছা পূরণে বাঁচার মধ্য দিয়েই মানুষ জান্নাতে পৌঁছবে। বাঁচাটি অন্য পথে হলে জাহান্নামের অন্তহীন আযাবটি অনিবার্য। রাষ্ট্র দুর্বৃত্তদের হাতে অধিকৃত হলে যা অসম্ভব হয় তা হলো আল্লাহর  লক্ষ্যে বাচা ও প্রাণ দেয়াটি অসম্ভব করা। সেরূপ বাচাকে তারা মৌলবাদ বলে। ইসলামের শত্রুপক্ষ সেটিকে সন্ত্রাস বলে।

৮.

অন্যায়ের নির্মূল এবং ন্যায়ের প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার হলো রাষ্ট্র। কিন্তু সে রাষ্ট্র যখন অধিকৃত হয় চোর-ডাকাত ও ভোটডাকাতদের হাতে তখন দেশ ইতিহাস গড়ে গুম,খুন, ধর্ষণ ও সন্ত্রাসের রাজনীতিতে। বাংলাদেশ তারই সুস্পষ্ট নজির।

৯.

যাত্রাপথে কেউই গন্তব্যের  আসল ঠিকানাকে ভূলে না। সব সময় সে ঠিকানাটি মাথায় রেখে পথ চলে। এখানে ভূল হলে যাত্রাটি ভূল পথে হয়। কিন্ত অধিকাংশ মানুষ জীবন যাপন করে জীবনের শেষ ঠিকানা আখেরাতকে ভূলে।

১০.

মানব সমাজে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো অন্যায়ের নির্মূল ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা। মুসলিম জীবনের এটিই মূল মিশন। এটিই ঈমানদারের জিহাদ। এ লক্ষ্য পূরণে মহান নবীজী (সাঃ) নিজের ঘর না ঘরে সর্বপ্রথম ইসলামী রাষ্ট্র গড়েছিলেন। শতকরা ৭০ ভাগ সাহাবী শহীদ হয়েছিলেন। এবং এমন কোন সাহাবী ছিলেন না যিনি জিহাদ করেননি। এ পবিত্র জিহাদে প্রতিটি মুসলিম তাদের সকল সামর্থ্য বিনিয়োগ করে বলেই পবিত্র কোর’আনে মহান আল্লাহতায়ালা তাদেরকে শ্রেষ্ঠ জাতি বলে অভিহিত করেছেন। অথচ যারা পৃথিবী পৃষ্ঠে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত ও অধঃপতিত জাতি রূপে ইতিহাসে স্থান পেতে যায় এবং পরকালে পেতে চায় জাহান্নাম তারা বেছে নেয় দুর্নীতির পথ। ২৯/০১/২০২০

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *