দুর্বৃত্তদের দখলদারী ও দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতি

ফিরোজ মাহবুব কামাল

রাজনীতি: জাতীয় জীবনের ইঞ্জিন

জাতীয় জীবনে মূল ইঞ্জিনটি হলো ক্ষমতাসীন শক্তির রাজনীতি। এ ইঞ্জিনই জাতিকে সামনে বা পিছনে টানে। চলাটি কোন পথে হবে – উন্নয়নের পথে না পতনের পথে- সেটিী ক্ষেত-খামার, কলেজ-বিশ্বাবিদ্যালয় ও মসজিদ-মাদ্রাসা থেকে নির্ধারিত হয় না, পুরাপুরি নির্ভর করে রাষ্ট্রীয় ইঞ্জিনের চালকদের উপর। কোন একটি জাতির ব্যর্থতা দেখে নিশ্চিত বলা যায়, সে জাতির রাজনৈতিক নেতাগণ সঠিক ভাবে কাজ করেনি। চালকের সিটে ভাল লোক নাই। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে মূলত সেটিই ঘটেছে। কোন দেশের উন্নয়ন বা সুখ-সমৃদ্ধির জন্য এটি জরুরি নয় যে, সেদেশের জলবায়ু, আবহাওয়া বা প্রাকৃতিক সম্পদে বিপ্লব আসতে হবে। বরং বিপ্লব আনতে হয় নেতৃত্বে এবং সেদেশের রাজনীতিতে। রাজনীতির মাধ্যমে সাধারণ মানুষ পায় পথ-নির্দেশনা, রাজনৈতিক নেতাদের মাঝে পায় খুঁজে পায় অনুকরণীয় মডেল। আলেকজান্ডারের আমলে গ্রীস যখন বিশ্বশক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করে তখন গ্রীসের জলবায়ু, আবহাওয়া বা প্রাকৃতিক সম্পদে কোন পরিবর্তন আসেনি। পরিবর্তন এসেছিল রাজনৈতিক নেতৃত্বে। তেমনি আরবের মুসলিমগণ যখন বিশ্বের প্রধান শক্তি রূপে আত্মপ্রকাশ করলো তখনও আরবের জলবায়ু, আবহাওয়া বা প্রাকৃতিক সম্পদে কোন বিপ্লব আসেনি। বরং বিপ্লব এসেছিল তাদের চরিত্রে, নেতৃত্বে ও রাজনীতিতে।

রাজনীতি হল সমাজসেবার সর্বশ্রেষ্ঠ হাতিয়ার। মুসলিম সমাজে এ কাজ করেছেন ইসলামের মহান নবী এবং তাঁর শ্রেষ্ঠতম সাহাবীগণ। রাষ্ট্রপ্রধানের আসনে দেশের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিকে বসানো তাই নবীজী (সা:)র সূন্নত। এ আসনে বসেছেন খোদ নবীজী (সা:)। নবীজী (সা:)’র ওফাতের পর বসেছেন শ্রেষ্ঠ সাহাবাগণ। তাঁরা ছিলেন এমন সাহাবা যারা জীবদ্দশাতেই জান্নাতের সুসংবাদ পেয়েছিলেন। নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাত পালনের পাশাপাশি যারা আল্লাহতায়ালার রাস্তায় নিজের সময়, মেধা ও জানমাল কুরবান করতে দু’পায়ে খাড়া এ কাজটি মূলত তাদের। কিন্তু সমাজসেবার এ মাধ্যমটি যদি ক্ষমতালিপ্সু ও স্বার্থশিকারী দুর্বৃত্তদের হাতে হাইজ্যাক হয়ে যায় তখন সে জাতির পতন, পরাজয় বা বিশ্বজোড়া অপমানের জন্য কি কোন বিদেশী শত্রুর প্রয়োজন পড়ে? ঝাড়ুদার হতে হলেও সততা লাগে, নইলে রাস্তা থেকে আবর্জনা দূর হয় না। আর রাজনীতিবিদদের মূল দায়িত্ব হলো রাষ্ট্র ও সমাজ থেকে নাশকতার এজেন্ট দুর্বৃত্তদের সরানো। সে সাথে সুনীতির প্রতিষ্ঠা। কুর’আনের ভাষায় মু’মিনের সে মিশনটি “আমারু বিল মারুফ” এবং “নেহী আনিল মুনকার”। অর্থাৎ ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা এবং অন্যায়ের নির্মূল। সে কাজের প্রতি অতিশয় গুরুত্ব দিয়ে মহান আল্লাহতায়ালার ঘোষনাটি হলো: “তোমাদের মধ্যে অবশ্যই এমন একদল মানুষ থাকতে হবে যারা কল্যাণের পথে মানুষকে ডাকবে এবং ন্যায়ের নির্দেশ দিবে ও অন্যায়ের পথ থেকে রুখবে, এবং তারাই হল সফলকাম”। -(সুরা আল-ইমরান, আয়াত ১০৪)। আর এটাই তো মুসলিমদের বাঁচা-মরা ও রাজনীতির মূল মিশন। নিছক নামাজ-রোজার মধ্য দিয়ে কি আল্লাহর নির্দেশিত এ হুকুমটি পালিত হয়? মেলে কি সফলতা? তাই আল্লাহতায়ালার কাছে যারা সফল হিসাবে গণ্য হতে চায় তাদেরকে শুধু নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাত পালন করলে চলে না। পাশাপাশি এ পবিত্র কাজকেও জীবনের মিশন রূপে বেছে নিতে হয়। তাই তাই প্রকৃত ঈমানদারদের কাজ শুধু রাজনীতিতে অংশ নেওয়া নয়; বরং সে কাজে অর্থদান, শ্রমদান এমনকি প্রাণদানও। সাহাবায়ে কেরামের জীবনে তো সেটিই দেখা গেছে।

অথচ বাংলাদেশের অবস্থাটি ভিন্নতর। দেশটির লাখ লাখ মসজিদে নামাযীর অভাব হয় না। এ দেশে কোটি কোটি মানুষ রোজা রাখে। বহু হাজার মানুষ প্রতিবছর হজ্জ করে। বহু লক্ষ মানুষ প্রতিদিন কুর’আন তেলাওয়াতও করে। অথচ ন্যায়ের পথে মানুষকে ডাকছে ক’জন? ক’জন সমাজ ও রাষ্ট্রের বুকে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অবিচারের নির্মূলে কাজ করছে? দুর্বৃত্ত মানুষদের রুখছেই বা ক’জন? অথচ রাজনীতিতে দেশের নামাজীরা যে অংশ নিচ্ছে না তা নয়। বরং তারাই সারি বেধে ভোট দেয় ইসলাম বিরোধীদের বিজয়ী করতে। নবীজী(সা:)’র আমলে লক্ষ লক্ষ মসজিদ-মাদ্রাসা ছিল না, কোটি কোটি নামাযীও ছিল না। সংখ্যায় নগন্য সংখ্যক হয়েও তাঁরা নিজ অর্থ ও রক্ত ব্যয়ে শুধু আরব ভূমি থেকেই নয়, মিশর, ইরান, সিরিয়া ও মধ্য এশিয়ার বিশাল ভূ-ভাগ থেকে দূর্নীতি ও দুর্বৃত্তদের নির্মূল করেছিলেন। নির্মূল করেছিলেন আবু লাহাব ও আবু জেহেলদের ন্যায় ইসলাম বিরোধী সকল দুর্বৃত্ত নেতাদের। অথচ বাংলাদেশে ঘটেছে উল্টেটি। দেশটির সংখ্যাগরিষ্ট মুসলিমদের হাতে দুর্বৃত্ত ও ইসলাম-বিরোধী রাজনৈতিক নেতারা শুধু বিপুল ভোটে ও রাজস্বে নির্বাচিত ও প্রতিপালিতই হয় না, প্রতিরক্ষাও পায়। বিপুল গণসমর্থণ নিয়ে এরা নেতা হয়, মন্ত্রী হয়, প্রশাসনের কর্মকর্তাও হয়। দেশটির রাজনীতির ময়দান অধিকৃত হয়ে গেছে অতি দুষ্ট ও দুর্বৃত্ত প্রকৃতির লোকদের হাতে। অথচ যে দেশে আইনের শাসন আছে সে দেশে দূর্নীতিবাজদের পক্ষে নেতা হওয়া দূরে থাক, রাস্তার ঝাড়ুদার হওয়াও অসম্ভব। দূর্নীতিবাজদের দিয়ে রাস্তার ময়লা তোলার কাজটি যথার্থভাবে হয় না। কারণ খুটেঁ খুটেঁ ময়লা তোলার কাজেও অতি নিষ্ঠাবান ও দায়িত্বশীল হওয়া জরুরি। বস্তুত জাতীয় জীবনে নাশকতার এজেন্ট হলো এই দূর্নীতিবাজেরা, প্রতিদেশেই তাদের স্থান হয় কারাগারে। দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে ইসলাম অতি কঠোর ও আপোষহীন। তাই যারা চুরি করে পবিত্র কুর’আন তাদের হাত কাটতে বলে।

 

রাজনীতি: দুর্বৃত্তায়নের হাতিয়ার

বাংলাদেশের ব্যর্থতা এজন্য নয় যে, দেশটিতে সম্পদের কমতি রয়েছে বা দেশের ভূগোল ও জলবায়ু প্রতিকূল। ব্যর্থতার জন্য মূলত দায়ী দেশের দুষ্ট রাজনীতি। কারণ, বাংলাদেশে যেরূপ রাজনীতির চর্চা হচ্ছে সেটি আল্লাহতায়ালার প্রদর্শিত পথ বেয়ে এগুচ্ছে না। মহান আল্লাহতায়ালার প্রদর্শিত সে সরল পথটি হলো সিরাতুল মোস্তাকিম, যার বর্ণনা দেয়া হয়েছে পবিত্র কুর’আন ও নবীজী (সা:)’র সূন্নাহতে। আর এ সিরাতুল মুস্তাকিম শুধু নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাত ও ইবাদত-বন্দেগীর পথই দেখায় না। দেখায় রাজনীতি, আইন-আদালত, শিক্ষা-সংস্কৃতি এবং অর্থনীতির সঠিক পথও। আল্লাহর প্রদর্শিত পথ অনুসরণ না করে রাষ্ট্র, সমাজ বা পরিবারে শান্তি আসবে -এরূপ বিশ্বাস করাই তো কুফরি তথা ঈমান-বিরুদ্ধ। এটি শিরক। তাই প্রশ্ন, এমন বিশ্বাস নিয়ে কি কেউ মুসলিম থাকতে পারে? আল্লাহর প্রদর্শিত পথ তথা ইসলাম ছাড়া শান্তি, সমৃদ্ধি ও সাফল্য সম্ভব হলে তো ইসলামের প্রয়োজনই ফুরিয়ে যায়। অথচ তেমন একটি ইসলাম বিরোধী অপচেতনার প্রতিফলন ঘটছে বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও আইন-আদালতে। এ ক্ষেত্রগুলোতে ইসলামের প্রয়োজনই অনুভব করা হচ্ছে না। ইসলাম সীমিত হয়ে গেছে নিছক মসজিদে ও কিছু পরিবারে। ফলে সমগ্র রাষ্ট্র জুড়ে বাড়ছে সূদ, ঘুষ, মদ্যপান, চুরিডাকাতি, দেহব্যবসা ও ব্যভিচারের নানাবিধ হারাম কাজ।

অথচ ইসলামের আগমন শুধু ব্যক্তির পরিশুদ্ধির লক্ষ্যে হয়নি, হয়েছে সমাজ ও রাষ্ট্রের পরিশুদ্ধির লক্ষ্যেও। সমাজ ও রাষ্ট্রের পরিবেশ যদি পাপে জর্জরিত থাকে তবে কি কোন মানব শিশু সহজে সিরাতুল মুস্তাকীম পায়? নবীজী (সা:)’র হাদিস: “প্রত্যেক মানব শিশুর জন্ম হয় মুসলিম রূপে। কিন্তু সে ইসলাম থেকে বিচ্যুত হয়ে হয়ে অমুসলিম হয় (পারিবারিক , সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়) পরিবেশের প্রভাবে।” কোন শিশুই তার পরিবেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সামর্থ্য নিয়ে জন্ম নেয় না। যারা নবেল প্রাইজ পেয়েছেন সে সামর্থ্য এমন কি তাদেরও ছিল না। সে সামর্থ্য তো একটি বুদ্ধিবৃত্তিক যুদ্ধের। এজন্য তো চাই ওহীর তথা কুর’আনের জ্ঞান। তাই কোন শিশুকে জাহান্নামের আগুন  থেকে বাঁচাতে হলে তাকে শুধু পানাহার দিলে চলে না, জাহিলিয়াত তথা অজ্ঞতার অন্ধকার পরিবেশ থেকে মুক্তি দিতে হয়। এরূপ বাঁচানোর কাজই পৃথিবী পৃষ্টে সর্বশ্রেষ্ঠ নেক কর্ম।  জাহিলী পরিবেশে সিরাতুল মুস্তাকীম পায় না এমন কি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরগণও। তাই সবচেয়ে সওয়াবে কাজ হলো, সমাজ ও রাষ্ট্রকে অজ্ঞতা তথা জাহিলিয়াত-মুক্ত করা। এটি বুদ্ধিবৃত্তিক জিহাদের কাজ। রাষ্ট্রের অবকাঠামো ও তার পরিচালনা কুর’আনের জ্ঞানে অজ্ঞ সেক্যুলারিস্টদের হাতে রেখে রাষ্ট্র বা সামাজের পরিবেশকে কি জাহিলিয়াত-মুক্ত করা যায়? সেটি অসম্ভব বলেই নবীজী (সা:) তার কর্মের পরিধি স্রেফ মসজিদ নির্মাণ ও কুর’আনের জ্ঞান বিতরণের মাঝে সীমিত রাখেননি। ইসলামী রাষ্ট্র নির্মাণ করেছেন এবং নিজে সে রাষ্ট্রের প্রধান রূপে দায়িত্ব পালন করেছেন।

মানব জীবনের সবচেয়ে বড় বিপর্যয় ঘটে পথভ্রষ্ট অপরাধীদের হাতে রাষ্ট্র অধিকৃত হলে। রাষ্ট্র তখন জনগণকে জাহান্নামে নেয়ার দ্রুতগামী ট্রেনে পরিণত হয়। একটি বাসের সকল যাত্রী মাতাল হলেও সঠিক গন্তব্যস্থলে পৌঁছার সম্ভাবনা থাকে যদি চালক সুস্থ্য হয় এবং জ্ঞান রাখে সঠিক পথের। কিন্তু চালক নিজে মাতাল বা রোডম্যাপের বিষয়ে অজ্ঞ হলে সবার ভূল লক্ষ্যে পৌঁছাটি অনিবার্য হয়ে উঠে। এজন্যই ইসলামে শ্রেষ্ঠ নেক কর্মটি মসজিদ বা মাদ্রাসা নির্মাণ নয়, বরং সেটি হলো রাষ্ট্রকে অনৈসলামিক শক্তির হাত থেকে মুক্ত করে পরিপূর্ণ ইসলামী করা। বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশের জনগণের জন্য ভয়ানক বিপদের কারণ, দেশ অধিকৃত হয়ে আছে ভয়ানক অপরাধীদের হাতে। তাদের নিজেদের নাই পবিত্র কুর’আনের তথা সিরাতুল মুস্তাকীমের জ্ঞান। তাদের রাষ্ট্র অধিকৃত হওয়ায় রাষ্ট্র পরিণত হয়েছে পথভ্রষ্ট করার হাতিয়ারে। ফলে ভ্রষ্ট্তা বাড়ছে শুধু শিশুদের নয়, বয়স্কদেরও। শিক্ষা ও সংস্কৃতির নামে সোসল ইঞ্জিনীয়ারিং হচ্ছে জনগণকে ইসলাম থেকে দূরে সরানোর কাজে। মৌলবাদ বলে পরিহার করা হচ্ছে ইসলামের কুর’আনী বিধানকে।

 

অধিকৃতি দুর্বৃত্তদের

ইসলামের প্রতি এরূপ আচরনকে শুধু ভ্রষ্টতা বললে ভূল হবে। বরং এটি হলো আল্লাহর বিরুদ্ধে পরিপূর্ণ বিদ্রোহ। আর সে বিদ্রোহ প্রবল ভাবে প্রকাশ পাচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে। মুষ্টিমেয় কিছু ইসলামী দল ছাড়া বৃহৎ রাজনৈতিক দলগুলো আল্লাহর প্রদর্শিত সে সিরাতুল মোস্তাকিমের অনুসরণ দূরে থাক, সেটির প্রয়োজনীয়তাও অনুভব করে না। মহান আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে এটি হলো সীমাহীন ঔদ্ধত্য। এমন আচরণের তুলনা চলে চিকিৎস্যক ও তার দেওয়া চিকিৎসার বিরুদ্ধে মরনাপন্ন রোগীর ঔদ্ধত্যের সাথে। এরাই রাজনীতিকে পরিণত হয়েছে লুটপাঠ, সন্ত্রাস, ক্ষমতা দখল, শোষন এবং আধিপত্য বিস্তারের হাতিয়ারে। রাজনৈতিক দলের বহুলক্ষ কর্মী ও নেতা, সামরিক বাহিনীর শত শত অফিসার, শত শত সরকারি আমলা, হাজার হাজার ধনি ব্যবসায়ী ও ধর্মব্যবসায়ীসহ নানা জাতের সুযোগ সন্ধানীরা নেমেছে রাজনীতির পেশাতে। বরং বাস্তবতা হলো, কোন ডাকাত দলে বা সন্তাসী দলে এতো দুর্বৃত্ত ও ধোকাবাজের সমাবেশ ঘটেনি যা ঘটেছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে। দুর্বত্তদের যারা যত বেশী দলে ভেড়াতে পারে তারাই বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে প্রভাবশালী ও প্রতাপশালী। রাজনীতির নামে রাস্তায় লগিবৈঠা দিয়ে পিঠিয়ে মানুষ হত্যা বা যাত্রীভর্তি বাসে আগুন  দেয়া এরূপ রাজনৈতিক কর্মী ও নেতাদের কাছে কোন অপরাধই নয়। বরং ক্ষমতায় যাওয়ার লক্ষ্যে সেটিকে তারা অপরিহার্য মনে করে। বাংলাদেশের ইতিহাস এমন বর্বর ও বীভৎস অপরাধ কর্মে ভরপুর। খুণোখুণির ঘটনা ঘটেছে এমনকি সংসদেও। গণতন্ত্রের নামে দেশে বার বার নির্বাচন হয়, কিন্ত সে নির্বাচনে সৎ ও যোগ্য মানুষের নির্বাচন কি সম্ভব? মিথ্যা ওয়াদা ও ধোকাবাজীর উপর যে দেশে নিয়ন্ত্রণ নেই, সে দেশে কি দুর্বৃত্তদের পরাজিত করা সম্ভব? বরং নির্বাচন তাদের সামনে জনগণকে প্রতারিত করার রাস্তা খুলে দেয়।

নির্বাচন পরিণত হয়েছে নাশকতার হাতিয়ারে। নির্বাচনে তারাই বিজয়ী হয় যাদের রয়েছে ব্যালট পেপারের উপর ডাকাতির সামর্থ্য। এ পথেই ডাকাতেরা দখলে নেয় দেশের প্রশাসন, শিল্প, আইন-আদালতসহ সকল গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। ফলে বাংলাদেশে বার বার নির্বাচন হলেও শোষন, লুটপাঠ, দুবৃত্তি ও দূর্নীতি থেকে দেশবাসীর মূক্তি মিলছে না। বরং দিন দিন তা বেড়েই চলেছে। অপরাধীদের হাতে রাষ্ট্র অধিকৃত হলে কোন জাতি কি কখনো সুপথ পায়? তখন তো বিভ্রান্তি নেমে আসে সমাজ গুরুত্বপূর্ন ইস্যু হলো: রাজনীতির ভ্রষ্টতা দূর করা। ইসলামে এটিই জিহাদ। নবীজীর আমলে মুসলিমদের ও রাষ্ট্রের সর্বত্র জুড়ে। তেমনি বিপদ নেমে আসে রাজনীতি বিপথগামী হলে। তাই জাতীয় জীবনের সবচেয়ে সবচেয়ে বেশী কোরবানী পেশ করতে হয়েছে রাজনীতির ময়দান থেকে দুর্বৃত্তদের নির্মূল করতে। সে সমাজে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের নির্মূলের পথে বড় বাধা রূপে খাড়া হয়েছিল আবু লাহাব, আবু জেহলের মত দুর্বৃত্ত নেতারা। এসব দুর্বৃত্তদের সরাতে যত লড়াই ও রক্তক্ষয় হয়েছে সমাজে নামাজ-রোয়া, হজ্জ-যাকাত বা অন্য কোন বিধান প্রতিষ্ঠা করতে তা হয়নি।

মুসলিমের প্রতি দিনের বাঁচার মধ্যে যেমন লক্ষ্য থাকে, তেমনি লক্ষ্য থাকে তাঁর প্রতিটি কর্মের মধ্যেও। ইসলামী পরিভাষায় সে লক্ষটি হলো নিয়েত। আর সে নিয়েতটি মহান আল্লাহতায়ালাকে খুশি করা হলে মুসলিমের প্রতিটি কর্ম -তা যত ক্ষুদ্রই হোক ইবাদতে পরিণত হয়। তাই ঈমানদারদের রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তি স্রেফ রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তি নয়, সে অঙ্গণে প্রতিটি প্রচেষ্টাই ইবাদত। প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমের রাজনীতির নিয়েত বা মূল লক্ষ্যটি কি? রাজনীতির মূল ইস্যু বা এজেন্ডা কি শুধু সরকার পরিবর্তন? এটি কি নিছক নির্বাচন? লক্ষ্য কি শুধু রাস্তাঘাট, অফিস-আদালত ও কলকারাখানা নির্মাণ? অথবা পণ্য বা মানব রপ্তানীতে বৃদ্ধি? বাংলাদেশে এ অবধি নির্বাচন ও সে সাথে সরকার পরিবর্তন হয়েছে বহুবার। নানা দল নানা এজেন্ডা নিয়ে ক্ষমতায় গেছে। কিন্তু দেশ কতটুকু সামনে এগিয়েছে? জনগণের জীবনে উচ্চতর মানবিক মূল্যবোধই বা কতটুকু প্রতিষ্ঠা পেয়েছে?

 

ব্যর্থতা মূল্য সংযোজনে

তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো এ জন্য দরিদ্র নয় যে, সেখানে সম্পদের অভাব। বরং দারিদ্র্যের মূল কারণ, সে সব প্রাকৃতিক সম্পদে তারা অতি কমই মূল্য সংযোজন করতে পারে। তারা যেমন ব্যর্থ নিজেদের মূল্য বাড়াতে, তেমনি ব্যর্থ খনিজ বা প্রাকৃতিক সম্পদের মূল্য বাড়াতে। এটিই তাদের সবচেয়ে বড় অক্ষমতা। একটি দেশের প্রাচুর্য্য তো বাড়ে সে দেশে মানব ও প্রাকৃতিক সম্পদের উপর কতটুকু মূল্য সংযোজন হল তার উপর। এবং সংযোজিত মূল্যের যোগফলকে বলা হয় জিডিপি –যা দেয় একটি দেশের উন্নয়নের পরিমাপ।  পাট, তূলা, চা, কফি, তেল, গ্যাস, তামা, কপার, ইউরেনিয়াম, বক্সাইট, টিনের ন্যায় অধিকাংশ কৃষি ও খনিজ সম্পদের উৎস হলো তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো। কিন্তু এ সম্পদের কারণে বেশী লাভবান হয়েছে পাশ্চাত্য। কারণ এসব কৃষি ও খণিজ সম্পদের উপর সিংহভাগ মূল্য সংযোজন হয়েছে পাশ্চাত্য দেশগুলির কলকারখানায়। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো রয়ে গেছে কাঁচামাল বা খনিজ সম্পদের জোগানদার রূপে। পাশ্চাত্য দেশের কোম্পানীগুলোর কারণেই আফ্রিকার কোকো সারা দুনিয়ার মানুষের কাছে চকলেট হিসাবে প্রচুর সমাদার পাচ্ছে। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ নানা ব্রান্ডের চকলেটের পিছনে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচও করছে। এভাবে চকলেট বিক্রি করে ধনী হয়েছে পাশ্চাত্য কোম্পানীগুলো। অথচ প্রচন্ড অনাহারে ভুগছে কোকা উৎপাদনকারি আফ্রিকার দেশগুলোর জনগণ। একই ভাবে তেল ও গ্যাস উৎপাদনকারি দেশগুলোর চেয়ে বেশী অর্থ কামিয়েছে পাশ্চাত্যের তেল ও গ্রাস কোম্পানীগুলি। মূল্য সংযোজনের ফায়দা তো এটাই। তাই যারা ব্যবসা বুঝে তারা একত্রিত হয়ে চেষ্টা করে কারখানা খোলার। কারণ, কারখানা হল মূল্য সংযোজনের অঙ্গণ।

তবে জাতি সবচেয়ে বেশী লাভবান হয় যখন মূল্য সংযোজন হয় মানুষের উপর। কারণ, মানুষই হলো আল্লাহতায়ালার সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। তেলের বা সোনার মূল্য হাজারো গুণ বাড়লেও সেটি কি গুণবান ও সৃষ্টিশীল মানুষের সমান হতে পারে? মানুষের উপর মূল্য সংযোজন হলে সে মানুষটি মহৎ গুণে বেড়ে উঠে। সে মানুষটির সামর্থ্য বাড়ে প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদের উপর মূল্য সংযোজনে। এজন্যই শিল্পোন্নত দেশগুলো মানব সম্পদের উন্নয়নে এতো ব্যয় করে। এবং সেটি শিক্ষার অঙ্গণে উন্নতি এনে। মানুষের মূল্য বৃদ্ধি বা গুণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা বা উদ্যোগ নেওয়া এজন্যই ইসলামে এত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামে মসজিদ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ার সওয়াব এজন্যই এতো বেশী। কারণ এ প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজই হলো মানুষের উপর মূল্য সংযোজন করা তথা তাদেরকে সৃষ্টিশীল মহত্তর গুণ নিয়ে বেড়ে উঠায় সহায়তা দেওয়া। তাদের কারণে সমাজ ও রাষ্ট্র তখন বহুগুণে সমৃদ্ধ হয়। এমন রাষ্ট্রের বুকেই নির্মিত হয় উচ্চতর সভ্যতা। মানুষ গড়ার এ মহান কাজটিই এ জন্যই তো মুসলিম রাজনীতির মূল এজেন্ডা। তখন রাজনীতির মূল লক্ষ্য হয়, মানুষকে জান্নাতের যোগ্য করে গড়ে তোলা। এমন মানুষের গুণেই আল্লাহর সাহায্য ও শান্তি নেমে আসে ধরাপৃষ্টে। নবীজী (সা:) ও সাহাবায়ে কেরামের আমলে তো সেটিই হযেছিল। ইসলামে এমন রাজনীতি তাই গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কিন্তু বাংলাদেশে সে কাজটিই হয়নি। এজন্যই অতীতে দেশটি বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পেয়েছে তলাহীন ভিক্ষার ঝুলি ও সর্বাধিক দূর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্র রূপে।

যে কোন দেশে রাজনীতির মূল ইস্যুটি নির্ধারিত হয় সে দেশের জনগণের ধর্ম, জীবনদর্শন, মূল্যবোধ, সংস্কৃতি এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রয়োজন থেকে। তাই পূঁজিবাদী ও সমাজবাদী দেশের রাজনৈতিক এজেন্ডা এক নয়। তেমনি এক নয় মুসলিম ও অমুসলিম দেশের রাজনৈতিক এজেন্ডা। ব্যক্তির অন্তরে বা চেতনায় লালিত ইসলামী বিশ্বাস শুধু তাঁর ধর্ম-কর্ম, ইবাদত-বন্দেগী, খাদ্য-পানীয়ের ব্যাপারেই নিয়ম বেঁধে দেয় না, নির্ধারিত করে দেয় তার জীবনের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোও। তা থেকেই নির্ধারিত হয় মুসলিমদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক এজেন্ডা। তাই এক ভূমিতে আরবের কাফেরদের এজেন্ডা ও মুসলিমদের এজেন্ডা কখনোই এক ছিল না। মুসলিম যখন বিজয়ী হয় তখন সমাজ থেকে শুধু মূর্তিগুলোই অপসারিত হয়নি। অপসারিত হয়েছিল তাদের প্রচলিত সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক রীতিনীতি ও মূল্যবোধও। অপসারিত হয়েছিল ইসলাম বিরোধী নেতৃত্ব। কারণ, একটি মুসলিম সমাজ কখনই অমুসলিম বা সেকুলার মূল্যবোধ ও নেতৃত্বের অধীনে গড়ে উঠতে পারে না। এবং এগুতে পারে না কাঙ্খিত লক্ষ্যে। যেমন প্লেনের ইঞ্জিন নিয়ে কোন রেল গাড়ী সামনে এগুতে পারে না। রাজনীতি যেমন জাতির ইঞ্জিন, তেমনি সে ইঞ্জিনের জ্বালানী শক্তি হল উচ্চতর দর্শন বা ফিলোসফি। মুসলিমদের ক্ষেত্রে সেটি হল ইসলাম তথা কুর’আনী দর্শন। এবং সে ইঞ্জিনকে পথ দেখায় কুর’আনী রোডম্যাপ।

যে রাজনীতিতে উচ্চতর দর্শন নেই, সে রাজনীতিতে গতি সৃষ্টি হয় না উচ্চতর লক্ষ্যে চলার। তখন নেমে আসে জগদ্দল পাথরের ন্যায় স্থবিরতা। স্রোতহীন জলাশয়ে যেমন মশামাছি বাড়ে, তেমনি দর্শন-শূণ্য স্থবির রাজনীতিতে বৃদ্ধি ঘটে দর্শনশুণ্য দুর্বৃত্ত মানব-কীটদের। সেটিরই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হলো বাংলাদেশের রাজনীতি। নবীজী(সা:)’র আমলে মানবিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে যে প্রচন্ড বিপ্লব ও গতি সৃষ্টি হয়েছিল তার কারণ, রাজনীতির ইঞ্জিন তখন আল্লাহপ্রদত্ত দর্শন পেয়েছিল। চালকের পদে বসেছিলেন মানব ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ মানবগণ। এবং চলার রোডম্যাপটি ছিল কুর’আনী রোডম্যাপ। অথচ সে প্রচন্ড শক্তি থেকে দারুন ভাবে বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশের আজকের রাজনীতি। কারণ, বাংলাদেশের ড্রাইভিং সিটে বসে আছে চোর-ডাকাত ও ভোট-ডাকাতগণ। দেশটির রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা ও সংস্কৃতির অঙ্গনে ইসলাম ও আল্লাহর নাম নেওয়া তাদের কাছে সাম্প্রদায়ীকতা। তারা দাবী তুলছে, ইসলামের প্রতি অঙ্গিকারের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার। স্বৈরাচারী আওয়ামী-বাকশালী আমলে নিষিদ্ধ হয়েছিল ইসলামের নামে রাজনীতির সে মৌলিক নাগরিক অধিকার। সরকারি মহলে নিষিদ্ধ হয়েছিল বিসমিল্লাহ। অপসারিত হয়েছিল সরকারি প্রতিষ্ঠানের মনোগ্রোম থেকে কুর’আন ও মহান আল্লাহতায়ালার নাম। এভাবে দর্শনশূণ্য হয়েছিল মুজিবামলের রাজনীতি। এবং প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল মুজিব-বন্দনা। ফল দাঁড়িয়েছিল, সবচেয়ে দ্রুত ধ্বংস নেমেছিল নীতি-নৈতিকতা, আইন-শৃঙ্খলা ও অর্থনীতিতে। সৃষ্টি হয়েছিল ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। প্রাণ হারিয়েছিল লক্ষ লক্ষ মানুষই শুধু নয়, দেশের স্বাধীনতা, মানবতা ও ন্যূনতম মানবিক অধিকার। তখন ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের পায়ের তলায় পিষ্ট হযেছিল দেশের সার্বভৌমত্ব। এবং কবরবাসী হয়েছিল গণতন্ত্র ও মৌলিক মানবিক অধিকার। গণতন্ত্রের সে কবরের উপর প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল মুজিবের একদলীয় বাকশালী ফ্যাসিবাদ।

 

ক্ষমতাসীনদের ইসলামভীতি

দাবী উঠেছে, ইসলামের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ করার। কথা হলো, এ দাবী উঠানোর হেতু কি? কারণ একটিই, আর তা হলো বাংলাদেশকে নীচে নামানোর কাজকে তীব্রতর করা। ইসলামী দর্শন, আইন ও মূল্যবোধের পরাজয়ের মধ্যেই তাদের আনন্দ। রাজনীতির ইঞ্জিনকে দর্শন-শূণ্য করাই তাদের মূল লক্ষ্য, তাদের প্রভু ভারতও সেটিই চায়। সত্তরের দশকেও তারা সেটিই করেছিল। দাবীটিও এসেছে সেই একই আওয়ামী বাকশালীদের পক্ষ থেকে। এমন ইসলামবিরোধী রাজনীতির পিছনে রয়েছে প্রচন্ড ইসলামী ভীতি। তাদের ভয়ের কারণ, বাংলাদেশের শতকরা ৯২ ভাগ মানুষ মুসলিম। দেশটিতে প্রবল ভাবে বাড়ছে ইসলামী জ্ঞানচর্চা এবং সে সাথে প্রবলতর হচ্ছে ইসলামী চেতনা। ফলে বাড়ছে ইসলামপন্থীদের রাজনৈতিক শক্তি। আর ইসলামের বিজয় মানেই শরিয়তি আইনের প্রতিষ্ঠা। ইসলামের বিজয় মানে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সংস্কৃতিতে ইসলামী বিধানের পূর্ণ-প্রয়োগ এবং সেক্যুলার মূল্যবোধ ও রীতি-নীতির বিলুপ্তি। তখন বিলুপ্তি ঘটবে দেশের ইসলাম বিরোধী জাতীয়তাবাদী শক্তির রাজনীতির। আর সে কারণেই বাংলাদেশের আওয়ামী-বাকশালী সেক্যুলার মহলটির মনে ঢুকেছে প্রবল ইসলাম ভীতি।

দেশের সেক্যুলারিস্ট পক্ষটি কখনোই নিজেদের রাজনৈতিক পরাজয়টি মেনে নিতে রাজী নয়। তাই চুড়ান্ত লড়াইটি শুরুর আগেই ইসলামের নামে দেশের ইসলামপন্থী জনগণকে সংগঠিত হওয়াটিকেই নিষিদ্ধ করতে চায়। আর সংগঠিত না হতে পারলে ইসলামপন্থীগণ সে লড়াই করবে কি করে? একাকী কারো পক্ষেই বড় কিছু করা সম্ভব নয়। রাজনীতির ক্ষেত্রে তো নয়ই। আওয়ামী-বাকশালী সেক্যুলারদের পরাজয় করাটি তখন ইসলামপন্থীদের সাধ্যের বাইরে থেকে যাবে। আর এভাবে সহজে নিশ্চিত হবে দেশের রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তির ময়দানে তাদের বর্তমানের বিজয়ী অবস্থানকে ধরে রাখা। ইসলামপন্থীগণ যাতে শক্তি সঞ্চয় করতে পারে সে জন্য এখন থেকেই তাদের বিরুদ্ধে নির্মূলের হুমকী দেয়। তবে এমন একটি রাজনৈতিক লক্ষ্য কাফের বা ইসলামের চিহ্নিত দূষমনদের জন্য অস্বাভাবিক নয়, নতুনও নয়। বরং অতি সনাতন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, যে দেশের শতকরা ৯১ ভাগ মুসলিম -সে দেশে এমন ইসলামবিরোধী রাজনীতি বাজার পায় কি করে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *