জনগণের অস্ত্র এবং ইজ্জত নিয়ে বাঁচার খরচ
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on November 16, 2021
- Bangla Articles, বাংলাদেশ
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
স্বৈরচারী সরকারের মূল অস্ত্রগুলি হলো দেশের পুলিশ, সেনাবাহিনী ও আদালত। এবং সে সাথে মোসাহেবী চাকর-বাকরদের নিয়ে গড়া বিশাল চাটুকর মিডিয়া। প্রতিটি স্বৈরশাসক এ অস্ত্রগুলির সাহায্যেই জনগণের হাত থেকে নিজ শাসনের প্রতিরক্ষা দেয়। এবং নিজের খেয়াল-খুশির বাস্তবায়ন করে। অথচ পুলিশ, সেনাবাহিনী ও আদালতের কর্মচারি পালতে রাজস্ব দিয়ে খরচ জোগায় জনগণ। তাই স্বৈরাচারি সরকার কইয়ের তেলে কই ভাজে। অর্থাৎ তারা জনগণের অর্থে জনগণের উপর শাসন করে ও নির্যাতন করে। মাঝ খানে জনগণের অর্থ থেকে কোটি কোটি টাকা নিজ পকেটে তোলে। একটি গণবিরোধী অসভ্য সরকারে এগুলোই হলো প্রকৃত আলামত। তাই জনগণের মূল শত্রু মহল্লার দুর্বৃ্ত্ত চোর-ডাকাতেরা নয় বরং তা হলো দুর্বৃত্ত ভোটচোর ও ভোটডাকাত সরকার। তারা জানে তাদের পিছনে কোন গণসমর্থন নাই। এজন্যই গদি বাঁচাতে তারা ভোটচুরি, ভোটডাকাতিতে নামতে বাধ্য হয়। সুষ্ঠ নির্বাচনের কথা তাদের ভাবাই যায়না। ডাকাতগণ ডাকাতিই করতে জানে, তাদের কাজ সুষ্ঠ রাজনীতি ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নয়।
স্বৈরচারী সরকারের নির্মূলে মূল অস্ত্রটি হলো খোদ জনগণের শক্তি। এটিই হলো গণশক্তি বা গণঅস্ত্র। এ শক্তি পুলিশ, সেনাদল ও তাদের কামান-বোমার চেয়েও শক্তিশালী। পাকিস্তানের আইয়ুব খান, ইরানের শাহ ও মিশরের হোসনী মোবারকের কম পুলিশ, সেনাদল ও গোলাবারুদ ছিল না, কিন্তু গণশক্তির কাছে তাদের সব শক্তি ও সব অস্ত্রই পরাজিত হয়েছে। জনগণ একতাবদ্ধ হলে স্বৈরশাসক কখনোই গণশক্তির মোকাবেলা করতে পারেনা। মানব ইতিহাসের বড় বড় স্বৈরশাসকের পতন হয়েছে এবং বিপ্লব এসেছে এই গণশক্তির হাতে। তবে সে জন্য চাই জনগণের গণতন্ত্রে রুচি, একতা ও আত্মবিশ্বাস। চাই অদম্য সাহস। সভ্য শাসন কখনোই ভীরু-কাপুরষদের কপালে জুটে না। গরু-ছাগল যেমন জবাই হওয়ার জন্য জন্মায়, তেমনি ভীরুগণ জন্মায় স্বৈরশাসকের গোলাম হওয়ার জন্য। তাদের কপালে কখনো ইজ্জত জুটেনা। ইজ্জত নিজ মেধা ও ক্ষমতার বলে অর্জনের বিষয়, কোন স্বৈর শাসক থেকে দয়াভিক্ষার বিষয় নয়।
ঢাকায় ২ কোটি মানুষের বাস। এ বিশাল জনসংখ্যার মধ্য থেকে ৩০ লাখ মানুষ রাস্তায় নামালে স্বৈরচারী হাসিনা কি তার নিজ শাসন বাঁচাতে পারতো? কখনোই নয়। ৮০ লাখের মানুষের শহর হংকং। সে শহরে যদি ২০ লাখ মানুষ রাস্তায় নামতে পারে তবে ঢাকায় কেন ৩০ লাখ নামতে পারে না? ৩০ লাখ মানুষকে কি পুলিশ দিয়ে ঠেকানো যায়? ৩০ লাখ মানুষ রাস্তায় নামলে ঢাকার প্রতিটি রাস্তায় জনতার জোয়ার উপচে পড়তো। অচল হয়ে যেত সরকার। কয়েক দিনেই সরকারের পতন হতো। পুলিশ, কাঁদানে গ্যাস বা সেনাবাহিনী দিয়ে একটি বা দুটি রাস্তার জনতাকে দমন করা যায়, কিন্তু সমগ্র শহরের জনস্রোত কি দমন করা যায়? কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ সেরূপ জনজোয়ার সৃষ্টিতে পুরাপুরি ব্যর্থ হয়েছে।
অথচ স্বৈরশাসক সরানোর কাজটি রকেট সায়েন্সের ন্যায় কোন জটিল ও ব্যয়বহুল বিজ্ঞান নয়। পরিতাপের বিষয় হলো, হংকংয়ে ২০ লাখ মানুষ রাস্তায় নামলেও ঢাকাতে ২০ হাজারও নামে না। এই হলো হংকংয়ের মানুষের গুণগত মানের সাথে বাংলাদেশীদের গুণগত তফাত। এমন দায়িত্ব-বিমুখ মানুষের ভাগ্যে কি গণতন্ত্র জুটে। অথচ এরূপ গণবিপ্লবই হলো সবচেয়ে কম খরচে স্বৈর সরকার নির্মূলের পথ।সে সাথে ইজ্জত ও অধিকার নিয়ে বাঁচার পথ। এ সামর্থ্য না থাকলে পথে ঘাটে কুকুর বিড়ালের ন্যায় মরা ছাড়া ভিন্ন পথ থাকে না। সে ভাবে মরাটাই হলো ভীরু-কাপুরুষদের পথ। বাংলাদেশে মানুষ কি সে পথই বেছে নিয়েছে?
বিরোধী দলগুলোর ব্যর্থতা হলো তারা জনগণের মধ্যে সচেনতা ও জাগরণ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়েছে। ব্যর্থ হয়েছে তাদেরকে সংগঠিত করতে। অথচ রাজনীতিকদের মূল দায়িত্ব হলো তারা জনগণের অধিকারকে প্রতিরক্ষা দেয়া। তারাই হলো জনগণের উকিল। এবং সে কাজের জন্যই তাদের রাজনীতি। সে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে তাদের রাজনীতির অধিকার থাকে কি? সে সাথে জনগণের ব্যর্থতা এবং সে সাথে অযোগ্যতা হলো, তারা গণতন্ত্রে রূচি হারিয়ে ফেলেছে। তাদের চেতনায় বিলুপ্ত হয়েছে ভোটের স্বাধীনতা, কথা বলার স্বাধীনতা, এবং নিজেদের ইচ্ছামত এমপি ও সরকার নির্বাচনের অধিকার নিয়ে বাঁচার উচ্চ সাধ।
বুঝতে হবে দেশকে এবং দেশবাসীর গণতান্ত্রিক অধিকার পাহারা দেয়ার কাজ কোন বিশেষ ব্যক্তি বা রাজনৈতিক দলের নয়, বরং এ দায়িত্ব প্রতিটি নাগরিকের। নিজের সম্পদের ন্যায় নিজেদের ভোটের প্রহরায় নিজেরা না দাঁড়ালে ভোট যে ডাকাতি হয়ে যাবে -সেটিই তো স্বাভাবিক। বাংলাদেশে ভোট ডাকাতির কারণ তো এটিই। অথচ কোন সভ্য দেশে কি এরূপ ভোট ডাকাতির কথা ভাবা যায়? সেটি হলো ভোটডাকাতকে জেলে যেতে হতো। কারণ, সভ্য দেশে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও আদালত সদা জাগ্রত থাকে জনগণকে অধিকারকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য। অথচ বাংলাদেশে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও আদালতের কাজ হয়েছে চোরডাকাত ও ভোটডাকাতদের পাহারা দেয়া।এবং ডাকাতদের সামনে মাথা নুইয়ে মাননীয় বলা। এহলো তাদের তাদের চরিত্রের মান। এবং সে সাথে তাদের কাজ হয়েছে জনগণকে রিমান্ডে নিয়ে অত্যাচার করা এবং কারাবন্দী করা।
দেশে যে ভোটডাকতি হয়েছে তা নিয়ে কারো কোন দ্বিমত নাই। অথচ বিস্ময়ের বিষয় হলো এতবড় একটি ভয়ানক ডাকাতি হলো তার কোন বিচার হলো না। অথচ দেশে লক্ষাধিক পুলিশ পালা হয়, বহু হাজার বিচারক পালা হয়। কেউইকোন দায়িত্ব পালন করলো না। জনগণের সাথে এর চেয়ে বড় গাদ্দারী আর কি হতে হবে। এখন ডাকাতদের বিচারে জনগণকেই ময়দানে নামতে হবে। ডাকাতদের ক্ষমতায় বসিয়ে মান্যতা দেয়া আরেক অপরাধ। গণআন্দোলনের মাধ্যে তাদের নির্মূলের পরই তাদের বিচারের ব্যবস্থা হতে পারে। মুসলিম জীবনের মূল মিশন হলো: “আমারু বিল মারুল” তথা ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা এবং “নেহী আনিল মুনকার” তথা দুর্বৃত্তির নির্মূল। এবং এই কাজের জন্যই সুরা ইমরানের ১১৫ নম্বর আয়াতে মুসলিমদের সর্বশ্রেষ্ঠ জাতির উপাধী দিয়েছেন। বাংলাদেশের ১৬ কোটি মুসলিম কি মিশন পালনে গাফলতি দেখাতে পারে? সেটি করলে কি ঈমান থাকে? তাই ডাকাতকে ক্ষমতায় বসিয়ে মাননীয় বলা কোন ঈমানদারের কাজ হতে পারে?
মানবের মানবিক গুণ বাড়লে তার স্বাধীনতা, রাজনৈতিক অধিকার ও ইজ্জত নিয় বাঁচার সাধ জাগে। মানবিক গুণে মানব কতোটা বাড়লো -সেটি সেরূপ রুচি দেখেই বুঝা যায়। এরিস্টটল মানুষকে রাজনৈতিক জীব বলেছেন। পশু জীবন থেকে এখানেই মানব জীবনের মূল পার্থক্য। পশুদের জীবনে পানাহার ও যৌনতা থাকে। কিন্তু পশুকে দুর্বৃত্তির নির্মূল ও সভ্য সমাজ নির্মাণ নিয়ে ভাবতে হয় না। সভ্য সমাজ নির্মাণের জন্য চাই মেধা, শ্রম ও রক্তের বিনিময়। অন্যদের কাছে এটি রাজনীতি হলেও মুসলিমদের জন্য তা হলো পবিত্র ইবাদত -যাকে বলা হয় জিহাদ। সমাজ থেকে এই জিহাদ বিলুপ্ত হলে সমাজ পশুত্ব ও দুর্বৃত্তিতে ভরে যায়। বরং মানুষ তখন পশুর চেয়েও নিকৃষ্টতর হয়। পশুগণ চুরিডাকাতি, ভোটডাকাতি, গুম, খুন, ধর্ষণ ও সন্ত্রাসে নামে না, কিন্তু মানুষ নামে। এজন্য এ শ্রেণীর মানুষদের পবিত্র কুর’আনে গবাদী পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট বলা হয়েছে। তাই বাংলাদেশের জনগণের লড়াইটি স্রেফ কোন রাজনৈতিক লড়াই নয়, বরং এটি দুর্বৃত্তমুক্ত মানবিক পরিচয় নিয়ে বাঁচার লড়াই। এ লড়াই নির্ধারিত করবে বাংলাদেশের মানুষ কতটা সভ্য মানবিক জীবনে আগ্রহী। ১৬/১১/২০২১
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- সেক্যুলারিস্টদের ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশ এবং যুদ্ধ ইসলামের বিরুদ্ধে
- বাংলাদেশে হিফাজতে ইসলাম ও ইসলামের হিফাজতে ভয়ানক ব্যর্থতা
- তাবলীগ জামায়াত কতটা দূরে সরেছে ইসলাম থেকে?
- Bangladesh: A Tale of Success of a Robber and the Failure for the Opposition
- বাংলাদেশে সেক্যুলারিজমের তাণ্ডব এবং সংকটে বাংলাদেশের স্বাধীনতা
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Mohammad Arifur Rahman on জিন্নাহ’র সাদকায়ে জারিয়া ও মুজিবের গুনাহে জারিয়া
- সিরাজুল ইসলাম on জিন্নাহ’র সাদকায়ে জারিয়া ও মুজিবের গুনাহে জারিয়া
- Abdul Aziz on বিবিধ ভাবনা ৮২
- Fazlul Aziz on বাঙালি ও অবাঙালি মুসলিমের বৈষম্য এবং ফ্যাসিবাদী মিথ্যচার
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের তান্ডব: মুক্তি কীরূপে?
ARCHIVES
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018