ইরানে ইসরাইলী হামলা:মুসলিম উম্মাহর জন্য যা শিক্ষণীয়
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on June 14, 2025
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, আমার স্মৃতিকথা, মুসলিম জাহান
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
ইসরাইলের যুদ্ধ এবং যুদ্ধের নাশকতা
ইরানকে ইসরাইল তার অস্তিত্বের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি মনে করে, কোন আরব দেশকে নয়। অন্য কোন মুসলিম দেশকেও নয়। প্রতিবেশী আরব দেশগুলি ইসরাইলের বিরুদ্ধে একটি তীরও ছুড়ছে না। অথচ হামাস, হিজবুল্লাহ এবং ইয়েমেনের আনসারুল্লাহর মত যারাই ইসরাইলের বিরুদ্ধে খাড়া হয়েছে তাদেরকে সাহায্য করেছে ইরান। ইরানের এ ভূমিকাই ইসরাইলকে দেশটির প্রধান শত্রুতে পরিণত করেছে। শত্রুতে পরিণত করেছে ইসরাইলের প্রভু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। তাই ইসরাইল তার ইতিহাসের সবচেয়ে বড় হামলা করেছে ইরানের উপর। হামলা করছে ইরানের অনেকগুলি পারমানবিক স্থাপনার উপর। মিজাইলে ছুড়েছে আবাসিক এলাকার উপর। হত্যা করছে কয়েকজন শীর্ষ জেনারেল এবং ৬ জন পারমানবিক বিজ্ঞানীকে। ইসরাইলের হামলা যে এখানেই থেমে থাকবে না -সে কথাও শুনিয়েছে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতিয়ানহু। ইসরাইল ইরানী জনগণকে সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আহবান জানিয়েছে।
ইসরাইল-মার্কিনীদের যুদ্ধ পরিকল্পনা সুস্পষ্ট। তাদের টার্গেট শুধু ইরান নয়, প্রতিটি মুসলিম রাষ্ট্র যারা এখনো ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয়নি। তাই একে একে এরূপ প্রতিটি মুসলিম রাষ্ট্রের তারা মেরুদণ্ড ভাঙ্গতে চায়। তাই ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান, সিরিয়া, ইরাক, ইয়ামেন, লেবাননের পর এবার টার্গেট হলো ইরান। ইরানকে আরেকটি গাজা বানাতে চায়। কিন্তু ইসরাইলের জন্য সমস্যা হলো ইরান গাজা বা লেবানন নয়। নেকড়ে একটি ভেড়াকে সহজেই কাবু করতে পারে, কিন্তু হাতিকে পারে না। ইরান একটি বিশাল দেশ -এখানেই ইসরাইলের জন্য সমস্য। আফগানিস্তানের চেয়ে ইরান ক্ষুদ্রতর নয়, ইসরাইলও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে শক্তিশালী নয়।
বুঝতে হবে, এ হামলা ইসরাইলের একার নয়; এ হামলার পিছনে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রগণ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরাইলের হামলাকে excellent তথা চমৎকার বলে আখ্যায়ীত করেছে। হুমকি দিয়েছে আরো ভয়ানক হামলার। ইসরাইলী হামলার কয়েক দিন আগেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার ইরাকী দূতাবাস থেকে অনেক কর্মচারীকে সরিয়ে নিয়েছিল। এর অর্থ, হামলার খবর যুক্তরাষ্ট্র আগে থেকেই জানতো। সামরিক বিশেষজ্ঞগণ বলছেন, ইরানের পারমানবিক স্থাপনা বিষয়ে গোপন তথ্যগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দাগণ ইসরাইলের হাতে অনেক আগেই তুলে দিয়েছিল। তারা এ যুদ্ধে যেসব যুদ্ধ বিমান, মিজাইল ও ভারী বোমা ব্যবহৃত হয়েছে সেগুলিও দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
নেকড়ে সবগুলো ভেড়াকে একসাথে খায় না, একটা একটা করে ধরে খায়। সে নীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরাইলেরও। বুঝতে হবে ইসরাইলের যে নীতি, সেটিই মার্কিন নীতি। এবং মার্কিনীদের যে নীতি, সেটিই ইসরাইলী নীতি।
বুঝতে হবে, ইসরাইল রাষ্ট্রটি হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত একটি ড্রোন রাষ্ট্র। এর কন্ট্রোল মার্কিনীদের হাতে। যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাধুনিক অস্ত্রটি এখন ইসরাইলের হাতে। তাই বুঝতে হবে ইসরাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধের অর্থ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ। তাই এ যুদ্ধে ইরানের একার পক্ষে পেরে উঠা অসম্ভব। তাছাড়া ইতিমধ্যেই হারিয়েছে সিরিয়া, লেবানন ও গাজায় সহযোদ্ধাদের।
তবে এযুদ্ধ এখন আর শুধু ইরান ও ইসরাইলে সীমিত থাকবে না। এ যুদ্ধে অনেকেই ঘি ঢালবে এবং বেগবানও করবে। এ যুদ্ধে সম্পৃক্ত হবে রাষ্ট্রের বাইরের নানা শক্তিও। আর যুদ্ধ যেদেশই শুরু করুক, তার একটি নিজস্ব নাশকতা আছে। সে নাশকতা ইসরাইল ও তার প্রভু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকেও ছাড়বে না। যুদ্ধের নিজস্ব নাশকতার কারণে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিশাল বিজয় পেয়েও ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তাছাড়া প্রতিটি যুদ্ধের পিছনে থাকে এক অদৃশ্য মহান শক্তিমানের হাত। তাঁর ফয়সালা কি -সেটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ যুদ্ধে ইসরাইল কতটা অক্ষত থাকে সেটিও তাই দেখবার বিষয়। তবে এটি নিশ্চিত, মধ্যপ্রাচ্য তার পূর্বের অবস্থায় আর ফিরে যাবে না। নির্মিত হবে নতুন মধ্যপ্রাচ্য।
ইরানের ব্যর্থ প্রেসিডেন্ট এবং ব্যর্থ প্রতিরক্ষা নীতি
ইসরাইলী হামলা প্রতিরোধে ইরান পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। তাদের না আছে যুদ্ধ বিমান, না আছে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, না আছে উন্নত মিজাইল। এবং না আছে ভাল ড্রোন। এতো কাল তারা যে বড় বড় কথা বলেছে তা এখন ভিত্তিহীন প্রমাণিত হচ্ছে। অথচ ইসরাইল যে ইরানের উপর হামলা করবে -সেটি তো জানা কথা। সেটি তো ইসরাইল নিজেই বার বার জানিয়ে দিচ্ছিল। কিন্তু মনে হচ্ছে ইরানী নেতৃবৃন্দ সেটি আঁচই করতে পারেনি। সেটি বুঝতে পারলে তো সে অনুযায়ী তারা ব্যবস্থা নিত। প্রয়োজনে উপোষ থেকে ইরানের একাজটি করা উচিত। বেশী বেশী খেয়ে মোটাতাজা হয়ে লাভ কি -যদি স্বাধীনতা না বাঁচে। কিন্তু ইরান এর কোনটাই করেনি। নিজেরাও বড় কিছু তৈরী করতে পারিনি। ফলে ব্যর্থ হয়েছে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা বাহিনী গড়ে তুলতে। এখানেই ইরানের বিশাল ব্যর্থতা।
ইরানের বর্তমান প্রেসিডেন্ট মাসুদ পিজিশকিয়ান একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। তিনি নির্বাচিত হয়েছিলেন ইসলামপন্থী প্রার্থীকে হারিয়ে। প্রশ্ন হলো, কোথায় তাঁর ভূ-রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও প্রতিরক্ষা জ্ঞান? দেশ পরিচালনায় এটি তো জরুরি। তিনি একজন আপোষকামী ব্যক্তি; তাই ক্ষমতায় এসেই তিনি মার্কিনীদের সাথে আপোষে নেমেছিলেন। নেকড়ের গলা জড়িয়া ধরার মধ্যে কোন বুদ্ধিমত্তা নেই। প্রেসিডেন্ট মাসুদ পিজিশকিয়ান ডোনাল্ড ট্রাম্পের গলা জড়িয়ে ধরেছিলেন। মার্কিন কর্মকর্তাদের সাথে ইরানী কর্তৃপক্ষ ওমানের মধ্যস্থতায় কয়েক দফা বৈঠকও করেছে। পিজিশকিয়ানের আমলেই লেবাননের হিজবুল্লাহদের শক্তিকে চুর্ণ করা হয় এবং সিরিয়া হাতছাড়া হয়। তিনি প্রায়োরিটি দিচ্ছিলেন লেবানন ও সিরিয়া থেকে হাত গুটিয়ে ইরানের অর্থনৈতিক উন্নয়নে মনযোগী হতে। কিন্তু তার সে নীতি ব্যর্থ প্রমাণিত হলো। নেকড়ের সাথে আপোষ চলে না -সে সহজ সত্যটিও তিনি বুঝতে পারেননি। শত্রু যখন ময়দানে যুদ্ধপাগল তখন শান্তি আশা করা যায়না।
মুসলিম উম্মাহর সংকট: যা শিক্ষণীয় এবং যা করণীয়
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও ইসরাইল এ ব্যাপারে এক মত যে, তারা কোন মুসলিম রাষ্ট্রকেই পূর্ণ প্রতিরক্ষার সামর্থ্য অর্জন করতে দিবে না। দিবে না পারমানবিক বোমার অধিকারী হতে। তারা লাগাতর চেষ্টায় আছে পাকিস্তানের হাতে যে পারমানবিক বোমা আছে -সেটিও কেড়ে নিতে বা বিকল করতে।
মহান আল্লাহতালা চান, মুসলিমগণ স্বাধীনতা ও ইজ্জত নিয়ে বসবাস করুক। কিন্তু সেটি শুধু পানাহারে ও অর্থ সম্পদে জোটে না। নামাজ-রোজা এবং হজ-যাকাতের ন্যায় ইবাদতেও মিলেনা। এটি অর্জনের বিষয়, কারো দানের বিষয় নয়। সেটি অর্জন করতে এমনকি নবীজী (সা:)কেও ২৭ বার যুদ্ধ অস্ত্র হাতে নামতে হয়েছে এবং ৮০টি বেশি যুদ্ধ পরিচালনা করতে হয়েছে। অর্ধেকের বেশি সাহাবা শহীদ হয়েছেন। নবীজী (সা:)’র সে সূন্নত নিয়ে মুসলিমগণ আজ বাঁচেনা। ফলে তাদের সে ইজ্জত ও স্বাধীনতাও তাদের নাই।
নবীজী(সা:) কোন প্রাসাদ গড়েননি; অথচ তখনও রাজা-বাদশারা ক্ষমতা পেলেই বড় বড় প্রাসাদ গড়তো। তিনি বরং সাহাবীদের যুদ্ধে পারদর্শী বানিয়েছিলেন। প্রতিটি মহল্লাকে তিনি সেনানিবাসে পরিণত করেছিলেন। যত দিন মুসলিমদের মাঝে একতা ছিল, জিহাদে আগ্রহ ছিল এবং সর্বাধুনিক যুদ্ধাস্ত্র ছিল -তারা বিশ্বশক্তির মর্যাদা পেয়েছে। যখন তারা অর্থনৈতিক স্বাচ্ছন্দ, আমোদ-ফুর্তি ও প্রাসাদ নির্মাণে ব্যস্ত হয়েছে -তখনই তাদের পরাজয় ও পতন এসেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আজ বিশ্বের সবচেয়ে ঋণগ্রস্ত দেশ; মার্কিন ঋণের পরিমাণ ৩৬ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশী। দেশটি ঋণ করে বিশ্বব্যাপী প্রতিপত্তি গড়ে তোলেছে। অপর দিকে সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত ও আমিরাতের মত মুসলিম দেশগুলিও মার্কিনীদের ঋণ দেয়; কিন্তু তারা নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করেনা।
ইরানের উপর হামলা করে ইসরাইল দেখিয়ে দিল, যে কোন মুসলিম দেশের উপর আঘাত হানা কত সহজ। এবং এটিই প্রমাণিত হলো ইসরাইলের জন্য কোন বিধি নিষেধ নাই; যে কোন দেশে হামলা করতে পারে, এর জন্য কোন শাস্তি পেতে হবে না। এটিও পরিস্কার হলো, প্রতিরক্ষার সামর্থ্য না থাকলে স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা থাকে না। ইরানের উপরে ইসরাইল হামলা। স্বাধীনতা নিয়ে বাঁচতে হলে প্রতিরক্ষাকে মজবুত করতে হয়। বুঝতে হবে মুসলিমদের একতা এবং পর্যাপ্ত যুদ্ধ প্রস্তুতির কোন বিকল্প নাই। আর এ দুটি বিষয়ই মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে ফরজ করা হয়েছে। একতাবদ্ধ হওয়ার হুকুম এসেছে এভাবে:
وَٱعْتَصِمُوا۟ بِحَبْلِ ٱللَّهِ جَمِيعًۭا وَلَا تَفَرَّقُوا۟
অর্থ: এবং তোমরা সবাই একতাবদ্ধ ভাবে আল্লাহর রশি তথা কুর’আনকে ধরো এবং পরস্পরে বিভক্তি গড়ো না।” –(সুরা আল ইমরান, আয়াত ১০৩)।
বিভক্তি গড়লে কঠিন আযাবের হুশিয়ারি শোনানো হয়েছে। সেটি শোনানো হয়েছে সুরা আল ইমরানের ১০৫ নম্বর আয়াতে। বলা হয়েছে:
وَلَا تَكُونُوا۟ كَٱلَّذِينَ تَفَرَّقُوا۟ وَٱخْتَلَفُوا۟ مِنۢ بَعْدِ مَا جَآءَهُمُ ٱلْبَيِّنَـٰتُ ۚ وَأُو۟لَـٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌۭ
অর্থ: “এবং তোমরা কখনোই তাদের মত হয়োনা যারা সুস্পষ্ট বক্তব্য আসার পরও বিভক্ত হলো ও পরস্পরে মতপার্থক্য গড়লো; তাদের জন্য জন্য ভয়ানক আযাব।”
উপরিউক্ত আয়াত থেকে বোঝা যায়, মুসলিমগণ বিভক্ত হলো অথচ আযাব এলো না -সেটি হতে পারে না। আজ মুসলিমদের উপর যে লাগামহীন বোমা বর্ষণ ও শত্রু শক্তির দখলদারী ও নির্যাতন -তার কারণ তো এই বিভক্তি। শুধু বিভক্তই নয়, কোন কোন মুসলিম দেশ শত্রুর মিত্রে পরিণত হয়েছে। তেমন একটি দেশ হলো হলো, জর্দান। জর্দানের উপর দিয়ে ইসরাইল যখন ইরানের দিকে মিজাইল নিক্ষেপ করে, তখন দেশটি বাধা দেয়না। কিন্তু ইরান যখন ইসরাইলের দিকে মিজাইল নিক্ষেপ করে তখন সেটিকে বাধা দেয়।
পর্যাপ্ত যুদ্ধ প্রস্তুতির নির্দেশটির কথা বলা হয়েছে সূরা আনফাল য়ের ৬০ নাম্বার আয়াতে। বলা হয়েছে:
وَأَعِدُّوا۟ لَهُم مَّا ٱسْتَطَعْتُم مِّن قُوَّةٍۢ وَمِن رِّبَاطِ ٱلْخَيْلِ تُرْهِبُونَ بِهِۦ عَدُوَّ ٱللَّهِ وَعَدُوَّكُمْ
অর্থ: “এবং তোমরা তোমাদের শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য সর্বশক্তি দিয়ে প্রস্তুতি নাও; প্রস্তুত রাখো যুদ্ধের ঘোড়াকে। এবং সে প্রস্তুতির মাধ্যমে আল্লাহর শত্রু ও তোমাদের শত্রুদের মনে ভয় ঢুকিয়ে দাও।”
উপরিউক্ত আয়াতে শুধু সর্বশক্তি দিয়ে প্রস্তুতির নির্দেশ দেয়া হয়নি, বরং এমন প্রস্তুতির কথা বলা হয়েছে যা শত্রু শক্তির মনে ভয় ধরিয়ে দেয়। পরিতাপের বিষয় হলো এই দুটি ক্ষেত্রেই মুসলিমগণ তাদের উপর আরোপিত ফরজ পালন করছে না। তাদের না আছে ঐক্য, না আছে অত্যাধুনিক সামরিক অস্ত্র। তারা বাঁচছে নিজেদের মধ্যে বিভক্তি নিয়ে। মুসলিমদের অখন্ড ভূগো মুসলিমই তাদের কাছে অসহ্য। তারা পছন্দ করে ভাষা, গোত্র, বর্ণ ও অঞ্চলের নামে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ভূগোল। এইজন্য আরবরা ২২ খণ্ডে বিভক্ত। তারা ভেঙেছে সমকালীন সময়ের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র উসমানিয়া খেলাফত ও পাকিস্তান।
অন্যদের থেকে যে শিক্ষা নিতে ব্যর্থ হয়েছে
উত্তর আমেরিকায় বসবাসকারী ইংরেজ, ফরাসি, ডাচ, স্প্যানিশ, জার্মান, আইরিশ -এরা সবাই মিলে ইউনাইটেড স্টেটস অফ আমেরিকা জন্ম দিয়েছে। তাই তারা বিশ্বশক্তি। জার্মান, ফ্রান্স, ইতালি,স্পেন, হল্যান্ড, বেলজিয়াম, আয়ারল্যান্ড সুইডেন, নরওয়ে, পোল্যান্ড এ ধরনের ২৭ টি ইউরোপিয়ান দেশ মিলে নির্মাণ করেছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন। এরাই একটি বিশ্বশক্তি। বাঙালি, বিহারী গুজরাটি, পাঞ্জাবি, মারাঠি, তামিল, রাজস্থানী ইত্যাদি নানা পরিচয়ের হিন্দুরা একত্রে নির্মাণ করেছে বিশাল ভারত। এ একতার কারণে ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক শক্তি। তাদের সে শক্তির পিছনে হলো একতা।
মুসলিমদের অঢেল সম্পদ রয়েছে। বিশাল জনবলও রয়েছে। কিন্তু একতাবদ্ধ নয়। ফলে তারা শক্তিহীন। আর সে শক্তিহীনই বিপদ ডেকে এনেছে। ঘরে সম্পদ থাকলে সে সম্পদ ডাকাত ডেকে আনে। মুসলিমদের হাতে সম্পদ আছে বলেই তারা শত্রু শক্তির হামলার শিকার। সে অভিন্ন কারণে তৎকালীন বিশ্বের সবচেয়ে সম্পদশালী বাংলা ব্রিটিশ হায়েনাদের হামালা শিকার হয়েছে। সম্পদ থাকলে তাই সে সম্পদের পাহারা দেয়ার সামর্থ্যও গড়ে তুলতে হয়। অথচ সে কাজটি মুসলিমগণ করেনি।
জন্ম নিবে কি নতুন ইরান?
ইরানের সামনে এখন দুটি পথ। একটি ইসরাইল ও তার প্রভু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পূর্ণ আত্মসমর্পণের। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সে আত্মসমর্পণের দাবী বার বার জানাচ্ছে। অপর পথটি মাথা তুলে দাঁড়ানো। ইরানের অভ্যন্তরে এ দুই পথের পথিকই রয়েছে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট জনাব পেজেশকিয়ানের পথটি আত্মসমর্পণের।
এটি নিশ্চিত, এ মুহূর্তে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ইরানের বিজয়ের কোনোই সম্ভাবনা নাই। কারণ প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে ইরান ইসরাইল থেকে অনেক পিছিয়ে আছে। যেরূপ আধুনিক অস্ত্র ইসরাইলের হাতে রয়েছে -তা ইরানের হাতে নাই। তবে এ হামলা ইরানীদের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে বাধ্য করবে। আশা করা যায়, ইরান বুঝতে পারবে তার নিজের ব্যর্থতার কারণ। ইরানীরা ভেবেছিল অর্থনৈতিক উন্নয়ন তাদের ইজ্জত ও প্রতিরক্ষা দিবে। সে নীতির ব্যর্থ প্রমাণিত হলো। স্বাধীনতা নিয়ে বাঁচাতে হলে সর্বাধুনিক অস্ত্রের বিকল্প নাই। পৃথিবীর যেখান থেকে সেটি সম্ভব, সেখান থেকেই সেটি অর্জন করতে হবে।
ইরানের নিজ ঘরে রয়েছে ইরানের নিজের শত্রু। এরা হলো ইসলামবিরোধী শক্তি; এরা পাশ্চাত্য সংস্কৃতির স্রোতে ভাসা লোক। এরাই মুনাফিক। এরা ইরানে বাস করলেও বিজয় চায় ইসরাইলের। এরাই ইরানের পারমানবিক কেন্দ্রের গোপন খবর ইসরাইলকে দিয়েছে। এরা নবীজী (সা:)’র আমলেও ছিল। ইরান তার স্বাধীনতা বাঁচাতে চাইলে দায়িত্ব নিতে হবে এ ঘরের শত্রুদের সনাক্ত করা ও নির্মূলের কাজ।
সম্ভাবনা আছে ইসরাইলের এই হামলা এক নতুন ইরানের জন্ম দিবে। মাসুদ পিজিশকিয়ানের মত লিবারেল নেতাগণ দ্রুত জনপ্রিয়তা হারাবে। জনপ্রিয়তা পাবে দৃঢ়চেতনা ইসলামপন্থীরা। নদী যখন বাধা পায় তখন বসে থাকে না, গতিপথ পাল্টিয়ে নেয়। তাই এটি নিশ্চিত, দেশপ্রেমিক ও ইসলামপ্রেমী ইরানীরাও তাদের পলিসি পাল্টাবে। ইরান কোন আনবিক প্রকল্পই আর জমিনের উপর রাখবে না। ইরানের বহু দুর্গম্য পর্বতমালা রয়েছে; সেগুলির নিচে নিয়ে যাবে। মার্কিনীদের চোখে ধুলি দিয়ে সোভিয়েত রাশিয়া, চীন ও পাকিস্তান যেমন পারমানবিক অস্ত্র আবিষ্কার করেছে -সে পথটি বেছে নিবে ইরানও। মার্কিনী নিষেধাজ্ঞা নিয়ে যেমন রাশিয়া, কিউবা, ভিনিজুয়েলা ও উত্তর কোরিয়া বাঁচতে শিখেছে, তেমনি বাঁচতে শিখবে ইরানও।
ইরান বিশাল দেশ। নিহত জেনারেলের স্থান অন্য জেনারেলগণ নিবে। নিহত পারমানবিক বিজ্ঞানী স্থান আরেক বিজ্ঞানী নিবে। এবং পাল্টে যাবে মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনীতিও। ইসরাইল ক্ষুদ্র দেশ। আজ জিতলেও এ বিজয়ের মধ্যে নিহীত রয়েছে আগামী দিনের জন্য ভয়ানক বিপদের বীজ। অনেক ইহুদীই এখন ইসরাইল ছাড়বে।
বাংলাদেশীদের জন্য যা শিক্ষণীয়
ইরানের উপর ইসারাইলী হামলা থেকে বাংলাদেশের জন্যও রয়েছে বহু শিক্ষাণীয় বিষয়। বুঝতে হবে বাংলাদেশের বসবাসও আরেক ইসরাইলের পাশে। সেটি হলো ভারত। আজ ইরান, ফিলিম্তিন ও ইরানের সাথে যা কিছু ঘটছে, আগামীতে তা বাংলাদেশের সাথেও তা নিশ্চিত ঘটবে। বাংলাদেশে গুরুত্ব দিতে হবে জনগণের মাঝে একতা এবং সর্বাধুনিক অস্ত্র সংগ্রহে। প্রয়োজনে উন্নয়ন বাজেট কমিয়ে প্রতিরক্ষা বাজেটে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। এয়ার ডিফেন্স মজবুত করতে হবে। সর্বাধুনিক মিজাইল ও যুদ্ধবিমান থাকতে হবে। প্রতিটি নাগরিককে সৈনিকে পরিণত করতে হবে। সামরিক শিক্ষা ছাত্রদের জন্য বাধ্যতামূলক করতে হবে। বুঝতে হবে এটি কোন নফল কাজ নয়, বরং ফরজ ইবাদত। এ ফরজে কোন কাজা নাই। স্বাধীনতার বাঁচানোর ক্ষেত্রে আপোষ চলে না।
মনে রাখতে হবে, মুসলিম দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় সাহায্য দিতে কখনোই কোন কাফির দেশ এগিয়ে আসবে না। বিশেষ করে সে মুসলিম দেশটিকে -যারা স্বাধীন ভাবে ও শক্তি নিয়ে বেড়ে উঠতে চায়। কাফিরদের মধ্য বর্ণ, ভাষা ও ভৌগলিক ভিন্নতা থাকলেও তারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ। কখনোই তারা মুসলিমদের প্রতিরক্ষা দিতে এগিয়ে আসবে না। তাই চীন বন্ধুত্বের ভান করলেও ১৯৭১’য়ে পাকিস্তানের পাশে খাড়া হয়নি। ব্যবসায়ীক স্বার্থের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তাদের কাছে নাই। রাশিয়া ও চীন তাই ইরানের কাছে উন্নত প্রযুক্তির যুদ্ধবিমান, মিজাইল ও আকাশ ডিফেন্স প্রযুক্তি বিক্রি করেনি। অথচ ইসরাইল পেয়েছে বিশ্বের নানা দেশে থেকে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির অস্ত্র। ভারতও পাচ্ছে। এ বিষয়টি বাংলাদেশকে বুঝতে হবে।
স্বাধীন ভাবে বাঁচার যে খরচ -সে খরচ বাংলাদেশীদের নিজেদেরই বহন করতে হবে। বুঝতে হবে, ইরানের ন্যায় বাংলাদেশের নিজ ঘরে রয়েছে বিপুল সংখ্যক শত্রু। এরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার শত্রু। এরা ভারতসেবী। স্বাধীনতা বাঁচাতে হলে এদের বিরুদ্ধে লড়াইকে তীব্রতর করতে হবে।
মাত্র ৭০ লাখ মানুষের দেশ ইসরাইরল আজ বিশ্বশক্তি। ১৭ কোটি মানুষের বাংলাদেশ কেন পারবে না? সেটি না পারলে, স্বাধীন ভাবে বাঁচার অধিকার থাকবে কেন? ইসরাইলের এ শক্তির কারণ, বিশ্বশক্তি রূপে বেড়ে উঠার ভিশন। সে সাথে তাদের উন্নত যুদ্ধ প্রযুক্তি এবং দেশবাসীর একতা এবং তাদের সামরিক প্রশিক্ষণ। সে অভিন্ন পথে চলতে হবে বাংলাদেশকেও। মুসলিমদের কাছে যুদ্ধের প্রস্তুতিটি প্রফেশনাল বিষয় নয়, এটি ফরজ ইবাদত। এ ফরজ পালন না করলে কঠিন শাস্তি আছে। সেটি শত্রু শক্তির হাতে অধিকৃতি, অপমান ও নৃশংস জুলুম -যা ভুগছে গাজা, কাশ্মীর ও আরাকানের মজলুম জনগণ। ১৪/০৬/২০২৫
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- নবীজী (সা:)’র রাজনীতি এবং আজকের মুসলিম রাজনীতি
- The Ummah is in Catastrophic Turmoil
- ব্যর্থ শিক্ষাব্যবস্থাই সকল ব্যর্থতার মূল
- শুরুর কাজটিই শুরুতে করা হয়নি
- পরিশুদ্ধ ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের নির্মাণ কিরূপে?
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Fazlul Aziz on The Israeli Crimes, the Western Complicity and the Muslims’ Silence
- Fazlul Aziz on India: A Huge Israel in South Asia
- Fazlul Aziz on ইসলামী রাষ্ট্রের কল্যাণ এবং অনৈসালিমক রাষ্ট্রের অকল্যাণ
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে দুর্বৃত্তায়ন, হিন্দুত্ববাদ এবং ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ
- Fazlul Aziz on Gaza: A Showcase of West-led War Crimes and the Ethnic Cleansing
ARCHIVES
- July 2025
- June 2025
- May 2025
- April 2025
- March 2025
- February 2025
- January 2025
- December 2024
- October 2024
- September 2024
- August 2024
- July 2024
- June 2024
- May 2024
- April 2024
- March 2024
- February 2024
- January 2024
- December 2023
- November 2023
- October 2023
- September 2023
- August 2023
- July 2023
- June 2023
- May 2023
- April 2023
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018