অধ্যায় এক: কেন এ লেখা?

ঈমানী দায়বদ্ধতা

মৃত্যু,ধ্বংস বা বিপর্যয়কে কখনো কখনো ব্যক্তি বা জাতির জীবনে চাপিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু নিজেদের পক্ষ থেকে যখন ডেকে আনা হয় তখন সেটিকে আত্মঘাত বলা হয়। বাংলার মুসলিম জীবনে তেমন আত্মঘাত একাধীক বার এসেছে। যেমন ১৭৫৭ সালে, তেমনি ১৯৭১য়েও। কিন্তু কিভাবে সেটি এলো সেটি গুরুতর চিন্তাভাবনা ও গবেষণার বিষয়। কোন ব্যক্তির জীবনে আত্মঘাত ঘটলে তা নিয়ে বিচার বসেনা। কাউকে আসামীও করা হয় না। ফলে তার পোষ্টমর্টেমও হয় না। ব্যক্তির জীবনে আত্মঘাত সাধারণতঃ আত্মহত্যায় রূপ নেয়। নিজের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে সব ঘটনার যবনিকা সে নিজেই টেনে দেয়। কিন্তু জাতীয় জীবনে যখন আত্মঘাত ঘটে তখন সে আত্মঘাতে দেশের সবাই জড়িত হয় না; বরং কিছু লোক ডেকে আনে মাত্র। ডেকে আনার সে কাজটি করে দেশের ভ্রষ্ট চরিত্রের কিছু স্বার্থপর নেতা-নেত্রী। তাদের কাছে নিজেদের স্বপ্ন বা স্বার্থ পূরণটিই মূল, জনগণের ইচ্ছা-অনিচ্ছা, মহান আল্লাহতায়ালার বিধান, মুসলিম-স্বার্থ এবং ইসলামের প্রতিষ্ঠা বা গৌরব –এসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তাদের কাছে গুরুত্ব পায় না। এরাই হলো মুসলিম ইতিহাসের মীর জাফর। মীর জাফরগণকোন কালেই জনগণের মতামত নিয়ে নিজ দেশে শত্রুদের ডেকে আনেনি,যুগে যুগে তারা শত্রুদের পক্ষ নিয়েছে স্রেফ নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির লক্ষ্যে। সত্তরের নির্বাচনেও একটি প্রকাণ্ড যুদ্ধের বিষয় কখনোই আলোচিত হয়নি, তেমনি ভারতকে ডেকে আনার বিষয়ও সামনে আসেনি। অথচ একটি প্রকাণ্ড যুদ্ধকে জনগণের উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। অথচ ভারতকে সাথে নিয়ে বহুবছর আগে থেকেই তেমন একটি যুদ্ধের পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছিল। সে গুরুতর বিষয়টি আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় কিছুটা প্রকাশ পেলেও পুরাটি প্রকাশ পেয়েছে একাত্তরের পর। সে প্রকাশ না পাওয়াটিই ষড়যন্ত্র এবং জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা।

কিছু লোকের চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধে প্রচণ্ড প্রাণনাশ ও ক্ষয়ক্ষতি হলেও তাতে জাতির পুরাপুরি মৃত্যু ঘটে না;বাঁচার সম্ভাবনা তখনও অবশিষ্ঠ থাকে। মুসলিম জনগণের মাঝে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার স্বপ্নকিছুটা হলেও অবশিষ্ট থাকে। মুসলিমের জীবনে বাঁচার মূল এজেন্ডা তো সে স্বপ্নপূরণ।সে স্বপ্নের সাথে জড়িত থাকে তার ঈমানী দায়বদ্ধতা। প্রকৃত মুসলিমের জীবনে এজন্যই বিপ্লব আসে; এবং জিহাদও শুরু হয়। সে বিপ্লবের লক্ষ্য যেমন ইসলামের বিজয়, তেমনি মহান আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন। তবে আত্মঘাতি বিপর্যয় থেকে মাথা তুলে দাঁড়াতে হলে জরুরীহলো, সে আত্মঘাতের কারণ নিয়ে গবেষণা করা। রোগ থেকে বাঁচতে হলে সে রোগের কারণগুলো অবশ্যই জানতে হয়। চিকিৎসার পাশাপাশি সে রোগের জীবাণু থেকেও দূরে থাকতে হয়। নইলে সে রোগ বার বার হানা দেয়। জাতীয় জীবনে রোগমুক্তি বা বিপর্যয় থেকে বাঁচার পথটিও ভিন্নতর নয়। এক্ষেত্রে ইতিহাস বিজ্ঞানের কাজটি অতি বিশাল ও গুরুত্বপূর্ণ। ইতিহাসের কাজ শুধু জাতীয় ঘটনাবলির কিসসা কাহিনী লিপিবদ্ধ করা নয়; নেতা-নেত্রীদের জীবনী লেখা বা গুণকীর্তনও নয়। বরং ঘটনার প্রেক্ষাপট, সফলতার বা বিফলতার কারণ, প্রতিবেশীর ষড়যন্ত্র এবং সে সাথে ঘটনার নায়কদের চিন্তা-চেতনা ও চরিত্রকেও লিপিবদ্ধ করা -যাতে ভবিষ্যতের প্রজন্ম তা থেকে শিক্ষা ও গবেষনার সামগ্রী পায়। জাতীয় জীবনে এভাবেই আসে ইতিহাসলব্ধ গভীর প্রজ্ঞা। মীর জাফরগণ তাদের কৃত অপরাধের জন্য আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়ানো থেকে বাঁচলেও ইতিহাসের বিচার থেকে বাঁচে না। জ্ঞানী ব্যক্তির পা তাই একই গর্তে দুইবার পড়ে না। প্রজ্ঞাবান জাতিও তেমনি বার বার একই রূপ সংকটে বিপর্যস্ত হয় না। অতীতের আত্মঘাতের ঘটনা নিয়ে গবেষণার গুরুত্ব এজন্যই অপরিসীম। এছাড়া আত্মঘাত এড়ানোর বিকল্প পথ নেই। সেটি না হলে আত্মঘাতি ব্যক্তির ন্যায় আত্মঘাতি জাতিও শত্রুর হামলা ছাড়াই দুনিয়া থেকে হারিয়ে যেতে বাধ্য।এই গ্রন্থটি লেখার তাড়না এসেছে বস্তুত তেমনি এক চেতনা ও দায়ভার থেকে।

 

সাক্ষ্যদানের দায়ভার

মানব হিসাবে প্রত্যেকেরই কিছু দায়-দায়িত্ব থাকে। মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে ব্যক্তির মর্যাদা বা মূল্যমানটি নির্ধারিত হয় কে কতটা সে দায়িত্ব পালন করলো তার ভিত্তিতে।তাছাড়া ঈমানদার ব্যক্তির কিছু বাড়তি দায়িত্বও থাকে। সে বাড়তি দায়িত্বটা হলো সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দেয়া। ইসলামে এটিকে শাহাদতে হক তথা সত্যের পক্ষে সাক্ষ্যদান বলে। মুসলিম হওয়ার জন্য কালামে শাহাদত জনসম্মুখে পাঠ করতে হয়। লা-শরীক আল্লাহতায়ালা এবং তাঁর মহান রাসূল যে সত্য -কালেমায়ে শাহাদত পাঠের মধ্য দিয়ে সে সাক্ষ্যটিই প্রকাশ্যে দিতে হয়। তবে সে দায়িত্বটি কালেমায়ে শাহাদত পাঠে শেষ হয় না,শুরু হয় মাত্র। সত্যের পক্ষে প্রকাশ্য সাক্ষ্যদানের পরপ্রতিটি মুসলিমের জীবনে সেটিই তার আমৃর্ত্যু সংস্কৃতিতে পরিণত হয়। মহান আল্লাহতায়ালাও চান, কারা সত্যের পক্ষে সাক্ষ্যদানকারি আর কারা মিথ্যার পক্ষে -সে বিষয়টিও স্পষ্টতর হোক। ফলে জীবনের আশে পাশে যে সত্যঘটনাগুলি ঘটে -ঈমানদার ব্যক্তিকে সেগুলিরও পক্ষ নিতে হয়; দাঁড়াতে হয় অন্যায় ও মিথ্যার বিরুদ্ধে। সত্যকে বিজয়ী করতে সে শুধু মসজিদে,জনপদে বা জিহাদের ময়দানেই যায় না, জনগণের বিবেকের আদালতেও যায়। সত্যের পক্ষে সে সাক্ষ্যদানে শহীদগণ নিজেদের প্রাণও বিলিয়ে দেয়।মহান আল্লাহতায়ালার কাছে এজন্যই তারা এতো প্রিয়।যুগে যুগে তাদের কারণেই মিথ্যাচারীদের প্রচণ্ড বিরোধীতার মুখেও সত্য বিজয়ী হয়েছে।

কোন জনগোষ্ঠীর জীবনে যুদ্ধবিগ্রহ একাকী আসে না। যুদ্ধবিগ্রহ বা বিপর্যয়ের মধ্য দিয়েই ঘটে ঈমান ও আমলের চুড়ান্ত পরীক্ষা। মূলত বিপদের মুখে ফেলে মহান আল্লাহতায়ালা বেছে নেন শহীদদের।তাই পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতায়ালার ঘোষনাঃ “এবং এ দিনগুলোকে মানুষের মাঝে আমি পালাক্রমে আবর্তন ঘটিয়ে থাকি। এজন্য যে, আল্লাহ যাতে জানতে পারেন কারা সত্যিকার ঈমানদার; এবং (তাদের মধ্য থেকে) বেছে নেন শহীদদের।” –(সুরা আল-ইমরান, আয়াত ১৪০)। তাই প্রতি যুদ্ধে ঈমানদারগণ যেমন পায় মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে শহীদ রূপে দাঁড়াবার সুযোগ, তেমনি বেঈমানগণ পায়,ইসলামের প্রতিপক্ষ রূপে খাড়া হওয়ার সুযোগ। যুদ্ধকালে তাই ব্যক্তির মুখোশ খুলে পড়ে। সে তখন আসল রূপে হাজির হয়। এভাবে যুদ্ধ দেয় মানুষের চেতনা ও চরিত্রকে সঠিক রূপে চেনার সুযোগ। এবং সেটি যেমন একাত্তরে ঘটেছে। তেমনি পলাশির ময়দানেও ঘটেছিল। ফলে সত্তরের নির্বাচনে ও তার পূর্বে শেখ মুজিব ও তার সহচরদের মুখে যে মুখোশ ছিল, সেটি একাত্তরে এসে খসে পড়েছে। সত্তরের নির্বাচনে মুজিবের মুখে প্রতি জনসভায় পাকিস্তান জিন্দাবাদ ধ্বনি উঠেছিল। কোরআন-হাদীসের বিরুদ্ধে কোন আইন করা হবে না -সে কথাও তিনি বলেছেন। বলেছেন, বহুদলীয় গণতন্ত্রের কথা। এসবই ছিল মুখোশ। কিন্তু সেটি খসে পড়ে নির্বাচনি বিজয়ের পর। একাত্তরে তিনি ও তার সহচরগণ পৌত্তলিক ভারতের কোলে গিয়ে উঠেছেন। অপরদিকে যেসব মাদ্রাসার ছাত্র, গ্রাম্য যুবক, পীরের মুরীদ ও নির্দলীয় ব্যক্তি রাজনীতি থেকে আজীবন দূরে থেকেছে তারাও সেদিন পাকিস্তানের পক্ষে অস্ত্র ধরেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসের এটি এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষণীয় দিক। যুদ্ধ এভাবেই বিভাজনটি স্পষ্টতর করে।

ইতিহাস রচনার কাজটি মূলত জনগণের আদালতে সাক্ষ্যদানের কাজ। সত্যের পক্ষে সাক্ষ্যদানের কাজটি যুগ যুগ বেঁচে থাকে লেখনীর মাধ্যমে। এজন্যই লেখক ও তার কলমের কালিকে ইসলামে অতি উচ্চ মর্যাদা দেয়া হয়েছে। অথচ বাংলাদেশে সে কাজটি তেমন হয়নি। বরং এ মুসলিম দেশটিতে বেশী বেশী সাক্ষ্য দেয়া হয়েছে মিথ্যার পক্ষে। সরকারি ও বেসরকারি ভাবে শত শত বই লেখা হয়েছে মিথ্যাকে প্রতিষ্ঠা দেয়ার কাজে। ফলে একাত্তরে ৩০ লাখ নিহতের ন্যায় মিথ্যাটি প্রবল ভাবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। এবং সত্য পরাজিত হয়েছে দেশের সর্বত্র। বাংলাদেশের ইতিহাসে আগ্রাসী ভারত স্থান পেয়েছে বন্ধু রূপে। এরূপ মিথ্যার জোয়ারে ইসলাম ও ইসলামের পক্ষের শক্তি আজ পরাজিত। মিথ্যাচারীগণ প্রচণ্ড ভাবে ছেয়ে গেছে শুধু প্রশাসন, রাজনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে নয়,বুদ্ধিবৃত্তিতেও। যে সমাজে নামায রোযা আছে অথচ রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তিতে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষ নেয়া লোকের অভাব সে সমাজে সুবিচার ও সুনীতি বিজয়ী হয় না। শান্তিও আসে না। এমন দুর্বৃত্ত-অধিকৃত দেশে সুস্থ্ সমাজ, সংস্কৃতি ও রাষ্ট্র নির্মিত হয় না। তাদের হাতে অধিকৃত হয় আদালতও। সে দেশে অতিশয় দুর্বৃত্তরাও তখন নেতা হয়,এমপি হয় এবং প্রধানমন্ত্রীও হয়।  দুর্বৃত্ত মিথ্যাজীবীরাও তখন বুদ্ধিজীবী রূপে গন্য হয়। দেশ তখন দুর্নীতিতে বার বার বিশ্ব রেকর্ড গড়ে। বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে তেমনই এক ব্যর্থ দেশে।

 

অসম্পূর্ণ ও বিকৃত ইতিহাস

জীবনের প্রতি পদে প্রতিটি ব্যক্তিকেই কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হয়। তাকে রায়ও দিতে হয়। সেটি কখনো পরিবারে, কখনো সমাজে, আবার কখনো বা দেশের রাজনীতি ও ইতিহাস প্রসঙ্গে। তাই জীবনের কোন না কোন ক্ষেত্রে প্রতিটি ব্যক্তিকেই বিচারকের আসনে বসতে হয়। রাজনীতি, ইতিহাস ও বুদ্ধিবৃত্তির ক্ষেত্রে সে রায়ের গুরুত্ব আরো অধিক। কে কত দীর্ঘকাল বাঁচলো সেটাই বড় কথা নয়,কতটা সত্যের পক্ষ নিল এবং কী রূপে ঈমানী দায়িত্বপালন করল -সেটিই বড় কথা। যে সমাজে সঠিক দায়িত্ব-পালনকারির অভাব সে সমাজ ব্যর্থতায় রেকর্ড গড়ে। রায় প্রদানে বিচারকের নিজ অভিজ্ঞতা ও বিবেক-বুদ্ধিই যথেষ্ট নয়, আদালতে সত্যের পক্ষে সাক্ষ্যদানকারিও অপরিহার্য। নইলে বিলুপ্ত হয় ন্যায় বিচার। তখন আদালতের বিচারকও মিথ্যাচারীদের হাতে জিম্মি হয়। নিরেট অপরাধীরাও নির্দোষ রূপে মুক্তি পায়। একই কারণে জনগণও নিছক বিবেক-বুদ্ধির উপর ভরসা করে ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সঠিক রায় দিতে পারে না। সে কাজে ঘটনার পক্ষে সঠিক সাক্ষী চাই। সে সাক্ষী পেশ করে ইতিহাসের লেখকেরা। বহুশত বছর পরও একাত্তরের ঘটনা নিয়ে জনগণ রায় দিবে –এবং সেটি ইতিহাসের গ্রন্থে প্রদত্ত সাক্ষ্যের ভিত্তিতে। কিন্তু বাংলাদেশে সে কাজটি যথার্থ ভাবে হয়নি। রাজনীতি ও প্রশাসনের ন্যায় প্রচণ্ড দুর্বৃত্তি ঢুকেছে এ ক্ষেত্রটিতেও। ইতিহাস রচনার এ ময়দানটি যাদের হাতে অধিকৃত তারা মূলত বিজয়ী রাজনৈতিক পক্ষের সৈনিক। রাজনৈতিক নেতাদের ন্যায় তারাও মিথ্যাচারী।ফলে তাদের হাতে পরিকল্পিত ভাবে রচিত হয়েছে বিকৃত ইতিহাস। আর সে প্রকাণ্ড মিথ্যাচারটি ঘটেছে একাত্তরকে নিয়ে।

একটি জাতির জীবনে অতিগুরুত্বপূর্ণ হলো তার ইতিহাস। ইতিহাস-জ্ঞান একটি জাতিকে দেয় প্রজ্ঞা, দেয় দূরদৃষ্টি, দেয় সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের সামর্থ্য। কে শত্রু, আর কে মিত্র -সে ধারণা তো আসে ইতিহাস থেকে।যে জাতি সঠিক ইতিহাস লিখতে জানে না, সে জাতি ইতিহাস থেকে সঠিক শিক্ষাও পায় না। এবং ব্যর্থ হয়,কে বন্ধু এবং কে শত্রু –দেশবাসীর সামনে সে সত্যটি তুলে ধরতে। এমন ব্যর্থতায় জাতির ভবিষ্যতের পথ চলাটি সঠিক হয় না, সুখেরও হয় না। তখন পদে পদে ভ্রান্তি হয়। তখন মুখোশধারি শত্রুও বন্ধু মনে হয়। জাতির জীবনে তখন পলাশি আসে বার বার। তখন দেশ দখলে যায় দেশী মীর জাফর ও বিদেশী ক্লাইভদের হাতে। ধর্ম,রাজনীতি, সমাজনীতি ও ন্যায়নীতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞান ও দিক-নিদের্শনাটি আসে ইতিহাস বিজ্ঞান থেকে; জ্ঞান-বিজ্ঞানের অন্য কোন শাখা থেকে না। পবিত্র কোরআন তাই মানব জাতিকে চিকিৎসা বিজ্ঞান, কৃষি বিজ্ঞান বা যন্ত্র আবিস্কারের শিক্ষা দিতে নাযিল হয়নি। বরং এসেছে তার চেয়েও অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে শিক্ষা দিতে। কারণ চিকিৎসা বিজ্ঞান, কৃষি বিজ্ঞান বা যন্ত্র আবিস্কারে ব্যর্থতার কারণে কোন জনগোষ্টি সভ্য ভাবে বেড়ে উঠতে ব্যর্থ হয় না। সে ব্যর্থতার কারণে মানব সন্তানেরা জাহান্নামমুখিও হয় না। বরং সে ব্যর্থতা থেকে বাঁচার জন্য অপরিহার্য হলো সিরাতুল মুস্তাকীমের রোডম্যাপ এবং সে রোডম্যাপে চলার ইতিহাসলব্ধ প্রজ্ঞা। মহান আল্লাহতায়ালা তাই আদম (আঃ) থেকে শুরু করে মানব জাতির ব্যর্থতার অসংখ্য কাহিনী তুলে ধরে দেখিয়ে দিয়েছেন ব্যর্থ মানুষদের অনুসৃত ভয়ংকর ভ্রান্ত পথগুলো। এবং বার বার সতর্ক করেছেন সে পথভ্রষ্টতা থেকে বাঁচতে। অথচ বাংলাদেশে ইতিহাসচর্চা জিম্মি হয়ে আছে মিথ্যাচারীদের হাতে। ইতিহাসের বইগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে দেশেবাসীকে বিভ্রান্ত করা ও তাদের মাঝে ঘৃণা ছড়ানোর কাজে।

তাই শুধু কৃষি, বাণিজ্য বা শিল্পে সমৃদ্ধি এনে জাতির বাঁচাটি আদৌ সুখের হয় না। সে লক্ষ্যে ইতিহাস-জ্ঞানও সঠিক হওয়া চাই। পবিত্র কোরআনে বিজ্ঞানের তেমন আলোচনা নেই, কিন্তু বিশাল ভাগ জুড়ে আসে ইতিহাস। কারণ, মানব রূপে বেড়ে উঠার জন্য ইতিহাস জ্ঞানটি অপরিহার্য। কিন্তু বাঙালী মুসলিমর জীবনে সে জ্ঞানটি সামান্য। এমনকি ভয়ানক অসম্পূর্ণতা ছিল পলাশীর বিপর্যয় নিয়েও। ইতিহাসে এরূপ অজ্ঞ রাখাটিই ছিল শত্রুর প্রকল্প। ঔপনিবেশিক শাসনের ১৯০ বছরে পলাশীর বিপর্যয় নিয়ে কনো সত্য নির্ভর গ্রন্থ লেখা হয়নি, বরং বহু বই লেখা হয়েছে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশদের ইমেজ বাড়াতে। ইতিহাসের জ্ঞানে সে অসম্পূর্ণতার কারণে দেশবাসীর অজানা রয়ে গেছে দেশটির নিজের জন্মের ইতিহাস। ভারত ভেঙ্গে কেন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হলো, কেনই বা পূর্ব-পাকিস্তানের জনগণ পাশের পশ্চিম বাংলার ন্যায় ভারতে যোগ না দিয়ে হাজার মাইল দূরের পশ্চিম-পাকিস্তানীদের সাথে পাকিস্তানে যোগ দিল –সে প্রেক্ষাপট নিয়ে অখণ্ড পাকিস্তানের ২৩ বছরে ভাল একখানি বইও লেখা হয়নি। কেন বহু লক্ষ বাঙালী-অবাঙালী ভারত থেকে বিতাড়িত হয়ে পূর্ব পাকিস্তানে আশ্রয় নিল -সে ইতিহাসও যথার্থ ভাবে তুলে ধরা হয়নি। সভ্য-মানুষেরা শুধু প্রতিবেশী দেশের মানুষের খবরই নেয় না, পাশের বনজঙ্গলের পশু-পাখিরও খবর রাখে। কিন্তু প্রতিবেশী হিন্দুস্থানের মুসলিমদের দুরাবস্থার কথা বাংলাদেশের জ্ঞানচর্চায় গুরুত্ব পায়নি। ফলে লেখা হয়নি ভারতীয় মুসলমানদের দুর্দশা নিয়ে তেমন কোন বই। সেটি হলে ১৯৪৭’য়ে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠা, পূর্ব-বাংলার পাকিস্তান ভূক্তি এবং একাত্তর ঘটনাবলি বুঝতে অনেক সহায়তা মিলতো। এবং বাংলাদেশের জন্য ভারতে বিলীন হওয়া যে কতটা আত্মঘাতি -সে বিষয়টি নিয়েও সঠিক ধারণা হতো।

অন্ধ মানুষকে এমনকি শিশুও ভ্রান্ত পথে টেনে নিতে পারে। তেমনি ইতিহাসের জ্ঞানে অজ্ঞব্যক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, লেখক, বুদ্ধিজীবী, উকিল, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বা দেশের মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী হলেও তাকে যে কোন শত্রুশক্তিও কলুর বলদ বানাতে পারে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন কলুর বলদের সংখ্যা কি কম? ইতিহাস-জ্ঞান এজন্যই অন্যতম শ্রেষ্ঠ জ্ঞান। পদার্থ বিদ্যা, চিকিৎসা বিদ্যা, ইঞ্জিনীয়ারিংয়ের ন্যায় জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা শাখা পার্থিব জীবনে বেঁচে থাকাকে সহজতর করে মাত্র, কিন্তু রাজনীতি, সংস্কৃতি বা ধর্মকর্মে পথ দেখায় না। সত্য-মিথ্যা এবং শত্রু-মিত্র চিনতেএ সাহায্য করে না। অতীতে যারা পিরামিডের ন্যায় বিশ্বের বিস্ময়কর স্থাপনা গড়েছে তারাও একই কারণে সত্যকে নিরেট মিথ্যা থেকে আলাদা করতে পারিনি। গুহাবাসি অজ্ঞ ব্যক্তির ন্যায় তারাও ফিরাউনকে ভগবান বলেছে। অথচ ইতিহাস-জ্ঞান জাতীয় জীবনে পথ চলায় কম্পাসের কাজ করে। ইতিহাসের শুরু তো মানব সৃষ্টির শুরু আদম (আঃ) থেকে। ইতিহাস বিজ্ঞান শুধু সত্য-মিথ্যার পরিচয়ই দেয় না, উভয়ের দ্বন্দের ইতিহাসও পেশ করে। তাই যে জাতির জীবনে সঠিক ইতিহাস নাই, সে জাতির জীবনে পথ চলায় কম্পাসও নাই। তখন পথ চলায় বার বার ভূল হয়। বাংলাদেশে সে ব্যর্থতাটি ভয়ানক। ফলে জনগণ ব্যর্থ হচ্ছে ঘটনার বিচারে সঠিক তথ্য ও সাক্ষী পেতে। ফলে প্রচণ্ড ব্যর্থতা ফুটে উঠছে জনগণের রায়দানেও। দেশের রাজনীতি তাই বার বার স্বৈরাচারের গর্তে গিয়ে পড়ছে। জনগণকে শুধু বনের হিংস্র বাঘ-ভালুককে চিনলে চলে না, সমাজের মানবরূপী হিংস্র পশুদেরও চিনতে হয়। নইলে বনজঙ্গলের চেয়ে বেশী রক্তপাত হয় জনপদে। জনগণের রায়ে তখন দুর্বৃত্ত স্বৈরাচারী,গণতন্ত্রের হত্যাকারি, একদলীয় শাসনের প্রতিষ্ঠাতা এবং বাকস্বাধীনতা হরণকারী ব্যক্তিওতখন নেতা বা নেত্রী বা সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি রূপে গণ্য হয়। এমন ব্যক্তিগণ তখন জনগণের দ্বারা নির্বাচিত ও সম্মানিতও হয়। ইতিহাসের পাঠ নিতে ­-বিশেষ করে একাত্তরের মূল্যায়নে বাংলাদেশীদের বুদ্ধিবৃত্তিক ব্যর্থতা যে কতটা গভীর –এসব হলো তারই প্রমাণ।

                        

ঘৃনা সৃষ্টির হাতিয়ার

যে কোন জাতির জীবনেই যুদ্ধ আসে। একাত্তরে তেমন একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ এসেছিল বাংলাদেশেও। স্বভাবতই সে যুদ্ধে দুটি পক্ষ ছিল। একটি পক্ষ বিজয়ী হয়েছে, অপরটি পরাজিত। সভ্য দেশে বিজয়ীরা পরাজিতদের জন্যও জায়গা ছেড়ে দেয়। যেমন আদালতে বিবাদী বা আসামীকেও আত্মপক্ষ সমর্থনে কথা বলার সুযোগ দেয়া হয়। এর ফলে একে অপরের বক্তব্য ও অনুভূতিকে বুঝতে পারে, মূল্যায়নেরও সুযোগ পায়। ধীরে ধীরে সমাঝোতার পরিবেশ সৃষ্টি হয়। জাতি তখন অবিরাম বিভক্তি ও সংঘাত থেকে মুক্তি পায়। সুবিচারের লক্ষ্য বিবাদকে স্থায়ী রূপ দেয়া নয়; বরং শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থানের পরিবেশ সৃষ্টি করা।ইতিহাসের বিচারে তো সে কাজটিই হয়। এখানে বাদী-বিবাদী ঊভয়ের বক্তব্যকে সমান গুরুত্ব দিয়ে শোনা হয়। একটি বিবেকবান জাতির লক্ষ্য তো লাগাতর যুদ্ধ নিয়ে বাঁচা নয়, বরং শান্তি নিয়ে বাঁচা। সে শান্তির লক্ষ্যেই প্রকাণ্ড একটি গৃহযুদ্ধের পরও উত্তর ও দক্ষিণে বিভক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আবার এক হয়ে গেছে। অবিরাম বিভক্তি একমাত্র শত্রুরই কাম্য হতে পারে, কোন দেশপ্রেমিকের নয়। যারা শুধু নিজেদের স্বার্থটি দেখে, দেশের নয় –একাজ তো তাদের। এমন শত্রুদের তো যুদ্ধ বাঁচিয়ে রাখার মধ্যেই মহাতৃপ্তি। বাস্তবতা হলো, বাঙালী মুসলিমের যারা শত্রু তাদের যুদ্ধ একাত্তরে শেষ হয়নি। ফলে শেষ হয়নি যুদ্ধকালীন সংঘাতকে বাঁচিয়ে রাখার রাজনীতিও। এজন্যই বাংলাদেশের রাজনীতিতে একাত্তরের পরাজিত পক্ষের জন্য কোন জায়গাই রাখা হয়নি। স্থান দেয়া হয়নি ইতিহাসের বইয়েও। তাদের বিরুদ্ধে বরং অবিরাম নিক্ষিপ্ত হচ্ছে গালি-গালাজ। হরণ করা হয়েছে তাদের বাক স্বাধীনতা। ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে অনেকের নাগরিকত্বও। বাংলাদেশের সেক্যুলারিস্টদের রচিত ইতিহাসের বই তাই পরিণত হয়েছে নিছক ঘৃণা সৃষ্টির হাতিয়ারে। এমন ইতিহাস কি বিবেকমান মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়?

মহান আল্লাহতায়ালা আমাকে এ ক্ষুদ্র জীবনে বহু কিছুই কাছে থেকে দেখবার সুযোগ দিয়েছেন। একাত্তরের দুই পক্ষের অনেক নেতাকে যেমন নিজ চোখে দেখার সুযোগ পেয়েছি,তেমনি সুযোগ মিলেছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সরাসরি জানার। সুয়োগ মিলেছে দীর্ঘ বহু দশক ধরে মিডিয়া ও বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা অবলোকনের। ফলে দায়ভারও বেড়েছে। কারণ দুর্বৃত্তি, সন্ত্রাস, মিথ্যাচার, অপরাধ ও ধোকাবাজির ঘটনা সবার পক্ষে স্বচোখে দেখার সুযোগ হয় না। কিন্তু যারা দেখেন তাদের দায়িত্বও বেড়ে যায়। তখন শুরু হয় ঈমানের পরীক্ষা। কারণ সাক্ষী গোপন করাটি কবিরা গুনাহ। যে সমাজে এরূপ কবিরা গুণাহ বেশী বেশী হয়, সে সমাজে ন্যায় বিচারেরও মৃত্যু ঘটে। তাই যারা কোন অপরাধের প্রত্যক্ষ সাক্ষী তাদের দায়ভারটি হলো আদালতে সত্য সাক্ষী পেশ করা।তাই মুখ খুলতে হয়; সামর্থ থাকলে লিখতেও হয়। আর সেটি জনগণের আদালতে। সেটি শুধু বর্তমান প্রজন্মের জন্যই নয়,আগামী প্রজন্মের জন্যও। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে সে দায়িত্ব আরো বেশী। জনগণের আদালতে যারা লাগাতর সাক্ষ্য দিয়ে যাচ্ছে তারা হলো ইসলামবিরোধী শক্তি। ইসলাম ও ইসলামপন্থীদের পরাজিত দেখার মধ্যেই তাদের আনন্দ।

 

বিচারে অবিচার

বাংলাদেশে ইসলামের বিজয় রুখতে সেক্যুলার জাতীয়তাবাদীরা অস্ত্র হিসাবে বেছে নিয়েছে একাত্তরে ইসলামপন্থীদের ভূমিকা। সেক্যুলারিস্টদের ন্যায় ভারতও চায় না তার পূর্ব সীমান্তে পাকিস্তানের ন্যায় আরেক শক্তিশালী মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা পাক। তাই শক্তিশালী ইসলামী বাংলাদেশের নির্মাণে যারা বিশ্বাসী তাদেরকেই ভারত ও ভারতসেবী রাজনৈতিক দলগুলো নির্মূল করতে চায়। এটি তাদের গোপন বিষয়ও নয়। এজন্যই ইসলামপন্থীদের একাত্তরের ভূমিকাকে অপরাধ রূপে চিহ্নিত করে তাদেরকে আসামীর কাঠগড়ায় খাড়া করা হচ্ছে। তাদের আক্রোশ ইসলামের বিরুদ্ধেও। আক্রোশের কারণ, ইসলাম তাদের সেক্যুলার দর্শনকে বৈধতা দেয় না। সেক্যুলার দর্শনের আলোকে প্যান-ইসলামীক ভাতৃত্বের পক্ষে দাঁড়ানোটি চিহ্নিত হচ্ছে অপরাধ রূপে। যাদের মধ্যে তারা ইসলামের পক্ষে জেগে উঠার শক্তি দেখে তাদের বিরুদ্ধেই তারা বিচার বসায়। তাদের হাতে আদালত পরিণত হয়েছে ইসলামের পক্ষের শক্তির নির্মূলের হাতিয়ার। দেশের আদালতে তারাই উকিল, তারাই সাক্ষী এবং তারাই বিচারক। এরূপ অধিকৃত আদালতের মঞ্চ থেকে তাদের পক্ষে রায় দেয়াও অতি সহজ হয়েছে। বিচার কাজে তাদের প্রচণ্ড আগ্রহ এ কারণে যে, জনগণের চেতনায় প্রবল ভাবে বিজয়ী হয়েছে জাতীয়তাবাদী সেক্যুলার দর্শন। এ দর্শনে ইসলাম প্রতিষ্ঠার পক্ষ নেয়াটিই অপরাধ; ফলে সে অপরাধে তাদের শাস্তি দেয়াও সহজ।

বিচারের কাজে আদলতে যেটি নিরবে কাজ করে সেটি বিচারকের নিজের দর্শন বা চিন্তার মডেল (conceptual paradigm)। বিচারকের দর্শন বা চিন্তার মডেল পাল্টে গেলে বিচারও পাল্টে যায়। ঘটনার বিচার-বিশ্লেষণে একই রূপ ঘটনা ঘটে জনগণের চিন্তারাজ্যে। চিন্তা-চেতনার সেক্যুলার মডেল ও ইসলামী মডেলের মাঝে পার্থক্যটি বিশাল। চেতনার দুই ভিন্ন মডেলে বিচার কখনোই একই রূপ হয় না। সেক্যুলার মডেলে নিরেট ব্যাভিচারও চিত্রিত হয় গভীর প্রেম রূপে। বাংলাদেশের কুফরি আইনে এটি কোন অপরাধই নয় -যদি তা উভয়ের সম্মতিতে হয়। তাই পতিতাবৃত্তির নানা ঘৃণ্য পাপাচারটি দেশের সেক্যুলার আইন অনুমোদিত একটি বৈধ পেশা। ঔপনিবেশিক কাফের শাসনামলে এ পাপ যে ভাবে প্রতিষ্ঠা ও পরিচর্যা পেয়েছে তা এখনও পাচ্ছে। অথচ মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে পবিত্র কোরআনে ঘোষিত আইনে বিবাহিত ব্যক্তির ব্যাভিচার পাথর মেরে হত্যাযোগ্য অপরাধ। অবিবাহিতের জন্য রয়েছে জনসম্মুখে তার খালি পিঠে ৮০ চাবুক মারার শাস্তি। তেমনি সুদ খাওয়ার ন্যায় হারাম কাজটিও সেক্যুলার চেতনায় কোন পাপ নয়, নিষিদ্ধও নয়। অথচ ইসলামের সুদ খাওয়াকে মায়ের সাথে জ্বিনার চেয়েও জঘন্য বলা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতায়ালা সুদখোরের বিরুদ্ধে তাঁর নিজের যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন।কিন্তু কাফেরদের ন্যায় বাংলাদেশের সেক্যুলারদের কাছেও এ মহাপাপটি যেমন আইনসিদ্ধ, তেমনি নীতিসিদ্ধও। মানুষে মানুষে বিচারে যে প্রচণ্ড পার্থক্য -তা তো জীবন দর্শনে এরূপ ভিন্নতার কারণে। ধর্ম ও দর্শনের ভিন্নতার কারণে বিষাক্ত স্বর্প যেমন দেবীর আসন পায়, তেমনি ইসলামের চিহ্নিত শত্রুগণও বীরের মর্যাদা পায়। এরূপ অপরাধীদের থেকে ইসলামের পক্ষের শক্তি সুবিচার পাবে -তা কি আশা করা যায়? তাই কোন মুসলিম দেশে শরিয়তের বদলে কুফরি আইন চালু যেমন হারাম, তেমনি অমুসলিম, সেক্যুলারিস্ট বা ইসলামের বিপক্ষ ব্যক্তিকে বিচারক রূপে মেনে নেয়াও হারাম। নবীজী (সাঃ) ও খোলাফায়ে রাশেদার আমলে এমন গর্হিত কর্ম কখনোই ঘটেনি। অথচ বাংলাদেশের ন্যায় সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমের দেশে সেটিই নিয়ম। ঔপনিবেশিক কাফের শক্তির বিচার ব্যবস্থাকেই বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে স্রেফ শয়তানকে খুশি করার জন্য।

এমন একটি সেক্যুলার দর্শনের আলোকে বিচার হয়েছে একাত্তরে ইসলামপন্থীদের ভূমিকা নিয়েও। সেক্যুলারিজম, জাতীয়তাবাদ, সমাজবাদ ও হিন্দুধর্মের মানদণ্ডে একাত্তরে অখণ্ড পাকিস্তানের পক্ষ নেয়টি ছিল অপরাধ। এসব মতের অনুসারিগণ মহান কর্ম মনে করেছে পাকিস্তান ভাঙ্গাকে। মহান কর্ম মনে করে দেশের রাজনীতিতে ইসলামকে পরাজিত রাখাকেও। তারাই ১৯৪৭’য়ে মহান কর্ম গণ্য করেছিল অখণ্ড ভারত নির্মাণকে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ইসলামী মানদণ্ডেও কি অখণ্ড পাকিস্তানের পক্ষ নেয়াটি অপরাধ? বাংলাদেশের শতকরা একানব্বই ভাগ জনগণ যেহেতু মুসলমান, একাত্তরের ভূমিকা নিয়ে সকল পক্ষের বিচার হওয়া উচিত কোরআন-হাদীসের আইনে তথা শরিয়তের আইনে। মুসলিমের জীবনে ইসলাম বিরোধী সেক্যুলার আইনের স্থান দেয়া যেমন হারাম, তেমনি হারাম হলো সে আইন থেকে বিচার চাওয়া। মুসলমানের একমাত্র আনুগত্য তো মহান আল্লাহতায়ালার আইনের প্রতি; মানুষের নির্মিত কোন আইনের প্রতি নয়। কিন্তু বাংলাদেশের আদালতে সে শরিয়তি আইনের প্রয়োগ হয়নি। শরিয়তের আইনে কোন মুসলিম দেশ ভাঙ্গা বা মুসলিমদের মাঝে সংঘাত সৃষ্টি করাটি গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ। কোরআনের পরিভাষায় এটি ফিতনা। পবিত্র কোরআনে এমন ফিতনাকে মানব হত্যার চেয়েও জঘন্য বলা হয়েছে। বলা হয়েছেঃ “আল ফিতনাতু আশাদ্দু মিনাল কাতল”।–(সুরা বাকারা,আয়াত ১৯১)। অনুবাদঃ ফিতনা মানব হত্যার চেয়েও জঘন্য। ফিতনা তো রাষ্ট্রের বুকে এমন বিদ্রোহাত্মক পরিস্থিতি যা মুসলিম জীবনে শান্তি, ধর্মপালন,শরিয়তের প্রতিষ্ঠা তথা ইসলামের পূর্ণ বিজয়কে অসম্ভব করে; এবং মুসলিম ভূমিতে ডেকে আনে ইসলামের শত্রুপক্ষ তথা কাফের শক্তিকে। অথচ ইসলামে শাস্তিযোগ্য নিষিদ্ধ কর্ম হলো,মুসলিম দেশের ক্ষতি সাধনে কোন অমুসলিম কাফের শক্তিকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করা। পবিত্র কোরআনে সেটিকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। -(সুরা মুমতিহানা, আয়াত ১)।

বাংলাদেশে ইসলামের বিপক্ষ শক্তির অপরাধ, সমাজ বা রাষ্ট্রজুড়ে তারা প্রতিবন্ধকতা গড়েছে জান্নাতের পথে চলায়। প্রশ্ন হলো, শরিয়ত পালন না হলে কি ইসলাম পালন হয়? নবীজী (সাঃ) ও সাহাবাদের জীবনে একটি দিনও কি শরিয়তী আইনের বাইরে অতিবাহিত হয়েছে? অথচ সেটির বিরুদ্ধে সেক্যুলারিস্টদের যুদ্ধ! পবিত্র কোরআনে তাই কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে এমন ফিতনা সৃষ্টিকারিদের নির্মূলের। বলা হয়েছে, “তোমার তাদের বিরুদ্ধে লড়াই কর যে পর্যন্ত না ফিতনা নির্মূল হয় এবং আল্লাহর দ্বীন বিজয়ী হয়।” -সুরা বাকারা আয়াত ১৯৩)। কিছু লোকের নিহত হওয়াতে মুসলিম দেশ কাফের শক্তির পদানত হয় না। বরং তেমন যুদ্ধে বিজয়ী হলে দেশে ধর্মপালন,শরিয়ত পালন, ইসলামের নামে রাজনীতি বা কোরআনের জ্ঞানদান আরো ব্যাপককতর হয়। কিন্তু ভারতের ন্যায় একটি অমুসলিম শক্তি ও তাদের সেবাদাসদের আধিপত্য বাড়লে অসম্ভব হয় দ্বীন পালন। এবং নিষিদ্ধ হয় শরিয়ত প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার নিয়ে সংগঠিত হওয়া। একাত্তরের পর সে ফিতনাতেই ছেয়ে যায় দেশ;এবং সেটি ভারতসেবী সেক্যুলারিস্টদের নেতৃত্বে। এ অবধি একাত্তরে নানা পক্ষের ভূমিকা নিয়ে যত বিশ্লেষণ হয়েছে ও যত বই লেখা হয়েছে তার প্রায় সবটুকু হয়েছে বাঙালী জাতীয়তাবাদী সেক্যুলার চেতনা ও মূল্যবোধে। ফলে একাত্তরে তাদের কৃত অপরাধগুলোকে তুলে ধরা হয়নি। অথচ ইসলাম ১৪ শত বছর পূর্বেই এরূপ সেক্যুলার চেতনা ও মূল্যবোধকে মুসলিমগণ বিলুপ্ত করেছিল। ইসলামে রাষ্ট্র থেকে ইসলামকে পৃথক করা হারাম। অথচ সেক্যুলারিজম তথা ইহজাগতিকতা সে হারামের পক্ষে ওকালতি করে। তারা দাবিয়ে রাখে সংস্কৃতি, রাজনীতি ও আইন-আদালতে পরকালের কল্যাণ চিন্তা। অথচ মুসলিমের ধর্মকর্মই শুধু নয়, তার রাজনীতি, আইন-আদালত ও সংস্কৃতিও নির্ধারিত হয় আখেরাতে মুক্তির চেতনা ও কোরআনী বিধানের অনুসরণ থেকে–এটিই তো ইসলামের মৌলিক শিক্ষা।

 

এজেন্ডা সত্য প্রকাশের

বাংলাদেশে শুধু যে সুদ, ঘুষ, দুর্বৃ্ত্তি, পতিতাবৃত্তি ও সন্ত্রাসের ন্যায় নানারূপ হারাম কর্ম বেড়েছে তা নয়, দেশটির চেতনার ভুমিও সেক্যুলারিজমের ন্যায় হারাম চেতনাটি দ্বারা অধিকৃত। বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তির ময়দানে যারা প্রবল ভাবে বিজয়ী তারা এই হারাম চেতনার ধারকগণ। এজন্যই দেশে স্কুল-কলেজের পাঠ্য বইয়ে ও বু্দ্ধিবৃত্তিক অঙ্গণে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গিতে একাত্তরের ঘটনাবলির উপর কোন বিশ্লেষণ নেই। অথচ মুসলিমের প্রতিটি কাজকর্মের বিচার হতে হবে ইসলামের ভিত্তিতে। ফ্যাসিবাদী পেশী শক্তির বলে সেটি এ যাবত বন্ধ রাখা হয়েছে। আজকের বাংলাদেশ প্রকৃত অর্থেই বুদ্ধিবৃত্তিক সন্ত্রাসের দেশ; এবং সেটি একাত্তর থেকেই। ফলে নতুন প্রজন্ম বেড়ে উঠছে সীমাহীন ইতিহাস বিকৃতি নিয়ে। ইসলামের পক্ষের শক্তিও এ নিয়ে মুখ খুলছেন না। তারা ভাবছেন, অতীত নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি না করাই ভাল। অথচ অতীতকে কি ভূলা যায়? চেতনার মানচিত্রটি তো গড়ে উঠে ইতিহাসের জ্ঞান থেকে। তাই বাংলাদেশে বুদ্ধিবৃত্তির মূল লড়াইটি তো হবে একাত্তরকে নিয়ে। ইসলামপন্থীর সামনে এগুতে হলে এ লড়াইয়ে জিততেই হবে। তাছাড়া ইসলামের দর্শনগত বল তো অপ্রতিরোধ্য। বুদ্ধিবৃত্তিক লড়াইয়ে পবিত্র কোরআনই হলো সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার। অথচ কোরআনী জ্ঞান না থাকার কারণে বাঙালী মুসলিমের হাত আজ হাতিয়ারশূণ্য। যারা পৌত্তলিকতা, জাতীয়তাবাদ, সেক্যুলারিজম, সমাজবাদ ও অন্যান্য মতবাদকে গ্রহণ করে এবং সেসব মতবাদের নেতা বা প্রবক্তাদের অভিভাবক রূপে গ্রহণ করে মহান আল্লাহতায়ালার দৃষ্টিতে তারা মাকড়সা। বলা হয়েছে, “যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যদের অভিভাবক রূপে গ্রহণ করে তাদের দৃষ্টান্ত মাকড়সার ন্যায়। -(সুরা আনকাবুত,আয়াত ৪১)। আর মহান আল্লাহতায়ালা যাদেরকে মাকড়সা বলেছেন তাদের বিরুদ্ধে লড়তে ঈমানদারর ভয় থাকে কি? তাই মরুবাসী ক্ষুদ্র মুসলিম জনবসতি নির্ভয়ে সে আমলের সর্ববৃহৎ দুটি মাকড়সার জাল -রোমান ও পারসিক সাম্রাজ্যকে অতি সহজেও নির্মূল করতে পেরেছিলেন।

অথচ আজ সে মাকড়সাগুলোই নিজেদের জাল বিস্তার করে আছে সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে। ইসলামের সৈনিকগণ ময়দানে নামলে মাকড়সার সে জাল যে সহসাই নির্মূল হয়ে যাবে -তা নিয়ে সামান্যতম সন্দেহ চলে কি? সন্দেহ করলে কি ঈমান থাকে? কারণ,ইসলামের পক্ষের শক্তির এমন বিজয়ের প্রতিশ্রুতি মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বার বার দিয়েছেন। বলা হয়েছে, “তোমরা হীন বল হয়ো না, এবং দুঃখিতও হয়ো না; তোমরাই বিজয়ী যদি তোমরা মু’মিন হয়ে থাক।” –(সুরা আল ইমরান,আয়াত ১৩৯)। কিন্তু বাংলাদেশে ইসলামপন্থীদের সমস্যাটি তাদের নিজেদের নিয়ে। তারা ইতিহাস থেকে যেমন শিক্ষা নেয়নি। তেমনি পবিত্র কোরআন থেকেও শিক্ষা নেয়নি। ফলে ইসলামবিরোধী ধ্যান-ধারণার স্রোতের মুখে শক্তভাবে দাঁড়াবার ঈমানী ও বুদ্ধিবৃত্তিক বল যেমন নাই, তেমনি সাহস ও আন্তরিক ইচ্ছাও নাই। তারা নিজেরাই বরং ভেসে চলেছে স্রোতের টানে; এবং আত্মসমর্পণ করেছে শত্রুর ছড়ানো মিথ্যাচারের কাছে। অনেকের আত্মসমর্পণ এতোটাই গভীর যে, নিজেদের একাত্তরের পরাজয় নিয়ে সেক্যুলারিস্টদের বিজয়ের দিনগুলোতেও রাস্তায় উৎসবে নামছে! মাকড়সার জাল না ভাঙলে তা দিন দিন আরো বিস্তৃত হয়। এভাবেই দিন দিন প্রবলতর হয়েছে মিথ্যাচারের জাল। এবং সে জালে আটকা পড়ছে ভবিষ্যতের প্রজন্ম। এমন কি আটকা পড়ছে তথাকথিত বহু ইসলামপন্থীও।

মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্যের লড়াই তো চিরকালের। সে লড়াইয়ে সত্যের পক্ষ নেয়াই তোঈমানদারী। সত্য প্রকাশ না করার অপরাধে মহান আল্লাহতায়ালার দরবারে যে অভিযুক্তহতে হবে–সে সত্যটিও বহু মুসলিম ভূলে গেছে। এটিও তো সত্য,মিথ্যার স্তূপ যত বিশালই হোক সত্যের আগমনে তা দ্রুত বিলুপ্ত হতে বাধ্য। বাংলাদেশে মিথ্যার যে বিশাল বিজয় তার মূল কারণ, সত্যের আলো সেখানে যথার্থ ভাবে জ্বালানো হয়নি। আরবে হাজার হাজার বছর ধরে মিথ্যার যে স্তূপ জমেছিল তা সত্যদ্বীন আসার সাথে সাথেই বিলুপ্ত হয়েছিল। অথচ সত্যদ্বীন আগমনের পূর্বে কেউকি সেটি ভাবতে পেরেছিল? সত্য প্রতিষ্ঠা পেলে একাত্তরের আওয়ামী বাকশালী চক্রের ষড়যন্ত্রের ইতিহাসও যে প্রকাশ পাবে তা নিয়ে কি সন্দেহ আছে? তারা নিজেরাও সেটি বুঝে। তাই সত্যের প্রচারে তারা বাধা দেয়। পেশী শক্তিই তাদের মূল শক্তি। মহান আল্লাহতায়ালা বলেছেন, “বলুন,সত্য এসে গেছে মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। আর মিথ্যা তো বিলুপ্ত হওয়ার জন্যই।”-(সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত ৮১)। তবে সে জন্য শর্ত হলো সত্যকে প্রবল বিক্রমে প্রকাশ করা। আর এ দায়িত্বটা প্রতিটি সত্যপন্থীর। শাহাদাতে হক্ব এজন্যই ইসলামে ফরয।

আজ  যারা জীবিত, শত বছর পর এদেশে তারা কেউই থাকবে না। কিন্তু থাকবে আজকের লেখা বই। নতুন প্রজন্মের আদালতে তখন একাত্তরের রাজনীতি ও নৃশংসতা নিয়ে আলোচনা হবে; এবং বিচারও বসবে। একাত্তরের ইতিহাস থেকে মিথ্যার আবর্জনা সরিয়ে তখনও তন্য তন্য করে সত্যকে খোঁজা হবে। সত্যকে তাই দৃশ্যমান ও সহজলভ্য করার দায়িত্বটি প্রতিটি ঈমানদারের।বিবেকের সে আদালতে শুধু ইসলাম-বিরোধী ও ভারতসেবীদের লেখা মিথ্যা-পূণ্য বইগুলি সাক্ষ্য দিলে বিচারের নামে বিশাল অবিচার হবে। আগামীদের সে আদালতেও সঠিক সাক্ষ্য চাই। তিরিশ লাখ নিহত ও তিন লাখ ধর্ষিতার মিথ্যা তথ্য দিয়ে তারা যেরূপ নিজেদের অপরাধগুলোকে ঢেকেছে তার ফলে কেউ কি সত্যের ধারে কাছেও পৌঁছতে পারবে? আজকের ন্যায় তখনও প্রশংসিত হবে আগ্রাসী ভারতের অধিকৃতি। এবং ভারতের সেবাদাস এবং ইসলামের শত্রুগণ চিত্রিত হবে বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান রূপে।তখন অশ্লিল কুৎসা ও চরিত্রহননের শিকার হবে ইসলামের নিষ্ঠাবান সৈনিকেরা।মিথ্যার জোয়ারে মানুষ তখন ভূলে যাবে ভারতীয় লুণ্ঠন, তলাহীন ভিক্ষার ঝুলি, প্রাণনাশী দুর্ভিক্ষ,ভারতসেবীদের সন্ত্রাস, বাকশালী স্বৈরাচার ও সীমাহীন দুর্বৃত্তির কথা। মানুষ ভূলে যাবে হাজার হাজার নিরস্ত্র অবাঙালীর বিরুদ্ধে পরিচালিত নৃশংস গণহত্যার কথা। ফিরাউনদের দুর্বৃত্তিগুলো ভূলে যাওয়ার বিপদ তো সাংঘাতিক। তখন ফিরাউনগণও পুঁজনীয় হয়।তাদের আদর্শও তখন দীর্ঘায়ু পায়। ইসলামের শত্রুগণ তো সেটিই চায়। এজন্যই বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তির ময়দানে তাদের বিনিয়োগটি বিশাল। এবং প্রতিষ্ঠা করেছে বু্দ্ধিবৃত্তিক সন্ত্রাস। ঈমানদারদের তাই শুধু মহাপ্রভু মহান আল্লাহতায়ালার কুদরতকে চিনলে চলে না। সত্যের দুষমন নমরুদ-ফিরাউনদেরও চিনতে হয়। মহান আল্লাহতায়ালা এজন্যই পবিত্র কোরআনে নিজের পরিচয় তুলে ধরার সাথে সাথে বার বার নমরুদ-ফিরাউনদের ন্যায় দুর্বৃত্তদের কাহিনী বার বার বর্ণনা করেছেন। মহান আল্লাহতায়ালার সে সূন্নত পালনে কোন ঈমানদার কি উদাসীন হতে পারে?

তাই ঈমানদারকে শুধু সত্যকে নিয়ে বাঁচলে চলে না, বাঁচতে হয় ফিরাউনদের নৃশংস দুর্বৃত্তির ভয়ানক স্মৃতি নিয়েও। সেগুলো জনসমাজে সর্বত্র প্রকাশ করাও মহান আল্লাহতায়ালার সূন্নত। কিন্তু বাংলাদেশে সে কাজ কতটুকু হচ্ছে? শত বছর বা বহুশত বছর পর যখন একাত্তর নিয়ে বিচার বসবে তখন ইতিহাসের বিচারকেরা অবাক হবে মিথ্যার তুলনায় অতি বিরল সত্য বিবরণ দেখে। ইসলামের শত্রুপক্ষ একাত্তর নিয়ে বইয়ের প্লাবন এনেছে।কিন্তু ইসলামের পক্ষের শক্তি ক’খানা লিখেছে? আগামী প্রজন্ম অবাক হবে সত্যকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে ইসলামপন্থীদের নিরবতা ও নির্লিপ্ততা দেখে। চোখের সামনে ঘটে যাওয়া অপরাধগুলোর সামনে নিরব থাকাটিও তো অপরাধ।সামর্থ থাকা সত্বেও মিথ্যার সামনে সত্য না বলাটিই তো পাপ। এমন নিরবতায় মিথ্যার প্রচারকগণ তখন আরো মিথ্যাচারে উৎসাহ পায়। তখন সত্যের উপর বিজয়ী হয় মিথ্যা। অথচ মিথ্যার কাছে আত্মসমর্পণ ইসলামে হারাম; এবং মিথ্যার স্তুপ সরনোর প্রতিটি প্রচেষ্টাই হলো জিহাদ। কিন্তু সে জিহাদে যারা সত্যের পক্ষে কথা বলবে সে সৈনিক কই? মিথ্যার বিরুদ্ধে জিহাদে বই হলো উত্তম হাতিয়ার। এ বইটি লেখা হয়েছে সত্যকে তুলে ধরার তেমন একটি চেতনা থেকে। তাই এ বইয়ের কাঙ্ক্ষিত পাঠক স্রেফ আজকের প্রজন্ম নয়, আগামী দিনেরও। লক্ষ্য, তাদের আদালতেও প্রকৃত সত্যকে তুলে ধরা।

 

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *