বিবিধ ভাবনা ৮২

ফিরোজ মাহবুব কামাল

১. যে দেশে শয়তান বিজয়ী এবং অপরাধীরাও সম্মানিত হয়

কর্ম, চরিত্র, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সভ্যতার বিচারে বহু জাতিই উপরে উঠে, আবার অনেক জাতিই দ্রুত নীচে নামে। কেন উপরে উঠে এবং কেন নীচে নামে –সে বিষয়টি কোন রকেট সায়েন্স ও জটিল বিজ্ঞানের বিষয় নয়। একজন নিরক্ষর মানুষও সেটি বুঝে -যদি তার বিবেক ও স্বাভাবিক কান্ডজ্ঞান সঠিক ভাবে কাজ করে। মুসলিমদের গৌরবকালে ভেড়ার রাখালও সেটি বুঝতো। ফলে সে কালে তারা মানব ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতার জন্ম দিতে পেরেছিল। সে সামান্য মৌলিক বিষয়টুকু বুঝার জন্য কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষার প্রয়োজন পড়ে না। অথচ অধিকাংশ মানুষ জীবনের সবচেয়ে বড় ভূলটিই এখানে করে –যা তাদের এ জীবনের পুরা বাঁচাটাই ব্যর্থ করে দেয়।

মহান আল্লাহতায়ালা সত্য কথা বলা ও নেক আমলের মধ্যে জান্নাতের পুরস্কার রেখেছেন। এটি সত্যসেবী সভ্য মানুষ রূপে বেড়ে উঠা ও বাঁচার পুরস্কার। এবং জাহান্নামের আযাব রেখেছেন অসত্য এবং মিথ্যাবাদী দুর্বৃত্তের পক্ষ নেয়া এবং তাকে শ্রদ্ধেয় ও মাননীয় বলার মধ্যে। এটি মানব রূপে বেড়ে উঠায় ব্যর্থতার শাস্তি। মানবের ঈমান ও বিবেক গোপন থাকার বিষয় নয়, তা দিনের আলোর মত দেখা যায়। যে ব্যক্তি মুর্তি ও গরুকে ভগবান বলে, বুঝতে হবে সে একটা আস্ত বেঈমান ও কাফের। তেমন যে ব্যক্তি একজন দুর্বৃত্ত ভোটডাকাতকে শ্রদ্ধেয় ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলে, বুঝতে হবে সে একটা আস্ত অসভ্য ও অমানুষ। বুঝা যায় সে মানুষ হতেই ব্যর্থ হয়েছে। এ ব্যর্থতার কঠিন শাস্তিও আছে। এরূপ বেঈমান ও অসভ্য মানুষেরা আসলে জাহান্নামের বাসিন্দা, দুনিয়াটাকেও তারা জাহান্নাম বানাতে চায়। এরাই জনগণের দুশমন। বাংলাদেশে এরাই গুম, খুন, ধর্ষণ, চুরিডাকাতি ও সন্ত্রাসের জোয়ার এনেছে। ইসলাম এমন অপরাধীদের নির্মূল করতে বলে। এদের নির্মূলের কাজটিই পবিত্র জিহাদ –যা সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত।

অধিকাংশ মানুষ জাহান্নামে যাবে মানুষ খুন, ধর্ষণ বা চুরিডাকাতির জন্য নয়। বরং সুস্থ বিবেক ও কান্ডজ্ঞান না থাকার কারণে। এমন মানুষেরা পশুর চেয়েও ভয়ংকর ও নিকৃষ্টতর হয়। সে কথাটি বলা হয়েছে পবিত্র কুর’আনে। পবিত্র কুর’আনের ভাষায়: “উলায়িকা কা’আল আনয়াম, বালহুম আদাল।” অর্থ: তারাই হলো গবাদী পশুর ন্যায়, বরং তার চেয়েও নিকৃষ্ট। এ জন্যই সবচেয়ে জনহিতকর কাজটি রাস্তাঘাট, ব্রিজ ও কলকারখানা গড়া নয়, বরং সেটি হলো মানুষকে মানুষ করা। মানুষের মাঝে বিবেক ও কান্ডজ্ঞানকে জাগ্রত করা। একমাত্র তখনই মানব সন্তানেরা ফেরেশতাদের চেয়েও শ্রেষ্ঠতর হয়। পবিত্র কুর’আন ও হাদীসও মূলত সে কাজটিই করতে বলে। এবং সেটিই হলো মহান নবীজী (সা:)’র জীবনের সূন্নত। মহান আল্লাহতায়ালা জটিল বিজ্ঞান শেখানোর জন্য কুর’আন নাযিল করেননি। নাযিল করেছেন মানুষের বিবেককে জাগ্রত করার মৌলিক কাজটি করার জন্য। বিবেক জেগে উঠলে মানুষ তখন মানবতা নিয়ে বেড়ে উঠতে শেখে। অপর দিকে শয়তানের কাজ হলো বিবেককে হত্যা করা। তখন মানুষের নীচে নামা শুরু হয়। বিবেক হত্যার সে কাজটি পুরাপুরি হলে সাপ, শকুন, গরু, পুরুষের লিঙ্গ ও মুর্তিকে যেমন পূজনীয় করা যায়, তেমনি একজন নৃশংস দুর্বৃত্তকে নেতা বা নেত্রী রূপে প্রতিষ্ঠা দেয়া যায়। নইলে সে কাজটি সম্ভব নয়।

বিবেক হত্যার তথা মানবতা হ্ত্যার কাজে শয়তান ও তার অনুসারীরা বাংলাদেশে বিশাল বিজয় পেয়েছে। এমন বিজয় বিশ্বের আর কোন দেশে তারা পায়নি। সেটি সুস্পষ্ট বুঝা যায় যখন মুজিবের ন্যায় গণতন্ত্রের খুনি, স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট, হিন্দুত্ববাদী ভারতের একান্ত সেবাদাস, নৃশংস ইসলামবিরোধী এক দুর্বৃত্ত কোটি কোটি মানুষের কাছে বন্ধু, নেতা, পিতা রূপে গৃহিত হয়। এবং শেখ হাসিনার ন্যায় একজন ভোটডাকাত এবং গুম-খুন-অপহরন ও সন্ত্রাসের হোতা শ্রদ্ধেয় ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রূপে গণ্য হয়। যে কোন সভ্য দেশে এরূপ জঘন্য অপরাধীরা জীবিত কালে কারাগারে যায় এবং মারা গেলে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়। কিন্তু বাংলাদেশে সেটি হয় না। বরং বাংলাদেশে এসব অপরাধীদের মুর্তি গড়ে তার পায়ে ফুল দেয়া হয়। গলিত আবর্জনার মাঝে মশামাছি ও বিষাক্ত কীটগুলি যেমন বেঁচে থাকে, বাংলাদেশীদের মগজে এ দুর্বৃত্তগণও তেমনি বেঁচে আছে।

২. আল্লাহতায়ালার অনিবার্য পরীক্ষা

মহান আল্লাহতায়ালা প্রতিটি মানুষ থেকে তার বিবেকের পরীক্ষাটুকু নেয়। এ পরীক্ষা অনিবার্য। এ পরীক্ষায় পাশ না করে জান্নাতে প্রবেশ করা অসম্ভব। মৃত বিবেকের বেঈমানদের জন্য সেখানে স্থান নাই। তাদের জন্য বরাদ্দ হলো জাহান্নামের আগুন। বিবেকের সে পরীক্ষায় অপরাধ করাই শুধু অপরাধ নয়, গুরুতর অপরাধ হলো অপরাধীকে সমর্থন করা ও চোখের সামনে ঘটে অপরাধের নীরব ও নিষ্ক্রিয় দর্শক হওয়া। তখন নামাজ-রোজা ও তাসবিহ-তাহলিল কোন কল্যাণ দেয় না। কারো গৃহে আগুন দেয়াই শুধু অপরাধ নয়, অপরাধ হলো আগুন থামানোর চেষ্টা না করা। থামানোর মধ্যেও বিবেকের ও মানবতার পরীক্ষা হয়। সে পরীক্ষায় ফেল করে কেউ জান্নাতে যাবে না। বরং অনেকে জাহান্নামে যাবে অপরাধকে সমর্থন করা ও অপরাধের সামনে নীরব থাকার কারণে।

কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো, বাংলাদেশে অপরাধীকে সমর্থন করা এবং অপরাধের সামনে নীরব থাকার অপরাধটি কোটি কোটি মানুষের দ্বারা হচ্ছে। এটি দেশের সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। ধুমধামে নিজের বাঁচাটাই শুধু গুরুত্ব পাচ্ছে, অন্যকে বাঁচানো নয়। অপরাধীদের নির্মূলে লোক না থাকায় তাদের নৃশংস শাসন দীর্ঘায়ু পাচ্ছে। অথচ তাদের নির্মূলের কাজকে ইসলাম পবিত্র জিহাদ তথা সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদতের মর্যাদা দিয়েছে। কিন্তু এ ইবাদতে বাংলাদেশীদের আগ্রহ নাই। পরিতাপের বিষয় হলো বিপুল সংখ্যক মানুষ স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় পাশ করলেও ফেল করছে বিবেকের এই প্রাথমিক পরীক্ষায়।

বিশ্বের কোন দেশেই অপরাধীরা এভাবে সম্মানিত হয় না –যেরূপ বাংলাদেশে হয়। যে কোন সভ্য দেশেই তাদের জেলে যেত হয়। এর কারণ, যে কোন দেশের তূলনায় বাংলাদেশের বুকে বিবেকহীন মানুষের সংখ্যাটি বিশাল। এজন্যই শেখ হাসিনার ন্যায় ভোট ডাকাতও বিপুল সংখ্যক মোসাহেবী চাটুকর ও চাকর-বাকর পায় এমন কি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর, সুপ্রিম কোর্ট-হাইকোর্টের বিচারপতি, পত্রিকার কলামিস্ট, লেখক-বুদ্ধিজীবী এবং সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে। এসব চাটুকরগণ ভোটডাকাতিকেও সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন বলে এবং ভোটডাকাতকে সবিনয়ে শ্রদ্ধেয় ও মাননীয় বলে। বাংলাদেশের জনগণের এটিই হলো সবচেয় বড় ব্যর্থতা। বিশ্বের কোন সভ্য দেশে এমনটি ঘটে না। ফলে দেশ ডাকাতের দখলে গেলেও ডাকাত তাড়ানোর কেউ নাই।

৩. ভবিষ্যৎ যেখানে অন্ধকার

জনগণ যেখানে নিজেদের বিবেককে হত্যা করে এবং চোখের সামনে অপরাধ কর্ম হতে দেখেও না দেখার ভান করে, দেশের শাসক যদি ভোটডাকাত দুর্বৃত্ত হয়, বিচারকগণ যদি ফ্যাসিস্ট সরকারের চাকর-বাকর হয়, প্রশাসকেরা যদি ঘুষখোর হয় এবং বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকরা যদি পদলেহী চাটুকার হয় -তবে সে দেশের কি কোন ভবিষ্যৎ থাকে? ধ্বংস তখন অনিবার্য হয়। কারণ, এটি তো পতনের পথ। এমন দেশের বিনাশে বিদেশী শত্রুর প্রয়োজন হয় না। তারা নিজেরাই নিজেদেরকে হ্ত্যা করে। এমন দেশ বিশ্বরেকর্ড গড়ে দুর্নীতি, গুম, খুন, ধর্ষণ, চুরিডাকাতি ও সন্ত্রাসে। পরিতাপের বিষয় হলো, বাংলাদেশের জনগণ পরাজয়ের সে পথকেই বেছে নিয়েছে। এজন্যই তারা দুর্বৃত্তিতে ৫ বার বিশ্বে প্রথম হয়েছে।

চোখের সামনে যখন  চুরিডাকাতি, ভোটডাকাতি ও জুলুম হয়, তখন যে ব্যক্তি তা নিজ চোখে দেখে তার ঈমানের পরীক্ষাও শুরু হয়। যে ব্যক্তি জালিমের পক্ষ নেয়, সে পরীক্ষায় ফেল করে এবং নিশ্চিত জাহান্নামে যায়। বাংলাদেশের জনগণের যে পরীক্ষায় ফেল করছে –তা নিয়ে কি সন্দেহ আছে?

৪. গণকমিশন আলেমদের বিরুদ্ধে

তথাকথিত গণকমিশন দুদকের কাছে ১১৬ জন আলেমের বিরুদ্ধে রিপোর্ট জমা দিয়েছে। এদের পরিচয় অজানা নয়। এরা ইসলামবিরোধী ও ভারতসেবী। বাংলাদেশে ইসলামের বিজয়কে প্রতিহত করাই তাদের কাজ। সে কাজে তারা বিদেশী শত্রুদের থেকে অর্থ পায়।  আলেমদের ইসলামী ওয়াজ  শুনলেই এদের গা জ্বালা করে। তাই তাদের ওয়াজ তারা বন্ধ করতে চায় ও আলেমদের জেলে তুলতে চায়। যারা তথাকথিত গণকমিশনের কর্তাব্যক্তি তারা বাংলাদেশে অপরিচতি নয়, তারা হলো চিহ্নিত শয়তানের পক্ষ। যারা ইসলামের পক্ষের লোকদের নাম এসব শয়তানদের লিস্টে থাকবে এবং তাদেরকে ফাঁসিতে ঝুলাতে তারা চেষ্টা করবে -সেটাই তো স্বাভাবিক। শয়তান নিজেই জানিয়ে দেয় কারা তার পক্ষের শক্তি এবং কারা তার বিপক্ষের।

৫. হাসিনার ডাকাতি ও মিথ্যাচার

পত্রিকায় প্রকাশ: শেখ হাসিনা সম্প্রতি বলেছে,  আওয়ামী লীগ কারো ভোট কেড়ে নেয় না। কথা হলো, আওয়ামী লীগ ভোট কেড়ে নিবে কেন?  কারো কিছু কেড়ে নেয়া তো পথের মাস্তানদের কাজ। হাসিনার শক্তি তো বিশাল, তাই সে ভোট কেড়ে নেয় না, বরং ভোটের উপর ডাকাতি করে। সম্প্রতি শেখ হাসিনা আবার বলেছে, আওয়ামী লীগ ভোটচুরি করে না। কথা হলো, সে চুরিই বা করবে কেন? চোরেরা তো চুপি চুপি রাতে আধারে দেয়ালে সিঁত কেটে করে। হাসিনার তো সামর্থ্য রয়েছে বীর দর্পে ডাকাতির। তাই নির্বাচন হলে ভোটডাকাতি করে।

শেখ হাসিনা জানে, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনে তার দলের বিজয়ের বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা নাই। ‌এ জন্যই সে ভোটডাকাতিতে নামে। যেহেতু ডাকাতিতে কোন রূপ শাস্তি হয় না বরং বিশাল বিজয় জুটে, আবার নির্বাচন হলে সেটি যে ডাকাতি হবে তা নিয়ে কি সন্দেহ আছে? সভ্য মানুষেরা ডাকাতের হামলা হলে তারা ডাকাত তাড়াতে লড়াই শুরু করে। আর ভীরু কাপুরুষেরা ডাকাতের কাছে হাত জোড় করে দয়া ভিক্ষা করে। বাংলাদেশের জনগণ তাই ভোটডাকাত হাসিনার কাছে নিরপেক্ষ নির্বাচন ভিক্ষা করছে। এমন জনগণ কি কখনো ইজ্জত ও স্বাধীনতা পায়? ২০/০৫/২০২২

 

One Responseso far.

  1. Abdul Aziz says:

    বাংলাদেশের মুসলিমরা যদি এখন জিহাদে না নামে তবে এদেশের মুসলিমদের জন্য কালো ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। আর যদি জিহাদে নামে ও পরিপূর্ণ ইসলাম কায়েম করে, তবে হতে পারে বাংলার মাটি থেকে পুনরায় ইসলামী শাসন তথা খিলাফাহ প্রতিষ্ঠা পাবে ও পৃথিবীর বড় অংশে তা ছড়িয়ে পড়বে, যেভাবে ইসলাম কায়েমের ফলে ক্ষুদ্র মদিনার ইসলামি রাজ্য ১০০ বছরের মধ্যেই ভারত থেকে স্পেন পর্যন্ত বিস্তৃত বিশাল সাম্রাজ্যে পরিণত হয়েছিল।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *