বিবিধ ভাবনা ৭৩

ফিরোজ মাহবুব কামাল

১. নিছের ইচ্ছা নিজেকে করতে হয়

মহান আল্লাহতায়ালা মানুষকে দৈহিক বল, আর্থিক বল ও বুদ্ধিবৃত্তিক বলসহ নানারূপ বল ও সামর্থ্য দেন। ঈমানদার বা বেঈমান -সবাইকে তিনি পানাহারও দেন। এসবই মহান আল্লাহতায়ালার অমূল্য নিয়ামত। সে নিয়ামতগুলো কে কীভাবে কাজে লাগাবে -সে ইচ্ছাটি তিনি কারো উপরই চাপিয়ে দেন না। প্রতিটি ব্যক্তিকে সে ইচ্ছাটি নিজ থেকে স্থির করতে হয়। এখানেই ঘটে মানব জীবনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা। নিজ মনের ধারণকৃত সে ইচ্ছার ইসলামী পরিভাষা হলো নিয়েত। ব্যক্তি যত ভাল কাজকর্ম ও দান-খয়রাতই করুক না কেন -তার মূল্য নির্ধারিত হয় নিয়েতের ভিত্তিতে। শত কোটি টাকা দান করেও কোন সওয়াব নাই -যদি নিয়েত মহান আল্লাহতায়ালাকে খুশি করা না হয়। তেমনি প্রাণদানেও কোন সওয়াব নাই যদি তা মহান আল্লাহতায়ালার উদ্দেশ্যে না হয়।

তাই মানব জীবনের অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো এ নিয়েত। তাই বুখারী শরীফের প্রথম হাদীসটি হলো এই নিয়েত বিষয়ক। সে হাদীসটিতে বলা হয়েছে, প্রতিটি আমলের মূল্যায়নটি হবে নিয়েতের ভিত্তিতে। ঈমানদারকে তাই শুধু নামায-রোযার ন্যায় ইবাদতে নিয়েত বাঁধলে চলে না, জীবনের বাঁচা-মরায়ও নিয়েত বাঁধতে হয়। ঈমানদারের জন্য সে নিয়েতটি নির্ধারিত করে দিয়েছেন খোদ মহান আল্লাহতায়ালা। বলা হয়েছে, “ক্বুল ইন্নাস সালাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহ’ইয়া’য়া ওয়া মামাতি লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন।” অর্থ: বল (হে মুহম্মদ), আমার নামায, আমার কুরবানী, আমার জীবনধারণ ও আমার মৃত্যু (সবকিছুই) রাব্বুল আলামীনের জন্য। তাই কোন ঈমানদার কোন বর্ণ, গোত্র, ভাষার জন্য বাঁচে না এবং জান দেয় না। একমাত্র মহান আল্লাহতায়ালা ছাড়া জীবনের এ ক্ষেত্রগুলোতে আর কারো দখলদারী নাই।

যারা মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া সামর্থ্য দিয়ে ভাল কাজ করে এবং তাঁর দ্বীনকে বিজয়ী করে –একমাত্র তাদের জন্যই রয়েছে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি। আর যারা সে সামর্থ্য ব্যয় করে স্রেফ নিজের ইচ্ছা পূরণে, ভোগবিলাসে বা কোন ব্যক্তি, দল ও সেক্যুলার ধ্যান-ধারণাকে বিজয়ী করায় -তারাই যাবে জাহান্নামে। বস্তুত জাহান্নামের আযাবটি হলো মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া নিয়ামতের সাথে গাদ্দারীর শাস্তি।

২. অভাব ইজ্জতের ক্ষুধায়

বাঙালীর ভাত-মাছের ক্ষুধা আছে। ভোগবিলাস ও মোটাতাজা হওয়ার ক্ষুধাও আছে। এরূপ ক্ষুধা পশুরও থাকে। কিন্তু ক্ষুধা নাই মৌলিক মানবাধিকার ও ভোটের অধিকার নিয়ে ইজ্জত  নিয়ে বাঁচার। তাই গণতান্ত্রিক অধিকার ও নিজের ভোট ডাকাতি হয়ে গেলেও তারা প্রতিবাদ করে না। বরং ভোটডাকাতকে শ্রদ্ধাভরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলে। নিজের ভাইবোন ভারতীয়দের গুলীতে লাশ হয়ে কাটা তাঁরে ঝুললেও তারা তা নিয়ে প্রতিবাদ করে না। মায়ানমারের যুদ্ধবিমান বাংলাদেশের আকাশ সীমা অতিক্রম করলেও সরকার উচ্চবাচ্চ্য করেনা। অথচ ভারতীয় যুদ্ধ বিমান পাকিস্তানের সীমানা অতিক্রম করলে পাকিস্তানীরা সেটি গুলি করে ভূপাতিত করে এবং পাইলটকে গ্রফতার করে। বাঙালীর মাঝে কবে আসবে ইজ্জত নিয়ে বাঁচার ক্ষুধা?   

সভ্য মানুষের অর্থ ও রক্তের সবচেয়ে বড় খরচটি হয় ইজ্জত বাঁচাতে। সে লক্ষ্যে তারা অর্থ ও রক্ত দেয়। এ কাজে অর্ধেকের বেশী নবীজী (সা:)’র সাহাবী শহীদ হয়েছেন। ইজ্জত বাঁচার তাগিদে পাকিস্তান পারমানবিক বোমা, যুদ্ধবিমান ও দূরপাল্লার মিজাইল নিজেরা বনাতে শিখেছে। কিন্তু ইজ্জতের ভাবনাশূণ্য অসভ্যদের সে ভাবনা থাকেনা। নিজেরা রাস্তাঘাটে চড়-লাথি খেলে, গুম-খুন হলে এবং মা-বোনেরা ধর্ষিতা হলেও তারা রাস্তায় প্রতিবাদে নামে না।এবং বিদেশী শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধের কথাও ভাবেনা। এসবই হলো বাংলাদেশীদের জীবনের নিত্য দিনের বাস্তব চিত্র। 

৩. প্রয়োজন জিহাদের, আন্দোলনের নয়

ঈমানদার কোন আন্দোলনে যোগ দেয় না। কারণ আন্দোলনে অর্থদানে ও প্রাণদানে কোন সওয়াব নাই। বরং জাহান্নাম জুটে। । কারণ, সেক্যুলার যুদ্ধ-বিগ্রহের ন্যায় আন্দোলনও একটি সেক্যুলার বিষয়। ঈমানদার তাঁর সকল সামর্থ্য জিহাদে বিনিয়োগ করে। তাতে মৃত্যু হলে বিনা হিসাবে জান্নাত জুটে। তাই বাংলাদেশে প্রয়োজন জিহাদের, আন্দোলনের নয়। জিহাদই সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। জিহাদে হলো মহান আল্লাহতায়াকে খুশি করা ও তাঁর দ্বীনকে বিজয়ী করার লড়াই। তাতে বিলুপ্ত হয় দুর্বৃত্তদের শাসন। এবং প্রতিষ্ঠা পায় ঈমানদারের শাসন। তাই মু’মিনের লক্ষ্য কখনোই কোন ব্যক্তি বা দলকে বিজয়ী করা হতে পারে না।

কোন সেক্যুলার যুদ্ধে মরলে যেমন কেউ শহীদ হয় না, তেমনি কোন আন্দোলনে মরলে কেউ শহীদ হয়না। এগুলো হলো নিজের জান ও মালের ভয়ানক অপচয় ও খেয়ানতের খাত। ১৯৭১’য়ে ভারতের নেতৃত্বে এবং ভারতের অর্থ ও অস্ত্র নিয়ে ভারতকে বিজয়ী করার যুদ্ধে যারা মারা গেছে এমন অনেক হিন্দু, সেক্যুলারিস্ট ও জাতীয়তাবাদীকে শহীদ বলা হয়। এটি শহীদদের প্রতি অবমাননা। শহীদ শব্দটি একটি পবিত্র কুর’আনী পরিভাষা। অন্য ধর্মের অনুসারীগণ এ পরিভাষাটি ধার করেছে ইসলাম থেকে। সেটি যুদ্ধে নিজেদের মৃতদের সন্মানিত করার লক্ষ্যে। এমনকি হিন্দুরাও নিয়েছে। অথচ তারা শহীদ শব্দটির  উৎপত্তিগত অর্থটি গ্রহণ করেনি। শহীদ হতে হলে সেক্যুলার যুদ্ধে নিহত হওয়ার বদলে জিহাদে শহীদ হতে হয়। জিহাদ তো সেটিই যা সংঘটিত হয় মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীনকে বিজয়ী করা এবং ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা দেয়ার লক্ষ্যে। একমাত্র এ পথেই মুসলিম জীবনে মহান আল্লাহতায়ালার সাহায্য ও বিজয় আসে। বাঙালী এক্ষেত্রে চরম ব্যর্থ। তারা নানা নামের নানা আন্দোলনে আছে, কিন্তু জিহাদে নাই।

৪. ঈমান দেখা যায়

দিনের আলোর ন্যায় মানুষের ঈমানও দেখা যায়। দেখা যায় বেঈমানীও। আগুন যেমন উত্তাপ নিয়ে হাজির হয়, তেমনি ঈমান হাজির হয় জালেমের বিরুদ্ধে জিহাদ নিয়ে। বেঈমানী হাজির হয় মিথ্যাচার, স্বৈরাচার, দুর্বৃত্তি ও নানারূপ পাপকর্ম নিয়ে। ঈমানের দাবী অনেকেই করে। পবিত্র কুর’আনের সুরা হুজরাতের ১৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ঈমানের সাথে যাদের মাঝে নিজের জান ও মাল নিয়ে জিহাদ আছে ঈমানের দাবীতে একমাত্র তাঁরাই সত্যবাদী। জিহাদই মুনাফিকদের থেকে ঈমানদের পৃথক করে।

ঈমানদারের সবচেয়ে বড় গুণটি হলো সে সব সময় সত্য কথা বলে। মহান আল্লাহ এ গুণটির প্রতি পদে পরীক্ষা নেন। মিথ্যাবাদীদের জন্য তিনি জান্নাত তৈরী করেননি। নামায মুনাফিকগণও পালন করে। কিন্ত তারা মিথ্যাবাদী। মিথ্যাকথা, অন্যায়, অবিচার, নানারূপ দুর্বৃত্তি দেখেই বুঝা যায় লোকটির মধ্যে পরকালের সামান্যতম ভয়ও নাই। সে বেঈমান। এমন ব্যক্তি নামায-রোযা পালন করে নিছক লোক দেখানোর জন্য। বাংলাদেশে এমন বেঈমানদের সংখ্যাটি বিশাল।

৫. ডাকাত যে দেশে মাননীয় ও সন্মানিত

একটি দেশের মানুষ কতটা সভ্য সেটি বুঝা যায়, সেদেশে দুর্বৃত্তগণ কতটা ঘৃণিত হয় তা দেখে। ঘৃণিত হওয়ার বদলে দুর্বৃত্তগণ যে দেশে সন্মানিত হয় -সে দেশকে কি সভ্য দেশ বলা যায়? সেটি তো চোর-ডাকাতদের সংস্কৃতি। অথচ বাংলাদেশে সে সংস্কৃতিরই বিশাল বিজয়। ডাকাতকে মাননীয় বলে -এমন মানুষ কোন সভ্য দেশে একজনও পাওয়া যাবে না। সভ্য মানুষ মাত্রই ডাকাতকে ঘৃণা করে। কিন্তু বাংলাদেশে বহুকোটি মানুষ, বহুলক্ষ সামরিক ও বেসামরিক অফিসার, বিশ্ববিদ্যালয়গুলির বহুহাজার প্রফেসর এবং স্কুলগুলির বহুলক্ষ শিক্ষক ডাকাতকে মাননীয় বলে। এ কি কম অসভ্যতা? জনগণের অসভ্যতা মাপতে কি এর চেয়ে বেশী কিছু লাগে? এই হলো বাংলাদেশের প্রকৃত মান। দেশ যে কত নীচে নেমেছে -সেটি বুঝতে কি কিছু বাঁকি থাকে? এমন দেশে কি গণতন্ত্রের কথা ভাবা যায়?

কোন সভ্য মানুষই চোরডাকাতের কথা বিশ্বাস করে না। সভ্য দেশের আদালতে তাদের সাক্ষি গ্রহন করা হয়না। কিন্তু বাংলাদেশে যেসব চোর-ডাকাতগণ দেশবাসীর ভোট ডাকাতী করলো -তাদের কথা পত্রিকার পাতায় বিশাল খবর হয়। তাদের কথার মান্যতা দেয়া হয়। বিশ্বের কোন সভ্য দেশে কি কখনো কোন ভোটডাকাতকে প্রধানমন্ত্রী করা হয়? কোন দেশের জনগণ কি কোন চোরডাকাতকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলে? দেশের পুলিশ তো তাদের আদালতের কাঠগড়ায় তোলে এবং জেলবন্দী করে। কিন্তু সে সভ্য রীতি বাংলাদেশে কবরে শায়ীত।

৬. দেশকি গরুছাগলের?

১৭ কোটি মানুষের বাংলাদেশ শাসন করা যেন অতি সহজ হয়ে গেছে। হাতে লাঠি থাকলে এক হাজার ছাগলকে একজন বালক রাখালও কন্ট্রোল করতে পারে। বাংলাদেশ কি গরু-ছাগলের দেশ যে অবৈধ এক ভোট-ডাকাত দখলে নিয়েছে সমগ্র দেশ? বাঙালীর হাজার বছরের ইতিহাসে বাংলাদেশের ১৭ কোটি জনগণ অতি বিস্ময়কর ইতিহাস গড়েছে। সেটি শেখ হাসিনার ন্যায় এক মহিলা ডাকাত সর্দারনীর হাতে ডাকাতীর শিকার হয়ে। ডাকাতী হয়ে গেছে কোটি কোটি দেশবাসীর ভোট। আজ থেকে হাজার বছর পরও একপাল ডাকাতদের হাতে এরূপ শাসিত হওয়ার ইতিহাস পড়ে সেদিনের প্রজন্ম অতি বিস্মিত হবে। এবং আরো বিস্মিত হবে ডাকাত তাড়াতে ১৭ কোটি মানুষের অক্ষমতা দেখে।

৭. ডাকাতদের বিজয় উৎসব

বাংলাদেশ জুড়ে আজ ডাকাতদের বিজয় উৎসব। ডাকাতদের সফল ডাকাতীর কীর্তন হচ্ছে মিডিয়া জুড়ে।  কারো গৃহের ভিটার উপর ডাকাতের উৎসব দেখে বুঝা যায় সে গৃহের লোকেরা কতটা অসহায় ও শক্তিহীন। বাংলাদেশের জনগণের সে  শক্তিহীন অসহায় অবস্থাটি বুঝা যায় দেশে ভোট-ডাকাতদের উৎসবমুখর শাসন দেখে।

ডাকাতদের হাতে ভোটের অধিকার ছিনতাই হয়ে গেছে। কেড়ে নেয়া হয়েছে রাস্তায় প্রতিবাদের অধিকার। অথচ ডাকাত সর্দারনী শেখ হাসিনা ভোগ করছে ভোটডাকাতী, গুম-খুন-সন্ত্রাসসহ সকল কুকর্মের অধিকার। এই কি গণতন্ত্র? অপর দিকে ডাকাতীর শিকার জনগণ ঘরে বসে বসে আঙ্গুল চুষছে!

৮. চলছে হিংস্রশাসন

স্বাধীন ভাবে মত প্রকাশ, যাকে ইচ্ছা তাকে ভোটদান এবং প্রতিবাদের অধিকার যদি কেড়ে নেয়া হয় তবে কি গণতন্ত্র বাঁচে? তখন বাঁচে অসভ্য জঙ্গিতন্ত্র। সেখানে চলে যার শক্তি তাঁরই শাসন। সেরূপ এক অসভ্য জঙ্গি শাসন চেপে বসেছে বাংলাদেশে। চলছে ভোটডাকাতদের অসভ্য হিংস্র শাসন। এ শাসনকে স্বৈরাচার বললে বিরাট ভূল হবে। এরূপ শাসনকে স্রেফ স্বৈর শাসন বললে ভোটডাকাতদের অসভ্য এ হিংস্র শাসনকে কী বলা যাবে? হিংস্র পশুর সাথে খালী হাতে যেমন লড়া যায় না, তেমনি লড়া যায়না হিংস্র শাসকদের বিরুদ্ধে। ডাকাতগণ আরো ডাকাতী করবে সেটিই স্বাভাবিক। তাদের থেকে যারা নির্বাচন চায়, তারা শতভাগ বেওকুপ।

৯.লোপ পেয়েছে ঘৃণার সামর্থ্য
সব লড়া্‌ইয়ে যোগ্যতা লাগে। চোরডাকাত-ভোটডাকাতদের বিরুদ্ধে তো তাঁরাই লড়তে পারে যারা দুর্বৃত্তদের মন থেকে ঘৃণা করে। বাঙালীর মনে সে ঘৃণার সামর্থ্য লোপ পেয়েছে। বাংলাদেশে আজ যে অসভ্য হিংস্র শাসনের শুরু -তার পিতা হলো বাকশালী শেখ মুজিব। কিন্তু সে অসভ্য শাসনের জনককে যারা জাতির পিতা বলে সন্মান দেখায় -তারা কি কখনো স্বৈরাচার নির্মূলের লড়াই করতে পারে?

সবগ্রামই ডাকাতের গ্রামে পরিণত হয়না। তেমনি সব দেশেই ভোটডাকাতী হয়না। যেদেশে শেখ মুজিবের ন্যায় বাকশালী স্বৈরাচারের জনককে জাতির পিতা বলা হয় এবং যেদেশে শেখ হাসিনার ন্যায় ডাকাতসর্দারনীকে মাননীয় বলে সন্মান দেখায় দেশের সেনাবাহিনী, পুলিশ ও আমলা বাহিনী –সেরূপ সেদেশেই ভোটডাকাতি বার বার হয়।

১০. সভ্য সমাজ নির্মাণ কীরূপে?

সত্যের প্রচার ও মিথ্যার বিলুপ্তি ছাড়া কখনোই কোন সভ্য সমাজ নির্মিত হয়না। সেটি না হলে অসভ্যতার জোয়ার আসে। চুরিডাকাতি, ভোটডাকাতি, গুম, খুন, ধর্ষণ তখন মামূলী ব্যাপার হয়ে যায়।বাংলাদেশের যাত্রা অবিকল সে পথেই।

হিংস্র পশুদের বধ না করলে দেশ বাসের অযোগ্য হয়। তেমনি অসভ্য মানুষ নির্মূল না করলে দেশ সভ্য হয়না। তাই মহান আল্লাহতায়ালা শুধু “আ’মারু বিল মারুফ (ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা)”এর নির্দেশই দেননি, “নেহী আনিল মুনকার (দুর্বৃত্তির নির্মূল)”র নির্দশও দিয়েছেন। তাই দুর্বৃত্ত-অসভ্য-ভোটডাকাত নির্মূলের কাজটি মুসলিমের জীবনে রাজনীতি বা আন্দোলন নয়, এটি পবিত্র জিহাদ। মুসলিম হওয়ার অর্থ তো এই জিহাদ নিয়ে বাঁচা। যারা ডাকাত তাড়ানোর সামর্থ্য রাখে না তাদের ঘরে বার বার ডাকাতী হয়। এখানেই বাংলাদেশীদের অক্ষমতা। তারা বাঁচছে সবচেয়ে বড় ডাকাতকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সন্মান দিয়ে। ভূলে গেছে ডাকাত তাড়ানোর সভ্য কাজটি।

১১. অভাব নৈতিক বলের

 চোরকে চোর বলতে দৈহিক বল লাগেনা। লাগে মনের বল। সে বলটি আসে ঈমান থেকে। ঈমানের সে বল আসে পবিত্র কুর’আনের জ্ঞান থেকে। সে নৈতিক বল না থাকলে ডিগ্রিধারী মানুষগণও চিহ্নিত দুর্বৃত্তকে মাননীয় বলে। বাঙালীর মনে ঈমানের বল অতি সামান্যই। তাই দেশটিতে ভোটচোরও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রূপে আখ্যায়ীত হয়। এবং একই কারণে ভারতের দালাল ও গণতন্ত্রের হত্যাকারী বাকশালী মুজিবকেও জাতির পিতা বলা হয়। বাঙালীর নৈতিক বল যে কতটা তলানীতের ঠেকেছে এ হলো তার নমুনা।

 

ভাল মানুষকে সন্মান করা এবং দুর্বৃত্তকে ঘৃনা করার বিষয়টি বাঙালী মুসলিম ভূলে গেছে। নইলে একজন ভোটচোরকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলে কীরূপে? শয়তানের নাম বলতেই রাজীম বলা ইসলামের সংস্কৃতি। রাজীম শব্দের অর্থ অভিশপ্ত। রাজীম বলার মধ্য দিয়ে ঈমানদার ব্যক্তি দুর্বৃত্তকে ঘৃণা করার সূন্নতটি পালন করে। ঈমানদারকে আজীবন বাঁচতে হয় দুর্বৃত্তদের ঘৃণা করার সূন্নত নিয়ে। সে ঘৃণা নিয়ে নামতে হয় তাদের নির্মূলের জিহাদে। নইলে সভ্য সমাজ নির্মিত হয়না।

                                             

তবে ইবলিসই শুধু জ্বিনবেশী শয়তান নয়, বহু মানব সন্তানও শয়তানের বেশ ধরে বিচরণ করে মানুষের আশেপাশে। তাদের চিনতে হয় এবং তাদের ঘৃণা করতে হয়। এবং তাদের নির্মূলে নামতে হয়। এর মধ্যেই তো প্রকৃত ঈমানদারী। যারা চুরি-ডাকাতি ও ভোটডাকাতী করে, যারা গুম-খুন-ধর্ষণ-সন্ত্রাসের রাজনীতির প্রতিষ্ঠা দেয় -তারাই তো মানবের রূপধারী পাপিষ্ট শয়তান। বিস্ময়ের বিষয়, বাঙালী জনগণ এ শয়তানদের জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধু ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসিয়ে সন্মান দেয়। পাপ শুধু নিজ হাতে করা পাপকর্মগুলি নয়, পাপীদের প্রতি সন্মান দেখানোও। ফিরাউনকে যারা ভগবানের আসনে বসিয়েছিল মহান আল্লাহতায়ালা তাই তাদেরকেও রেহাই দেননি। ২৬/১০/২০২১।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *