বিবিধ ভাবনা ৬২

ফিরোজ মাহবুব কামাল

১. বিপদ যখন নেয়ামত এবং আনন্দ যখন বিপদ

মানুষের ঘাড়ে বিপদ অনেক সময় আযাব রূপে আসে। কখনো বা বিশাল নিয়ামত রূপে হাজির হয়। যে বিপদ বান্দাকে মহান আল্লাহতায়ালার কাছে নেয় -সেটি আদৌ বিপদ নয়। সেটি নেয়ামত। মানুষের জীবনে এমন  বিপদ বার বার আসে ঈমানের পরীক্ষা নিতে। বিপদে পড়ে যার মনে মহান আল্লাহতায়ালার প্রতি বিশ্বাস বেড়ে যায় সেই পরীক্ষায় পাশ করে। এবং যে দূরে সরে, সেই ফেল করে। এমন ব্যক্তির জন্য সে বিপদটি সত্যিকার বিপদে পরিণত হয়। বেঈমানের জীবনে এরূপ বিপদ আসে পরকালে আযাবের অংক বাড়াতে।

অপর দিকে যখন কোন লাভ, সাফল্য বা আনন্দের কান্ড ঘটে তখন বুঝতে হবে সেটি আনন্দের বদলে ভয়ানক বিপদের কারণও হতে পারে। সকল সুখ-দুঃখ এবং বিজয়-পরাজয় আসে মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে। পুরা এ পার্থিব জীবনটাই হলো পরীক্ষাস্থল –যা মহান আল্লাহতায়ালা জানিয়ে দিয়েছেন সুরা মুলকের ২ নম্বর আয়াতে। এবং সাফল্য ও বিপদ –এ সব কিছুই জীবনে আসে ঈমানের পরীক্ষা নিতে। সাফল্য বা আনন্দের কোন ঘটনা যখন ব্যক্তির স্মরণ থেকে মহান আল্লাহতায়ালাকে ভূলিয় দেয় -তখন বুঝতে হবে সেটিই বিপদ। এরূপ সাফল্য আদৌ কোন সাফল্য নয়।    

২. দৈন্যতা তাকওয়ার ভান্ডারে

কুর’আন শিক্ষা, নামায়-রোযা ও হজ্জ-যাকাতের ন্যায় সকল ইবাদতের মূল লক্ষ্যটি হলো তাকওয়া সৃষ্টি। তাকওয়া হলো পরকালের কারেন্সি। তাকওয়া হলো, চেতনায় মহান আল্লাহতায়ার প্রতি ভয় ও তাঁর হুকুমের প্রতি আনুগত্যের সার্বক্ষণিক ভাবনা। এটি হলো মহান আল্লাহতায়ালার অবাধ্যতা ও মুনাফিকি থেকে প্রতি বাঁচার জন্য মুহুর্তের ভয়। এ ভয় যে কোন মুহুর্তে সিরাতুল মুস্তাকীম থেকে বিচ্যুত হওয়ার। যার মধ্য তাকওয়ার মাত্রাটি প্রবল, সে ব্যক্তি বেপরোয়া ও আপোষহীন হয় মহান আল্লাহতায়ালার প্রতিটি হুকুম মেনে চলায়। অপর দিকে তাকওয়া শূণ্য ব্যক্তিগণ বাঁচে অবাধ্যতা নিয়ে।

কুর’আন শিক্ষা, নামায়-রোযা, হজ্জ-যাকাত ও দানখয়রাতের মূল লক্ষ্য হলো তাকওয়া বৃদ্ধি। যে ব্যক্তি নামায-রোযা ও হজ্জ-যাকাত পালন করেও মিথ্যা কথা বলে, সূদ খায়, ঘুষ খায়, বেপর্দা চলে, মুসলিমদের মাঝে বিভক্তি গড়ে এবং ইসলাম বিরোধীদের বিজয়ী করার সেক্যুলার রাজনীত করে -বুঝতে হবে তার ইবাদতে মুনাফিকি রয়েছে। তার তাকওয়ার ভান্ডারটি শুণ্য। পাপ কর্ম নিয়ে বাঁচায় তথা মহান আল্লাহর হুকুমের অবাধ্যতায় তাকওয়া বাঁচে না। নেক আমলের মূল লক্ষ্য হলো, পরকালের এ্যাকাউন্টে তাকওয়ার কারেন্সিতে সঞ্চয় বৃদ্ধি। পবিত্র কুর’আনে বলা হয়েছে, কুরবানীর পশুর রক্ত বা গোশতো মহান আল্লাহতায়ালার কাছে পৌঁছে না। যা পৌঁছে তা হলো তাকওয়া।  

প্রতিটি ব্যক্তিকে মহান আল্লাহতায়ালা নানারূপ শারীরিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও অর্থনৈতিক সামর্থ্য দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। ঈমানদার ব্যক্তি সে সামর্থ্যকে কাজে লাগায় নেক আমলে তথা তাকওয়া বৃদ্ধিতে। অপর দিকে বেঈমান সে সামর্থ্যকে কাজে লাগায় পাপের অংক বাড়াতে। ঈমানদারের জীবনের প্রতিটি মুহুর্ত কাটে নেক আমলে। তাঁর প্রতি মুহুর্তের ভাবনাটি হয়, কি করে পরকালের এ্যাকাউন্টে সঞ্চয় বাড়ানো যায় -তা নিয়ে। তাই কোন মুসলিম দেশে ইসলাম বিরোধী শক্তির বিজয় এবং দেশের আদালতে শরিয়তের বিধান না থাকাটি সে দেশের জনগণের তাকওয়ার আলামত নয়। সেটি কুফুরি ও মুনাফিকির আলামত। এতে জাহির হয়, ঈমানদার-সুলভ আনুগত্যের বদলে কাফেরসুলভ বিদ্রোহ। নেক আমলে যারা আগ্রহী তারা কখনোই কুফর শক্তির বিজয়কে মেনে নেয় না। কারণ, সে বিজয় মেনে নেয়াটি গুনাহ। যার মধ্যে সামান্যতম তাকওয়া আছে -সে কি কখনো আদালতে মহান আল্লাহতায়ালার শরিয়তী বিধানকে বিলুপ্ত করার কথা ভাবতে পারে? অথচ বাংলাদেশে সেটিই হচ্ছে।

বাংলাদেশে আলেম-আল্লামা, মোল্লা-মৌলভী ও নামাযী-রোযাদের অভাব নাই। কিন্তু দারুন অভাব হলো তাকওয়া-সমৃদ্ধ ঈমানদারের। হৃদয়ে যথার্থ তাকওয়া থাকলে দেশের মানুষ কি নিজ দেশের আদালতে ব্রিটিশ কাফেরদের রচিত আইন একদিনের জন্যও মেনে নিত? এ শয়তানী আইনের নির্মূলে ও মহান আল্লাহতায়ালার শরিয়ত প্রতিষ্ঠায় কোটি কোটি মানুষ তখন জিহাদে নামতো। শরিয়তের বিলুপ্তির অর্থ তো শয়তানের বিজয়। মহান আল্লাহতায়ালা কি তাঁর শরিয়তী আইনের প্রতি বাংলাদেশীদের বেঈমানী দেখছেন না?

৩. সভ্যতা, অসভ্যতা এবং বেঈমানী

আগুন থাকলে উত্তাপ থাকবেই। তেমনি ঈমান থাকলে দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে প্রবল ঘৃনা ও তাদের নির্মূলের জিহাদ থাকবেই। চুরি-ডাকাতি যেমন অন্যায়, তেমনি অন্যায় হলো চোরডাকাতকে শাস্তি না দিয়ে সন্মান করা। কোন সভ্য মানুষই যেমন ঘরের মাঝে আবর্জনাকে স্থান দেয়না, তেমনি কোন দুর্বৃত্তকে রাষ্ট্রীয় আসনে বসায় না। আবর্জনার স্থান যেমন আস্তাকুঁরে, তেমনি চোর-ডাকাত, ভোট-ডাকাত ও দুর্বৃত্তদের স্থান হয় কারাগারে।

কিন্তু অসভ্য সমাজে ঘটে উল্টোটি। সেখান আবর্জনাকে ঘরের উঠানে রাখা হয়। এবং সবচেয়ে বড় চোর বা সবচেয়ে বড় ডাকাতকে নেতা বা নেত্রী বানানো হয়। বাংলাদেশে সেটিই হয়েছে। সাধারণ চোরডাকাতদের সামর্থ্য অতি সীমিত। তারা সারা দেশ জুড়ে দূরে থাক একটি পাড়ার সব ঘরে এক রাতে চুরি-ডাকাতি করতে পারেনা। কিন্তু হাসিনা ভোট-ডাকাতি করেছে সমগ্র দেশ জুড়ে। শুধু বাংলাদেশে নয়, সমগ্র বিশ্বে এ মাপের ডাকাত পাওয়া যাবে না। অথচ সে ডাকাত সর্দারনীকে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলে। মাননীয় বলে এমন কি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সেনাবাহিনীর জেনারেল, প্রশাসনের সচিব, আইনবিদ এবং বুদ্ধিজীবীগণ। চোরডাকাতের এরূপ সন্মানিত করার রীতি বিশ্বের কোন সভ্য দেশে নাই। শুধু তাই নয়। এ ভোটডাকাত হাসিনাকে একই মঞ্চে পাশে বসিয়ে হেফাজতের ইসলামের হুজুরগণ মিটিং করেছে ও তাকে কওমী জননীও বলেছে?

বাংলাদেশীদের বড়ই গর্ব, তারা বড়ই ধর্মভীরু মুসলিম। মসজিদ মাদ্রাসায় তারা দেশ ভরে ফেলেছে। দুনিয়ার আর কোন দেশে এতো মসজিদ-মাদ্রাসা নাই। কিন্তু লাভটি কি? শুধু লাখ লাখ গাছ লাগালেই হয় না, দেখতে হয় সেগুলি আগাছা কিনা। এসব মসজিদ-মাদ্রাসা থেকে কত জন ঈমানদার তৈরী হলো -সেটিই তো মূল কথা। রাষ্ট্রনায়কের যে আসনে মহান নবীজী (সা:) বসেছিলেন সে আসনে হাসিনার ন্যায় এক ভোটচোরকে বসিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলা কি কোন মুসলিমের কাজ? যার মনে শরিষার দানা পরিমাণ ঈমান আছে -সে কি এমন কাজ করতে পারে? বাঙালী মুসলিমের এরূপ আচরণ কি মহান আল্লাহতায়ালা দেখছেন না?

মহান আল্লাহতায়ালার ঘোষণা: যারা তাঁর নাযিলকৃত (শরিয়তি) আইন অনুযায়ী বিচার করে না তারা কাফের, তারা জালেম ও তারা ফাসেক। এ কথা বলা হয়েছে সুরা মায়েদা ৪৪, ৪৫ ও ৪৭ নম্বর আয়াত। মহাপ্রভুর পক্ষ থেকে এটি এক গুরুতর ঘোষণা। অথচ কি ভয়ানক ব্যাপার, বাংলাদেশের আদালতে মহান আল্লাহতায়ালার আইনের প্রয়োগ নাই। চলছে কাফেরদের আইন। দেশের লক্ষ লক্ষ আলেম-আল্লামা, মোল্লা-মৌলভী ও নামাযী-রোযাদারদের মনে মহান আল্লাহতায়ালার এ ঘোষণার আদৌ কি কোন আছড় পড়েছে?

৪. জিহাদ কীরূপে অনিবার্য হয়?

বাঁচার নিয়েত যদি নেতা, নেত্রী, হুজুর ও পীরকে খুশি করার বদলে মহান আল্লাহতায়ালাকে খুশি করা হয় এবং লক্ষ্য যদি হয় জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচা -তখন ব্যক্তির জীবনে দুর্বৃত্ত নির্মূল ও শরিয়ত প্রতিষ্ঠার লাগাতর জিহাদ শুরু হয়ে যায়। মুসলিম মাত্রই মহান আল্লাহতায়ালার সার্বক্ষণিক সৈনিক। এ সৈনিকের কুর’আন-নির্দেশিত মিশনটি হলো ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের নির্মূল। কুর’আনের ভাষায়: “আ’মারু বিল মারুফ ওয়া নেহী আনিল মুনকার।”

সীমান্তে শত্রুর হামলা শুরু হলে কোন সৈনিক কি নীরব ও নিষ্ক্রিয় থাকতে পারে? সে তো হাতের কাছে যা পায় তা দিয়ে যুদ্ধে নামে। তেমনি মুসলিম ভূমি যদি ইসলামের শত্রু পক্ষের দখলে যায়, শাসকের আসনে যদি ভোটচোর এবং আদালতে বিলুপ্ত হয় মহান আল্লাহতায়ালা-প্রদত্ত শরিয়তী আইন -তখন কি কোন মুসলিম নীরব ও নিষ্ক্রিয় থাকতে পারে?   

৫. ইসলামের হিফাজত ও হিফাজতে ইসলামী

রাজনীতির ময়দানটি লাগাতর যুদ্ধের। যারা রাষ্ট্রের বুকে নিজেদের বিজয় চায় তাদের সামনে রাজনীতির যুদ্ধে নামা ছাড়া ভিন্ন রাস্তা নাই। বাংলাদেশে এ যুদ্ধে ইসলামের শত্রুপক্ষ তাদের সকল সামর্থ্য নিয়ে নেমেছে। তারা তাদের পক্ষে বিদেশী কাফেরদের বিনিয়োগও বাড়িয়েছে। অথচ এ যুদ্ধে তারা ইসলামপন্থিদের নামাটাই নিষিদ্ধ করতে চায়। শেখ মুজিব সেটিই করেছিল শাসন ক্ষমতায় বসেই। দেশের সকল ইসলামী দলকে মুজিব নিষিদ্ধ করেছিল। শেখ হাসিনারও একই নীতি। লক্ষ্য, রাজনীতির অঙ্গণে তাদের লড়াইকে প্রতিদ্বন্দ্বিহীন করা।

অপর দিকে হিফাজতে ইসলামী রাজনীতির অঙ্গণে নামতেই চায় না। তারা সাংবাদিক সন্মেলন করে বলে তারা অরাজনৈতিক। অর্থাৎ তারা যুদ্ধে নাই। রাজনীতির ময়দানকে বিনা যুদ্ধে তারা ইসলামের শত্রুপক্ষের হাতে ছেড়ে দিয়েছে। ইসলামের শত্রু পক্ষ তো সেটিই চাই। এটি বস্তুত শয়তানকে খুশি করার নীতি। এটি কি কোন মুসলিমের নীতি হতে পারে? এটি কি নবীজী (সা:)’র সূন্নত? প্রশ্ন হলো, রাজনীতির ময়দানে না নেমে তারা ইসলামকে হেফাজত করবেন কীরূপে? মসজিদ-মাদ্রাসার চার দেয়ালের মাঝে ইসলামকে সীমিত করে কি ইসলামকে হেফাজত করা যায়? যুদ্ধ তো হয় মসজিদ-মাদ্রাসার বাইরে। এবং সেটি রাজনীতির অঙ্গণে। রাষ্ট্রের শাসনক্ষমতা ইসলামের শত্রুপক্ষের দখলে গেলে তখন কি মসজিদ-মাদ্রাসাকে তাদের দখলদারী থেকে বাঁচানো যায়? তারা তো তখন পবিত্র মসজিদের মধ্যে ঢুকে মুসল্লীদের লাঠিপেটা করে। বাংলাদেশ সেটি বার বার হচ্ছে। হেফাহজতের হুজুরগণ কি সে গুলি দেখেন না?

মহান নবীজী (সা:)’র সূন্নতই বা তাদের জীবনে কই? নবীজী (সা:) নিজে ১০ বছর রাষ্ট্রপ্রধানের আসনে বসে শিক্ষা রেখে গেছেন রাষ্ট্রকে ইসলামের শত্রুদের হাত থেকে মুক্ত রাখা কত জরুরি। এবং কত গুরুত্বপূর্ণ হলো রাজনীতিতে অংশগ্রহণ। মুসলিম রাষ্ট্রগুলি ইসলামের শত্রুদের দখলে যাওয়ার কারণেই নবীজী(সা:)’র ইসলাম কোথাও বেঁচে নাই। বেঁচে নাই শরিয়ত ও হুদুদ। যা বেঁচে আছে তা হলো মোল্লা-মৌলভীদের নিজেদের মনগড়া ইসলাম। বেঁচে আছে পীরগীরি ও ফেরকাবাজী। ফলে নিজেদের আবিস্কৃত ইসলাম সরিয়ে নবীজী(সা:)র ইসলাম ফিরিয়ে আনায় তাদের কোন আগ্রহও নাই। ফলে তারা শুধু জিহাদশূন্যই নয়, বরং অনেকে পক্ষে লাঠি ধরছে ও ফতোয়া দিচ্ছে জালেম শাসকদের বাঁচাতে।

৬. বিজয়ী শয়তানের এজেন্ডা

কোন জাতিকে শক্তিহীন করার সবচেয়ে মোক্ষম উপায় হলো তাকে বিভক্ত করা। এ বিপদ থেকে বাঁচাতেই মহান আল্লাহতায়ালা মুসলিমদের উপর একতাবদ্ধ থাকাকে ফরজ করেছেন। এবং হারাম করেছেন বিভক্তিকে। অপরদিকে শয়তানের এজেন্ডা হলো মুসলিমদের মাঝে বিভক্তি গড়া। পরিতাপের বিষয় হলো, মুসলিম বিশ্বে শয়তানই বিজয়ী হয়েছে। শয়তানের সে বিজয়ের প্রমাণ হলো মুসলিম দেশগুলোর বিভক্ত মানচিত্র। একাজে শয়তানের এজেন্ট রূপে কাজ করেছে জাতীয়তাবাদী, রাজতন্ত্রী ও সেক্যুলারিস্টগণ। মুসলিম বিশ্বকে তারা ৫৭ টুকরোয় বিভক্ত করেছে নিজেদর ক্ষমতালোভী এজেন্ডা পূরণে। এটিই মুসলিম উম্মাহর ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিদ’য়াত। এতে খুশি ও লাভবান হয়েছে শয়তান ও তার অনুসারিগণ। মুসলিমদের আজকের পরাজয়ের মূল কারণ হলো এই বিভক্তি। মোল্লা-মৌলভীগণ ছোট ছোট বহু বিদ’য়াত নিয়ে বহু কথা বলেন, অথচ এ গুরুতর বিদ’য়াত নিয়ে তারা নিশ্চুপ।

 

৭. ইসলামী এজেন্ডা ও দলীয় এজেন্ডা

বাংলাদেশের ইসলামী দলগুলি ও আলেমগণ ইসলামের বিজয় ও শরিয়তে প্রতিষ্ঠা নিয়ে ভাবে না। তারা ভাবে নিজ নেতা, নিজ দল, নিজের পীরগীরি ও নিজ ফিরকার প্রতিষ্ঠা নিয়ে। ইসলামের বিজয় চাইলে তার মুসলিমদের মাঝে কুর’আনের জ্ঞান এবং একতাও চাইতো। কুর’আনের জ্ঞান ও একতা ছাড়া বিজয় যে অসম্ভব -সেটি কি তারা বুঝে না? নবীজী (সা:) দ্বীনের দাওয়াত দিতে গিয়ে গালি ও পাথর খেয়েছেন অথচ ইসলামের লেবাসধারি বহু মোল্লা-মৌলভীগণ সেরূপ দাওয়াতে নামতে রাজী নন। কুর’আন-হাদীসের বাণী ও নিজেদের ওয়াজ বিক্রি করেন অর্থের বিনিময়ে। এরাই ধর্মব্যবসায়ী। এরাই বলে বেড়ায়, না বুঝে কুর’আন পড়লেও সওয়াব আছে। অথচ তারা বলে না, কুর’আন বুঝার নির্দেশ এসেছে মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে।

কুর’আনের জ্ঞান ছাড়া জাহিলিয়াত থেকে মুক্তি মেলে না। এবং জাহিলিয়াত থেকে মু্ক্ত না হলে মুসলিম হওয়া যায় না। তাই নামায-রোযার প্রায় ১১ বছর পূর্বে কুর’আন শিক্ষা ফরজ করা হয়েছিল। মহান আল্লাহতায়ার নিজের বয়ানে পবিত্র কুর’আন হলো হিদায়েতের গ্রন্থ্য। না বুঝলে হিদায়েত লাভ কীরূপে সম্ভব? জনগণ কুর’আন বুঝলে তাদের কদর ও খরিদার কমবে -সেটি মোল্লা-মৌলভীগণ বুঝে। তারা ভাবে স্রেফ নিজেদের ব্যবসা নিয়ে। এরাই মুসলিম উম্মাহর মাঝে কুর’আনের জ্ঞান বিস্তারের শত্রু।  ০২/০৭/২০২১  

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *