বিবিধ ভাবনা (৪৯)

ফিরোজ মাহবুব কামাল

১. হাসিনার বড় বড় ধারালো দাঁত

বড় বড় ধারালো দাঁত থাকার কারণে বাঘ-ভালুকের ন্যায় হি্ংস্র পশুরা ছাগল-ভেড়ার পালকে তাড়া করে এবং ইচ্ছামত শিকার ধরে ভক্ষণ করে। লম্বা লম্বা ধারালো দাঁত রয়েছে শিকারী হাসিনারও। তার উপরের মাড়ির দাঁতগুলো হলো দেশের সেনাবাহিনী এবং নীচের মাড়ির দাঁতগুলো হলো পুলিশ ও RAB। তার জ্বিহবা হলো তার দলীয় গুন্ডা বাহিনী। হাসিনার দাঁত দিয়ে গুলি বেরোয়। এবং জিহ্ববা দিয়ে বিষ বেরোয়। তার কুমীরের মত বিশাল পেটটা বহু মানুষের রক্ত-মাংসে ভর্তি। সে বড় বড় ধারালো দাঁতগুলি দেখিয়ে হাসিনা ১৮ কোটি মানুষকে তাড়া করছে। এবং তার পক্ষে সহজ হয়েছে নিরস্ত্র জনগণের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা তাকে গুম করা, খুন করা ও নির্যাতন করা। পার্থক্য হলো, বাঘ-ভালুকের দাঁতগুলি তাদের নিজের। কিন্তু হাসিনার হিংস্র দাঁতগুলি বেড়ে উঠেছে জনগণের রাজস্বের অর্থে।

২. হাছিনার অপশাসনের পজেটিভ দিক

জীবন বাঁচাতে হলে হিংস্র পশুগুলিকে সঠিক ভাবে চিনতে হয়। নইলে বাঘ ভালুকের পেটে যেতে হয়। তাই শিশুদের জন্য গুরুত্ব শিক্ষাটি গ্রহ-নক্ষত্র বা পাহাড়-পর্বত চেনানো নয়, বরং আশেপাশের হিংস্র পশু ও বিষাক্ত পোকামাকড়গুলিকে চেনানো। তেমনি জাতিকে বাঁচাতে হলে অংক-ফিজিক্স-কেমেস্ট্রি শিখেয়ে লাভ নাই, চোখে আঙ্গুল দিয়ে চেনাতে হয় মুজিব-হাসিনার ন্যায় দুর্বৃত্ত, খুনি, বিদেশের দালাল ও গণতন্ত্রের দুশমনদের। নইলে জাতি বাঁচে না, বরং ভয়ানক আযাবে পড়ে। পবিত্র কুর’আনে তাই বার বার ফিরাউন-নমরুদের ন্যায় দুর্বৃত্তদের পরিচয় পেশ করা হয়েছে। যাতে মানুষ এ ভয়ানক জীবদের থেকে বাঁচে –কারণ এরা মুজিব-হাসিনার বেশ ধরে বার বার ফিরে আসে।

পরিতাপের বিষয় হলো, বাংলাদেশে পরম শত্রুদের চেনানোর সে কাজটি আদৌ হয়নি। বরং মাথায় তুলে গুণকীর্তন হয়েছে। ফলে মুজিবের ন্যায় ক্ষমতালোভী বাকশালী-স্বৈরাচারীও জাতির পিতা ও বঙ্গবন্ধু রূপে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। নির্বাচনে এ দুর্বৃত্তরা বিপুল ভোটও পেয়েছে। নির্বাচনে এ দুর্বৃত্তগণ ভোট ডাকাতি করবে, এবং ক্ষমতায় গিয়ে গুম-খুন-সন্ত্রাসের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা দিবে -সেটিই কি স্বাভাবিক নয়? সভ্য দেশে এরূপ চোরগণ ঘরের চাকরের চাকুরীও পায় না। তবে হাসিনার শাসনের পজিটিভ দিকটি হলো, বাংলাদেশীদের জন্য মানবরূপী হিংস্র জীবদের চেনার কাজটি সে সহজ করে দিয়েছে।

৩. চোরডাকাত চেনার সহজ পথ

সমাজে চোর-ডাকাতদের চোরডাকাত রূপে পরিচয় করিয়ে দেয়ার গুরুত্বটি বিশাল। তখন বিবেকবান ভদ্র লোকেরা তাদের পাশে বসতেও ঘৃনা করে। ভোটচোর হাসিনার ক্ষেত্রে সেটিই ঘটেছে। চোর-ডাকাত, সন্ত্রাসী, দুর্নীতিবাজ ও ধর্ষক ছাড়া কেউ তার পাশে নাই। এজন্যই ইসলামের বিধান হলো, ব্যাভিচারীদের শহরের প্রধান চৌরাস্তায় সমবেত বিশাল জনতার সামনে পিঠে চাবুক মারা। এবং চোরদের হাত কেটে দেয়া। তারা যে সমাজের জন্য অতি ক্ষতিকর জীব –সে প্রমাণটি তখন নিজেরা বহন করে চলাফেরা। এটিই মহান আল্লাহতায়ালার বিধান।

মানুষের চরিত্র কখনোই গোপন থাকে না। সেটি বুঝা যায়, কাদের সাথে চলা ফেরা করে -তা থেকে।  মশামাছি কখনোই ফুলের উপর বসে না, তারা গলিত আবর্জনা খোঁঝে। তাই মশামাছির ভিড় দেখেই বলা যায়, সেখানে নিশ্চয়ই দুর্গন্ধময় কিছু আছে। তেমনি চোর-ডাকাতেরা কখনোই ভাল লোকের সাথে বন্ধুত্ব করেনা। যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করে তারাও যে চোর-ডাকাত -তা নিয়ে কোন রূপ সন্দেহের অবকাশ নাই। হাসিনা তাই দেশের চোর-ডাকাত-দুর্বৃত্তদের চেনার কাজকে সহজ করেছে। হাসিনা যে নিজে চোর -সেটি ভোটচুরির মাধ্যমে প্রমাণ করেছে। ফলে তার পাশে যারা ভিড়ছে তারা যে ভাল মানুষ নয় বরং চোর -তা নিয়ে সন্দেহের কারণ নাই।

৪. জিহাদের পাঠশালা

ফিলিস্তিন হলো মুসলিম বিশ্ব মাঝে জিহাদের অন্যতম পাঠশালা। প্রকৃত মুসলিম রূপে বেড়ে উঠার জন্য শুধু মসজিদ-মাদ্রাসা থাকলে চলে না, জিহাদের মাদ্রাসাও থাকতে হয়। সোভিয়েত আগ্রাসনের পর এমন একটি মাদ্রাসা গড়ে উঠে আফগানিস্তানে। সে মাদ্রাসা থেকেই দেশটিতে সোভিয়েত রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যায় বিশ্বশক্তিকে পরাজিত করার মত লড়াকু মুজাহিদ গড়ে উঠে। এ মাদ্রাসার ছাত্ররাই দেশে ফিরে ফিলিস্তিনে অনুরূপ মাদ্রাসা খুলেছে। এরাই একদিন ইসরাইলকেও পরাজিত করবে। কারণ, ইসরাইল সোভিয়েত রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে শক্তিশালী নয়। অপর দিকে পি.এল.ও’র সেক্যুলারিস্ট ফিলিস্তিনীগণ লড়াই ছেড়ে মাহমুদ আব্বাসের নেতৃত্বে দূর্নীতিতে নেমেছে।

নবীজী (সা:) ও সাহাবায়ে কেরামদের সময় জিহাদের সে মাদ্রাসাটি ছিল অতি বিশাল। এবং সেটি চালু ছিল লাগাতর। মানব ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ মানবগণ গড়ে উঠেছে জিহাদের সে মাদ্রাসা থেকেই। এ মাদ্রাসার ছাত্ররাই রোমান ও পারসিক – তৎকালীন এ দুটো বিশ্বশক্তিকে পরাজিত করেছিল। পরবর্তীকালে মুসিলমগণ লাখ লাখ মসজিদ-মাদ্রাসা গড়েছে, কিন্তু বন্ধ করেছে জিহাদের মাদ্রাসা। ফলে বন্ধ হয়েছে প্রকৃত ঈমানদারের বেড়ে উঠার আয়োজন। আর এর ফলে শুরু হয়েছে বিদেশী কাফেরদের হাতে এবং দেশী মুনাফিকদের হাতে মুসলিমদের লাগাতর পরাজয়। এরই ফলে মুসলিম দেশগুলি ইসলামের দেশী-বিদেশী শত্রুদের আজ অধিকৃত।  

নামায-রোযা ও হজ্জ-যাকাত হলো সবচেয়ে সহজ ইবাদত। ঘুষখোর, সুদখোর, মদখোর, চোর-ডাকাত, ভোটডাকাত, খুনি, মিথ্যাবাদী ও স্বৈরাচারীও এগুলি করতে পারে্। এদের সংখ্যা বাংলাদেশের ন্যায় প্রতিদেশেই বিশাল। পাঠশালায় ঢুকলেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকা যায় না। আরো অনেক যোগ্যতা লাগে। তেমনি জান্নাতে যেতে হলে নামায-রোযা ও হজ্জ-যাকাতের মাঝে থেমে থাকলে চলে না, অবশ্যই জিহাদে নামতে হয়। কারো মাঝে সত্যিকারের ঈমান আছে কিনা সেটি বুঝা যায় জিহাদে যোগদানের মাঝে -যা বলা হয়েছে সুরা হুজরাতের ১৫ নম্বর আয়াতে। সাহাবাগণ সেটি বুঝতেন। তাই তাদের ইবাদত নামায-রোযা ও হজ্জ-যাকাতের মাঝে সীমিত থাকেনি। বরং নবীজী (সা:)’র এমন কোন সুস্থ্য সাহাবীই ছিলেন না যার জীবনে জিহাদ ছিল না।

৫. স্বাধীনতার মূল্য ও বাঙালীর ব্যর্থতা

আলু-পটলও মূল্য দিয়ে কিনতে হয়। স্বাধীনতা ও সভ্য জীবন পেতে আরো বেশী মূল্য দিতে হয়। সে লড়াই ফিলিস্তিনীরা করছে। মায়ানমারের যুবকেরাও করছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানুষের ব্যর্থতাটি বিশাল। ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একটি প্রকান্ড যুদ্ধ করে বাংলাদেশ বানিয়ে দিয়েছে। ভারতের সে এজেন্ডাটি ১৯৪৭ সাল থেকেই। পাকিস্তান ভাঙ্গার জন্য মুক্তিবাহিনীর প্রয়োজন ছিল না, সে সামর্থ্য ভারতের একারই ছিল। তারা ভারত মুক্তি বাহিনীর সামর্থ্য ৯ মাস যাবত দেখেছে; তারা কোন একটি জেলা দূরে থাক, নিজ শক্তিতে ৯ মাসে একটি থানাও স্বাধীন করতে পারিনি।  অথচ কতো গর্ব যে, ভারত নয়, বাঙালীরাই পাকিস্তানী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে স্বাধীনতা এনেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি হলো ৩০ লাখের নিহতের মিথ্যার ন্যায় আরেক বিশাল মিথ্যা।

স্বাধীনতার অর্থ হলো ভোটের অধিকার, মত প্রকাশের অধিকার ও মিটিং-মিছিলের অধিকার নিয়ে বাঁচা। সে অধিকার পাকিস্তান আমলেও ছিল। মুজিব নিজে জনসভার যে স্বাধীনতা পাকিস্তানে পেয়েছে সে সুযোগ কি কোন নেতা বাংলাদেশে তার আমলে বা হাসিনার আমলে পেয়েছে? অথচ বাঙালী সে স্বাধীনতা হারিয়েছে একাত্তরের পর এবং মুজিব ও হাসিনার হাতে। বিনিময়ে পেয়েছে গুম, খুন, চুরি-ডাকাতি, ধর্ষণ ও সন্ত্রাসের রাজনীতি।

দেশের মানুষ এতই ভীতু যে চোর-ডাকাত তাড়াতে রাস্তায় নামে না। বরং ভোটচোরকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলে। এবং গণহত্যাকারী এক বাকশালী দুর্বৃত্তকে জাতির পিতা বলে। মুজিবের মুর্তি গড়ে পূজাও করে। সব পক্ষ থেকেই জোর গলায় বলা হয়, এ বাঙালীরাই নাকি যুদ্ধ কবে একাত্তরে স্বাধীনতা এনেছিল? অথচ সে মুরোদ থাকলে স্বৈরাচারী হাসিনাকে হঠানোর লড়াই শুরু হতো। এ্মন বাঙালীদের নিয়েই রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, “হে বিধাতা, সাত কোটি প্রাণীরে রেখেছো বাঙালী করে, মানুষ করোনি।” বাঙালী হলেই মানুষ হওয়া যায় না। আরো অনেক দূর এগুতে হয়। কিন্তু সে এগুনোর চেষ্টা কই? আর মানুষ রূপে না বাড়লে গণতন্ত্রের প্রতি রুচিই বা সৃষ্টি হবে কী করে? এবং রুচি না সৃষ্টি হলে গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার লড়াই বা হবে কীরূপে। বাঙালীর ঘরের এ খবর গণতন্ত্রের দুশমনেরা ভাল করেই জানে। তাই নিজেদের গদী হারানো নিয়ে তারা আদৌ শংকিত নয়। ২৪/০৫/২০২১

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *