বিবিধ ভাবনা (৩২)

ফিরোজ মাহবুব কামাল

১. রাজনীতির গুরুত্ব ও অবহেলা

রাজনীতি হচ্ছে দেশের শাসক, আইন ও নীতি পরিবর্তনের ময়দান। এ ময়দানেই অনুষ্ঠিত হয় পবিত্র জিহাদ। শত্রুগণ পরাজিত হয়, ইসলাম বিজয়ী হয় এবং সুশাসন ও শরিয়তী বিধান প্রতিষ্ঠা পায় একমাত্র রাজনীতির এ ময়দানে বিজয়ী হলে। মহান আল্লাহতায়ালা বিনা বিচারে যাদেরকে জান্নাতে নিতে চান -তাদেরকে শহীদের মর্যাদা দিয়ে তুলে নেন রাজনীতির এ ময়দান থেকে। সে কাজটি মসজিদের জায়নামাজ থেকে হয়না। মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে সে ঘোষণাটি এসেছে সুরা আল-ইমরানের ১৪০ আয়াতে। বলা হয়েছে: “বিপদ তোমাদের উপর যেমন আঘাত হেনেছে, অনুরূপ আঘাত হেনেছে তাদের (তোমাদের শত্রুদের) উপরও; আমরা মানবের মাঝে এরূপ কালের বিবর্তন ঘটাই -যাতে আল্লাহ জানতে পারেন কারা ঈমান এনেছে এবং যাতে তোমাদের মধ্য থেকে তিনি বাছাই করতে পারেন শহীদদেরকে। আল্লাহ জালেমদের ভালবাসেন না।”

তাজ্জবের বিষয় হলো, বাংলাদেশের আলেমদের বিশাল অংশ এবং বিপুল সংখ্যক নামাযী ব্যক্তি রাজনীতিতে অংশ নেন না। দেশ ও দেশের রাজনীতি চোরডাকাত ও দুর্বৃত্তদের হাতে অধিকৃত হলেও তা নিয়ে তারা মাথা ঘামান না। রাজনীতিতে অংশ নেয়াকে দুনিয়াদারি ও অসাধু লোকদের কাজ মনে করেন। হিফাজতে ইসলামের নেতাগণ সাংবাদিক সন্মেলন করে জানিয়ে দিয়েছেন তারা রাজনীতিতে নাই। তারা নবীজী(সা:)’র বহু সূন্নতের উপর তাগিদ দেন। কিন্তু ভূলে যান নবীজী (সা:) নিজে ছিলেন রাষ্ট্রপ্রধান। তিনি নিজে রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণ করেছেন এবং বহু যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন। সমাজের শ্রেষ্ঠ মানুষগণ যখন রাজনীতিতে অংশ তখনই দেশ অধিক লাভবান হয়। রাজনীতির এ গুরুত্বপূর্ণ ময়দান শূণ্য রাখলে তা শূণ্য থাকে না, দুর্বৃ্ত্তরা দখল করে নেয়।  

তবে যারা রাজনীতিতে নেই বলে নিজেদের জাহির করেন সে দে্‌ওবন্দীদের মঞ্চে দেখা যায় হাসিনার ন্যায় দুর্বৃত্ত ভোটডাকাতকে। হাসিনাকে তারা কওমী জননী বলেও সন্মানীত করেছে। ভারতে তাদেরকে  দেখা যায় কংগ্রেসের লেজুড়বৃত্তি করতে। আশির দশকে দেওবন্দ মাদ্রসায় তাদেরকে দেখা গেছে ইন্দিরা গান্ধিকে আমন্ত্রিত করতে।

 

২.ভন্ডামী আল্লাহতায়ালার প্রতি ভালবাসা নিয়ে

বাংলাদেশ বহু লক্ষ আলেম ও মসজিদের ইমাম। দেশে বহু কোটি নামাযী ও রোযা পালনকারী। তাদের সবারই দাবী, তারা নাকি মহান আল্লাহতায়ালাকে ভালবাসেন। অনেকে “আশেকে আল্লাহ’র পরচিয় দিয়ে পীরগীরির রম রমা বাণিজ্য করেন। কিন্তু কোথায় সে ভালবাসার প্রমাণ?

মহান আল্লাহতায়ালার শরিয়তী আইন অপসারিত হয়েছে আদালত থেকে। সেখানে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে কাফের ব্রিটিশদের আইন। একাজ ইসলামে হারাম। এতো মহান আল্লাহতায়ালার বিরাট অপমান! পরাজয় তাঁর ইসলামী বিধানের। কিন্তু তা নিয়ে মহান আল্লাহতায়ালা এসব তথাকথিত আশেকদের মনে বেদনা কই? বেদনা থাকলে তা নিয়ে প্রতিবাদ কই? বেদনা থাকলে শুরু হতো শরিয়তের প্রতিষ্ঠার জিহাদ। ভন্ডামী কি কখনো গোপন থাকে?

৩. ১০টি প্রশ্ন ও গুরুতর ভাবনার বিষয়:

১). পৃথিবীর বুকে সে দেশ কোনটি যে দেশে ভোটডাকাতীর অপরাধীকে জেল না দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলা হয়?

২). বিশ্বের বুকে এমন কোন দেশ আছে কি যে দেশে বিদেশের এজেন্ট, প্রায় ৩০ হাজার মানুষের খুনি ও একদলীয় ফ্যাসিবাদী স্বৈরচারীর পিতাকে জাতির পিতা ও দেশের বন্ধু বলা হয়?

৩). মানব ইতিহাসে কোন দেশ দুর্বৃত্তিতি বিশ্বে পর পর ৫ বার প্রথম হয়েছে?

৪). সমগ্র মুসলিম ইতিহাসে কোন দেশের মুসলিমগণ নিজ দেশের রাজধানীতে পৌত্তলিক কাফের সেনাবাহিনীর সামনে মুসলিম সৈনিকদের আত্মসমর্পণ নিয়ে উৎসব করে?

৫) কোন দেশের মুসলিমগণ কাফেরদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তাদের অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করেছে এবং কাফের বাহিনীকে বিজয়ী করেছে? এবং কাফেরদের বিজয়কে নিজেদের বিজয় বলে উৎসব করে?

৬) পৃথিবীর কোন দেশের নাগরিকগণ প্রতিবেশী দেশের সীমান্ত রক্ষির গুলিতে নিহত হয়ে কাঁটাতারে ঝুলে এবং তা নিয়ে কোন প্রতিবাদ হয় না? এবং নিজ দেশের ৫০টির বেশী নদীর পানি তুলে নিলে্ও সরকার প্রতিবাদ করে না? এবং সে খুনি ও আগ্রাসী প্রতিবেশী দেশকে সবচেয়ে ঘনিষ্ট বন্ধু মনে করা হয়?

৭) বিশ্বের ইতিহাসে কোন দেশে ৫৭ জন সেনা অফিসার নিজ দেশের সেনানীবাসে নিজ সিপাইদের হাতে নিহত হয়েছে এবং সে হত্যাকান্ডের কোন সুষ্ঠ বিচার হয়নি?

৮). পৃথিবীর কোন দেশে নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট পেপার ডাকাতী হয়ে যায়? এবং ডাকাতীর নির্বাচনকে নির্বাচন কমিশন বৈধ নির্বাচন বলে সার্টিফিকেট দেয়া হয়?

৯). পৃথিবীর কোন দেশে খুনের আসামীকে মুক্তি দেয়া হয়, এবং সাংবাদিক ও লেখকদের স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য কারাগারে নির্যাতিত ও নিহত হতে হয়?

১০). পৃথিবীর কোন দেশের সেনাপ্রধানের ৪ ভাই খুনি এবং সে খুনিদের মুক্তি দেয়া হয়? এবং কোন দেশের সেনাবাহিনী ও পুলিশ জনগণের ভোটের উপর ডাকাতি করে?

উপরের ১০টি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে দেখা যাবে সবগুলো বিষয়েই সমগ্র বিশ্বে রেকর্ডটি একমাত্র বাংলাদেশের। একটি দেশের পতিতদশা বুঝবার জন্য ও বিবেকমান মানুষের চেতনায় বড় রকম ধাক্কা দেয়ার জন্য কদর্যতার এ রেকর্ডই যথেষ্ট্। সভ্য সমাজ নির্মাণে আগ্রহ থাকলে বিরামহীন লড়াই শুরু হওয়া জরুরি ছিল ১৯৭১ সাল থেকেই। কিন্তু বাংলাদেশে তা হয়নি। বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বে  নতুন রেকর্ড গড়েছে চোরডাকাত-দুর্বৃত্তদের জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধু ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলা্য়। বিশ্বের আর কোন দেশে চোরডাকাত-দুর্বৃত্তগণ কি কোন কালে এভাবে সন্মানিত হয়েছে?

 

৪. সভ্য ও অসভ্যের পরিচয়

সভ্য ও অসভ্যদের খালি চোখে দেখা যায়। সে জন্য গবেষণা লাগে না। অসভ্য মানুষদের চেনা যায় ঘরের মাঝে পোকা-মাকড় ও গলিত আবর্জনা দেখে। তেমনি অসভ্য জাতিকে চেনা যায় তাদের উপর চোরডাকাত-দুর্বৃত্তদের শাসন দেখে। সভ্য মানুষেরা শুধু ভাত-মাছ খায় না, চোর-ডাকাতও তাড়ায়। কিন্তু বাংলাদেশে তা হয়নি। বাংলাদেশে ভাত-মাছের আয়োজন বেড়েছে, কিন্তু চোর-ডাকাত তাড়ানোর কাজটি আদৌ হয়নি।

৫. দুর্বৃত্ত নির্মূলের গুরুত্ব

দুর্বৃত্ত নির্মূলের কাজটি ইসলামের প্রধানতম মিশন। এ মিশন নিয়ে বাঁচার জন্যই মুসলিমদের সর্বশ্রেষ্ঠ জাতির মর্যাদা -যা বলা হয়েছে সুরা আল-ইমরান, আয়াত ১০৫’য়ে। পবিত্র কোর’আনে আরো বলা হয়েছে: “তোমাদের মধ্যে অবশ্যই একটি দল থাকবে যারা কল্যাণের দিকে মানুষকে ডাকবে, ন্যায়ের নির্দেশ দিবে এবং দুর্বৃত্তির নির্মূল করবে –এরাই সফলকাম।” -( সুরা আল-ইমরান, আয়াত ১০৪)। এ আয়াতটিতে মহান আল্লাহতায়ালা সফলতার সংজ্ঞা বেঁধে নিয়েছেন। সেটি নামায-রোযা ও হজ্ব-যাকাত পালন নয়; বরং রাষ্ট্র থেকে দুর্বৃত্তদের নির্মূল ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা। তাই যারা মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ করে এবং নামায-রোযা ও হজ্ব-যাকাত পালন করে অথচ দুর্বৃত্তদের নির্মূলে ময়দানে নামে না –তারা ঈমানদার হিসাবে বিফল। নিষ্ক্রীয় থেকে তারা বরং বিজয় তুলে দেয় শয়তানের হাতে। তাই তারা শয়তানের সাহায্যকারী।

বাংলাদেশে দলের সংখ্যা অনেক। বহু দল ইসলামের নামেও। কিন্তু প্রশ্ন হলো, উপরুক্ত আয়াতে মহান আল্লাহতায়ালা যে ধরণের দল দেখতে চান, সে ধরনের দল বাংলাদেশে আদৌ আছে কি? থাকলে তাদের মাঝে দুর্বৃত্ত নির্মূলের লড়াই কই?

৬. চোর-ডাকাতদের দখলে দেশ

গ্রামে ডাকাত পড়লে গ্রামের সবাই সকল সামর্থ্য নিয়ে ডাকাত তাড়াতে নামে। দেশের কোটি কোটি মানুষের ভোটগুলো ডাকাতি হয়ে গেল, এবং সে ডাকাতির ফলে ডাকাতি হয়ে গেল সমগ্র দেশ। কিন্তু ক’জন সে ডাকাতদের ধরতে ও শাস্তি দিতে রাস্তায় নামলো? এমন দেশের উপর ডাকাতদের দখলদারী দীর্ঘায়ু পাবে -সেটাই কি স্বাভাবিক নয়?

বাংলাদেশের পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কাজ হয়েছে হাসিনার পক্ষে ভোটডাকাতি করা। নির্বাচন কমিশনের কাজ হয়েছে ভোটডাকাতিকে জায়েজ করা। আদালতের বিচারকদের কাজ হয়েছে ভোটডাকাতদের বিচার না করা। এবং জনগণের কাজ হয়েছে সবকিছু বিনা প্রতিবাদে নীরবে দেখা। এটি কি কোন সভ্য দেশের রীতি হতে পারে? এরূপ অসভ্য রীতির কারণেই দেশ পুরাপুরি অধিকৃত হয়েছে অপরাধী চক্রের হাতে।

৭. অপরাধী হাসিনা

শেখ হাসিনা শুধু অবৈধই নয়, গুরুতর অপরাধীও। তার অপরাধ জনগণের ভোটের উপর ডাকাতি। জনগণের দায়ভার হলো এ অপরাধীকে সাজা দেয়া। সেটিই যে কোন সভ্য সমাজের রীতি। এটি জনগণের বৈধ অধিকারও। অপরাধীদের যে দেশে সাজা দেয়া হয়না, সে দেশ অপরাধীদের দখলে যায়। তখন প্লাবন আসে অপরাধ কর্মে্। তখন দুর্নীতিই নীতিতে পরিণত হয়। এবং তারই উদাহরণ হলো বাংলাদেশ। ০২/০৩/২০২১।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *