বাংলাদেশীদের মূল রোগ ও অর্জিত ভোগান্তি

বাংলাদেশীদের যে রোগটি তাদের জীবনে সীমাহীন ভোগান্তি বাড়া্চ্ছে সেটি কলেরা, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু বা যক্ষা নয়; সেটি নিতান্তই নৈতীক। সেটি দুর্বৃত্তদের ঘৃণা করার বদলে তাদের শ্রদ্ধাভরে মাথায় তোলার রোগ।এ রেগের কারণে লোপ পায় একান্ত দুর্বৃত্তকেও ঘৃণার করার সামর্থ্য। বরং তাতে সৃষ্টি হয় তার দলে ভেড়া এবং তাকে নেতা বলার নেশাই প্রবলতর হয়। এ রোগের কারণেই অতীতে বাংলাদেশীগণ শেখ মুজিবের ন্যায় গণতন্ত্রের হত্যাকারী এবং ভারতের সেবাদাস এক ফ্যাসিস্টকে নিজেদের নেতা ও বঙ্গবন্ধু বলেছে। এবং এখনও বলছে। ১৯৭০’য়ের নির্বাচনে এ দুর্বৃত্তকেই বিপুল ভোটে বিজয়ীও করেছে। অথচ মুজিব তখনও ফেরেশতা ছিল না। এবং সে রোগের প্রকোপে আজও তারা মুজিবের কন্যা এবং মুজিবী আদর্শের পতাকাবাহীকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলছে। 

চোর-ডাকাতদেরকে যে ব্যক্তি নিজের বন্ধু বা দেশের বন্ধু বা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলে সমীহ করে তাতে তার নিজের চরিত্রের গভীর রোগটিও অতি নির্ভুল ভাবে ধরা পড়ে। সে নিজেও যে চোর-ডাকাত, ফ্যাসিস্ট ও খুনি হওয়ার যথেষ্ট উপযোগী -এভাবে সেটিও সে জানিয়ে দেয়। দুর্বৃত্তদের ঘৃনা করা এবং ন্যায়ের পক্ষ নেয়ার সামর্থ্য এমন লোকদের থাকেনা। এ রোগে আক্রান্তরাই অতীতে নবী-রাসূলদের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিয়ে খাড়া হয়েছে। এবং বাধাগ্রস্ত করেছে দুর্বৃত্ত নির্মূলের প্রচেষ্ঠাকে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এদের সংখ্যাটি শুধু আওয়ামী লীগে নয়, বিএনপিসহ অন্যান্য দলেও বিশাল। এমনকি এ রোগের প্রকট প্রকোপ মাদ্রাসা-মসজিদের ছাত্র ও হুজুরদের মাঝেও। মুজিবকে এরাও বঙ্গবন্ধু বলতে পাগল। হাসিনাকে তারা কওমী জননী বলছে। ভাইরাসের ন্যায় এ নৈতীক রোগটি ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। ঈমানদার হওয়ার শর্ত হলো, এ নৈতীক রোগ থেকে নিজেকে মুক্ত করা। ন্‌ইলে অসম্ভব হয় ঈমানদার হওয়া। প্রকৃত ঈমানদার কখনোই চোর-ডাকাত ও ভোটডাকাতদের ন্যায় দুর্বৃত্ত ও স্বৈরাচারি ফ্যাসিষ্টদের বন্ধু নিজেদের বন্ধু বলে মনে করে না। তাদের পিছনে কখনো জিন্দাবাদও বলে না। কারণ সে কাজে প্রবল বাধাটি আসে ঈমানের গভীর থেকে। কোন ঈমানদার কি শয়তানকে ফেরেশতা বলতে পারে? এটি তো জঘন্য অপরাধ। এটি দুর্বৃত্তদের পক্ষে সাক্ষী দেয়ার অপরাধ। এ অপরাধের জগতে যে ব্যক্তির বিচরণ, তার কি জাহান্নামে পৌছার জন্য মুর্তি পূজার প্রয়োজন পড়ে?  অথচ যারা জান্নাতে পৌঁছতে  চায় তারা বাঁচাটি ভিন্ন ধারার। তারা যেমন দুর্বৃত্তদের মনের গভীর থেকে ঘৃনা করে, তেমনি সর্বসামর্থ্য নিয়ে ময়দানেও নামে তাদের নির্মূলে।

মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোর’আনের সুরা আল ইমরানের ১১০ নম্বর আয়াতে মুসলিমদের বিশ্বমাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি বলেছেন। তবে যে সামর্থ্যের কারণে তাদের এ বিশাল মর্যাদাটি দিয়েছেন সেটি এ নয় যে, তারা বেশী বেশী নামায-রোযা-হজ্ব-যাকাত পালন করে। বরং এ কারণে যে, তারা দুর্বৃত্তি ও দুর্বৃত্তদের নির্মূলে নামে এবং ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা দেয়। কিন্তু বাংলাদেশে সেটি ঘটেনি; বরং ঘটেছে সম্পূর্ণ উল্টোটি। ফলে ন্যায়ের প্রতিষ্ঠায় নয়, দেশ রেকর্ড গড়ছে দুর্বৃত্তিতে। এবং সে রোগের কারণেই বেগবান হচ্ছে মানুষ-খুন, নারী ধর্ষণ এবং চুরিডাকাতি। এবং সেটি হচ্ছে সরকারি ও বেসরকারি  ভাবে। সে অপরাধ থেকে মুক্ত নয় যেমন দেশের নির্ভৃত পল্লি, তেমনি রাজধানীর বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গণ। পরিতাপের বিষয় হলো, বাংলাদেশের এ নৈতীক রোগে রোগীর সংখ্যাটি বিশাল। কোন সুস্থ্য মানুষ কি কখনো কোন দুর্বৃত্তকে বন্ধু বলে? কোন ডাকাতকে মাননীয় বলে? কোন সভ্য দেশে এমনটি ঘটে না। দুর্বৃত্তকে জেলে যেতে হয়। অথচ এ নৈতীক রোগের কারণে বাংলাদেশে এরূপ অপরাধ অতি বিপুল ভাবে হচ্ছে। ফলে মুজিবের ন্যায় মানব হত্যা ও গণতন্ত্র হত্যার নায়কও বঙ্গবন্ধুর খেতাব পাচ্ছে! এবং হাসিনার ন্যায় গণতন্ত্র হত্যাকারি ভোট ডাকাতকেও দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সরকারি আমলা, সেনা কর্মকর্তাগণও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলে। 

শেখ মুজিব যে কতবড় দুর্বৃত্ত ছিল এবং দেশের কল্যানের বদলে নিজের ভোগ বিলাস নিয়ে কতটা ডুবে ছিল -তারই চিত্র তুলে ধরেছেন সিঙগাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান ইউ তার নিজের ডাইরীতে। ১৯৭৩ সালে মুজিবের ন্যায় তিনিও কানাডাতে গিয়েছিলেন কমনওয়েলর্থ সন্মেলনে যোগ দিতে। তিনি গিয়েছিলেন অন্য যা্ত্রীদের সাথে একটি যাত্রীবাহী সাধারণ বিমানে চড়ে। এভাবে তিনি দেশের অর্থ বাঁচিয়েছেন এবং দেশকে পৌঁছে দিয়েছেন উন্নয়নের উচ্চ শিখরে। অথচ মুজিব গিয়েছিলেন বোয়িং ৭০৭’য়ের একটি পুরো বিমান নিয়ে। যেন তিনি একজন উন্নত বিশ্বের রাষ্ট্রনায়ক। সে বিমানটি এক সপ্তাহ ধরে পড়েছিল অটোয়া বিমান বন্দরে। শেখ মুজিবের এ কান্ড দেখেই প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান ইউ’য়ের চোখে ধরা পড়েছিল মুজিব নিজদেশের কতবড় শত্রু এবং দুর্বৃত্ত। মুজিবের সে স্বার্থপরতা ও  দুর্বৃত্তির কারণেই বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পায় ভিক্ষার তলাহীন ঝুড়ি রূপে।

প্রশ্ন হলো, মাত্র কয়েক মুহুর্ত দেখে প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান ইউ মুজিবকে যতটা সঠিক ভাবে তাকে চিনতে পেরেছিলেন তা বাঙালীরা কেন বিগত বহু যুগ পরও চিনতে পারলো না? কারণ তাদের নীতি শূন্যতা। কাউকে চিনতে হলে শুধু চোখের দৃষ্টি নয়, মনের দৃষ্টিও লাগে। মনের সে দৃষ্টিটি আসে ব্যক্তির বিবেক থেকে। কিন্তু মুজিবের অপরাধ শধু এ নয় যে, সে গণতন্ত্র হত্যা বা মানবহত্যা করেছিল। বরং তার বড় অপরাধ হলো, সে বিবেক হত্যার ভয়ানক মহামারি ঘটিয়েছিল। বিবেকের সে মহামারির কারণে বাংলাদেশীরা শুধু মুজিবকে নয়, তার প্রভু ভারতকে বন্ধু রূপে গ্রহণ করেছিল। এবং বিপুল সংখ্যায় হত্যা করেছিল অবাঙালী মুসলিমদের। সে বিবেক শূণ্যতার কারণে আজও তারা মুজিবকে বঙ্গবন্ধু বলে। এবং সে বিবেক শূণ্যতার কারণেই বাংলাদেশীদের প্রকৃত অর্জনটি হলো ভারতের গোলামী। এ গোলামী নিয়ে্ই বাঙালীদের বাঁচতে হবে। এবং পরিত্রাণের কোন সহজ রাস্তা নেই।   

 প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান ইউ তার নিজের ডাইরীতে মুজিবকে নিয়ে কি  বলেছিলেন তা নীচে দেয়া হলো:  “Another person I remember from the Ottawa meeting was Prime Minister Sheikh Mujibur Rahman, …who¸ arrived in style at Ottawa in his own aircraft. When I landed, I saw a parked Boeing 707 with “Bangladesh” emblazoned on it. When I left, it was still standing on the same spot, idle for eight days, getting obsolescent without earning anything. As I left the hotel for the airport, two huge vans were being loaded with packages for the Bangladeshi aircraft. At the conference Mujibur Rahman had made a pitch of aid to his country…   So I made a virtue of arriving by ordinary commercial aircraft, and thus helped preserved the third world status of Singapore –.

৯/১০/২০১৯ 

 

   

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *