নির্বাচনে ভোট-ডাকাতির অসভ্যতা ও অতি পজেটিভ বিষয়

যে কোন বিবেকহীন নৃশংস স্বৈরাচারির ন্যায় শেখ হাসিনার ভাবনাটি ছিল নির্বাচনে স্রেফ তার নিজের ও নিজ দলের বিজয় নিয়ে। বিজয়টি ন্যায়ের পথে হলো, না অন্যায়ের পথে হলো, নির্বাচনে কতটা নৃশংস ভাবে ভোট ডাকাতি হলো এবং ভোট প্রয়োগ থেকে জনগণকে কতটা বঞ্চিত করা হলো – শেখ হাসিনার মাঝে সে ভাবনার লেশমাত্রও নাই। অথচ সে ভাবনার মাঝেই তো মানুষের নীতি-নৈতিকতা ও সভ্য বিবেকবোধ। সে ভাবনা না থাকাটাই তো চরম অসভ্যতা। এরূপ চরিত্রটি একান্তই ডাকাতদের। ডাকাতদের কাছে গৃহস্থের ঘর থেকে অর্থলুটটাই মূল। কতটা নৃশংসতা ও বর্বরতার সাথে ডাকাতি হলো, কতজন সে ডাকাতিতে মারা পড়লো -সে ভাবনা তাদের থাকে না।

তবে সাধারণ চোর-ডাকাতদের থেকে শেখ হাসিনা ও তার দলীয়  চোর-ডাকাতদের একটি বড় রকমের পার্থক্য সহজেই নজরে পড়ে। সেটি হলো, চোর-ডাকাতগণ যত খারাপ চরিত্রেরই হোক, তাদেরও মান-সন্মানের ভয়-ভাবনা থাকে। এজন্যই তারা রাতের আঁধারে নিজেদের পরিচয় অতি গোপন রেখে ডাকাতি  করে। কারণ, ডাকাতদেরও ছেলেমেয়ে, পরিবার পরিজন নিয়ে জনগণের মাঝে বসবাসের ভাবনা থাকে। শুধু পুলিশের ভয় নয়, নিজের পরিবারের লোকজন, আত্মীয়স্বজন এবং পাড়া-প্রতিবেশী কি বলবে সে লজ্জা-শরমও থাকে। এজন্য ডাকাতি করতে  গিয়ে ধরা পড়লে ডাকাতেরা লজ্জায় পারলে গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। কিন্তু সে লজ্জা-শরম যেমন হাসিনার নাই, তেমনি তার দলের নেতাকর্মীদেরও নাই। নইলে মানুষের চোখের সামনে তারা কেন ভোট-ডাকাতিতে নামবে?

লজ্জা থাকার কারণ সম্প্রতি ঢাকার এক অভিজাত স্কুলের ছাত্রী নকল করতে গিয়ে ধরা পড়ায় আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু লজ্জা না থাকার কারণে শেখ হাসিনার নৃশংস ডাকাতি শেষে উৎসব করেছে। যে পুলিশেরা তাকে ডাকাতির ফসল ঘরে তুলে দিয়েছে তাদের খুশি করতে ১২ই জানুয়ারি দেশের ৬৩৩টি থানার সবগুলিতে সরকারি খরচে বিশাল ভোজের আয়াজন করা হয়েছে। এবং কেন্দ্রীয় ভাবে ভোজের আয়োজন করা হয়েছে ঢাকার পুলিশ সদর দফতরে। এবং সেটি ১৩ই জানুয়ারিতে। ব্রিটিশ আমলে এবং পাকিস্তান আমলে জনগণের রাজস্বের অর্থে পুলিশদের এমন ভোজ কখনোই হয়নি। কারণ এভাবে ডাকাতির ফসল তারা কারো ঘরে তুলে দেয়নি। প্রশ্ন হলো, দেশের দরিদ্র জনগণ কি ডাকাতদের বিজয় ও বিজয় শেষে আনন্দ বাড়াতে রাজস্ব দেয়? পুলিশের প্রতি এরূপ বাড়তি  আদর কি ভোটডাকাতিতে তাদের সংশ্লিষ্টতাই প্রমাণ করে না?

সাধারণ ডাকাতগণ এভাবে ধরা পড়লে এরূপ উৎসব দূরে থাক, লজ্জায় গ্রামছাড়া হতো। কারণ, ডাকাতেরা ডাকাতি করলেও তাদের লজ্জা বলে কিছু থাকে। এজন্যই তারা রাতে লুকিয়ে, চেহারা ঢেকে ডাকাতি করে। কিন্তু শেখ হাসিনার সে লজ্জা-শরমের কোন বালাই নাই। অথচ নবীজী (সাঃ)র হাদীস, লজ্জা ঈমানের অর্ধেক। অর্থাৎ যার লজ্জা নাই, তার ঈমানও নাই। প্রশ্ন হলো, যে ব্যক্তি সামান্য ভোটের লাভ সামলাতে পারে না, তার হাতে দেশের স্বাধীনতা এবং দেশের লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার সম্পদ নিরাপদ থাকবে কেমনে?

কিন্তু হাসিনা এবার ভোট-ডাকাতিতে হাতে নাতে ধরা পড়েছে। ভোটদান শুরুর আগেই ভোটের বাক্স ভরা হয়েছে। যেখানে ভরতে দেরী হয়েছে সেখানে দলীয় মাস্তানেরা ভোট কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে তাদের চোখের সামনে ভোটারদের নৌকায় সিল মারতে বাধ্য করেছে। ভোট কেন্দ্রে ধানের শীষের পোলিং এজেন্টকে ঢুকতে দেয়া হয়নি। ধানের শীষের পক্ষে কোথাও মিছিল হবে এবং পোষ্টার লাগানো হবে সে সুযোগও দেয়নি। শুধু তাই নয়, ধানের শীষের ভোট দেয়াটি ধরা পড়লে ভোটারকে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। নোয়াখালীতে ৪ সন্তানের এক মা’কে ধানের শীষে ভোট দেয়াতে ধর্ষণ করা হয়েছে। সে খবরটি পত্রিকাতে ছাপা হয়েছে। রাজশাহীর তানোরের কলমা গ্রামে ধানে শীষে বেশী ভোট পড়ায় সে গ্রামে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বন্ধ করা হয়েছে কৃষিক্ষেতে গভীর নল কূপের পানি। গ্রামের বাইরে বেরুলে মারধর করা হয়েছে।  খবরটি ছেপেছে ঢাকার ডেইলী স্টার। শেখ হাসিনা ও তার দলীয় কর্মীদের হাতে মানবতাবিরোধী এরূপ অসংখ্য অপরাধ ঘটেছে।

প্রশ্ন হলো, এরূপ ভয়ংকর ডাকাত ধরতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত বা বিদেশী পর্যবেক্ষকদের সাক্ষীসাবুদের প্রয়জন পড়ে কি? দেশের কোটি কোটি মানুষ এ ডাকাতির সাক্ষী। প্রত্যক্ষ সাক্ষী কয়েক লাখ সরকারি কর্মচারি। এরূপ ডাকাতদের বিচার না করাটাই তো অসভ্যতা। অথচ হাসিনার কাজ হয়েছে সে অসভ্যতার সাথে নিজে জড়িত হওয়া এবং সেটিকে প্রবলতর করা। যুদ্ধাপরাধের বিচারের ধুয়া তুলেছে স্রেফ নিজের মানবাধীকার বিরোধী নৃশংস অপরাধকে আড়াল করতে।

দেশের নর-নারী, কিশোর-কিশোরী ও শিশুসহ সকল স্তুরের মানুষ জানতে পারলো শেখ হাসিনা কত নীচু মনের নৃশংস ডাকাত। কোন দেশের প্রধানমন্ত্রী যে এতোটা খারাপ হতে পারে সেটি হয়তো তারা কোনদিনই ভাবেনি। সাধারণত চোর-ডাকাতেরা গৃহস্থের সবকিছু লুটে নেয় না। গরু-বাছুর, তালাবাটি, ঘরের দরজা-জনালা খুলে নেয় না। কিন্ত শেখ হাসিনা ও তার সহযোগী ডাকাতেরা কোন কিছুই ছেড়ে দেয়নি, সবটাই নিজ পকেটে তুলে নিয়েছে। ফলে শেখ হাসিনা তার প্রতিদ্বন্দি বিএনপির প্রার্থীর জন্য কোন কোন ভোটকেন্দ্রে একটি ভোটও ছাড়েনি। হাসিনা গোপালগঞ্জ-৩ আসনে  ২ লাখ ২৯ হাজার ৫৩১ ভোট নিয়েছে। সেখানে বিএনপির এস এম জিলানী সকল ভোটকেন্দ্র মিলিয়ে পেয়েছেন মাত্র ১২৩ ভোট। কোন সুস্থ্য মানুষ কি এমনটি ভাবতে পারে? সুষ্ঠ ভাবে ভোট পড়লে কখনোই এমনটি হয় না; কিন্তু ভোটের উপর ডাকাতি হলে এমনটিই হয়।

তবে এ ভোট-ডাকাতির নির্বাচনের একটি বিশাল পজেটিভ দিক আছে। বিরোধী জোট হেরে গিয়ে প্রমাণ করেছে শেখ হাসিনা কত বড় নৃশংস অপরাধী এবং দেশের জন্য কতটা ভয়ংকর। এভাবে নগ্ন ভাবে শেখ হাসিনার কদর্য চেহারাটি দেশের আপামর মানুষের সামনে আসাটি জরুরী ছিল। এটি ঠিক, কিছু বেঈমান জাতের মানুষ চিরকালই গরু-ছাগলকে দেবতা মনে করে। অতীতে এজাতের চেতনাশূণ্যগণ ফেরাউনকেও ভগবান বলেছে। আওয়ামী লীগের মাঝে সে জাতের মানুষ অসংখ্য হলেও বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ সেরূপ নয়। হাসিনার চরিত্রটি তাদের সামনে আসাটি অতি জরুরী ছিল। ভাল হয়েছে যে, শেখ হাসিনা নিজেই তার কুৎসিত চরিত্র নিয়ে দেশবাসীর সামনে নিজে হাজির হয়েছে।

তিন শত সিটের মাঝে ১৬০ সিট দখলে নিলেও কি তাকে সরকার থেকে কেউ সরাতে পারতো? কিন্তু সেটি হলে তাতে  দীর্ঘস্থায়ী বিপদ বাড়তো দেশের স্বাধীনতার, গণতন্ত্রের ও ভবিষ্যতের। তাতে বিরোধী দলের কিছু সিট বাড়লেও তাতে ভয়ানক বিপদ বাড়তো দেশ ও দেশবাসীর। তাতে হাসিনার চরিত্রের কদর্যতাটি বিশ্বজুড়ে ঢাকা পড়তো। ঢাকা পড়তো ২০১৪ সালের ভোট ডাকাতির দুর্নাম। ঢাকা পড়তো তার গুম, খুন, চুরি-ডাকাতি এবং বিচারের নামে নিরপরাধ মানুষ হত্যার রাজনীতি। দেশের ইতিহাসের বইয়েও তার একটি সন্মানজনক স্থান থাকতো। কিন্তু মহান আল্লাহতায়ালা সেটি চাননি। তিনি চেয়েছেন, মানবতা বিরোধী এ ভয়ানক অপরাধীর মুখোশটি খুলে ফেলতে। যাতে মানুষ অদূর ভবিষ্যতে কাঠগড়ায় তুলে তার অপরাধের বিচার  করতে পারে। যাতে ইতিহাসের বইয়ে নিজের কুকর্ম নিয়ে মীর জাফরের ন্যায় হাজার হাজার বছর বেঁচে থাকে।

মহান আল্লাহতায়ালা যাকে বিশ্ববাসীর সামনে অপমানিত করতে চান তার স্বাভাবিক কাণ্ডজ্ঞানটুকু তিনি কেড়ে নেন। এমন কাণ্ডজ্ঞান-শূন্যতার কারণেই শেখ হাসিনা নিজেই নিজের বস্ত্র খুলে উলঙ্গ বেশে বিশ্ববাসীর সামনে হাজির হয়েছেন। নইলে ধানের শীষের প্রার্থীকে নিজ আসনে প্রায় তিন লাখ ভোটের মাঝে কেন ১২৩ ভোট দেয়ার ব্যবস্থা করবেন। প্রতিদ্বন্দী প্রার্থীকে এক লাখ বা ৫০ হাজার ভোট দিলেও তার বিজয় কি তাতে ঠেকে থাকতো? এভাবে নির্বাচনে শেখ হাসিনা জিতলেও তাতে বিরোধী দলগুলির ফায়দাটি হয়েছে বিশাল। হাসিনার আসল চরিত্রটি মানুষের সামনে তুলে ধরার কাজে তাদের নিজেদের আর মাঠে নামতে হচ্ছে না। অথচ হাজার হাজার জনসভা করে বা শত শত বই লেখে কি সে কাজটি করা সম্ভব হতো?

আওয়ামী লীগকে স্রেফ নির্বাচনে হারানোর মাঝে দেশের তেমন কল্যান নাই। কারণ তাতে হাসিনা ও তার দল হারলেও ক্যান্সার নির্মূল হতো না। অতীতে দলটি বহুবার হারলেও তার দেশ-ধ্বংসী বিষ বেঁচে আছে। বাংলাদেশের কল্যাণে যা জরুরী তা হলো বাকশালী ফ্যাসিবাদীদের আমূল নির্মূল। এ জন্য নির্বাচন নয়, অপরিহার্য হলো একটি প্রচণ্ড গণবিপ্লব –যা নির্মূল করে ছাড়বে এ ভয়ংকর অপরাধীদের। আর গণবিপ্লবের জন্য জরুরী হলো দেশের প্রতিটি নারী, শিশু, যুবক, যুবতীর মনে শেখ হাসিনার নৃশংস ডাকাত চরিত্রের নগ্ন রূপটিকে গভীর ভারে ক্ষুধিত করা। তবে সে কাজটি অতি প্রবল ভাবেই হয়েছে। এবং বিরোধী দলকে সেটি করতে হয়নি। বিরোধী দলের হাতে সে সামর্থ্যও ছিল না। অথচ শেখ হাসিনা ও তার দলের লোকজনই অতি সুচারু ভাবে এবং প্রবল ভাবে সে কাজটি করে দিয়েছে। এবারের নির্বাচনের এটিই হলো বিশাল পজিটিভ দিক। জনগণ ভোট ডাকাতির এ করুণ স্মৃতি আর কোন কালেই ভুলবে না। বাংলার ইতিহাস থেকেও তা আর কোন দিন হারিয়ে যাবে। জঘন্য অপরাধীদের তো এভাবেই মহান আল্লাহতায়ালা হাজার হাজার বছর বাঁচিয়ে রাখেন। ফিরাউন, নমরুদদের তাই ইতিহাস থেকে তিনি হারিয়ে যেতে দেননি।

এখন বিরোধী দলগুলির  কাজ হলো, জনগণের মনে জমাট বাধা সে গভীর ঘৃণাকে গণবিপ্লবে রূপ দেয়া।  তবে একাজে জনগণের নিজের দায়িত্বটিও কম নয়। দেশ কোন দল বা কোন নেতা-নেত্রীর নয়। দেশ সবার। তাই দেশ থেকে  চোর-ডাকাত তাড়ানোর দায়ভারটিও সবার। তাছাড়া দেশবাসী কতটা চোর-ডাকাত মুক্ত সভ্য পরিবেশে বসবাস করতে চায় সেটির পরিচয় মিলবে তো ডাকাত তাড়ানোর সে লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে। পাড়ায় আগুন লাগলে আগুণ তাড়ানোর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু থাকে না। তেমনি দেশ ডাকাতের দখলে গেলে ডাকাত নির্মূলের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু থাকে না।

রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, “হে বিধাতা, সাত কোটি প্রাণীরে রেখেছো বাঙালী করে, মানুষ করোনি।” বাঙালী কতটা মানুষ রূপে বেড়ে উঠেছে এবার সে পরীক্ষা দেয়ার পালা। মুসলিম রূপে দায়িত্বটি তো আরো বেশী।  রাষ্ট্রপ্রধান রূপে যে আসনে বসেছেন খোদ নবীজী সাঃ সে আসনে হাসিনার মত এক ভোট ডাকাতকে মেনে নিলে ও তাকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বললে কি ঈমান থাকে? দেশ যখন চোর-ডাকাতদের দখলে গিয়েছিল তখন ডাকাত তাড়াতে নিজের কী ভূমিকা ছিল -রোজ হাশরের বিচার দিনে সে প্রশ্ন তো অবশ্যই উঠবে। শত্রুনির্মূলে নবীজী (সাঃ)র শতকরা ৭০ ভাগের বেশী সাহাবা শহীদ হয়েছিলেন। অথচ বাংলাদেশে ক’জন তাদের অর্থ, শ্রম, সময় ও রক্তের কোরবানী দিচ্ছে ইসলামের শত্রু এবং মানবতার শত্রু নির্মূলে? ১০/০১/১৯

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *