একাত্তরের ফসল

ফিরোজ মাহবুব কামাল

এ কি অসভ্য নৃশংস শাসন বঙ্গীয় এ বদ্বীপে!

এরূপ দুর্বৃত্ত শাসন এহেন বর্বরতা নিয়ে ঘটেছে কি কভু আগে?

স্বাধীনতা কবরে শায়ীত,  অধিকৃতি হিন্দুত্বের, উগ্র উল্লাস ফ্যাসিবাদী হায়েনার।

হত্যা-ধর্ষণ, গুম-খুন, মজলুমের রক্তে রাঙা বাংলার সবুজ প্রান্তর,

ভোটডাকাতি, ভারতের অধীনতা, পেটকাটা করিডোর, সীমান্তে কাঁটা তারে ফ্যালানি

–এ সবই তো একাত্তরের ফসল।

 

মুসলিম দেশে হিন্দুত্বের ঝান্ডা বাহী কাফেরের যুদ্ধ হয় কি কভু শেষ?

একবার হায়েনার গ্রাসে গেলে মুক্তি সহজে কি কভু মেলে?

একাত্তরের যুদ্ধ ও ভারতের দখলদারী আজও তাই চলছে অবিরত।

আজও তাই কমে নাই লুন্ঠন, ধর্ষণ, গুম, খুন, সন্ত্রাস, স্বৈরাচার ও রক্তত্ব সংঘাত।

  

                                                        হায়েনার কাজ হায়েনা করে,

যুদ্ধ যে মৃত্যু আনে, নির্যাতন, ধ্বংস ও ধর্ষণ আনে -সেটি কি অজানা?

যুদ্ধের ডাক দেয়াই তো তাই সবচেয়ে বড় যুদ্ধাপরাধ,

অপরাধ তো হলো ভারতের ন্যায় পরিচিত হায়েনাকে ঘরে ডেকে আনা।

যুগে যুগে এরূপ কাজই তো করেছে মীর জাফর।

বাংলার বুকে এরূপ ঘৃণ্য কাজ কেবল গণতন্ত্রের খুনি মুজিবেরই সাজে।

 

মুসলিমেরা পরস্পরে ভাই -এতো মহান আল্লাহর কুর’আনী ফরমান,

অন্তরে যার বিন্দুবৎ ঈমান আছে সে কি কভু অবাধ্য হয় মহান স্রষ্টার এ অমোঘ ঘোষণার?

ভাইকে কেউ কি হত্যা করে, গৃহটি কি কভু কেড়ে নেয়, স্রেফ ভাষা ভিন্ন হওয়ায়?

ভারত প্রেমী বাঙালীরা সেটিই তো করেছে প্রতিবেশী পাঁচ লাখ বিহারী মুসলিমের সাথে।

বাঙালীরা সেদিন শুনেও শুনেনি, দেখেও দেখিনি বিহারীদের সে করুণ ক্রন্দন!

 

বাঙালী চরিত্রের এ কলুষ কালিমা কি সহজে লেপনের?

হাজারো বছর বাঁচবে এ ইতিহাস কদর্য পরিচয়ে।

বিহারীদের সে ক্রন্দন শোনাবে মার্সিয়া মানুষের কানে কানে।

এ অপরাধ কি কভু মাফ পাবে মহান আল্লাহর দরবারে?

 

মুসলিম তো সেই, যে ছিন্ন করে ভাষা, গোত্র, অঞ্চল ও বর্ণের জাহিলী বন্ধন,

ভিন ভাষার ভিন দেশের মুসলিমকে বরণ করে নিজ ভাই রূপে।

ঈমান তো এভাবেই বিমূর্ত হয় মু’মিনের কর্ম ও আচরণে।

সেটিই তো দেখা গেছে মদিনার আনসারদের মাঝে,

মক্কার গৃহহারা মোহাজিরদের যারা নিজ গৃহে আশ্রয় দিয়েছিল নিজ ভাই রূপে।

অথচ একাত্তরে সে ভাতৃত্ব কবরে গেছে বাঙালীদের মাঝে।

 

ভাইয়ের স্ত্রী ও ভাইয়ের সন্তানকে গৃহহীন করে সে গৃহে কি কোন মানব ঘুমাতে পারে?

সেরূপ কর্ম কি কভু পশুরাও করে স্বজাতি পশুর সাথে।

বাংলার বুকে সেটিই তো ঘটেছে পাঁচ লাখ বিহারীদের সাথে।

পাক সেনাদের কুকীর্তির বয়ানে এ পশুত্ব কি কভু ঢাকা যাবে?

ইতিহাসের পৃষ্ঠা থেকে বর্বরতার এ বিবরণ কি বাঙালী মুছে দিতে পারে?

 

বিভক্ত হয়ে স্বাধীনতা ও শক্তি বেড়েছে -সে প্রমাণ কি কোথাও আছে?

বিভক্তি দেয় পরাজয় ও অপমান এবং শত্রুর দখলে দেয় দেশ -সে প্রমান তো অনেক।

মুসলিমদের দেশে তাতে দখল বাড়ে কাফের শক্তির।

একাত্তরে সেটিই তো বিমূর্ত হয়েছে বিপুল রক্ত ব্যয়ে।

 

মুসলিমগণ শক্ত হাতে যখনই ধরেছে কুর’আন,

ভাই-ভাই রূপে আরব, ইরানী, তুর্কি, কুর্দি যখনই বেঁধেছে জোট,

তখনই জুটেছে রহমত, এসেছে বিজয় এবং বেড়েছে বিশ্বজুড়া গৌরব।

অথচ ২২ টুকরোয় বিভক্ত আরব আজ শত্রুর পদতলে।

নানা দেশের দোয়ারে দোয়ারে ঘুরে উদ্বাস্তুর বেশে।

বিভক্তির সে পথকেই বিজয়ী করেছে বাঙালী মুসলিম।

 

একতার পথে বার বার ডাকে পবিত্র  কুর’আন, ডাকে নবী(সা:)’র সূন্নত।

এছাড়া বিজয় ও গৌরবের ভিন্ন পথ কি আছে?

একতার মূল্য হিন্দুরাও বুঝে,

ভাষা ও বর্ণের নামে ফেতনা-ফ্যাসাদ তাদেরও ঘটে,

কিন্তু ভেঙ্গেছে কি তারা ভূগোল?

ভারতের ভূগোল না ভেঙ্গে তারা বাড়িয়েছে দিন দিন,

নিয়েছে কাশ্মির, হায়দারাবাদ ও সিকিম এবং ঢুকেছে বাংলাদেশেও।

                                                                                                

ভূগোল ভাঙ্গায় পরাজয় আসে,

ধ্বংস ও ধর্ষণ আনে, আনে মৃত্যু ও অপমান।

ভূগোল রক্ষায় ও ভূগোল বাড়াতে জিহাদ করা তো নবী(সা:)’র সূন্নত।

সে সূন্নত ধরেই অতীতে জুটেছে বিশ্বশক্তির গৌরব।

 

বাঙালী মুসলিম গড়েছে নব ইতিহাস ও নব সংস্কৃতি,

 ছেড়েছে নবী(সা:)’র সূন্নত, বাকশালী মুজিবকেও দেয় পিতার সম্মান।

হয়েছে ভারতের বন্ধু, ভেঙ্গেছে মুসলিম দেশ, গড়েছে নতুন মূল্যবোধ।

 গুম, খুন, সন্ত্রাস, বিনা বিচারে হত্যা, ফ্যাসিবাদ, ভোট-ডাকাতীও আজ রাষ্ট্রীয় নীতি,

ডাকাত সর্দারনীও বরেণ্য হয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী রূপে।

এ দুষ্ট বিচার, দুর্বৃত্তের এ বিরল পূজা, এ বিকৃত মূল্যবোধ

-এসবই তো একাত্তরের ফসল। 

২৬/১২/২০২১।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *