আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসের রাজনীতি

ডাকাতি ফ্যাসীবাদের 

আগুনের উত্তাপ আর কয়লার কালো রং কখনোই আলাদা হয় না। আওয়ামী লীগ থেকেও তেমনি আলাদা করা যায় না তার চরিত্র, ঐতিহ্য ও দলীয় সংস্কৃতি। সেটি যেমন গণতন্ত্র ধ্বংসের, তেমনি অটল ভারত-প্রেম এবং রাজনৈতিক সন্ত্রাসের। এবং সেটি দলটির জন্ম থেকেই। প্রতিদেশে প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই একটি আদর্শ থাকে। মানুষ সে আদর্শ বাস্তবায়নে দলবদ্ধ হয়,সে লক্ষে শ্রম দেয়,মেধা দেয়,অর্থ দেয় এবং প্রয়োজনে প্রাণও দেয়। সে লক্ষ্যে সমাজতন্ত্রিদের রয়েছে যেমন সমাজতান্ত্রিক দল, তেমনি ইসলামপন্থিদের রয়েছে ইসলামি দল। কিন্তু আওয়ামী লীগের আদর্শ কোনটি? দলের আদর্শ ধরা পড়ে দলের নীতি,কর্ম ও আচরণে। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা বহুকাল আগে,দলটি কয়েকবার ক্ষমতায়ও গেছে। ফলে গোপন থাকেনি তার নীতি,কর্ম ও আচরণ। আর তাতে প্রকাশ পেয়েছে আদর্শ। মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও আওয়ামী লীগের ইতিহাস,বহুদলীয় গণতন্ত্রকে কবরে পাঠানোর। রহিত করেছিলেন মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। ক্ষমতায় বসেই শেখ মুজিব দেশবাসীর জন্য আইনসিদ্ধ মতবাদের একটি তালিকা বেঁধে দিয়েছিলের,সেটি ছিল জাতীয়তাবাদ,সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষবাদ। এর বাইরে কোন আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করা বা ভিন্ন দল গড়াকে শাস্তিযোগ্য ফৌজদারি অপরাধ ঘোষিত করেছিলেন। এমনকি আল্লাহর বেঁধে দেয়া একমাত্র আদর্শ ইসলামকে নিয়েও নয়। ফলে তার বাংলাদেশে কোন ইসলামী দল ছিল না।

ডাকাতদের অপরাধ, তারা অন্যের সম্পদ দখলে বা লুণ্ঠনে সন্ত্রাস করে,এবং সে সন্ত্রাসে অস্ত্র ব্যবহার করে। তাদের ডাকাতি ব্যক্তির বিরুদ্ধে। আর ফ্যাসীবাদের ডাকাতি হল দেশ এবং সমগ্র দেশবাসীর বিরুদ্ধে। তারা সন্ত্রাসে নামে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলে। ডাকাতের সন্ত্রাসে রাজনীতি নাই, ভণ্ডামীও নাই। কিন্তু রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাদখলের সন্ত্রাসে রাজনীতি হল মূল হাতিয়ার। সন্ত্রাসের সাথে সেখানে রাজনীতি যেমন আছে তেমনি প্রতারণাও আছে।সে কারণেই ১৯৭০ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিব আট আনা সের চাউল খাওয়ানার ওয়াদা করেছিলেন। ১৯৭২-৭৩-এ তলাহীন ঝুড়ি এবং ১৯৭৪-এ ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ উপহার দিলে কি হবে,সত্তরের নির্বাচনে তিনি সোনার বাংলা গড়ার প্রতিশ্রুতি শুনিয়েছিলেন। দেশ ও দেশবাসীর উপর ডাকাতিতে নির্বাচন,রাজপথের জনসভা এবং মিছিলও পরিনত হয় সন্তাসের শিকার। নির্বাচনের আগেই রাজপথের দখল নেওয়ার এটাই ফ্যাসীবাদী সনাতন কৌশল। হিটলার সেটি জার্মানীতে করেছিল। আর আওয়ামী লীগ সে কৌশলের প্রয়োগ করেছে অতীতের প্রতিটি নির্বাচনে। এ নিবন্ধে সে সন্ত্রাসের কিছু উদাহরণ দেয়া হবে। মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে শেখ মুজিব যেমন একদলীয় বাকশালী স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠা করেছিল, তেমনি স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের কথা বলে তিনি ইতিহাস গড়েছিলেন ভারতের সাথে ২৫ সালা দাসচুক্তির। উন্নয়নের ওয়াদা দিয়ে ডেকে এনেছিলেন দেশীয় শিল্পে ধ্বংস, অর্থনৈতিক দুর্গতি ও ভয়ানক দুর্ভিক্ষ। ক্ষুদার্ত মানুষ তখন উচ্ছিষ্টের খোঁজে কুকুরের সাথে আস্তাকুঁড়ে প্রতিযোগিতায় নেমেছিল। মহিলারা তখন লজ্জা নিবারণে মাছধরা জাল পড়তে বাধ্য হয়েছিল। নবাব শায়েস্তা খানের আমলের “ধণে-ধানে পুষ্পেভরা” বাংলা তখন বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত পেয়েছিল তলাহীন ভিক্ষার ঝুড়ি রূপে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই হল মুজিবামল। হাজার বছরের ইতিহাসে আর কোন আমলেই আন্তর্জাতিক অঙ্গণে দেশটির এত  অপমান জুটেনি।

 

শেখ মুজিবের বক্তৃতা ও রাস্তায় লগিবৈঠা 

শেখ মুজিব তাঁর শাসনামলে সকল রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করে একমাত্র দল বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ (সংক্ষেপে বাকশাল) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। নিষিদ্ধ করেছিলেন সকল বিরোধী দলীয় পত্র-পত্রিকা। এমন একদলীয় শাসন,এমন সর্বনাশা দুর্ভিক্ষ এবং মতামত প্রকাশের উপর এমন কঠোর নিষেধাজ্ঞার ইতিহাস প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানে নাই। নেপাল এবং শ্রীলংকাতেও নাই। অথচ সে স্বৈরাচারি মুজিবই হল আওয়ামী লীগের শ্রেষ্ঠ নেতা ও শ্রেষ্ঠ আদর্শ। যারা ইসলামের প্রতিষ্ঠা চায় তারা কোরআন-হাদীসের চর্চা বাড়ায়। কারণ কোরআন-হাদীসের জ্ঞানে ইসলামের প্রতিষ্ঠায় মানুষ বেশী বেশী একনিষ্ঠ ও আত্মত্যাগী হয়। ডাকাত সর্দারের বার বার দীর্ঘ বক্তৃতা শুনে শিষ্যরা তেমনি বড় ডাকাত হয়। গণতন্ত্র-হত্যাকারি একজন বাকশালী নেতার বক্ততার ক্যাসেট হাজার বার শুনিয়েও কি তাই গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা বাড়ে? তখন তো বরং কর্মীরা উৎসাহ পায় লগি বৈঠা নিয়ে রাস্তায় মানুষ হত্যায়। এবং উৎসব বাড়ে অন্য দলের মিছিল-মিটিং পণ্ড করা বা যাত্রীভর্তি বাসে আগুণ ধরিয়ে নিরীহ মানুষ হত্যায়। এমন সহিংসতাও তখন শিষ্যদের কাছে গণতান্ত্রিক রাজনীতি মনে হয়ে। শেখ মুজিবের ৭ মার্চের ভাষণ হাজারো বার শুনিয়েও তাই দেশে রাজনৈতিক সহনশীলতা বাড়েনি। গণতন্ত্রও প্রতিষ্ঠা পায়নি। অন্যদের মাঝে দূরে থাক,খোদ আওয়ামী লীগ কর্মীদের জীবনেও তাতে নৈতিক বিপ্লব আসেনি। বরং বেড়েছে নীতিহীনতা এবং বিপর্যয়।

 

অজ্ঞতার বিপদ

বিষকে বিষরূপে জানাটা জীবন বাঁচানোর জন্য জরুরী। নইলে বিষ পানে প্রাণনাশ ঘটে। দেশকে বাঁচাতে হলেও তেমনি দেশের শত্রুদের চিনতে হয়। এক্ষেত্রে অজ্ঞতা হলে দেশের জন্য মহাবিপদ। আর সে অজ্ঞতা দূর করতে হলে রাজনীতিতে যাদের বিচরণ তাদের ইতিহাস জানাটি জরুরী। কারণ তারাই ঘুরেফিরে দেশের ড্রাইভেট সিটে বসে। চারিত্রিক গুণাগুণ, পেশাগত যোগ্যতা ও শারীরীক সুস্থ্যতা না জেনে কাউকে এমনকি বাসের বা ট্রেনের চালক করাতেও মহা বিপদ। নেশাখোর মদ্যপ,দায়িত্বজ্ঞানহীন দুর্বৃত্ত বা অন্ধ মানুষও তখন চালকের সিটে বসার সুযোগ পায়। এতে দুর্ঘটনায় প্রাণনাশ ঘটে যাত্রিদের। তাই অন্যান্য দলের সাথে আওয়ামী লীগের ইতিহাসকেও দেশবাসীর সামনে তুলে ধরার কাজটি অতি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আওয়ামী লীগ একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। ক্ষমতায় গিয়েই শুধু নয়, ক্ষমতার বাইরে থেকেও দলটি দেশের জন্য অপূরণীয় ক্ষতির সামর্থ রাখে। তাই দেশের কল্যাণে অতি অপরিহার্য হল দলটির প্রকৃত পরিচয় জানা। এ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে ক্ষতিটি হবে বিশাল। কিন্তু বাংলাদেশে সে কাজটিই যথার্থ ভাবে হয়নি। বরং যা হয়েছে তা হল,সুকৌশলে দলটির মূল চরিত্রটিকে গোপন করার। শেখ মুজিবের ১৯৭০-এ বিপুল নির্বাচনী বিজয় এবং ৭ই মার্চের জ্বালাময়ী ভাষনের বাইরেও দলটির বিশাল ইতিহাস আসে। বাংলাদেশী ছাত্রদের কাছে সে ইতিহাসটি জানা ইতিহাস-ভূগোল, ফিজিক্স-কেমিষ্ট্রী বা চিকিৎসা শাস্ত্রের জ্ঞান-লাভের চেয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ স্রেফ ইতিহাস-ভূগোল, ফিজিক্স-কেমিষ্ট্রী,চিকিৎসা বা কারিগরি জ্ঞান বাড়িয়ে দেশকে বাঁচানো যাবে না। এমন কি রাস্তাঘাট,কলকারখানা,কৃষি উৎপাদন বা বিদেশে লোক রপ্তানি বাড়িয়েও নয়। দেশ বাঁচাতে হলে দেশের শত্রুদের চেনার বিকল্প নাই। তাছাড়া কারা দেশের শত্রু বা মীরজাফর -সে সত্যটি গোপন করা মহাপাপ। ইসলামে এটি কবিরা গুনাহ। কারণ তাদের না চেনার বিপদটি তো বিশাল। এমন জ্ঞানলাভের ক্ষেত্রে তাই কাযা নেই, কাফ্ফরাও নেই। বরং এ ক্ষেত্রে গাফলতি হলে জাতির জীবনে গোলামী নেমে আসে শত শত বছরের জন্য। এমন মহাপাপের কারণই ১৭৫৭ সালে বাংলার স্বাধীনতা লুণ্ঠিত হয়েছিল। আগ্রাসী ইংরেজদের হাতে সেদিন যে পরাজয়টি ঘটেছিল সেটি অর্থনিতক পশ্চাদপদতার কারণে নয়। সৈন্য সংখ্যার কমতির কারণেও নয়। এমনকি শিল্পে অনগ্রসরতার কারণেও নয়। বরং সে  সময় তো বিশ্বের বিস্ময়কর মসলিন শিল্প ছিল বাংলায়, যা রপ্তানী হত ইউরোপে। তখন সিরাজুদ্দৌলার সৈন্যসংখ্যা ছিল ইংরেজ সৈন্যের চেয়ে প্রায় দশগুণ বেশী। তাদের হাতে বড় বড় কামানও ছিল। কিন্তু সে বিশাল বাহিনী পরাজয় ঠেকাতে পারিনি। ১৭৫৭ সালের সে শোচনীয় পরাজয়টি ঘটেছিল দেশের মীরজাফরদের না চেনার কারণে। তাতে ফল দাঁড়িয়েছিল,মীর জাফরের ন্যায় জঘন্য বিশ্বাসঘাতককে সেদিন শাস্তি না দিয়ে দেশের সেনাপতি বানানো হয়েছিল।

নবাব সিরাজুদ্দৌলার ন্যায় শাসকদের অজ্ঞতায় মীর জাফরেরা যেমন সেনাপতি হয়,জনগণের অজ্ঞতায় তেমনি শত্রুরাওই তারা নেতা হওয়ার সুযোগ পায়। তাই জনগণকে অজ্ঞ রাখাতেই তাদের বিজয় ও আনন্দ। অজ্ঞতার বড় বিপদটি হল,একই গর্তে পা তখন বার বার পড়ে। তাই বাংলাদেশে ইতিহাস জ্ঞান ইচ্ছা করেই বাড়ানো হয়নি। সেটি যেমন সাম্রাজ্যবাদী শাসনের ব্রিটিশ আমলে, তেমনি আজ।ও। তাই বাংলাদেশীদের বিপদ ১৭৫৭ সালে পলাশীতে শেষ হয়নি। একাত্তরেও শেষ হয়নি। ২০১১ সালে এসেও শেষ হয়নি। ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫-এ সীমাহীন ভারতীয় লুন্ঠন,তলাহীন ভিক্ষার ঝুলির পরিচয়,১৯৭৪ সালে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ,মুজিবের হাতে গণতন্ত্র-হত্যা, রক্ষিবাহিনীর হাতে ৩০ হাজার বাংলাদেশী হত্যার ন্যায় ভয়াবহ ঘটনাগুলিও তো ঘটেছে একই কারণে। আজও  বাংলাদেশের রাজনীতি,অর্থনীতি,সংস্কৃতি এবং মিডিয়া যেভাবে আগ্রাসী ভারতের হাতে অধিকৃত, ছিনতাই হয়েছে যেভাবে তালপট্টি দ্বীপ,লুণ্ঠিত হচ্ছে যেভাবে পদ্মা,তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি এবং সীমান্তে তারকাঁটায় ঝুলে লাশ হচ্ছে যেভাবে মানুষ -সেগুলির কারণও কি ভিন্নতর?

বিষধর গোখরা শাপ বিছানায় নিয়ে ঘুমালে প্রাণ বাঁচে না। সে বিপদ থেকে বাঁচতে হলে চোখ খোলা রাখতে হয়। তেমনি চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও গণতন্ত্রহত্যাকারি,বিদেশী চর এবং ক্ষমতালিপ্সু ব্যক্তিকে বন্ধু মনে করে নেতা বানালে,এবং তাকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় বসালে দেশও বাঁচে না। তাই শ্রেষ্ঠ জ্ঞান স্রেফ বিষাক্ত মশামাছি,শাপ-বিচ্ছু,রোগজীবানূর জ্ঞান নয়; অতি গুরুত্বপূর্ণ হল সমাজের বিষধর শাপদের পরিচয়টি যথার্থ জানা। মশামাছি, শাপ-বিচ্ছু ও রোগজীবানূর আক্রমনে বহু হাজার লোক মারা গেলেও তাতে জাতি পরাজিত বা অধিকৃত হয় না। তলাহীন ভিক্ষার ঝুলিও হয় না। বিশ্বের বহুদেশে এমন মহামারি বহুবার এসেছে। কিন্তু ছদ্দবেশী শত্রুকে নেতা বানালে দেশ অধিকৃত হয়। মুজিব আমলে বাংলাদেশ ২৫ সালা দাসচুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিল এবং ভিক্ষার ঝুলি রূপে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি পেয়েছিল তো এমন এক ব্যর্থতার কারণেই। এ বিপদ থেকে বাঁচার জন্য উন্নত স্বাধীন দেশগুলো শুধু কলকারখানা,হাসপাতাল,স্কুল-কলেজ,গবেষণাগার ও রাস্তাঘাট গড়ে না,শত শত কোটি টাকা ব্যায়ে ইতিহাস চর্চা ও নেতাদের আচরনবিধি জানার বিশাল বিশাল প্রতিষ্ঠানও গড়ে। তাদের পলিসির উপর গবেষণা করে। শত শত কোটি টাকা ইতিহাস নিয়ে বইও লেখে এবং জনগণের মাঝে সে জ্ঞানের চর্চাও বাড়ায়। হার্ভার্ড, কেম্ব্রিজ, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় বিখ্যাত শুধু তাদের বিজ্ঞান-বিষয়ক গবেষণাগারের জন্য নয়, বরং ইতিহাস-বিষয়ক বিশাল বিশাল প্রতিষ্ঠানের কারণে। কিন্তু বাংলাদেশে সে কাজটি হয়নি। ফলে বাংলাদেশে মশামাছি,শাপ-বিচ্ছু,রোগজীবানূর আক্রমণে মানুষ মরা কমলেও বিপদ কমেনি। বরং ধ্বংসের দিকে দেশ দ্রুত ধেয়ে চলেছে আভ্রন্তরীণ শত্রুর কারণে।দেশ আজ  অধিকৃত এসব শত্রুদের হাতে।

 

সন্ত্রাস সংসদে ও রাজপথে

আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে যা ঐতিহাসিক সত্য তা হল,বাংলাদেশের ইতিহাসে এটাই একমাত্র দল যা গণতন্ত্রের নামে ক্ষমতায় গিয়ে গণতন্ত্রকেই দাফন করে এবং প্রতিষ্ঠা করে একদলীয় বাকশালী শাসন। স্বাধীন মতপ্রকাশকে তারা দণ্ডনীয় অপরাধে পরিনত করেছিল। বিরোধীদের দমনের কাজে হাতিয়ারে পরিনত করেছিল দেশের আদালত,বিচারক,পুলিশ ও প্রশাসনকে। সেটি যে শুধু মুজিবামলে তা নয়, যখনই দলটি ক্ষমতায় গেছে তখনই সে কাজটি করেছে। এমনকি অন্যদের উপর সন্ত্রাসে অতি নিষ্ঠুরতার পরিচয় দিয়েছে ক্ষমতার বাইরে থাকা কালেও। আওয়ামী লীগ তার সন্ত্রাসের রাজনীতি হঠাৎ শুরু করেনি। দশ-বিশ বছর আগেও নয়। বরং সেটির শুরু দলটির জন্ম থেকেই। এবং সন্ত্রাসের সে রাজনীতি শুধু মাঠকর্মী বা ক্যাডারদের হাতে সীমাবদ্ধ থাকেনি। সেটির হোতা ছিল মূল নেতারাই। তাছাড়া অন্যদলের জনসভা ও মিছিল পণ্ড করার মধ্যেও সে সন্ত্রাস সীমাবদ্ধ থাকেনি,বরং সন্ত্রাস হয়েছে খোদ সংসদ ভবনে। সে সন্ত্রাস যে শুধু হাতাহাতি বা মারপিঠেও সীমাবদ্ধ ছিল, তা নয়। গড়িয়েছে মানুষ খুণে। লগিবৈঠা নিয়ে কর্মীদের হাতে মানুষ খুনের আগেই নৃশংস নিষ্ঠুরতায় সেদিন পারঙ্গমতা দেখিয়েছিল দলটির সংসদীয় সদস্যরা। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের শরীক দল রূপে আওয়ামী লীগ সেদিন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাদেশিক পরিষদে বিপুল সংখ্যক আসন পায়, কিন্তু তাদের সে বিজয়ে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বিজয়ী হয়নি, সংসদেরও গৌরব বাড়েনি। বরং দলটির দলীয় সাংসদদের মারের আঘাতে প্রাণ হারান তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের ডিপুটি স্পীকার জনাব শাহেদ আলী। সে খবর সেদিন বিশ্ববাসী জেনেছিল। আওয়ামী লীগের নেতাগণ এভাবে সেদিন চুনকালি লেপন করেছিল পাকিস্তানের মুখে এবং পথ করে দিয়েছিল সামরিক শাসনের।

আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মাওলানা ভাষানী। কিন্তু নিজের প্রতিষ্ঠিত দলে তিনি বেশী দিন থাকতে পারেননি। দ্বন্দ শুরু হয় আরেক নেতা জনাব সোহরাওয়ার্দীর সাথে। ভাষানী আওয়ামী লীগ ছেড়ে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) নামে নতুন দল গড়েন। ন্যাপ তখন আওয়ামী লীগের প্রবল প্রতিপক্ষ রূপে আত্মপ্রকাশ করে। ফলে আওয়ামী সন্ত্রাসের খড়গ পরে এ দলটির উপর। ১৯৫৭ সালের ২৫শে জুলাই মাওলানা ভাষানীর নেতৃত্বে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সমমনা বেশ কিছু নেতা ও কর্মী এক রাজনৈতিক সম্মেলনে মিলিত হয়েছিলেন ঢাকার রুপমহল সিনেমা হলে। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সে সভায় যোগ দেন খান আব্দুল ওয়ালী খান, মিয়া ইফতারখান উদ্দীনসহ বহু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তখন আওয়মী লীগ নেতা সোহরাওয়ার্দী পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, আর পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমান। আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি তখন শেখ মুজিব। সেসাথে তিনি মন্ত্রীও ছিলেন। জনসভা পণ্ড করার মূল দায়িত্ব ছিল তারই উপর। তখন বাসভর্তি গুণ্ডা এনে ন্যাপের সভা পণ্ড করা হয়। সে দিনটিতে পুলিশ বাহিনীর কার্যকলাপ ছিল আরো ন্যাক্কারজনক। হামলাকারি গুণ্ডাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে তারাও বরং গুণ্ডাদের সাথে হামলায় যোগ দেয়। পাকিস্তানে ইতিহাসে সেটিই ছিল সরকারি দলের পক্ষ থেকে সর্বপ্রথম রাজনৈতিক সন্ত্রাস। বিরোধীদের পিটাতে সেদিন রক্ষিবাহিনীর প্রয়োজন পড়েনি, পুলিশকেই তারা সে কাজে ব্যবহার করেছিলেন। রুপমহল সিনেমা হলে হামলা সত্ত্বেও সে সভায় ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ)এর জন্ম হয়। পরের দিন ২৬ শে জুলাই ছিল পল্টনে ন্যাপের জনসভা। মাওলানা ভাষানীসহ পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আগত নেতাদের সে জনসভায় ভাষন দেবার কথা। কিন্তু আওয়ামী লীগ সে জনসভা হতে দেয়নি। আওয়ামী লীগের গুণ্ডাবাহিনীর ঝটিকা বেগে সে জনসভার উপর হামলা করে। দক্ষিণে নবাবপুর রেলক্রসিং, উত্তরে পুরনো পল্টন, পশ্চিমে কার্জন হল এবং পশ্চিমে মতিঝিল এ বিস্তীর্ণ এলাকা এক কুরুক্ষেত্র পরিণত হয়। ভন্ডুল হয়ে যায় ভাষানীর জনসভা। সংসদীয় গণতন্ত্রের নামে এভাবেই গণতন্ত্র চর্চাকে সেদিন অসম্ভব করা হয়েছিল।

সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রধাণ স্ট্রাটেজী হয়,নির্বাচনের আগেই রাজপথে দলীয় দখলদারি প্রতিষ্ঠা করা। কৌশল হয়,অন্য কাউকে নির্বাচনী প্রচার চালাতে না দেয়া। তাদের এ লক্ষ্য পূরণে জামায়াতে ইসলামীকে তারা প্রধান শত্রু মনে করে। ফলে এ দলটির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাস ছিল আরো হিংসাত্মক ও গুরুতর। ১৯৭০ সালের ১৮ই জানুয়ারি পল্টন ময়দানে ছিল জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচনী জনসভা। সে জনসভায় মাওলানা মওদূদীর বক্তৃতা দেয়ার কথা। কিন্তু সে জনসভা আওয়ামী লীগের বিশাল গুণ্ডাবাহিনী হতে দেয়নি। হামলা চালিয়ে তিনজনকে সেদিন শহিদ করে, আহত করে কয়েক হাজার। দলীয় অফিসে বসে শেখ মুজিব নিজে বলেছিলেন, মাওলানা মওদূদী কিভাবে পল্টনে মিটিং করে সেটি দেখে নিব। মুজিবের সে কথা আমি সেদিন নিজ কানে শুনেছি। পরের রবিবার অর্থাৎ ২৫শে জানুয়ারি ছিল মুসলিম লীগের জনসভা। মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি জনাব ফজলুল কাদের চৌধুরীর বক্তৃতা দেয়ার কথা। আওয়ামী লীগের গুণ্ডারা সে জনসভাও হতে দেয়নি। সেদিনও পল্টন ময়দানে নিজে উপস্থিত থেকে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের ইটপাথর মারার সে দৃশ্য স্বচোখে দেখেছি। এর পরের রবিবার ছিল পহেলা ফেব্রেয়ারি। সেদিন পল্টন ময়দানে ছিল জনাব নূরূল আমীনের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তানে ডিমোক্রাটিক পার্টির জনসভা। সেদিন পল্টন ময়দানের সে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন মৌলভি ফরিদ আহম্মদ, জনাব মাহমুদ আলী, আজিজুল হক নান্নাহ মিয়া, ইউসুফ আলী চৌধুরি মোহন মিয়া, এ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম খানসহ বহু নেতৃবৃন্দ। দলের নেতা জনাব নূরুল আমীন তখনও মঞ্চে আসেননি। আওয়ামী লীগ নেতারা সে জনসভাও হতে দেয়নি,শুরুতেই হামলা শুরু হয়। কোন কোন নেতার মাথার পাথর পড়ে,এমনকি জনসভা পণ্ড করার পর ফেরতগামী নেতাদের উপরও তারা হামলা হয়।

 

জিহাদ বনাম রাজনীতি

দেশ-সেবা,সমাজ-সেবা,জনসেবা তথা ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের কল্যানে কিছু করার মাধ্যম হল রাজনীতি। আত্মত্যাগী মানুষ এখানে মেধা দেয়, শ্রম দেয়, এমনকি প্রাণও দেয়। রাজনীতিকে আরবীতে বলা হয় ‘সিয়াসা’। কোরআন ও হাদীসে ‘সিয়াসা’র কোন উল্লেখ নাই। তবে যা আছে তা হল, ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে সর্বাত্মক আত্মনিয়োগের প্রেরণা। আছে ইক্বামতের দ্বীন তথা দ্বীনের প্রতিষ্ঠার কথা। আছে আল্লাহর কোরআনী বিধানের বিজয়ে অর্থদান,শ্রমদান এমনকি প্রাণদানের তাগিদ। ইসলামে এটি পবিত্র ইবাদত। এটি পবিত্র জিহাদ। মুসলমানের এটাই রাজনীতি। রাষ্ট্রে ও সমাজে আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব বা খেলাফতের দায়িত্ব পালন নিছক নামায-রোযা-হজ্ব-যাকাত পালনে হয় না। এ জন্য অপরিহার্য হল জিহাদে তথা আল্লাহর শরিয়তি বিধান প্রতিষ্ঠার রাজনীতিতে অংশগ্রহণ। নামায-রোযা-হজ্ব-যাকাত পালনে ব্যক্তির জীবনে আধ্যাত্মিকতা আসে। আসে তাকওয়া। আর সে তাকওয়াটি হল,আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে বাঁচার সার্বক্ষণিক চেতনা। এটি হল তাঁর হুকুম পালনে লাগাতর অঙ্গিকার। এমন তাকওয়া থেকেই মোমেন পায় আল্লাহর দ্বীনের পূর্ণ অনুসরণের প্রেরণা। ঈমানদারের কাজ হল,তাকওয়া-নির্ভর নিজের সে আধ্যাত্মিক পরিবর্তনকে স্রেফ মসজিদ বা নিজ-গৃহের মাঝে সীমাবদ্ধ না রেখে সমাজ ও রাষ্ট্রের অঙ্গণে নিয়ে যাওয়া। ঈমানদারের রাজনীতি হল মূলত সে কাজেরই বাহন। পবিত্র কোরআনে ঈমানদারের মূল মিশন রূপে যা বর্ণনা করা হয়েছে তা হল, “আমারু বিল মারুফ”, “নেহী আনিল মুনকার” এবং লিইউযহিরাহু আলাদ্দীনি কুল্লিহী”। এর অর্থ ‍‍‌‌‍‍‍‍‍“ন্যায়ের আদেশ”‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍, “অন্যায়ের নির্মূল” এবং “সকল মতবাদ,আদর্শ ও ধর্মের উপর ইসলামের বিজয়”। নবীজী(সাঃ)র যুগে আজকের ন্যায় রাজনৈতিক দল ছিল না, রাজনীতিও ছিল না। ছিল জিহাদ। সে জিহাদে অর্ধেকের বেশী সাহাবী শহীদ হয়ে গেছে। তবে সেক্যুলারিষ্টদের কাছে জিহাদ নাই, শাহাদতও নাই। যা আছে তা হল ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে দল গড়া, দলাদলি করা, মিথ্যা ওয়াদা দিয়ে দলভারি করা এবং গদীর স্বার্থে সকল উপায়ে জনগণকে প্রতারণা করা। এটিই হল, মেকিয়াবেলীর “পলিটিক্স” তথা সেক্যুলার রাজনীতি।

 

সবচেয়ে বড় ডাকাতি  

মেহনত, ত্যাগস্বীকার বা লড়াই শুধু ঈমানদারগণই করে না। ডাকাতরাও রাত জাগে, মেহনত করে, এমনকি প্রাণও দেয়। ডাকাতরা হানা দেয় ব্যক্তির ঘরে বা দোকানে। কিন্তু প্রতিদেশে সবচেয়ে বড় ডাকাতি হয় দেশের রাজনীতির ময়দানে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত করার লক্ষ্যে এখানে ময়দানে নামে দেশের সবচেয়ে দুর্ধষ্য ডাকাতরা। তাদের লক্ষ্য, সমগ্র রাষ্ট্রীয় সম্পদের উপর দখলদারি প্রতিষ্ঠিত করা। নৃশংসতায় এরা হিংস্র পশুকেও হার মানায়। মানব ইতিহাসে সবচেয়ে বড় রক্তপাত ঘটেছে তো এসব বড় বড় ডাকাতদের কারণে। বাংলাদেশেও সবচেয়ে বেশী রক্তপাত ঘটিয়েছে তারা। সেটি যেমন একাত্তরে,তেমনি আজও । নিজেদের গদি-দখলের সে প্রজেক্টকে বলেছে জনগণের অধিকার আদায়ের রাজনীতি। অথচ বাস্তবে সেটি ছিল জনগণকে অধিকারহীন করার ষড়যন্ত্র। তাই আওয়ামী লীগের বিজয়ে শেখ মুজিবের গদিলাভ সম্ভব হলেও ডাকাতি হয়েছে জনগণের মৌলিক অধিকারে, যা এমনকি ইয়াহিয়া বা আইয়ুবের আমলেও ঘটেনি। এটাই ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ডাকাতি। এতে লুট হয়েছে মৌলিক মানবিক অধিকার। সে লুটে রাজনীতিতে একচেটিয়া বাকশালী মনোপলি বেড়েছিল আওয়ামী লীগের। নিজেদের সে একচেটিয়া মনোপলি বাড়াতে প্রয়োজনে তারা বিদেশী ডাকাতদেরও ডেকে আনে। একাত্তরে ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে ডেকে আনার প্রেক্ষাপট নির্মিত হয়েছিল তো এভাবেই। ফলে সেদিন বাংলাদেশের হাজার হাজার কোটি টাকার মালামাল এবং যুদ্ধাস্ত্র ভারতে ডাকাতি হয়ে যায়। ধ্বসিয়ে দেয় সীমান্ত তথা অর্থনীতির তলা। বিণিময়ে উপহার দেয় এক তলাহীন ভিখারী বাংলাদেশের। ডেকে আনে ভয়ানক দুর্ভিক্ষ,যাতে মৃত্যু ঘটে বহু লক্ষ বাংলাদেশীর। বিগত বহু শত বছরে বাংলাদেশের সকল ডাকাত এবং সকল হিংস্র পশু মিলেও এত মৃত্যু, এত দুঃখ ও এত অপমান উপহার দেয়নি যা ভারতীয় ডাকাত ও তার বাংলাদেশী বাকশালী সহযোগীরা একাত্তর থেকে পঁচাত্তর -এ চার বছরে দিয়েছে।

 

ডাকাতির চেয়েও নৃশংস

ডাকাতদের তবুও কিছু বিধিমালা থাকে। তারা দিবালোকে ডাকাতি করে না। যাত্রীভর্তি বাসেও আগুন দেয় না। বিত্তহীন গরীব মানুষকেও লুণ্ঠনের লক্ষ্য বানায় না। কিন্তু ক্ষমতালোভী রাজনৈতিক ডাকাতগণ নৃশংসতা ঘটায় দীবালোকে। তাদের নৃশংসতায় সবচেয়ে বেশী মারা পড়ে নিঃস্ব গরীবেরা।এবং ধনি হয় সবচেয়ে ধনিরা। তাছাড়া লোভটা যেখানে বিশাল নৃশংসতাও সেখানে বিকট। বাংলাদেশের আওয়ামী রাজনীতিতে সে নৃশংসতা যে কতটা প্রকট তার কিছু উদাহরণ দেয়া যাক। হরতাল বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। বহু দল বহু বছর ধরেই হরতাল করে আসছে। ব্রিটিশ এবং পাকিস্তানে আমলেও হরতাল হয়েছে। কিন্তু বাসে আগুণ দিয়ে যাত্রীদের হত্যা করা বা গায়ে পেট্রোল ঢেলে কাউকে পুড়িয়ে মারা এক ভয়াবহ নতুন নৃশংসতা। আর বাংলাদেশের রাজনীতিতে সেটি আমদানী করেছিল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীগণ তাদের নিজেদের ডাকা হরতালগুলোতে। আর তা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের মনে কোন অনুশোচনা নাই, আফসোসও নাই। ১৯৯৩ সালে যাত্রাবাড়ীতে আওয়ামী লীগের ডাকা হরতালের দিনে-দুপুরে বাসে আগুণ লাগিয়ে ১৮ জন যাত্রীকে পুড়িয়ে মারা হয়। ২০০৪ সালের ৪ই জুলাই ছিল আরেকটি হরতালের দিন। সেদিন শেরাটনের সামনে একটি দোতালা বাসে আগুণ দিয়ে হত্যা করা হয় ১০ জন নিরীহ বাসযাত্রীকে। ২০০৫ সালের ২১মে হরতালের দিনে আমির হোসেন নামক এক সিএনজি চালককের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুণ দেয়। ২৫শে সে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সে মারা যায়। ২০০৫ সালে জানুয়ারি মাসে মিরপুর এক নম্বর সেকশনে হরতালের আগের রাতে হরতালের সমর্থণে একটি বাসকে লক্ষ করে বোমা ছুঁড়া হয়। কিন্তু বোমাটি পড়ে মফিজ নামক একজন রিকশাচালকের উপর। গার্মেন্ট শ্রমিক মফিজ ৮ সন্তানের সংসার চালাতে সে দিনে ফ্যাক্টরীতে কাজের পাশাপাশি রাতে রিকশা চালাতো। ঐ সময় সে বাচ্চাদের জন্য দুধ কিনতে রিকশা নিয়ে রাস্তায় বের হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী তাঁকে আর দুধ কিনে তার ক্ষুদার্ত সন্তানদের কাছে ফিরতে দেয়নি। সে ফিরেছিলই ঠিকই,তবে লাশ হয়ে। ২০০৬ সালের ২৮শে অক্টোবর জামায়াতে ইসলামীর একটি মিছিলের উপর আওয়ামী লীগের কর্মীগণ গলি-বৈঠা নিয়ে হামলা করে। সে হামলায় নিহত হয় ৫ জন জামাতকর্মী, আহত হয় বহু শত। ২০০৫ সালের ৬ই ফেব্রেয়ারির হরতালে আশরাফ সিদ্দিকী নামক একজন পুলিশকে আওয়ামী লীগ কর্মীরা পিটিযে হত্যা করেছিল। ২০০৬ সালের ১৩ই নভেম্বর দৈনিক “প্রথম আলো” খবর ছাপে, “১৪ দলের অবরোধের প্রথম দিনে ১৫-২০টি গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্ণিসংযোগ হয়। সাভারে ৮টি গাড়ি ভাঙচুর হয়।” ২০০৪ সালের ৮ই জুন দৈনিক ইত্তেফাক রিপোর্ট ছাপে, “চার দলীয় সরকারের প্রথম তিন বছরে হরতালে ২৫টি বিআরটির বাস পোড়ানো হয়।” ২০০৬ সালের ৭ই ডিসেম্বর দৈনিক যায়যায় দিন প্রতিবেদন ছাপে, ১৩ দিনের অবরোধ ও সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচীতে ৭৭ জন মারা যায়, ২৮০০ আহত হয় এবং ১৮০০ পঙ্গু হয়। দেশের ক্ষতি হয় ৬ হাজার কোটি টাকা।

 

খুনিদের বাঁচাতে শেখ হাসিনা

স্বৈরাচারি দুর্বৃত্ত এরশাদ তখন ক্ষমতায়। তখন দেশের প্রধানমন্ত্রী জনাব আতাউর রহমান খান। এরশাদ বিরোধী আন্দোলন তখন বেগবান হওয়ার পথে। শেখ হাসিনাকে সে আন্দোলন থেকে দূরে সরানোর ষড়যন্ত্র আটে এরশাদ। লক্ষ্য,নিজের স্বৈরাচারকে শক্তিশালী ও দীর্ঘায়ীত করা। সে পরিকল্পনায় ধরা দেয় শেখ হাসিনা। বিণিময়ে এরশাদের কাছ আদায় করে নেয় বহু সুযোগ-সুবিধাও। দলীয় খুনিদের বাঁচাতে শেখ হাসিনা যে সুবিধাগুলো আদায় করেছিলেন তার একটি উদাহরণ দেয়া যাক। সে সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন শিবির কর্মীকে নির্মম ভাবে হত্যা করে আওয়ামী লীগ সমর্থক ছাত্রলীগের কর্মীরা। ইটের উপর তাদের মাথা রেখে ইটদিয়ে মগজ থেথলে দেয়া হয়েছিল। দিনদুপুরে সংঘটিত সে নৃশংস হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অপরাধে আদালত কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মীকে শাস্তি দেয়। এমন দুর্বৃত্ত খুনিদের পক্ষ কি কোন সভ্য মানুষ নেয়। খুণিদের ঘৃণা করা তো মানুষের অতি মৌলিক মানবিক গুণ। কিন্তু সে সন্ত্রাসী খুণীদের পক্ষ নেয় শেখ হাসিনা। জনাব আতাউর রহমান খান তার স্মৃতীচারণ বইতে লিখেছেন, এরশাদের সাথে আলাপ করতে এসে শেখ হাসীনা দাবী তুললেন তিনি কোন আলাপই করবেন না যদি না শাস্তিপ্রাপ্ত উক্ত ছাত্রলীগ কর্মীদের মূক্তি দেয়া হয়। নিজদলীয় সন্ত্রাসী খুনিদের নিয়ন্ত্রনে রাখার সামর্থ শেখ হাসিনার ছিল না। সামর্থ ছিল না তাদের কৃত খুনের ন্যায় জঘন্য অপরাধকে ঘৃণা করার। তেমনি এরশাদের ছিল না শেখ হাসিনার দাবীর কাছে নত না হওয়ার মত নৈতীক মেরুদণ্ড। হাসিনার দাবীর মুখে স্বৈরাচারি এরশাদ সে সাজাপ্রাপ্ত খুণিদের মুক্তি দিয়েছিল। কারণ এরশাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ ছিল নিজ গদীর নিরাপত্তা,কে কোথায় খুণ হল বা সন্ত্রাস ঘটলো সেটি দমনে তার কোন আগ্রহ ছিল না। তার লক্ষ্য ছিল, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমন। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সন্ত্রাস যে কতটা প্রবল, শেখ হাসিনার কাছে নিজ দলের খুনিদেরকে খুণের শাস্তি থেকে বাঁচানোটা যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ -এ হল তার প্রমাণ। নিজের পিতা ও পরিবারে অন্যদের খুনের বিচার নিয়ে তিনি আদালত বসিয়েছেন। কিন্তু বহু হাজার মানুষ যে প্রতি মাসে খুন হচ্ছে তাদের বিচার কই? তাঁর দৃষ্টিতে কি অন্যদের জীবনের কোন মূল্যই নেই। প্রধানমন্ত্রী রূপে তার দায়বদ্ধতা কি শুধু নিজ দল ও পরিবারেরর প্রতি? স্বজনহারা দুঃখী পরিবারের কি ন্যায় বিচার চাওয়ার কোন অধিকারই নাই? ফ্যাসীবাদী রাজনীতিতে অন্যদের বিচার চাওয়া দূরে থাকে বাচার অধিকারই দেয়া হয়না। হিটলারের ফ্যাসীবাদী শাসনে তাই গ্যাস চেম্বারে ৬০ লাখ ইহুদীদের বিনাবিচারে হত্যা করা হয়েছিল। মুজিবামলেও লাশ হয়েছিল ৩০ হাজার বিরোধী দলীয় কর্মী।, তাদের পরিবারগুলো হারিয়েছিল ন্যায় বিচার চাওয়ার অধিকার। শেখ হাসিনা তাঁর পিতার সে ফ্যাসীবাদী আদর্শকেই আজ  অনুসরণ করে চলেছেন।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে পুলিশ ও প্রশাসনের প্রধানতম নীতি হয়ে দাঁড়ায় দলীয় নেতা ও দুর্বত্তদের বাঁচানো। সে লক্ষ্য পুরনে শেখ মুজিবের প্রয়োজন পড়েছিল বিশাল রক্ষিবাহিনী গড়ে তোলার। আর আজ  সে অভিন্ন কাজটিই করছে পুলিশ,র‌্যাব,প্রশাসন,আদালত এবং আদালতের সরকারি উকিলগণ। তাদের কাজ হয়েছে জনগণের হাত থেকে সন্ত্রাসীদের প্রটেশকন দেয়া। আওয়ামী লীগ কর্মীগণ রাস্তায় মিছিল নিয়ে নামলে আগে পিছে পুলিশ বাহিনী তাদেরকে পাহারা দেয়। জনমানবহীন গভীর জঙ্গলে মানুষ খুণ বা ব্যাভিচার হলে শাস্তি হয় না। কারণ সেখানে পুলিশ নাই,আইন আদলত না। জঙ্গল তো পশুদের জন্য, লোকালয় ছেড়ে জঙ্গলে বসবাস করার বিপদ তাই ভয়ানক। কিন্তু জঙ্গলের আইনহীনতা নেমে এসেছে বাংলাদেশের জনপদে। ফলে খুন এবং ধর্ষণেও শাস্তি হয় না। খুণ, ধর্ষণ ও সন্ত্রাসে বনের পশুর ন্যায় দুর্বৃত্তদের এত নির্ভীক হওয়ার হেতু তো সেটাই। শেখ হাসিনা নব্বইয়ের দশকে যখন প্রথমবার ক্ষমতায় এসেছিলেন তথন জাহাঙ্গির বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রলীগ নেতা ধর্ষনে সেঞ্চুরীর উৎসব করেছিল। সে খবর পত্রপত্রিকায় বড় বড় হেডিংয়ে ছাপা হয়েছিল। যে কোন সভ্য দেশেই ধর্ষণ শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই সে নরপশুকে তিনি আদালতে তুলেননি,একদিনের জন্যও কোন রূপ শাস্তি দেননি। শেখ হাসিনার নীতি-নৈতিকতা ও বিচারের মানদণ্ড যে কতটা ভিন্ন এ হল তার নমুনা।

প্রশ্ন হল,অপরাধীর কৃত অপরাধের বিরুদ্ধে ঘৃনা না থাকলে কি তাকে শাস্তির দেয়ার আগ্রহ জন্মে? ডাকাত দলের সরদারের সেটি থাকে না। বরং ডাকাতদের মধ্যে কে কতটা নৃশংস ভাবে ডাকাতি করলো সেটিই বরং ডাকাত সর্দারের কাছে বেশী গুরুত্ব পায়। শেখ হাসিনার কাছে দলের সন্ত্রাসীদের কদর তো এজন্যই প্রবল। ফলে পুলিশের সামর্থ নাই তাদের আদালতে তোলার। একই অবস্থা ছিল শেখ মুজিবের। তাই মুজিবের আমলে কোটি কোটি টাকার রিলিফের কম্বল ও অন্যান্য মালামাল চুরি হয়েছে, কালোবাজারীদের হাতে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ ভারতে পাচার হয়েছে, ছাত্রলীগ নেতাদের হাতে বহু ছাত্র খুণ হয়েছে। কিন্তু সেসব অপরাধে কাউকে কি একদিনের জন্যও শাস্তি হয়েছে? বরং গাজী গোলাম মোস্তাফাদের মত হাজার হাজার দুর্বৃত্ত ছিল তাঁর নিত্যদের সহচর। তাদের কাউকে কি তিনি দল থেকে এক দিনের জন্যও বহিস্কার করেছেন? তাদের নিয়ে বরং দলীয় দফতর, দলীয় সভা,মন্ত্রীসভা ও প্রশাসন রমরমা করেছেন। এখন বরং ক্ষমতায় যাওয়াতে ছাত্র লীগ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উপর সন্ত্রাসের দায়ভার কমেছে। সে কাজে নেমেছে পুলিশ ও র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটিলিয়নের বেতনভূক সেপাইরা। এক সময় অন্যদের রাজপথের মিছিল ও জনসভা পণ্ড করতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নিজেরা ময়দানে নামতো,নেতা-কর্মীদের লগিবৈঠা নিয়ে পেটাতে। আর আজ  সে কাজে নামছে সরকারি প্রশাসন, পুলিশ ও র‌্যাব। রাজপথে তারা বিরোধী দলীয় নেতাদের যথেচ্ছাচারে লাঠিপেটা করছে, সংসদের এমপি এবং বিরোধী দলীয় চিপহুইপকে সম্প্রতি গায়ের কাপড় খুলে পিটিয়েছে,বুকের উপর পা তুলে পিষ্ঠ করছে পুলিশ। দেশ-বিদেশের পত্রপত্রিকায় সে ছবি ছাপাও হচ্ছে।

 

নৃশংস রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস

সম্প্রতি বহু পত্র-পত্রিকায় ছবি ছাপা হয়েছে,সরকার জামায়াত নেতাদের পায়ে দণ্ডবেড়ি পড়িয়েছে। এমন দণ্ডবেড়ি সাধারণত খুণি বা ডাকাতদের পড়ানো হয়। অথচ এ নেতারা কাউকে খুণ করেছেন বা কোথাও ডাকাতি করেছেন সে প্রমাণ নেই। এমনটি করা হয়েছে স্রেফ জনগণের চোখে তাদেরকে হেয় করা বা দৈহিক ও মানসিক ভাবে তাদেরকে নির্যাতিত করার লক্ষ্যে। একই উদ্দেশ্যে বিএনপি,ইসলামী ঐক্যজোট ও হিযবুত তাহরিরের কর্মীদেরও নিষ্ঠুর ভাবে পিটিয়েছে রাজপথে। অন্যদের কষ্ট দেয়ার মধ্যেই হাসিনা ও তার সরকারের আনন্দ। এটি নিছক নৈতিক রোগ নয়, ভয়ানক মানসিক রোগ। চিকিৎসাস্ত্রের ভাষায় এটি স্যাডিইজম। এমন মানসিক রোগের কারণে অন্যদের ঘর থেকে বের করে রাস্তায় টানার মধ্যে তাদের আনন্দ। সে আনন্দটি পাওয়ার লক্ষ্যেই শত শত বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয় এবং গ্রেফতারের পর জেল খানায় জঘন্য অপরাধীদের সাথে রাখা হয়।এবং পুলিশের হাতে সপ্তাহর পর সপ্তাহ রিমাণ্ডে দেয়া হয়। সে আনন্দটি পাওয়ার লক্ষ্যেই ধর্ষণে সেঞ্চুরির পর ছাত্রলীগ কর্মীরা উৎসব করে। শুধু গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীর দণ্ডবেড়ি নয়, এমনকি ধর্ষিতা নারীর সীমাহীন যাতনাও তাদের যে কতটা পুলক দেয় এ হল তার নজির। এমন এক নিষ্ঠুর আনন্দবোধ নিয়েই শেখ মুজিব সিরাজ সিকদার হত্যার পর দেশের সংসদে দাঁড়িয়ে তৃপ্তিভরে বলেছিলেন,“কোথায় আজ সিরাজ সিকদার?” বাংলাদেশের বিপদ, দেশ আজ  এরূপ ভয়ানক অপরাধীদের হাতে অধিকৃত। শুধু পদ্মা, মেঘনা বা তিস্তার পানি নয়, সমগ্র দেশকে ভারতের হাতে তুলে দেয়াতেই তাদের আনন্দ। সন্ত্রাস এখন আর স্রেফ দুর্বৃত্ত সন্ত্রাসীদের মনোপলি নয়,এটি এখন সরকারি প্রশাসনের হাতিয়ার। রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের এ এক ভয়ংকর রূপ। শাসন ক্ষমতায় এর আগে আইয়ুব খান এসেছেন, ইয়াহিয়া খানও এসেছেন। মুজিবসহ বহু আওয়ামী লীগ নেতারা আগরতলা ষড়যন্ত্রের ন্যায় বহু গুরুতর অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন। কিন্তু তাদেরকে কি একদিনের জন্যও রিমাণ্ডে নিয়ে শারীরীক ভাবে অত্যাচার করা হয়েছে? কাউকে কি পায়ে দণ্ডবেড়ি পড়ানো হয়েছে? শেখ মুজিব তো জেলে প্রথম শ্রেনী পেয়েছেন। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ও একাত্তরে দেশোদ্রহী মামলার আসামী হওয়া সত্ত্বেও তার পায়ে দণ্ডবেড়ি পড়ানো দূরে থাক,পুলিশ কি একটি আঁচড়ও দিয়েছিল? অথচ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার মুখাকৃতিকে হিংস্র পশুবৎ করে সে ছবি দেশময় প্রচার করা হয়েছে। কিন্তু যে অপরাধ শেখ হাসিনা করছে তাঁকে আজ  কি বলা যাবে? সরকারি ভাবে এত খুণ,এত সন্ত্রাস ও এত দানবীয় নির্যাতনের পর শেখ হাসিনা ও তার সরকারকে মানবীয় বললে ইয়াহিয়া বা আইয়ুব খানকে কি বলা যাবে? ৩/১০/১১

 

Warning: Attempt to read property "comment_ID" on null in /customers/9/6/8/drfirozmahboobkamal.com/httpd.www/blog/wp-includes/comment-template.php on line 677 Warning: Attempt to read property "user_id" on null in /customers/9/6/8/drfirozmahboobkamal.com/httpd.www/blog/wp-includes/comment-template.php on line 28 Warning: Attempt to read property "comment_ID" on null in /customers/9/6/8/drfirozmahboobkamal.com/httpd.www/blog/wp-includes/comment-template.php on line 48 Leave a Reply to Anonymous Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *