অধ্যায় একুশ: গণহত্যার কিছু নৃশংস চিত্র

ইতিহাসে অপূর্ণাঙ্গতা

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে সংঘটিত হত্যাকান্ড নিয়ে বহু লেখালেখি হয়েছে, তা নিয়ে বহু ছায়াছবিও নির্মিত হয়েছে। কিন্তু বাঙালীর ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ বাঙালী রূপে যাদেরকে পেশ করা হয় তাদের নৃশংস চরিত্র কি কখনো আলোচিত হয়েছে? নিষ্ঠুরতা, লুন্ঠন, হত্যাকান্ড  ও স্বৈরাচারে তারা যে কতটা নিচে নেমেছিল-তা নিয়ে কি কখনো গবেষণা হয়েছে? বাংলাদেশে প্রকাশিত কোন গ্রন্থে সে বীভৎসতার কি কোন বিররণ আছে? বসনিয়ার মুসলিমদের বিরুদ্ধে সার্বদের নিষ্ঠুরতার বিবরণ বিশ্ববাসী টিভিতে দেখেছে, দেখেছে গুজরাতের মুসলিমদের বিরুদ্ধে হিন্দু গুণ্ডাদের নিষ্ঠুরতাও।সম্প্রতি মায়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম নির্মূলের নিষ্ঠুরতাও বিশ্ববাসী দেখলো। কিন্তু বাংলাদেশের বুকে নিরস্ত্র বিহারী বা অবাঙালী হত্যা ও তাদের সহায়সম্পদ দখলে যে নিষ্ঠুরতা ঘটেছে তা কি কম বীভৎস? এ নিয়ে কি সন্দেহ আছে, বাংলার সমগ্র ইতিহাসে বাঙালীর হাতে সবচেয়ে বড় নৃশংসতাটি ঘটেছে একাত্তরে? সে বীভৎসতার বিবরণ অন্যদেশে ও অন্য ভাষায় ছাপা হলেও বাংলাদেশের ইতিহাসের বইয়ে তা খুঁজে পাওয়া যায় না। অথচ এটিও তো বাঙালীর নিজস্ব ইতিহাস। অন্যদের ইতিহাস পড়ে কি লাভ, যদি নিজেদের ইতিহাসই অলিখিত ও অপঠিত থেকে যায়? তাছাড়া নিজেদের চারিত্রিক ব্যাধি ও ব্যর্থতাগুলো থেকে শিক্ষালাভে ব্যর্থ হলে অন্যদের ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়ার কি সামর্থ্য থাকে? তাছাড়া স্বাস্থ্যের পরিচয় জেনে লাভ কি? লাভ তো রোগের পরিচিতি জানায়। কারণ তাতে বাড়ে সে রোগ থেকে মুক্তির সামর্থ্য।

১৯৭০’য়ের নির্বাচনী বিজয়ের পর বাঙালী জাতির ড্রাইভিং সিটটি অধিকৃত হয় শেখ মুজিব ও তার দলীয় নেতাকর্মীদের হাতে। শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগের ইতিহাসটি স্রেফ ৬ দফা আন্দোলন, আগরতরা ষড়যন্ত্র, সত্তরের নির্বাচনী বিজয়,৭ মার্চের ভাষন, ভারতকে সাথে নিয়ে একাত্তরের যুদ্ধ জয় নয়। স্রেফ বাকশালী স্বৈরাচার, দূর্নীতি, লুণ্ঠন তলাহীন ভিক্ষার ঝুলি, ভয়ানক দুর্ভিক্ষ ও তিরিশ হাজারের অধীক রাজনৈতিক কর্মী হত্যার বীভৎসতাই নয়।এর বাইরেও বহু হত্যা, বহু নৃশংসতা ও বহু বর্বরতা আছে। প্রশ্ন হলো বাঙালীর ইতিহাসে আর কোন কালেও কি এত কালিমা-লেপন হয়েছে -যা হয়েছে একাত্তরে? অথচ সেটি হয়েছে বাঙালীর স্বাধীনতার নামে। হয়েছে মুজিবের ন্যায় এক বাকশালী ফ্যাসিস্টকে ক্ষমতায় বসানোর তাগিদে। জার্মানের স্কুল-কলেজে হিটলার,তার স্বৈরাচার, আগ্রাসী যুদ্ধ, গ্যাস চেম্বার ও নাজীদলের নানারূপ নৃশংস বর্বরতার ইতিহাস পাঠটি বাধ্যতামূলক। তার সুফলটি হলো, দেশবাসীর মাঝে বেড়েছে ফ্যাসিবাদকে ঘৃণা করার সামর্থ্য। ফলে সে দেশে হিটলারের ন্যায় ফ্যাসিস্টদের পুণরায় ক্ষমতায় আসাটি অসম্ভব হয়েছে।কিন্তু বাংলাদেশে হচ্ছে উল্টোটি। ফিরাউনের শাসনামলে ফিরাউনের নামে কীর্তন যেমন গুরুত্ব পেয়েছিল, তেমনটি ঘটেছে বাংলাদেশেও।এখানে বাঙালী হিটলার ও তার অনুসারিদের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী রূপে পেশ করা হয়। ফলে শেখ মুজিব বিদায় নিলেও বাকশালী স্বৈরাচার ও তার নিষ্ঠুরতা বিদায় নেয়নি। শেখ মুজিব তার শাসনামলে ৩০ হাজারের বেশী রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে হত্যা করে। তার অনুসারিদের হাতে বিহারী ও পাকিস্তানপন্থিদের বিরুদ্ধে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডগুলি কি কম নৃশংস? বিদেশীদের দেয়া হাজার হাজার কোটি টাকার মালামাল লুন্ঠিত হলো, লুণ্ঠনকৃত সম্পদ ভারতে পাচারের ফলে দেশে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ এলো এবং তাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ নিহত হলো।এত লুণ্ঠন, এত খাদ্যাভাব, এত হত্যা ও এত দুর্নীতির সাথে বহু লোক অবশ্যই জড়িত ছিল। কিন্তু সে অপরাধে কাউকে গ্রেফতার করা হলো না, কারো বিরুদ্ধে বিচার বসলো না এবং একদিনের জন্যও কারো জেল হলো না। ডাকাতপাড়ায় ডাকাতদের বিচার বসে না। বাংলাদেশেও তেমনি বিচার বসেনি।

প্রশ্ন হলো, একাত্তরে বাঙালীর হাতে সংঘটিত অপরাধগুলির বিবরণ না জানলে বাঙালী সন্তানদের ইতিহাসের পাঠটি পূর্ণাঙ্গ হয় কি করে? অথচ ইতিহাসে সন্ধান মেলে আসল রোগের। ইতিহাস শুধু বিজয় গাঁথা নয়, নানাবিধ অপরাধের রেকর্ডও।স্রেফ দৈহিক রোগের চিকিৎসায় জীবন সুখের হয় না। জানতে হয় চরিত্র ও চেতনার রোগগুলিও;নইলে সেগুলিরও চিকিৎসা কীরূপে সম্ভব? একটি জাতির চারিত্রিক বা চেতনার রোগের ধারা বিবরণী দেয় তার  ইতিহাস।রোগগ্রস্ত ব্যক্তিদের দেখে দেখেই চিকিৎস্যক পায় রোগবিজ্ঞানের জ্ঞান; সে সাথে পায় রোগের চিকিৎসার সামর্থ্য। পবিত্র কোরআনে মহা জ্ঞানী মহান আল্লাহতায়ালা তাই আদ, সামুদ, মাদায়েনের অধিবাসী ও বনি ইসরাইলের ন্যায় বহু ব্যর্থ জাতির ব্যর্থতার কারণগুলি বার বার তুলে ধরেছেন। নিজেরা ভয়ানক আযাবের মধ্যে পড়ে অন্যদের জন্য অমূল্য শিক্ষা রেখে গেছে। মানব জীবনে এজন্যই অতি গুরুত্বপূর্ণ পাঠ হলো ইতিহাসের পাঠ।ইতিহাসের জ্ঞান ছাত্রকে দেয় গভীর প্রজ্ঞা, দেয় দূরদৃষ্টি নিয়ে বেড়ে উঠার সামর্থ্য। তাই যে দেশে ইতিহাস চর্চা গুরুত্ব পায়,সে দেশে জনগণের পা একই গর্তে পা বার বার পড়ে না। বাকশালী স্বৈরাচার এবং তার দুর্বৃত্তি ও নৃশংসতা সে দেশে বার বার হাজির হয় না। জাতীয় জীবনে বেড়ে উঠা সংক্রামক কীটগুলো না জানলে তার নির্মূলই বা সম্ভব কীরূপে? দেহে রোগ পুষে রাখার প্রতিফল তো অকাল মৃত্যু। তেমনি জাতীয় জীবনে ভয়ানক বিপদ হলো চরিত্র ও চেতনায় রোগ নিয়ে বেড়ে উঠায়।

বাংলাদেশের জন্য ভয়ানক বিপদের কারণ, ইতিহাসের বইয়ে অন্যদের চরিত্রের কদর্যতা নিয়ে বিস্তর আলোচনা থাকলেও নিজেদের রোগ ও ব্যর্থতার বিবরণ নাই।নাই,একাত্তরে বাঙালীর হাতে সংঘটিত নৃশংসতার বিবরণ।ফলে নাই,নিজেদের রোগ নিয়ে চিকিৎসার আয়োজন। রোগের চিকিৎসা না হলে তাতে মহামারি দেখা দেয়। একই কারণে বাংলাদেশে আজ নৃশংস বর্বরতার মহামারি। ফল দাঁড়িয়েছে, যে বর্বরতা নিয়ে বাঙালী সেপাই ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীগণ একাত্তরে বিহারী হত্যা, তাদের ঘরবাড়ি দখল ও তাদের সম্পদ লুণ্ঠনে উৎসব করেছে, একই রূপ নৃশংসতা দেখিয়েছে ঢাকার রাজপথে অস্ত্র ও লগিবৈঠা হাতে বাঙালী মুসল্লি হত্যার উৎসব করে।গুম, খুন, ধর্ষণ, লুণ্ঠন ও সন্ত্রাস পরিণত হয়েছে রাজনীতির সংস্কৃতিতে।একই কারণে রাজধানীর পিলখানায় ৫৭ জন বাঙালী অফিসার প্রাণে বাঁচেনি। নৃশংস ভাবে হত্যার পর তাদের লাশগুলোকে ফেলা হয়েছে নর্দমার ড্রেনে। একই রূপ বীভৎস নিষ্ঠুরতা দেখা গেছে ২০১৩ সালের মে মাসে ঢাকার শাপলা চত্ত্বরে।হেফাজতে ইসলামের হাজার হাজার মুসল্লিকে তখন হতাহত করা হয়েছে এবং লাশগুলোকে ময়লার গাড়িতে তুলে গায়েব করা হয়েছে।দেশের জনগণ আজ এতটাই প্রতিরক্ষা-হীন যে,তারা বাধ্য হচ্ছে এরূপ নৃশংস বর্বরদের প্রতিপালনে রাজস্ব জোগাতে ।নিজের ঘরে ও নিজ খরচে এভাবেই জনগণের নিজ শত্রু বিপুল ভাবে বেড়ে উঠছে।ডাকাতপাড়ায় সবচেয়ে নিষ্ঠুর ডাকাতকে নিয়ে উৎসব করাই হলো সংস্কৃতি। বাংলাদেশেও তেমনি উৎসব বেড়েছে দেশটির ইতিহাসে নৃশংস স্বৈরাচারি, বাকশালী,সন্ত্রাসী ও নির্মূলকামিদের মাথায় তুলে।

 

তান্ডব নৃশংসতার

সেক্যুলার বাঙালী জাতীয়তাবাদীদের কৃত একাত্তরের অপরাধগুলির বিবরণ বাংলাদেশের ইতিহাসে লিপিবদ্ধ না হলে কি হবে,বিশ্বের ইতিহাসের বই থেকে তা হারিয়ে যায়নি।পৃথিবী পৃষ্টে এমন বহু মানুষ সবসময়ই থাকে যারা শুধু বন-জঙ্গলের হিংস্র জন্তু-জানোয়ার ও পশুপাখির চরিত্র নিয়ে গবেষণা করে না,নানা দেশের ও নানা বর্ণের মানুষের চরিত্রের ভয়ানক দিকগুলো নিয়েও গবেষণা করে।তারা মাইক্রোসকোপ লাগায় নানা দেশের মানুষেব ভয়ানক চরিত্রের উপরও।তাদের কারণেই বিশ্বের নানা কোনের মানুষ শুধু বন্য দানবদেরই নয়,মানবরূপী দানবদের পরিচয়ও জানতে পারে।তাদের কারণেই হিটলার,মুসোলিনি,স্টালীন,পলপটের ন্যায় দুর্বৃত্তগণ বিশ্বব্যাপী এত ঘৃণীত।তাদের কারণে বাঙালীর চরিত্রের একাত্তরের নৃশংসতার চিত্রগুলি ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিরাজ করছে নানা দেশের ও নানা ভাষার বই পুস্তক ও পত্রপত্রিকায়।একাত্তর নিয়ে গবেষণার কাজে আজও  সেগুলোই হলো নির্ভরযোগ্য উপকরণ।এটি ঠিক,বাঙালী জাতীয়তাবাদী জঙ্গিদের দ্বারা সংঘটিত একাত্তরের অপরাধগুলো সেদিন বিশ্বব্যাপী আলোচিত হয়নি এবং নিন্দিতও হয়নি।নিন্দিত হয়নি অন্যদেশের অভ্যন্তরে প্রতিবেশী ভারতের নিরেট আগ্রাসনের রাজনীতিও।সেটি হলো বিশ্বরাজনীতির আরেক বিপর্যয়।এর কারণ,তৎকালীন বিশ্বের স্নায়ুযুদ্ধের রাজনীতি।সোভিয়েত রাশিয়া এবং ভারত পক্ষে থাকায় দুনিয়ার তাবত বামপন্থি ও ভারতপন্থিগণ সে আওয়ামী জঙ্গিদের ভয়ানক নৃশংসতা নিয়ে কথা বলেনি। বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র ভাঙ্গা হচ্ছে -সে খুশিতে মুসলিম বিরোধী পাশ্চাত্যের ইহুদী প্রভাবিত পত্রপত্রিকাগুলিতেও তা নিয়ে প্রতিবাদ উঠেনি।ফলে ভয়ানক অপরাধ করেও সেদিন আওয়ামী লীগের জঙ্গি সন্ত্রাসীরা বিশ্বব্যাপী নিন্দা থেকে রেহাই পেয়েছে।এতে বেঁচে যায় বাংলাদেশের মাটিতে অতিশয় অপরাধীদের ভয়ংকর রাজনীতিও।এ বিষয়টি নিয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর Rush-Brook Williams তার লিখিত “The East Pakistan Tragedy” বইতে লিখেছেন,“The widespread and inhuman massacres of men, women and children by Awami League militants during their brief reign of terror in March and April 1971, although factually reported by several foreign correspondents, aroused comparatively little attention throughout the world. –(Williams, L.F. Rushbrook;1972) । অনুবাদঃ “একাত্তরের মার্চ থেকে এপ্রিল –আওয়ামী লীগের জঙ্গিদের স্বল্প কালীন এ সন্ত্রাসী রাজত্বে নারী-পুরুষ ও শিশুদের বিরুদ্ধে সংঘটিত বর্বর হত্যাকাণ্ডগুলি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।যদিও কিছুসংখ্যক বিদেশী সাংবাদিক সেসব হত্যাকাণ্ড নিয়ে তথ্যবহুল রিপোর্ট করেছে কিন্তু সেগুলি তূলনামূলক ভাবে সামান্যই বিশ্বব্যাপী দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।”

তবে আওয়ামী লীগের একাত্তরের হত্যাকাণ্ডগুলো সেদিন বিশ্বব্যাপী সাড়া না জাগালেও ইতিহাস থেকে তা বিলুপ্ত হয়নি।বরং আজও বেঁচে আছে প্রচণ্ড বীভৎসতা নিয়ে।সে হত্যাকাণ্ডগুলো যে প্রকৃত অর্থেই নৃশংস গণহত্যা ছিল -তা ব্রিটিশ প্রফেসর Rush-Brook Williams এর ন্যায় গবেষকের নজর এড়িয়ে যায়নি। তিনি লিখেছেন,“Yet this was the true genocide in the worst sense of the word. Some of the victims were West Pakistanis, many of whom had settled for years; the majority were Bihari Muslims, who had come to East Pakistan at the time of Partition, and lived there for more than two decades, peacefully and trustingly. Ironically enough, some of those who were brutally murdered were Bengali by race; who had come from such places as Rangoon, Bombay and Calcutta to live in a Muslim majority land. In the eyes of their murderers their offence was threefold: they did not support an independent “Bangladesh” even though many of them had voted for the maximum local autonomy for East Pakistan which was the main platform of the Awami League’s election programme; they did not speak the local patois fo Bengali; above all, their industry and hard work had made them relatively prosperous –the fact that this prosperity was shared by the locality in which they lived and that they gave employment to many was overlooked. The total butcher’s bill for those few terrible weeks will never be known; but the mass graves which the Army found when at last it was able to fan out from its stations and restore order, the numbers murdered cannot be less than 120,000 and may be higher, as many corpses were just thrown into the rivers and carried away. It was these mass-killings, rather than the actions of the Army, which set in motion the exodus across the Indian border, although no doubt some of refugees, particularly the committed ‘Bangladesh’ partisans, feared lest they might be denounced for their crimes to the authorities when order was restored.” –(Williams, L.F. Rushbrook;1972)।

অনুবাদঃ “অথচ এটি ছিল সত্যিকার অর্থে গণহত্যা –এবং সেটি গণহত্যার সবচেয়ে জঘন্যতম সংজ্ঞা অনুসারে।সে হত্যাকাণ্ডের যারা শিকার তাদের মাঝে ছিল কিছু পশ্চিম পাকিস্তানী -যাদের অনেকেই বহুবছর ধরে সেখানে বসবাস করছিল।কিন্তু অধিকাংশই হলো বিহারী মুসলিম যারা ভারত-বিভাগ কালে পূর্ব পাকিস্তানে এসেছিল।এবং তারা দুই দশকের অধীক কাল ধরে এ এলাকায় বসবাস করে আসছিল শান্তিপূর্ণ ভাবে ও বিশ্বস্ততার সাথে।যথেষ্ঠ পরিতাপের বিষয় হলো,যাদেরকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয় তাদের মধ্যে অনেকেই ছিল নৃতাত্ত্বিক দিয়ে বাঙালী।তারা এসেছিল ইয়াঙ্গুন,মোম্বাই ও কলকাতা থেকে একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে বসবাসের উদ্দেশ্য নিয়ে।হত্যাকারীদের দৃষ্টিতে তাদের অপরাধ ছিল মূলত তিনটি। এক).তারা স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠায় সমর্থণ দেয়নি –যদিও তাদের অনেকে নির্বাচনে সর্বাধিক স্বায়ত্বশাসনের সমর্থনে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছিল –যা ছিল আওয়ামী লীগের মূল নির্বাচনী ইস্যু। দুই).তারা কথা বলতো না আঞ্চলিক বাংলা ভাষায়। তিন).সর্বোপরি তাদের বড় অপরাধটি হলো,তারা ছিল পরিশ্রমী ও অধ্যবসায়ী।ফলে অন্যদের থেকে তারা অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছল জনগোষ্ঠিতে পরিণত হয়।অথচ তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ফলে যে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় তাতে সে স্বচ্ছলতার অংশীদার হয়েছিল স্থানীয় বাঙালীরাও। কিন্তু সেদিন তাদের সে অবদানকেও উপেক্ষা করা হয়।কয়েক সপ্তাহের সে ভয়ানক দিনগুলিতে কতজনের প্রাণনাশ হয়েছিল -সম্ভবত সেটি কোনদিনও সঠিক ভাবে জানা যাবে না।দেশের ক্যান্টনমেন্টগুলো থেকে বের হয়ে সেনাবাহিনী যখন চার দিকে আবার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে এবং গণকবরের আবিস্কার শুরু হয় তখন অনুমান করা হয় নিহতদের সংখ্যা এক লাখ বিশ হাজারের এর কম হবে না। বরং হয়তো বেশীই হবে।কারণ অনেকের লাশই নদীতে ফেলা হয়েছিল এবং পানির স্রোতে ভেসে সেগুলি হারিয়ে যায়।পাকিস্তান আর্মির সামরিক এ্যাকশন নয়,বরং সেটি হলো এ গণহত্যা যা সেদিন বহু লক্ষ মানুষকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ওপারে যেতে উদ্যোগী করে। নিঃসন্দেহে বলা যায়,সেদিন যারা সীমান্তে পাড়ি দিয়েছিল এবং স্বাধীন বাংলাদেশের পক্ষ নিয়েছিল তাদের মাঝে এ ভয়টিও কাজ করেছিল,দেশে যদি আইন-শৃঙ্খলা কখনো প্রতিষ্ঠা পায় তবে নিজ-অপরাধের জন্য তিরস্কারের মুখে পড়তে হবে।”

 

অবাঙালী গণহত্যা

একত্তরের মার্চে অতি বীভৎস হত্যাকাণ্ড ঘটে চট্টগ্রাম শহরে। সেখানে ছিল ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রায় ৩,০০০ বিদ্রোহী সৈন্য। তাদের সাথে যোগ দেয় ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের সেপাইগণ ও হ্ত্যাপাগল আওয়ামী লীগের ক্যাডারগণ। ফলে ২৬থেকে ৩০ মার্চের মধ্যেই তারা ১০ থেকে ১২ হাজার অবাঙালীকে হত্যা করে। শহরের বুকে একের পর এক বিহারীদের কলোনীগুলিতে আগুণ দেয়া হয়। লুট করা হয় তাদের ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। নারী-পুরুষদের পাশাপাশি নিরপরাধ শিশুদেরও বীভৎস হত্যাকাণ্ড থেকে রেহাই দেয়া হয়নি। চট্রগ্রামের শহরতলিতে বড় হত্যাকাণ্ডটি ঘটে ইস্পাহানি জুট মিলস, ওসমানিয়া গ্ল্রাস ফাক্টরি, হাফিজ জুটমিলস ও তার আশেপাশের এলাকায়। এক হাজার অবাঙালীকে সেখানে হত্যা করা হয়। কর্ণফুলি পেপারমিলস, রেয়ন মিলস এবং চন্দ্রঘোনাতে হত্যা করা হয় প্রায় ২০০০ অবাঙালীকে। –(Williams, L.F. Rushbrook;1972) ।

কুষ্টিয়া শহরে বসবাসরত বিহারী ও সেখানে অবস্থানরত পশ্চিম পাকিস্তানী সৈন্যদের বিরুদ্ধে হামলা ও হত্যাকাণ্ডটি ইপিআর ও আওয়ামী লীগ ক্যাডারদের পক্ষ থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলে। সেখানে নিহতের সংখ্যা এক হাজার থেকে দেড় হাজার। কুষ্টিয়ার চুয়াডাঙ্গার প্রায় ৫০০ জন বিহারী নিহত হয় এবং প্রায় ১০০ জন নিখোঁজ হয়। সেখানকার এস.ডিও ছিলেন অবাঙালী এবং তার স্ত্রী ছিলেন গর্ভবতী। তাদের উভয়েই নির্যাতনের শিকার হন। মেহেরপুরে হত্যা করা হয় ৪০০ থেকে ৬০০ বিহারীকে।–(Williams, L.F. Rushbrook;1972)। বিহারীদের বিরুদ্ধে অতি বীভৎস হত্যাকাণ্ড ঘটে যশোর শহরে।যশোর শহরের সকল অবাঙালীদেরকে হত্যাকাণ্ডের নিশানা বানানো হয়।গণহত্যা ঘটে শহরের ঝুমঝুমপুর বিহারী কলোনীতে।নির্মম হত্যাকাণ্ড চালানো হয় যশোর শহরের হামিদপুর,আমবাগান,পুরাতন কসবা ও বাচাচর এলাকায়। শহরটিতে প্রায় ৪,০০০ জন বিহারীকে হত্যা করা হয়।এবং ২,০০০ জন হয় নিখোজ।৪০০-৫০০ মহিলাকে ছিনতাই করে ভারতে নিয়ে যাওয়া।অনেক নারী ও শিশুকে উধাও করা হয় নড়াইলের পথে।–(Williams, L.F. Rushbrook;1972) ।

সমগ্র উত্তরবঙ্গে বিহারীদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় নৃশংস হত্যাকাণ্ড ও ধর্ষণের বীভৎসতাটি ঘটে নওগাঁ ও শান্তাহার শহরে।সেখানে বিহারীদের প্রায় নির্মূল করা হয়।হত্যা করা হয় প্রায় ১৫ হাজার বিহারীকে।বিহারীদের বিরুদ্ধে বড় রকমের নৃশংস হত্যাকাণ্ড হয় পাবনার পাকশীতে।সেখানে রেলওয়ের শ্রমিক রূপে বিহারীদের বসবাসটি ছিল বিশাল আকারের।প্রায় ২,০০০ বিহারীকে তাদের কলোনী থেকে উঠিয়ে নিয়ে একটি স্কুলে জমা করা হয় এবং সে স্কুলে আগুণ লাগিয়ে তাদের জীবন্ত হত্যা করা হয়।নৃশংস হত্যাকাণ্ড হয় নিলফামারীতে।সেখানে ২,৭০০ জনকে হত্যা করা হয়।–(Williams, L.F. Rushbrook;1972) ।

রাজশাহীর নিরস্ত্র বিহারীদের নির্মূলে ঝাঁপিয়ে পড়ে সেখানে অবস্থানরত পুলিশ,ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের বিদ্রোহী সেপাইগণ।তাদের সাথে যোগ দেয় ভারত থেকে অনুপ্রবেশকারিগণ।১৬ই এপ্রিল পাক আর্মি না আসা পর্যন্ড সে হত্যাকাণ্ড চলে।রাজশাহীর নবাবগঞ্জে এক হাজার বিহারীকে হত্যা করা হয়।সে হত্যাকাণ্ডের সাথে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের বিদ্রোহী সেপাইদের সাথে জড়িত ছিল ভারত থেকে অনুপ্রবেশকারিগণ।ময়মনসিংহে বসবাসকারি বিহারীদের বিরুদ্ধে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডটিও নৃশংসতায় কম বীভৎস ছিল না।ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের বিদ্রোহী সৈনিকেরা প্রথমেই হত্যা করে ময়মনসিংহ ক্যান্টনমেন্টের অবাঙালী অফিসারদের।নিরাপত্তার স্বার্থে অবাঙালীদের অনেকে জেলে আশ্রয় নিয়েছিল।জেল থেকে ছিনিয়ে নিয়ে তাদের হত্যা করা হয়।ময়মনসিংহের শানকিপারায় ছিল বিহারী বসতি।রাইফেল,তরবারি,বর্শা,চাকু,কাস্তে হাতে হাজার হাজার বাঙালী হামলা করে নিরস্ত বিহারীদের উপর।প্রায় ৫ হাজার বিহারীকে হত্যা করা হয়।মহিলা ও শিশুদের মসজিদ ও স্কুল গৃহে জড়ো করা হয় –অবশেষে আর্মি এসে তাদের উদ্ধার করে।–(Williams, L.F. Rushbrook;1972) ।

দিনাজপুরে বিহারী হত্যায় সেখানকার ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের বিদ্রোহী সেপাই ও আওয়ামী ক্যাডারগণও পিছিয়ে ছিল না।বিহারীদের বিরুদ্ধে সেখানকার হত্যাকাণ্ডটিও ছিল একই রূপ নির্মূলমুখি।তারা প্রায় ৫০০০ বিহারীকে হত্যা করে এবং ৪০০ অবাঙালী মেয়েকে ভারতে পাচার করে।নিহত অনেকের ছিন্ন মাথা তারা গাছে লটকিয়ে রাখে।ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের সেপাইগণ বীভৎস হত্যাকাণ্ড চালায় পাশ্ববর্তী ঠাকুরগাঁতে।সেখানে তারা ৩,০০০ বিহারীদের হত্যা করে। বিহারী নারীদের তারা ধর্ষণ করে এবং ধর্ষণ শেষে হত্যা করে।যারা গর্ভবতী ছিল তাদের পেটে বেয়োনেট চার্জ করে।প্রায় ২০০০ অবাঙালী নিহত হয় নাটোরে এবং রাজশাহীর সারদাতে।ধর্ষন ও হত্যার বীভৎস উৎসব হয় পার্বতিপুর,পঞ্চগড়,ফুলবাড়ি ও হিলির বিহারী পল্লিতে।সেখানে নিহতদের সংখ্যা ছিল প্রায় ৫,০০০।–(Williams, L.F. Rushbrook;1972)।

অতি বীভৎস হত্যাকাণ্ড ঘটে খুলনায়। বিশেষ করে ক্রিসেন্ট জুট মিলস, স্টার জুট মিলস এবং পিপল’স জুট মিলের বিহারীদের উপর। আওয়ামী লীগ খুলনায় একটি প্যারা মিলিটারি ট্রেনিং ক্যাম্প স্থাপন করে। তাদের কাজ ছিল খুঁজে খুঁজে অবাঙালীদের বের করা, তাদের ঘরবাড়ি লুট করা এবং নারী-পুরুষ-শিশুদের অতি নির্মম ভাবে হত্যা করা। প্রায় ৫০০০ বিহারীকে হত্যা করা হয় খালিসপুরের স্টার জুট মিলে। সেখানে কলোনীর ঘর থেকে নারী ও শিশুদের টেনে রাস্তায় নামিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যার পর তাদের নদীতে ফেলা হয়।পানিতে ভাসা জীবিতদের আবার ডাঙ্গায় তুলে হত্যা করে পানিতে ফেলা হয়। –(Williams, L.F. Rushbrook;1972)।

 

প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য        

১৯৭১এর ২৬শে মার্চ কুষ্টিয়ার মত একটি মফস্বল শহর আওয়ামী ক্যাডারগণ কতটা হিংস্র রূপ ধারণ করেছিল তার বর্ণনা দিয়েছেন একজন স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শী এভাবে,“উর্দুভাষী এডিশনাল ডিপুটি কমিশনার ও মিউনিসিপ্যালটির ভাইস চেয়ারম্যানকে হত্যা করে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা মিছিল বের করে লাশ দড়ি বেঁধে টেনে নিয়ে মহা উল্লাসে শহর প্রদক্ষিণ করল। উর্দুভাষীদের দোকানপাট লুট ততক্ষণে শুরু হয়ে গেছে। ভারতীয় হিন্দু সাংবাদিক ও সামরিক বাহিনীর অফিসারদের শহরে আনাগোনা দেখে বিশ্বাস না করে উপায় ছিল না যে দু দেশের মানচিত্রে যে সীমারেখা ছিল তা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।-(সা`দ আহম্মদ,২০০৬)।” পাকিস্তান আর্মী পাবনা জেলা দখল করে যখন ১৫ই এপ্রিল তারিখে হার্ডিঞ্জ ব্রীজ পার হয় তখন থেকেই (আওয়ামী লীগ) নেতারা (কুষ্টিয়া ছেড়ে) পালাতে শুরু করে। কিন্তু পালিয়ে যাওয়ার পূর্বে যে বীভৎস ও নারকীয় কাণ্ড আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ঘটিয়ে গেল এবং দেশের যে সম্পদ লুট করে নিয়ে গেল তা ছিল অচিন্তনীয়। জেলার সর্বত্র গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে উর্দুভাষীদের জড়ো করে হত্যা করা এবং সম্পদ লুট করার কাজ তারা ১২ এপ্রিল থেকে ১৬ এপ্রিলের মধ্যে করেছে। ট্রেজারি, ব্যাংক ইত্যাদি থেকে কোটি কোটি টাকা, সরকারি খাদ্য গুদাম থেকে কয়েক লক্ষ মণ খাদ্য, কয়েক শত সরকারি জীপ,ট্রাক, ওয়াগান ক্যারিয়ার, রেলওয়ে ইঞ্জিন ও বগী ইত্যাদী লুট করে ভারতে নিয়ে গেল। আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ পালিয়ে যাওয়ার সময় ব্যক্তিগত সম্পদ যা রেখে গেলেন নিয়ে গেলেন তার চাইতে হাজার গুণ বেশি।“-(সা`দ আহম্মদ, ২০০৬)।

১৭ই ডিসেম্বরে ঢাকা শহরের মতিঝিলে বর্বরতার আরেকটি চিত্র ধরা পড়েছে প্রত্যক্ষদর্শির দৃষ্টিতে এভাবে, “রাস্তায় মানুষের হৈ চৈ শুনে জানালার পর্দা সরিয়ে যা দেখলাম তা ছিল সত্যই মর্মবিদারক। আদমজী কোর্ট ও বাওয়ানী বিল্ডিং এর উর্দুভাষী দারোয়ানগুলোকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে এবং মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার জন্য গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। দারোয়ানগুলো সংখ্যায় পনের-ষোল জন। অধিকাংশই বৃদ্ধ কিন্তু ওদের মৃত্যুর কারণ এই যে, ওরা বাঙালী নয়। এদেশের মাটিতে ওরা জন্মায়নি এই ছিল ওদের অপরাধ। দু-চারজন পথচারী এই নৃশংস হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে মৃদু প্রতিবাদ করেছে, নিরস্ত্র করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু উল্লাসে ফেটে পড়া মানুষের সংখ্যার তুলনায় এরা ছিল নগণ্য।”-(সা‌`দ আহম্মদ, ২০০৬)।

ঢাকার অবাঙালীদের উপর কিরূপ নারকীয় তাণ্ডব নেমে এসেছিল তার আরেক বিবরণ শুনা যাক আরেক প্রত্যক্ষদর্শী থেকে, “রাত ১১টার দিকে হঠাৎ হৈ চৈ আর কান্নার রোল শুনতে পেলাম। ইউসুফের বাসার সামনে ছিল একটা খোলা জায়গা। দোতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখলাম সেই খোলা জায়গায় কিছু সংখ্যক অবাঙালিকে দাঁড় করানো হয়েছে গুলি করে মারার জন্য। কয়েকজন গেরিলা স্টেনগান তাক করে আছে তাদের বুক ও মাথা বরাবর। অবাঙ্গালিদের পোষক-আশাক দেখে মনে হলো তারা খুব সম্ভ্রান্ত পরিবারের লোকজন হবে। তাদের বৌ ছেলে মেয়েরা তখন গেরিলাদের কাছে মিনতি করে চলেছে সব কিছুর বিনিময়ে প্রাণ ভিক্ষা দেয়ার। নিজের চোখে দেখলাম এই সব মেয়ে নিজেদের অলংকার ছুঁড়ে দিচ্ছে গেরিলাদের দিকে। কিন্তু গেরিলাদের অন্তরে সামান্যতম করুণার উদ্রেগ হয়নি। এক এক করে তারা সেই রাতে সবগুলো পুরুষকে গুলি করে মেরে ফেলল। নিহতদের বৌ-ছেলে মেয়ের ভাগ্যে পরে কি ঘটেছিল তা আর কখনো জানতে পারিনি। এদের অপরাধ ছিল এরা অবাঙালী’-(ইব্রাহিম হোসেন, ২০০৩)।

বাঙালী মুসলিমের ইতিহাসে একজন বিখ্যাত ব্যক্তি হলেন এ্যাডভোকেট মৌলভী ফরিদ আহম্মদ। তিনি ছিলেন প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ ও পার্লামেন্টেরিয়ান। ছিলেন অতি প্রতিভাবান ও পন্ডিত ব্যক্তি। পাকিস্তান জাতীয় পরিষদে তিনি সদস্য (এমএনএ) ছিলেন কক্সবাজার থেকে। নিজামে ইসলাম পার্টির পক্ষ থেকে তিনি পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রীও হয়েছিলেন। অথচ তাঁকে যেরূপ বর্বরভাবে হত্যা করা হয় সেটি হালাকু-চেঙ্গীজ বা নাজী বর্বতাকেও হার মানায়। তার নির্মম হত্যাকান্ডের বর্ণনাটি এসেছে এভাবে,”১৯৭১ সালের ১৭ই ডিসেম্বর মৌলভী ফরিদ আহমদকে গ্রেফতার করে লালবাগ থানায় নেয়া হয়। গেরিলারা ১৯শে ডিসেম্বর তাঁকে লালবাগ থানা থেকে ছিনিয়ে ইকবাল হলে নিয়ে যায়। সে সময় ইকবাল হলে ছিল গেরিলাদের কনসেনট্রেশন ক্যাম্প। এখানে গেরিলারা পাকিস্তানের আদর্শে বিশ্বাসীদের ধরে নিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করে মেরে ফেলতো। আমি যখন জেল ধেকে বের হই তখন মৌলভী ফরিদ আহমদের দুঃখজনক পরিণতির কথা জহিরুদ্দিনের মুখে আদ্যোপান্ত শুনেছিলাম। জহিরুদ্দিন ছিলেন এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। গেরিলারা তাঁকেও ধরে নিয়ে ইকবাল হলে রেখেছিল। মৌলভী ফরিদ আহমদকে ইকবাল ধরে নিয়ে যায় সমাজতন্ত্রের লেবেলধারী কতিপয় কপট ছাত্র নেতা ও তাদের সঙ্গী-সাথীরা। তারা প্রথমেই ফরিদ আহমদকে মুক্তি দেয়ার কথা বলে তাঁর ব্যাংকে গচ্ছিত টাকা নিজেদের নামে তুলে নেয়। তারপর শুরু হয় তাঁর উপর অকথ্য শারীরিক নির্যাতন। প্রথমে তাঁর চোখ তুলে ফেলা হয়। কান কাটা হয়। হাত ভেঙ্গে দেয়া হয়। সর্বশেষে দীর্ঘ নিপীড়নের পর ২৪শে ডিসেম্বর রাতে তাকে হত্যা করা হয়। তার আগে তাঁর জিহ্বা কেটে ফেলা হয়েছিল এবং শরীর থেকে অবশিষ্ট অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছিল। নরপশুরা তাঁকে ঐ রাতেই সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের পিছনে একটি ডোবার মধ্যে ফেলে দেয়” -(ইব্রাহিম হোসেন,২০০৩)।

ধীরে ধীরে অতি নৃশংস ও বীভৎসভাবে জনাব ফরিদ আহম্মদকে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডটিকে কি করে অতি বেশী বেদনাদায়ক করা যায় এবং সে অসহ্য বেদনাদায়ক মুহুর্তগুলোকে কি করে আরো দীর্ঘস্থায়ী করা যায়,পরিকল্পনা করা হয়েছিল সে ক্ষেত্রেও। অথচ তিনি কাউকে হত্যা করেছেন বা হত্যার সাথে জড়িত ছিলেন-আওয়ামী-বাকশালী চক্র আজও সে প্রমাণ হাজির করতে পারেনি। মানব-ইতিহাসের এটি হলো অন্যতম অতি জঘন্য যুদ্ধাপরাধ। যুদ্ধের ময়দানে নেমে যারা হাজার হাজার নিরস্ত্র মানুষ হত্যা করে আন্তর্জাতিক আইনে তাদেরকেও এভাবে হত্যা করার অনুমতি নেই। অথচ এরূপ হত্যাকাণ্ডটি যারা ঘটিয়েছিল, আওয়ামী-বাকশালী চক্রের বুদ্ধিজীবীরা তাদেরকেই চিত্রিত করছে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালীরূপে। আরো লক্ষ্যণীয় হলো, এ বীভৎস হত্যাকাণ্ডটি যেখানে এ ঘটেছিল সেটি কোন ডাকাত-পল্লি নয়,কোন জেলখানাও নয়, এটি হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছাত্রাবাস। জ্ঞানচর্চার কেন্দ্রগুলি কিভাবে দুর্বৃত্ত-কবলিত হয়েছিল এ হলো তার নমুনা।

সিরাজগঞ্জের ইসমাইল হোসেন সিরাজী বাংলার মুসলিম জাগরণে অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি ছিলেন ইসলামিক রেনেসাঁর প্রখ্যাত ও প্রধানতম কবি। আওয়ামী বাকশালীদের নৃশংস হামলার শিকার হয়েছিল এ পরিবারটিও। এ সিরাজী পরিবারের সন্তান ছিলেন সৈয়দ আসাদুল্লাহ সিরাজী। তাঁর অপরাধ, ইসলামের জাগরনে তার গভীর অঙ্গীকার ছিল। তিনি বিরোধীতা করেছিলেন পাকিস্তান ভাঙ্গার। এ অপরাধে তাঁকে মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা অতি নির্মম ভাবে হত্যা করে। তাঁকে প্রথমে গ্রেফতার করে সিরাজগঞ্জ জেলে রাখা হয়। কিন্তু জেলও সে সময় বন্দীদের জন্য নিরাপদ ছিল না। আওয়ামী লীগের নেতা ও মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা যাকে ইচ্ছা তাকে জেল থেকে তুলে নিয়ে যেত। তাদেরক নির্যাতন করত এবং নির্যাতনের পর হত্যা করত। গেরিলারা (জনাব সিরাজীকে) হত্যা ও রক্তের জন্য এতখানি মরিয়া হয়ে উঠেছিল যে পুলিশের নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে ছিনতাই করে নিয়ে যায়। তাঁকে ও তাঁর সাথে আরো ১৫/১৬ জন পাকিস্তানপন্থীকে গেরিলারা ধরে নিয়ে প্রথমে শারীরিক নির্যাতন করে পরে গুলি হত্যা করে। তাদের লাশও ফেরত দেয়নি। যমুনার বক্ষে এসব লাশ ছুঁড়ে ফেলেছিল। পাকিস্তানপন্থীদের হত্যা করার এরকম প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গিয়েছিল। যে যত বেশি দালাল(?) খুন করতে পারতো সেই তত বড় বীর হিসেবে চিহ্নিত হতো।”-(ইব্রাহিম হোসেন, ২০০৩)।

অন্যান্য জেলার ন্যায় নির্মম বর্বরতার বহু করুণ ঘটনা ঘটেছে বৃহত্তর নোয়াখালী জেলাতে। তার কিছু বিররণ দেয়া যাক। “ছাগলনাইয়া থানার ইউপি চেয়ারম্যান ও মুসলিম লীগ নেতাকে ধরে নিয়ে শুধু নির্যাতনই করেনি, পানুয়া মাঠের মধ্যেই তাঁকে দিয়ে নিজ হাতে নিজের কবর খুঁড়িয়ে তার মধ্যে তাঁকে জোর নামিয়ে মাটি চাপা দিয়ে জ্যান্ত কবর দেয় আওয়ামী লীগাররা। নজরুল ইসলাম নামে একজন মুসলিম লীগ কর্মীকে মুক্তিযোদ্ধারা প্রথমে ধরে নিয়ে সারা শরীরে খেজুরের কাটা ফুটিয়ে জয় বাংলা উচ্চারণ করতে বলে। নজরুল ইসলাম ছিলেন সুসাহিত্যিক এবং মনে-প্রাণে পাকিস্তানী আদর্শে বিশ্বাসী। তিনি জয় বাংলা বলতে অস্বীকার করায় তাঁকেও নিজের কবর খুঁড়তে বাধ্য করা হয় এবং খেজুরের ডাল দিয়ে পিটাতে পিটাতে জ্যান্ত কবর দেয়া হয়’-(ইব্রাহিম হোসেন, ২০০৩)। বাংলাদেশ হওয়ার পর ভারতীয় সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন নাগের নেতৃত্বে নোয়াখালীতে বহু আলেম ও মুহাদ্দিসকে ধরে নিয়ে লাইন বেঁধে গুলি করে হত্যা করা হয়। আমি প্রত্যক্ষদর্শীর মুখে থেকে শুনেছি বহুদিন ধরে একটি খাল আলেম ওলামাদের লাশে পূর্ণ ছিল। -(ইব্রাহিম হোসেন, ২০০৩)।

মুহাম্মদ ইলিয়াস ছিলেন ইসলামি ছাত্রসংঘ নামক ছাত্রসংগঠনের ফেনীতে স্থানীয় পর্যায়ের নেতা। তাঁকে গ্রেফতারের পর নানা ভাবে নির্যাতন করা হয়। এরপর জীপের পিছনে তাকে বেঁধে দাগনভূইয়া থেকে ফেনীতে নেয়া হয়। উত্তপ্ত লোহার রড দিয়ে তাঁকে মারা হয়। চোখ তুলে নেয়া হয়। নাক-কানও কেটে ফেলা হয়। অবশেষে হত্যা করা হয় এবং তার লাশকে দাফন না করে ফেনীর চৌরাস্তায় ফেলে রাখা হয়। আরেক নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হল ১৪ বছরের ছাত্র জালালুদ্দীন।তাঁরও অপরাধ ছিল সে পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছিল। তাঁকে জীবন্ত কবর দেয়া হয়। কবরটিও তাঁকে খুঁড়তে বাধ্য করা হয়েছিল। কবর খুঁড়ার পর তাতে খেজুরের কাটা বিছানো হয়েছিল এবং তার উপরই জালালুদ্দীনকে শুতে বাধা করা হয়েছিল। এরপর তাকে মাটিচাপা দেয়া হয়। মাওলানা আযহারুস সোবহান ছিলেন এক সিনিয়র মাদ্রাসার শিক্ষক। তাকে মারতে মারতে তার বুকের ছাতির হাড় ভেঙ্গে ফেলা হয়।তাঁর চোখের সামনেই তাঁর তিন জন ছাত্রের মাথা কেটে ফেলা হয়। তাদের ছিন্ন মথা দিয়ে মালা বানিয়ে মাওলানা সাহেবের গলায় সেটি পড়িয়ে দেয়া হয়।এরপর তাঁকে তিন দিন তিন রাত দাড় করিয়ে রাখা হয় এবং পড়ে হত্যা করা হয়। মাওলানা পীর দেওয়ান আলী ছিলেন ঢাকার একজন আলেম। তাঁরও অপরাধ তিনি অখণ্ড পাকিস্তানের বিভক্তিকে সমর্থন করেননি। তাঁর মুখের দাড়ি কেটে ফেলা হয়। তাকে পিটানো হয়, পিটাতে পিটাতে হাড্ডি ভাঙা হয়। তারপর হাতপা বেধে মাঝ নদীতে ফেলা হয়। -( Matiur Rahman & Naeem Hasan, 1980)। আন্তর্জাতিক আইনে এগুলো ছিল বীভৎস রকমের যুদ্ধাপরাধ। অথচ এসব অপরাধের নায়কদের বিচার না করে তাদেরকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালীর খেতাব দেয়া হয়েছে। শুধু মফস্বলেই নয়, খোদ ঢাকার কেন্দ্র বিন্দুতে সে মানবেতর অপরাধগুলো যে কতটা বীভৎসতা নিয়ে সংগঠিত হয়েছিল তার বিবরণ বিদেশী পত্রিকাতেও ছাপা হয়েছিল।

ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে সংঘটিত তেমন একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিবরণ ছেপেছিল নিউজ উইক ম্যাগাজিন। সে বিবরণটি ছিল নিন্মরূপঃ “As a frenzied, shouting mob of 5,000 Bengalis screamed encouragement, young Mukti Bahini guerrillas methodically tortured four suspected Pakistani quislings. For 30 minutes, the guerrillas battered the bound bodies of the helpless prisoners with kicks and karate blows with their bayonets. Quietly and systematically, they began stabbing their victims over and over again –all the time carefully avoiding the prisoners’ hearts. After more than ten minutes of stabbing, the grisly performance seemed at an end. The soldiers wiped the blood from their bayonets and began do depart. But before they left the scene, a small –perhaps a relative of one of the victims-flung himself on the ground next to a prisoner’s near lifeless body. In an instant the guerrillas were back, kicking the boy and beating him with their rifle butts. And as he writhed, the child was trampled to death by the surging crowd.” –(Newsweek, New York, 3rd January, 1972).

অনুবাদঃ সমবেত ৫ হাজার বাঙালীর উত্তেজনাপূর্ণ উম্মত্ততা ও চিৎকারপূর্ণ উৎসাহের মধ্য দিয়ে মুক্তিবাহিনীর গেরিলারা চার জন সন্দেহভাজন রাজাকারের উপর উপর্যপরি নির্যাতন চালাচ্ছিল। আধা ঘন্টা ধরে হাতপা বাঁধা সে অসহায় রাজাকারদের উপর লাথি,ঘুষি এবং রাইফেলের বেয়োনেট দিয়ে আঘাত হানা হচ্ছিল। তাদের দেহে তারা বার বার চাকু ডুকিয়ে দিচ্ছিল, তবে সেটি নিরবে এবং মনে হচ্ছিল পরিকল্পিত পদ্ধতিতে। প্রতিবারেই তারা সতর্কতার সাথে হৃৎপিণ্ড এড়িয়ে যাচ্ছিল। প্রায় ১০ মিনিট চাকু দিয়ে খুঁচানোর পর মনে হচ্ছিল নিষ্ঠুর কর্মটি বোধ হয় শেষ হলো। সৈন্যরা তাদের বেয়োনেট থেকে রক্ত মুছে নিল এবং চলে যাওয়া শুরু করলো। তখনও তারা স্থান ত্যাগ শেষ করেনি এমন সময় এক শিশু –সম্ভবত নিহতদের কোন আপনজন হবে, ঝাঁপিয়ে পড়ে এক লাশের পাশে। মুহুর্তের মধ্যেই গেরিলারা আবার ফিরে আসে। শুরু করে তাঁর উপর লাথি এবং রাইফেলের বাট দিয়ে আঘাত। নিস্তেজ সে শিশুটি একবার নড়ে উঠেছিল। কিন্তু ফুলে ফেঁপে উঠা সমবেত জনতা পদপিষ্ট করে তাঁর প্রাণবায়ু নিমিষেই নিঃশেষ করে দেয়।”

একাত্তরের চেতনার নামে যেসব নিষ্ঠুরতাকে বাঙালীর বীরত্বপূর্ণ শ্রেষ্ঠ কর্ম বলে প্রশংসা করা হয় তার আরো কিছু নমুনা দেয়া যাক। ড. সৈয়দ সাজ্জাদ হোসেন তার স্মৃতিচারনে লিখেছেন,“১৯৭১ সালে অনেক লোমহর্ষক ঘটনা ঘটেছে যাকে কোলকাতা স্বাধীন বাংলা বেতার থেকে দেশপ্রেমের অত্যুৎকৃষ্ট উদাহরণ হিসাবে তুলে ধরা হতো। শুনেছি এক পরিবারে বাপ ছিলেন পাকিস্তান সমর্থক আর ছেলে যোগ দিয়েছিল বিদ্রোহী বাহিনীতে। একরাত্রে এসে সে বর্শা দিয়ে বাপকে হত্যা করে। এবং পরদিন তারই প্রশংসা কোলকাতা থেকে প্রচারিত হয়। আর একটি ঘটনার কথা শুনেছি, সেটা ঐ রকমই লোমহর্ষক। ফরিদপুরের এক ব্যক্তি এক বাহিনী গঠন করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছিল। তার শ্বশুর ছিল মুসলিম লীগের লোক। দেশে সে স্ত্রী এবং ছোট একটি মেয়েকে রেখে গিয়েছিল। একদিন সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে শ্বশুরবাড়ীতে চড়াও হয়। নিজ হাতে প্রথমে শ্বশুরকে হত্যা করে। পরে অনুরূপভাবে স্ত্রী ও কন্যাকেও খতম করে। এসব জঞ্জাল থাকলে দেশ উদ্ধারের কাজে বাধার সৃষ্টি হবে এজন্য সে পথের কন্টক দূর করে দিয়েছিল। তার বাবা-মা বেঁচেছিলেন কিনা জানি না, তবে আরো শুনেছি ঘরে এক বোন ছিল তাকে টেনে নিয়ে তার সহকর্মী এক হিন্দুর হাতে স্ত্রী হিসেবে সঁপে দেয়। সে যে সত্যিকার অর্থে বাঙালী এবং কোনো রকমের সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদ মানে না দুনিয়ার সামনে সে কথা প্রমাণ করার প্রকৃষ্ট উপায় হিসাবে এই পন্থা অবলম্বন করে। এই হত্যাকারীকে পরে রাষ্ট্রীয় উপাধিতে ভূষিত করা হয়।”-(সৈয়দ সাজ্জাদ হোসায়েন, ১৯৯৩)

 

গ্রন্থপঞ্জি

  • সা’দ আহম্মদ,২০০৬;আমার দেখা সমাজ ও রাজনীতির তিনকাল (বৃটিশ-ভারত,পাকিস্তান ও বাংলাদেশ),খোশরোজ কিতাব মহলো,১৫ বাংলাবাজার, ঢাকা ১১০০
  • ড.সৈয়দ সাজ্জাদ হোসায়েন,১৯৯৩;একাত্তরের স্মৃতি,নতুন সফর প্রকাশনী ৪৪,পুরানা পল্টন দোতালা,ঢাকা ১০০০
  • ইব্রাহিম হোসেন,২০০৩;ফেলে আসা দিনগুলো,নতুন সফর প্রকাশনী,৪৪, পুরানা পল্টন দোতালা,ঢাকা ১০০০
  • Matiur Rahman & Naeem Hasan, 1980; Iron Bars of Freedom, News and Media Ltd., 33 Stroud Green Road, London N4 3EF
  • Williams, L.F. Rushbrook (1972): The East Pakistan Tragedy,Tom Stacy Ltd, 28-29 Maiden Lane, London WC2E 7JP.

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *