সেক্যুলারিজমের বিপদ

ফিরোজ মাহবুব কামাল

বিপদ ইসলামী চেতনা বিলুপ্তির

বাংলাদেশসহ প্রতিটি মুসলিম দেশে মুসলিমদের বড় বিপদ এ নয়, দলে দলে তারা হিন্দু, খৃষ্টান, বৌদ্ধ বা অন্য ধর্মে দীক্ষা নিচ্ছে। বরং বিপদের মূল কারণ, তারা ইসলাম থেকে দ্রুত দূরে সরছে। এবং সেটির কারণ, সেক্যুলারিজমের ন্যায় মতবাদ এবং অসংখ্য সেক্যুলার প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানগুলির মুল লক্ষ্য, জনগণের চেতনা থেকে পরকালের স্মরণকে বিলূপ্ত করা। এবং জীবনকে পার্থিবমুখী তথা ইহকালমুখী্ করা। অথচ যারা মুসলিম তাদের সমগ্র জীবনই হলো পরকালমুখী। কারণ পরকালই হলো জীবনের শেষ স্থায়ী ঠিকানা। তাদের ধর্ম, কর্ম, রাজনীতি, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও যুদ্ধবিগ্রহসহ সকল কাজকর্ম নিয়ন্ত্রিত হয় পরকালে জবাব দিতে হবে -সে ভয় থেকে। তাদের চেতনা ও চরিত্রে মূল বিপ্লবের কারণ তো এই পরকালের ভয়। যে জীবনে সে ভয় নাই -সে জীবনে থাকে না চারিত্রিক ও নৈতিক বিপ্লবও।

ঈমানদার মাত্রই পার্থিব জীবনকে ভাবে পরকালীন কল্যাণ লাভের বিনিয়োগের ক্ষেত্র রূপে। এ বিশ্বাসে যে, সে বিনিয়োগের বিশাল ফসল তুলবে পরকালে। ফলে পরকালের ভয় বিলুপ্তির ক্ষতিটি ভয়ানক। তখন বিলুপ্ত হয় জাহান্নামের ভয় এবং জান্নাত পাওয়ার বাসনা। তখন মানুষ পরিণত হয় নিছক স্বার্থপর ভোগবাদী জীবে। এবং বিলুপ্ত হয় ভাল কাজে বিনিয়োগের আগ্রহ। এমন ব্যক্তি যে শুধু ধর্মকর্মে অঙ্গিকারশূন্য হয় –তা নয়। বিপ্লব শূণ্য হয় নীতি-নৈতিকতার ক্ষেত্রেও। শিক্ষা, সংস্কৃতি ও জীবনের অন্যান্য অঙ্গনে তখন প্রকাশ পায় চরম ইহজাগতিকতা। তখন ধর্মে অঙ্গিকারহীন হয় রাজনীতি। এজন্যই কোন মুসলিম দেশে সেক্যুলারিজম প্রতিষ্ঠা পেলে যা অনিবার্য রূপে দেখা দেয় তা হলো ইসলামী চেতনার বিনাশ। সেক্যুলারিজম এভাবেই বিজয়ী করে শয়তানকে।

বাংলাদেশের ন্যায় প্রায় প্রতিটি মুসলিম দেশে সেক্যুলারিস্টদের পক্ষ থেকে এভাবেই ইসলামে অঙ্গিকারশূণ্য করার কাজটি হচ্ছে অতি পরিকল্পিতভাবে। একাজে তারা সফলতাও পাচ্ছে প্রচুর। ফলে লোপ পাচ্ছে ইসলামের বিশ্বভাতৃত্ব ও উম্মাহর ধারণা। বিলুপ্ত হচ্ছে ইসলামি মূল্যবোধ ও ন্যায়নীতি। ফলে সূদ, ঘুষ, ব্যভিচার ও দূর্নীতির ন্যায় জঘন্য অপরাধও এখন আর গণ্য হচ্ছে না দন্ডনীয় ও নিন্দনীয় অপরাধ রূপে। ফলে বাংলাদেশ বিশ্বের অতি দূর্নীতিগ্রস্ত  দেশ হলে কি হবে -সেক্যুলারিস্টদের মনে তা নিয়েও লজ্জাশরম নেই। কারণ, সেক্যুলারিজম পাল্টে দেয় কোনটি লজ্জার, কোনটি শ্লিল এবং কোনটি পাপ -সে ধারণাও। উলঙ্গতা ও অশ্লিলতাও তখন প্রদর্শণের বিষয়ে পরিণত হয়।

এমন এক লজ্জাহীনতার কারণেই যারা নিয়মিত ঘুষ খায়, সূদ খায়, চুরিডাকাতি বা ব্যাভিচারি করে -তারাও সমাজে বুক ফুলিয়ে চলা ফেরা করে। এমন দুর্বৃত্তরাও তখন দেশের ড্রাইভিং সিট দখলে নেয়ার প্রশ্রয় পায়। দেশ এমন পাপাচারীদের হাতে হাইজ্যাক হলো অথচ পাপাচারের প্লাবন আসলো না -সেটিই কি তাই ভাবা যায়? পাপকর্ম হয় তখন প্রকাশ্যে ও ঘোষণা দিয়ে। বাংলাদেশের মত দেশে একারণেই দলবদ্ধ ভাবে ধর্ষণ হয়, শত নারী ধর্ষণের  উৎসবও হয়। (যেমনটি নব্বইয়ের দশকে জাহাঙ্গির নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে হয়েছিল জনৈক ছাত্রনেতার দ্বারা)। তখন দুর্বৃত্তি এবং পাপাচারও সহনীয় হয়ে যায়। তখন ভোটডাকাতির ন্যায় ভয়ংকর অপরাধ ঘটলেও তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হয় না, আন্দোলনও হয় না। সে অপরাধ আদালতে উঠে না এবং তাতে কারো শাস্তিও হয় না। দূর্নীতির এরূপ প্লাবনের কারণ এ নয়, দেশে দুর্ভিক্ষ লেগেছে। বরং মূল কারণ, নৈতিকতার মড়ক। সয়লাব এখানে অসভ্যতার।

 

হাতিয়ার বিভক্তির ও পরাজয়ের

সেক্যুলারিজম বিজয়ী হলে দূরত্ব বাড়ে ইসলাম থেকে এবং গভীরতর হয় উম্মাহর বিভক্তি। ফলে পরাজয় বাড়ে ইসলামের। ইসলামী বিধান পালনে তো তারাই আপোষহীন -যাদের মাঝে রয়েছে পরকালের ভয়। ইসলাম পালন ছাড়া পরকালে মুক্তি মেলে কী? অথচ ইহজাগতিকতায় বিলুপ্ত হয় সে ভয়, ফলে বিলুপ্ত হয় ধর্মপালনে নিষ্ঠা। তখন উম্মাহর মাঝ থেকে খসে পড়ে প্যান-ইসলামিক ভাতৃত্বের সিমেন্ট; এবং জন্ম দেয় বিভক্তি। এ বিভক্তি যেমন ধনি-দরিদ্রের, তেমনি দলভিত্তিক, ফিরকাভিত্তিক, জেলাভিত্তিক এবং বিবিধ আদর্শভিত্তিক। ইসলামে অনৈক্য সৃষ্টি কবিরা গোনাহ। এবং একতার কাজ গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। পবিত্র কোর’আনে তাই শুধু “আকিমুস্সালাত” অর্থ: “নামায কায়েম করো”ই বলা হয়নি, জোর দেয়া হয়েছে “লা তাফাররাকু” অর্থাৎ “বিভক্ত হয়ো না” এর উপরও। মুসলিমদের কাজ এ নয়, কোর’আনে ঘোষিত শুধু নামায-রোযার হুকুমগুলোই তারা পালন করবে এবং অমান্য করবে একতাবদ্ধ হওয়ার নির্দেশ। মুসলিমের উপর মহান আল্লাহতায়ালার প্রতিটি হুকুম মেনে চলাই ফরয। কারণ, মহান আল্লাহতায়ালার অবাধ্য ও অভিশপ্ত হওয়ার জন্য মাত্র হুকুম একটি অমান্যই যথেষ্ট – যেমনটি ইবলিসের ক্ষেত্রে হয়েছে।  

জাতীয়তাবাদ, ফ্যাসিবাদ, বর্ণবাদ, গোত্রবাদ, সমাজতন্ত্র ও পুঁজিবাদের ন্যায় নানারূপ জাহিলী মতবাদের দিকে মানুষ তখনই ভাসা শুরু করে যদি গলা থেকে ইসলামের বাঁধনটি ছুটে যায়। নোঙ্গর ছুটে গেলে স্রোতের টানে যেমন নৌকা ভাসে। মুসলিম দেশগুলোতে জনগণ এসব বাতিল মতবাদের দিকে তখনই ভাসা শুরু করেছে যখন সেক্যুলারিজম সেসব দেশে প্রবলতর হয়েছে। জনগণের গর্দান থেকে দিকে ইসলামের বাঁধন ছুটানোর কাজটি করেছে সেক্যুলারিজম। ইসলামের বিরুদ্ধে এটিই হলো সেক্যুলারিজমের সবচেয়ে বড়  নাশকতা। গৌরব যুগে নানা ভাষাভাষি ও নানা বর্ণের মুসলিমগণ জন্ম দিয়েছিলেন ঐক্যবদ্ধ উম্মাহর। তারা পরিণত হয়েছিলেন বিশ্বশক্তিতে। অথচ সেটি অসম্ভব করেছে সেক্যুলারিজম। সেক্যুলারিজম জন্ম দিয়েছে ভাষাভিত্তিক নেশন স্টেট। ফলে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে মুসলিম বিশ্ব। এতে বিজয় ও আনন্দ বেড়েছে শয়তানের। যার মধ্যে শরিষার দানা পরিমাণ আছে -সে কি এরূপ বিভক্তিতে খুশি হতে পারে?

ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদ মুসলিমদের সম্পদই শুধু লুট করেনি, বিনষ্ট করেছে তাদের ইসলামিক চেতনা ও প্যান-ইসলামিক ভাতৃত্ব। সংক্রামক ব্যধি শুধু আক্রান্ত ব্যক্তির দেহেই সীমাবদ্ধ থাকে না, যেখানে যায় সেখানেই সে রোগ ছড়্য়া। ফলে যে সেক্যুলারিজমের শুরু ইউরোপে, সেটিই ব্যাপক ভাবে প্রসার পেয়েছে মুসলিম দেশগুলিতে। মুসলিম উম্মাহর জীবনে এ মতবাদটি কাজ করেছে ঘাতক ব্যাধিরূপে। অন্য কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রোগব্যাধি বা যুদ্ধবিগ্রহে মুসলিমদের এতো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। অন্য ভাষা, অন্য বর্ণ ও অন্য অঞ্চলের মানুষের সাথে একতা গড়া যে পবিত্র ইবাদত – সেকুলারিজম সে প্রেরণাই বিনষ্ট করেছে। বরং গুরুত্ব পেয়েছে ভাষা, বর্ণ ও অঞ্চলভিত্তিক অহংকার নিয়ে পারস্পারিক ঘৃনা। ফলে নিছক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুবিধা আদায়ের লক্ষ্যে মুসলিম দেশে আচার বা সংস্কৃতি রূপে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে ভিন্ ভাষার মুসলমানদের গালি দেওয়া। তাই আরবভূমিতে তুর্কি বা ইরানীদের বিরুদ্ধে গালি না দিলে রাজনীতিতে টিকে থাকাই অসম্ভব। একই রূপ অবস্থা ইরানে এবং তুরস্কে। একই অবস্থা বাংলাদেশেও। অবাঙ্গালীদের ঘৃনা করা, তাদের ঘরবাড়ি দখল করে তাদের পরিবার পরিজনকে বস্তিতে পাঠানো প্রতিষ্ঠা পেয়েছে একাত্তর-পরবর্তী বাঙ্গালী সংস্কৃতি রূপে। এ সংস্কৃতির খেসারত দিচ্ছে বংলাদেশে বসবাসকারি কয়েক লক্ষ অবাঙ্গালী পরিবার। একমাত্র শয়তানই এরূপ সংস্কৃতিতে খুশী হতে পারে। এবং এ ভয়ানক অপরাধের নায়ক বাঙালী সেকুলারিস্টগণ। সেকুলারিজমের জোয়ারে অধিকাংশ বাঙালীদের চতনা থেকে ধুয়ে মুছে গেছে মানবতাবিরোধী সে জঘন্য অপরাধকে ঘৃনা করার সামর্থ্য। সেকুলারিজম মানুষকে যে কতটা বিবেকশূণ্য ও মানবতাশূণ্য করে -এ হলো তার নমুনা।

 

হাতিয়ার মানবতা হত্যার

সেক্যুলারিজমের নাশকতাটি শুধু ইসলাম ও প্যান-ইসলামী চেতনার বিরুদ্ধে নয়, সেটি মানবতার বিরুদ্ধেও। সে নাশকতায় সেক্যুলারিজমের ধারালো অস্ত্রটি হলো স্বার্থপরতা। ভোগবাদী স্বার্থে অন্য ভাষা, অন্য গোত্র বা অন্য দেশের মানুষ দূরে থাক, নিজ ভাইকেও মানুষ খুন করে। এরূপ স্বার্থের তাড়নায় আরবের কাফেরগণ নিজ কন্যাকেও জীবন্ত দাফন দিত। সেটি ছিল নিরেট সেক্যুলারিজম তথা পার্থিব স্বার্থ হাছিলের চেতনা। ঈমানদারের প্রতিটি কর্মে ও প্রতিটি মুহুর্তে থাকে তাঁর মহান প্রভু আল্লাহতায়ালকে খুশি করার প্রেরণা। অথচ সেক্যুলারিস্টের সে সার্বক্ষণিক প্রেরণাটি হলো নিজের স্বার্থসিদ্ধি। তাতে উপেক্ষিত হয় উম্মাহর কল্যাণ। সে স্বার্থসিদ্ধির নেশায় সে চুরিডাকাতির দল গড়ে, ভোটডাকাতির দল গড়ে, গোত্র গড়ে এবং দেশের ভূগোল ভেঙ্গে নিজের পছন্দমত ভূগোর গড়ে। প্রকটতর করে স্বার্থভিত্তিক অনৈক্য, কোন্দল ও লড়াই। সে চরিত্রটি দেখা যায় বাংলাদেশের সেক্যুলারিস্টদের মাঝে। তারা রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে নিজেদের ভোগবাদী স্বার্থচিন্তায়। ফলে ইসলামি শিক্ষা ও ইসলামি শরিয়ত প্রতিষ্ঠা বা মুসলিম উম্মাহর কল্যাণে ভূমিকা রাখা তাদের রাজনীতিতে কোন প্রসঙ্গই নয়। আরবগণ ২২ টুকরায় এবং মুসলিম উম্মাহ ৫৭ টুকরায় বিভক্ত হয়েছে তো এরূপ সেক্যুলারিস্টদের অপরাধ কর্মের কারণেই।

কথা হলো, এরূপ বিভক্তি নিয়ে কোন জাতি কি বিজয়ী হয়? পায় কি ইজ্জত ও নিরাপত্তা? বিষ পানে দেহ নাশ হয়। আর বিভক্তির হলাহলে ধ্বংস হয় উম্মাহ। বিভক্তি গড়া ইসলামে এজন্যই কঠোর ভাবে হারাম। তেলের খনি, গ্যাসের খনি বা লোকবল দিয়ে কি এ বিশাল ক্ষতি দূর করা যায়? ঐক্যের বিকল্প একমাত্র ঐক্যই। ঐক্য সৃষ্টিতে যা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তা হলো পরকালের ভয় এবং মহান আল্লাহকে খুশি করার অদম্য আগ্রহ। ঐক্য গড়া অতি কঠিন কাজ। কিন্তু মহান আল্লাহকে খুশি করা যখন তীব্রতা পায় তখন সে কাগজ সহজ হয়ে যায়। তখন গুরুত্ব পায় নিজেদের মাঝের বিরোধগুলো মীমাংসা করে নেয়া। কারণ, বিভেদ সৃষ্টিকারীকে মহান আল্লাহতায়ালা ভাল বাসবেন এবং সে পাপীকে জান্নাত দিবেন -সেটি তো অকল্পনীয়। কয়েক লক্ষ নবী-রাসূল একত্রে জন্ম নিলেও তাঁরা একতাবদ্ধ ভাবে কাজ করতেন। কারণ, তাদের মধ্যে কাজ করতো মহান আল্লাহতায়ালাকে খুশি করার এক অভিন্ন প্রেরণা। প্রাথমিক যুগের মুসলিমগণ তো সেটিই দেখিয়ে গেছেন। তেমন একটি চেতনার বলে আজও একতাবদ্ধ হতে পারে প্রকৃত মুসলিমগণ। কিন্তু মহান আল্লাহতায়ালাকে খুশি করার সে চেতনাটিকে সমূলে বিনষ্ট করছে সেক্যুলারিজম। বরং এ মতবাদটি শিখিয়েছে নিজেকে, নিজের দলকে ও নিজের গোত্রকে খুশি করা নিয়ে বাঁচতে।

 

বিনিয়োগ বাড়ছে শত্রু শক্তির

মুসলিম বিশ্ব জুড়ে শত্রুশক্তির বড় বিনিয়োগ সেক্যুলারিজমের বিজয় বাড়াতে। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশে কাজ করছে বহু হাজার সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তাদের পালতে বিনিয়োগ হচ্ছে শত শত কোটি টাকার দেশী-বিদেশী পুঁজি। এ অর্থে গড়ে উঠেছে বহু হাজার এন.জি.ও। বাংলাদেশে এন.জি.ও প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয় ১৯৪৭’য়ে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই। তখন এগুলোর মূল কাজ ছিল স্থানীয়দের খৃষ্টান বানানো। কিন্তু বহু বছরে বহু কোটি টাকা ব্যয়ে নিম্ন বর্ণের হিন্দু, গারো, সাঁওতাল ও অন্যান্য উপজাতীয়দের মাঝে খৃষ্টান ধর্মের প্রচারে সফলতা পেলেও মুসলিমদের মাঝে সে কৌশল কাজ দেয়নি। ফলে বাংলাদেশ প্রতিষ্টার পর তাদের কৌশলে আনে আমূল পরিবর্তন। সেটি মুসলিমদের খৃষ্টান বানানো নয়, বরং ইসলাম থেকে দূরে হটানো বা ডি-ইসলামাইজেশন। এতে ইসলামের ক্ষতি আরো ব্যাপকতর হয়েছে। বহু এন.জি.ওর কাজই হলো গ্রামে গঞ্জে নেমে ছেলেমেয়েদের নাচগান শেখানো। নাচগানের প্রসারে তাদের অর্থে ও নেতৃত্বে গড়ে তুলেছে অসংখ্য সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান। লেখা হচ্ছ বহু বই, প্রকাশ করছে বহু পত্র-পত্রিকা। গড়া হচ্ছে মকতবের পাশে এন.জি.ও স্কুল। ফলে যে কিশোর মকতবে গিয়ে কোরআন তেলওয়াত শিখতো, এখন শিখছে নাচগান। দারিদ্র্যতাকে পুঁজি করে ব্যাপক ভাবে চলছে সূদের ব্যবসা। গ্রামের যে ধর্মভীরু মানুষটি আগে সূদকে জ্বিনার চেয়েও ভয়ংকর পাপ জেনে সূদ খেতে ও দিতে ভয় পেত -এখন সে  নির্ভয়ে সূদ খাচ্ছে ও দিচ্ছে। গ্রামের যে মহিলাটি একাকী রাস্তায় নামাকে গর্হিত কাজ মনে করতো, সে এখন রাস্তায় রাস্তায় এন.জিও.র গাছ পাহারা দিচ্ছে। মাটি কাটছে বা সাইকেলে চড়ে একাকী গ্রাম-গঞ্জ, নদী-নালা বা মেঠো পথ অতিক্রম করছে। মহল্লায় মহল্লায় সমিতি করে শেখানো হচ্ছে মহান আল্লাহতায়ালার নানা বিধানের বিরুদ্ধে সম্মিলিত অবাধ্যতা।

প্রশ্ন হলো, ইসলাম থেকে দূরে সরানোর কাজে এতো বিদেশী বিনিয়োগের হেতু কী? কারণটি সহজ। যারা লুটতে চায় এবং পদানত রাখতে চায় – তাদের স্ট্রাটেজী মুসলিমদেরকে চেতনাশূণ্য ও দুর্বল রাখাটিও। সেটি অসম্ভব হয় মুসলিমগণ সচেতন ও শক্তিশালী হলে। শত্রুগণ জানে, মুসলিমদের শক্তির মূল উৎস্যটি ইসলাম। তারা সাহায্য পায় মহা শক্তিমান মহান আল্লাহতায়ালা থেকে। তাদের সাহায্যে ফেরশতারাও নেমে আসে। তাই শক্তির সে উৎস্য থেকেই তাদেরকে সরাতে চায়। ইসলামের মূল কথা, মহান আল্লাহর কাছে পূর্ণ আত্মসমর্পণ। তাই মুসলিম জীবনের মিশন মহান আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টায় লেগে থাকা। এমন একটি চেতনা থেকে সে পায় আমৃত্যু জিহাদ ও আত্মত্যাগের প্রেরণা। এমন একটি প্রেরণায় আফগানিস্তানে তারা পরাজিত করেছে সোভিযেত রাশিয়াকে। আলজারিয়ায় পরাজিত করেছে ফ্রান্সকে। গাজায় ও দক্ষিণ লেবাননে পরাজিত করেছে ইসরাইলকে। ফলে ইসলাম বিরোধী শক্তি বুঝতে পেরেছে নিছক উন্নত প্রযু্ক্তির যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে যুদ্ধজয় অসম্ভব। ফলে ময়দানে নেমেছে মুসলিমদেরকে তাদের শক্তির মূল উৎস্য ইসলাম থেকে সরাতে। বিনিয়োগ বাড়িয়েছে মহান আল্লাহতায়ালার সাথে তাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করায়। একারণে যেখানে যত অধিক জনশক্তি সেখানেই তাদের অধিক বিনিয়োগ। বাংলাদেশে সেক্যুলার এন.জি.ও. গুলোর বিপুল অর্থপ্রাপ্তির মূল কারণ তো বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগণ।

 

টার্গেট ইসলাম ও প্যান- ইসলামিক চেতনা

শত্রুপক্ষের মূল টার্গেট, ইসলাম এবং প্যান-ইসলামি চেতনা। কারণ, এ চেতনার কারণেই নানা দেশের নানা ভাষি মুসলিম ছুটে যায় মজলুল মুসলিম ভাইয়ের পাশে দাঁড়াতে। যেমন গিয়েছিল বসনিয়া, চেচনিয়া, আফগানিস্তান ও সিরিয়ায়। মুসলিমের এটি ঈমানী দায়বদ্ধতা। ইসলামের শত্রুপক্ষ চায় না, মুসলিমগণ একতাবদ্ধ হোক। তারা চায়, নানা ভাষা, নানা গোত্র, নানা বর্ণ ও নানা অঞ্চলভিত্তিক বিভক্তি। চায়, ভাতৃঘাতি লড়াই। চায়, মুসলিমেদর মাঝে স্থায়ী ঘৃনাসৃষ্টি। তেমন একটি স্ট্রাটেজী নিয়েই একাত্তরে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে যে ভ্রাতৃঘাতি লড়াই হলো -সেটিকে বাঙালী সেক্যুলারিস্টগণ বাঙ্গালী ও অবাঙ্গালী মুসলিমদের মাঝে চিরস্থায়ী ঘৃনায় পরিণত করেছে। এ ঘৃনাকে বাঁচিয়ে রাখার লক্ষ্যে বাংলাদেশের সেক্যুলার পক্ষটি সর্বপ্রকার আর্থিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সহায়তা পাচ্ছে ভারতের ন্যায় মুসলিম-বৈরী দেশ থেকে।

ইসলামে দেয় ঐক্যবদ্ধ উম্মাহর ধারণা। হারাম হলো বর্ণবাদ ও জাতীয়তাবাদ। উম্মাহ বলতে বোঝায় এমন এক জনগণ যারা ভাষা, বর্ণ ও অঞ্চল-ভিত্তিক পরিচয়ের উর্দ্ধৈ উঠে এক অভিন্ন লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ। এবং সে লক্ষ্যটি হলো মহান আল্লাহয়ালার নিজ এজেন্ডার বিজয়। এবং সেটি অন্য ধর্ম, অন্য মতবাদ ও অন্য দর্শনের উপর ইসলামের বিজয়। লক্ষ্য, অন্যায়ের নির্মূল, ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও শরিয়তী আইনের শাসন। প্রতিটি ঈমানদারের ঈমানী দায়ভারটি হলো মহান আল্লাহয়ালার সে এজেন্ডা পূরণে নিজের অর্থ, শ্রম, মেধা, সময় তথা সকল সামর্থ্যের বিনিয়োগ। ঈমানদার রূপে বাঁচার জন্য সে বিনিয়োগটি বাধ্যতামূলক, নইলে পরিণত হয় বেঈমানে। ঈমানের দাবী করলে সে পরিণত হয় মুনাফিকে। এটি ইসলামে অতি মৌলিক ধারণা। এমন একটি চেতনার কারণেই মুসলিম জীবনে শুধু নামায-রোযা ও হজ্ব-যাকাত আসে না, জিহাদও আসে। এজন্যই ইসলামের ইতিহাসে এমন কোন সাহাবী পাওয়া যায় না -যিনি জিহাদে অংশ নেননি।

 

হারাম মতবাদ ও হারাম বিনিয়োগ

রাজনীতির ময়দানে কোন ব্যক্তি ও দলকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে ধর্মের ব্যবহার ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বরং বিধান হলো, মুসলিম নিজে ব্যবহৃত হবে ইসলামকে বিজয়ী করার কাজে। সিদ্ধ রীতি হলো, বান্দাহর সমুদয় সামর্থ্য ব্যবহৃত হবে ইসলামকে বিজয়ী করার রাজনীতি ও যুদ্ধবিগ্রহে। বস্তুত প্রতিটি মুসলিমের উপর একমাত্র এরূপ রাজনীতিই ফরয; এটিই মুমিনের বাঁচবার মূল মিশন। ব্যক্তির প্রতিটি সামর্থ্যই মহান আল্লাহতায়ালার আমানত। ফলে সে আমানত থেকে একটি পয়সা এবং এক ফোটা রক্তও ব্যয় হতে পারে না ইসলামের বিজয় প্রতিরোধের রাজনীতিতে। সেক্যুলার রাজনীতির মূল লক্ষ্যই হলো ইসলামের বিজয়ে মুসলিমদের চেতনাশূণ্য করা। সুতরাং এ মতবাদ শতভাগ হারাম। এবং শতভাগ হারাম হলো সেক্যুলার রাজনীতিতে অর্থ, শ্রম ও সামর্থ্যের বিনিয়োগে। এমন বিনিয়োগে আর যাই হোক ঈমান বাঁচে না। ঈমানদারের কাছে তাই সেটি অচিন্তনীয়্।

অথচ সেক্যুলারিস্টগণ ইসলামের বিজয়ে ঈমানদারদের আত্মনিয়োগের রাজনীতিকেই নিষিদ্ধ করতে চায়। একাত্তরের পর সেটিই করেছিল শেখ মুজিব। নিষিদ্ধ করেছিল তুরস্ক, মিশর, তিউনিসিয়া, আলজেরিয়াসহ বহু মুসলিম দেশের সেক্যুলারিস্টগণ। এরা নিষিদ্ধ করে জিহাদকেও। অথচ মুসলিমের রাজনীতিই হলো পবিত্র জিহাদ। এ রাজনীতিতে সে শুধু ভোট দেয় না, অর্থ এবং রক্তও দেয়। এমন রাজনীতিতে সে কখনোই ধর্মকে নিজ স্বার্থে ব্যবহার করে না, বরং নিজে ব্যবহৃত হয় ইসলামের বিজয়ে। এমন কি প্রাণও দেয়। নবী করীম (সাঃ) এবং তাঁর সাহাবায়ে কেরাম তো এমন রাজনীতিই শিখিয়ে গেছেন। অপর দিকে ইসলামের বিপক্ষ শক্তি যেখানেই ক্ষমতায় গেছে সেখানে নিষিদ্ধ করেছে ধর্মপ্রাণ মানুষের রাজনীতি তথা তাদের আত্মত্যাগী বিনিয়োগ। বাংলাদেশে এরাই সেক্যুলারিজমের ন্যায় হারাম মতবাদকে রাষ্ট্রীয় নীতিতে পরিণত করেছিল। এভাবে খুশি করেছিল খুশি করেছিল ভারতীয় কাফেরদেরকে।

 

যে অবদান প্যান-ইসলামী চেতনার

মুসলিম বিশ্বে সেক্যুলারিজমের নাশকতাটি অতি গভীর। অপর দিকে প্যান-ইসলামের অবদানটি বিশাল। বিশেষ করে বাঙালী মুসলিম জীবনে। অথচ সে ইতিহাসকে ভূলিয়ে দিচ্ছে বাঙালী সেক্যুলারিস্টগণ। আজ থেকে শত বছর আগে বাঙালী মুসলিমগণ আজকের ন্যায় সেক্যুলার তথা ধর্মে অঙ্গিকারশূণ্য ছিল না। কর্ম, রাজনীতি ও সংস্কৃতিতে তারা অনুপ্রেরণা পেত ধর্ম থেকে। অনুপ্রেরণা পেত ভাষা, ভূগোল ও বর্ণের উর্দ্ধে উঠে মুসলিম উম্মাহর কল্যাণে কিছু করার। ধর্মে এমন অঙ্গিকার থাকার কারণেই বাঙালী মুসলিমগণ আজ থেকে শত বছর আগে ঢাকাতে ঘটিয়েছিল দক্ষিণ এশিয়ার বুকে যুগান্তকারি ঘটনা। সে ঘটনাটিই পাল্টে দিয়েছিল উপমহাদেশের মানচিত্র। সেটি ছিল ১৯০৬ সালে ঢাকা নগরীতে মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা -যা জন্ম দেয় বিশ্বের বুকে সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের। এমন কি ব্রিটিশ সরকার ও ভারতীয় কংগ্রেসের হিন্দু নেতাগণ মুসলিম লীগের পাকিস্তান দাবীকে মেনে নেয় ১৯৪৬ সালের আগষ্টে বাংলার রাজধানী কলকাতায় বহু হাজার বাঙালী মুসলিমের রক্তদানের প্রেক্ষিতে। ইসলামি চেতনাশূন্য সেক্যুলারিস্টদের কাছে এ ঘটনার মূল্য যাই হোক, ১৭৫৭’য়ে পলাশীর যুদ্ধে পরাজয়ের পর সমগ্র ভারতবর্ষের ইতিহাসে মুসলিমদের জন্য পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাই ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। বলা যায়, মুসলিমদের হাতে ভারত বিজয়ের পর এটিই ছিল সবচেয়ে বড় বিজয়। শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় মুসলিমদের ইতিহাসেই নয়, বহু শত বছরের বিশ্ব-মুসলিম ইতিহাসেও এটি ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।

অথচ সে সময় অবস্থা নাজুক ছিল। কোন এক বিশেষ ভাষার মুসলিমের পক্ষে অসম্ভব হয়ে উঠেছিল অন্য ভাষার মুসলিমদের সাথে একই ভূগোলে বসবাস। মুসলিম দেশগুলো ভেঙ্গে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দেশে বিভক্ত হচ্ছিল। তেমন এক প্রেক্ষাপটে ভারতের নানা ভাষা ও নানা প্রদেশে বিভক্ত মুসলিমদের পক্ষে পাকিস্তানে সৃষ্টি ছিল বিস্ময়কর। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সফলতায় সেদিন প্রচন্ড উৎফুল হয়েছিল সারা বিশ্বের মুসলিম। প্রখ্যাত জার্মান নও-মুসলিম মহম্মদ আসাদের ন্যায় অনেকে তখন ছুটে এসেছিল পাকিস্তানকে শক্তিশালী করার কাজে। বহুশত বছরের উপর্যপরি পরাজয় এবং বহু ভাতৃঘাতি যুদ্ধবিগ্রহের পর বিশ্বের মুসলিমদের মনে জাগিয়েছিল তখন এক নতুন স্বপ্ন। ১৯০৬ সালে মুসলিম লীগ এবং মুসলিম লীগের হাত দিয়ে ১৯৪৭’য়ে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত না হলে মজলুম কাশ্মীরীদের পাশে দাঁড়ানোরও কেউ থাকতো না। আফগানিস্তানের জিহাদের পাশে দাঁড়ানোর কেউ থাকতো। ফলে সোভিয়েট রাশিয়া ভেঙ্গে প্রতিষ্ঠা পেত না ৬টি মুসলিম রাষ্ট্র -যেগুলির সমুদয় আয়তন ভারতের চেয়েও বৃহৎ। ভারত অবিভক্ত থাকলে দেশটি যে আফগানিস্তানের মুসলিম নিধনে রাশিয়াকেই সমর্থণ দিত -তা নিয়ে কি সন্দেহ আছে? আফগানিস্তানে জিহাদ চলাকালে ভারত তো সেটিই করেছে। মুসলিম ইতিহাসে, বিশেষ করে পাকিস্তানীদের কাছে ১৯০৬ সাল, মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা এবং ঢাকা নগরী আজও তাই অবিস্মরণীয়।

 

বাহাদুরি ভাঙ্গাতে

বাংলাদেশ তার সৃষ্টির শুরু থেকে নানা দেশ থেকে হাত পেতে শুধু নিয়েই চলেছে, দিচেছ সামান্যই। মুসলিমগণ নিহত, ধর্ষিতা ও নির্যাতিত হচ্ছে কাশ্মীরে ও ভারতে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের মুখে ভারতের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ নাই। যেন কোন দায়বদ্ধতাই নাই। প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিমগণ বর্বরতম নৃশংসতার শিকার। শত শত বছর সেখানে বসবাস করেও সকল প্রকার নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। তারা পড়েছে নির্মূলের মুখে। অথচ তাদের কষ্ট লাঘবে ১৭ কোটি মুসলিমের বাংলাদেশের ভূমিকা অতি নগণ্য। রোহিঙ্গা মুসলিমগণ নিজ ঘরে আজও ফিরে যেতে পারিনি। এ ব্যর্থতার কারণ, ক্ষমতাসীন বাঙালী সেক্যুলারিস্টদের চেতনায় সেক্যুলারিজমের তান্ডব। মজলুম মুসলিমদের প্রতি অঙ্গিকারহীন করার জন্য এ ঘাতক মতবাদটিই যথেষ্ট।  

বাঙালী সেক্যুলারিস্টদের নিদারুন ব্যর্থতার প্রেক্ষাপটে বাঙালী মুসলিমগণ প্রচুর গর্ববোধ করতে পারে। অন্ততঃ এ নিয়ে যে, তারা মুসলিম লীগ ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে মুসলিম উম্মাহর শক্তি বৃদ্ধিতে কিছু দিতে পেরেছে। তবে তারা আরো বহু কিছু দিতে পারতো। সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের সর্ব বৃহৎ জনগোষ্ঠি হওয়ার কারণে বাঙালী মুসলিমগণ বিশ্ব রাজনীতিতে বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলতে পারতো। কিন্তু সেকুলারিস্ট বাঙালীগণ সে সুযোগ বিনষ্ট করে দেয়। বাঙালী মুসলিমদের বিরুদ্ধে সেক্যুলারিস্ট বাঙালীদের এ হলো সবচেয়ে বড় গাদ্দারী। সেক্যুলারিস্টদের সফলতা শুধু মুসলিম মানচিত্রের খন্ডিত করণে, বৃদ্ধিতে নয়। এরাই আরবভূমিকে টুকরো টুকরো করে জন্ম দিয়েছে ২২টি রাষ্ট্রের। তাদের বাহাদুরি শুধু ভাঙ্গাতে, গড়াতে নয়। এমন একটি ঘাতক শক্তি মুসলিম দেশের অভ্যন্তরে থাকলে তাদের পরাজয়ে আর বিদেশী শক্তির প্রয়োজন আছে কি? এদের পিছনে কাফের শক্তির বিপুল পুঁজি বিনিয়োগের মূল হেতু তো এটিই। ১ম সংস্করণ ২৭/০৫/২০০৬; ২য় সংস্করণ ০৮/০১/২০২১।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *