সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ও ভাবনা-৫

১.

প্রকাশ্য দিবালোকে মসজিদ ভাঙ্গলে, মুসলিমদের হত্যা করলে এবং মুসলিম নারীদের ধর্ষণ করলে -ভারতের আদালতে তার বিচার হয় না। ২০০২ সালে একমাত্র গুজরাতের আহমেদাবাদ শহরেই ৩ হাজারের বেশী মুসলিম নারী, পুরুষ এবং শিশুকে হত্যা করা হয়েছে। অনেককে হত্যা করা হয়েছে আগুণে ফেলে। ধর্ষিতা হয়েছে শত শত নারী। তখন নরেন্দ্র মোদী ছিল গুজরাতের মুখ্য মন্ত্রী। মোদী সে দাঙ্গা থামাতে কোন উদ্যোগই নেয়নি। সে হত্যাকান্ডে হাজার হাজার হিন্দু অংশ নিয়েছিল। কিন্তু ক’জনের শাস্তি হয়েছে? আসামী ছিল নরেন্দ্র মোদী ও তার ডান হাত অমিত শাহ। কিন্তু কোন মামলাতেই তাদেরকে হাজির হতে হয়নি। নরেন্দ্র মোদী এখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী এবং অমিন শাহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী।

১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে বহু হাজার দাঙ্গা বাধানো হয়েছে।  মুসলিমদের ঘরে আগুন দেয়া ও মুসলিমদের হত্যা করা এখন আর শুধু দাঙ্গা নয়, পরিণত হয়েছে ভারতীয় সংস্কৃতিতে। গরুর গোশতো খাওয়ার অভিযোগে রাস্তায় পিটিয়ে হত্যা করা হচ্ছে। মুসলিমগণ রাস্তায় টুপি মাথায় দিয়ে বেরুতে ভয় পায়। তাদের মূল অপরাধটি হলো, ভারতে প্রায় ৭ শত বছরের মুসলিম শাসন। যারা শাসন করেছিল তাদের মৃত্যু হওয়াতে প্রতিশোধ নিচ্ছে আজকের মুসলিমদের হত্যা ও ধর্ষণ করে।

যে ভারত মুসলিম নির্মূলের এমন সহিংস রাজনীতি ও সংস্কৃতিকে প্রশ্রয় দেয় -সে ভারতকে অতি অন্তরঙ্গ বন্ধু মনে করতেন শেখ মুজিব। বন্ধু মনে করে একাত্তরে যারা ভারতের আশ্রয়ে, প্রশ্রয়ে ও অর্থে প্রতিপালিত হয়েছিল সে মুক্তিযাদ্ধারাও। সে ভারতের প্রশংসায় গদ গদ শেখ হাসিনা। বস্তুতঃ ভোট ডাকাত হাসিনার রক্ষক হলো ভারত। ফলে ভারতে যত মসজিদই ভাঙ্গা হোক না কেন, যত মুসলিমই নিহত বা ধর্ষিতা হোক না কেন -হাসিনা তার নিন্দা করতে রাজী নয়। নিন্দা করতে রাজী নয় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী রূপে চিত্রিত করা হয় যে মুক্তিযোদ্ধাদের তারাও। বাংলাদেশী হওয়ার অর্থ যেন গলায় শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার ন্যায় ভারতের প্রতি গোলাম সুলভ দাসত্বের রশি নিয়ে বাঁচা। সে দাসত্ব চিত্রিত হচ্ছে একাত্তরে পাকিস্তান ভাঙ্গায় ভারতের ভূমিকার জন্য তাদের প্রতি অনিবার্য দায়বদ্ধতা রূপে।

অপরদিকে রাজাকারদের অপরাধ, তারা ভারতকে কোন সময়ই বন্ধু রূপে মেনে নেয়নি। ভারতকে তারা শত্রু গণ্য করেছে যেমন একাত্তরে, তেমনি আজও। ভারত সেটি পুরাপুরি জানে। তাই তারা রাজাকারদের মহাশত্রু মনে করে। এজন্যই ভারতের প্রতি আত্মসমর্পিত ভোট-ডাকাত হাসিনার উপর ভারতের পক্ষ থেকে অর্পিত মূল দায়ভারটি হলো, বাংলাদেশ থেকে রাজাকার নির্মূল। তাই সে কাজে ময়দানে দেশের পুলিশ, আদালত, সেনাবাহিনী, গোয়েন্দা বাহিনীর পাশাপাশি ছাত্রলীগের গুন্ডাদেরও নামানো হয়েছে। বুয়েটে আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করার কারণ, ছাত্রলীগের গুন্ডাদের কাছে সে রাজাকার রূপে গণ্য হয়েছিল। কারণ, সে ভারতের বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্টাটাস দিয়েছিল। তাদের ধারণা, এ কাজ একমাত্র রাজাকার ছাড়া অন্য কোন বাংলাদেশী করতে পারে না। চাকর-বাকর তো কাজ করে মনিবের এজেন্ডা অনুযায়ী। তাই দেশ থেকে চোর-ডাকাত, ধর্ষক, সন্ত্রাসী, শেয়ার মার্কেট লুটেরা ও ব্যাংক লুটেরাদের নির্মূল নিয়ে হাসিনার কোন আগ্রহ নেই। কারণ, সে কাজে ভারতের কোন নির্দেশ নাই।  

২.
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট আইনী দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো, এখন কোন ঐতিহাসিক মসজিদ ভাঙ্গলে সেখানে মন্দির গড়ার জন্য আদালত থেকে রীতিমত অনুমতি দেয়া হবে। ইতিমধ্যেই উগ্র হিন্দুরা সোসাল মিডিয়াতে অনেকগুলো মসজিদের তালিকাও প্রকাশ করেছে।

ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদ ভাঙ্গা শেষ হয়েছে। আদালত থেকে মসজিদের জমির উপর মন্দির বানানোর অনুমতিও মিললো। কিন্তু বিজেপির রাজনীতি তো শেষ হয়নি। সে রাজনীতিকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে আরো মসজিদ ভাঙ্গা এবং আরো মুসলিম হত্যার রাজনীতিকে অবশ্যই তাদের এজেন্ডাতে রাখবে।

৩.
ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের রায়ে নরেন্দ্র মোদি, বিজেপি, আর.এস.এস, বিশ্বহিন্দু পরিষদসহ যাদের হাতে মুসলিমের রক্ত এবং যারা বাবরি মসজিদ ভাঙ্গার সাথে প্রত্যক্ষ ভাবে জড়িত তাদের এখন ভারত জুড়ে বিপুল বিজয় উৎসবের দিন। মসজিদ গুড়িয়ে দেয়ার যে অপরাধ কর্মটি হিন্দুত্ববাদী গুন্ডারা শুরু করেছিল, সেটিই এখন জায়েজ করে দিল ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট। বিজেপি সরকারের স্ট্রাটেজি এভাবেই ষোলকলায় পূর্ণ হলো। লক্ষ্যণীয় হলো, এ ভারত সরকারই ভোট-ডাকাত হাসিনার মূল রক্ষক! তবে বাংলাদেশে বিজেপীর এজেন্ডা মসজিদ ভাঙ্গা নয়, রাজাকার নির্মূল।

৪.
ভারতে মুসলিম বিরোধী ঘৃণাটি শুধু বিজেপির নয়, সে রোগটি এখন ছড়িয়ে পড়েছে সে দেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে। সমগ্র পুলিশ প্রশাসন সেটি প্রমাণ করেছিল মসজিদ ভাঙ্গার দিনটিতেও। মসজিদ ভাঙ্গার অপরাধীদের স্বপ্ন পূরণ করে ভারতের সুপ্রিম কোর্টও প্রমান করলো, শুধু রাজপথ নয়, ভারতের আদালতও মুসলিম বিদ্বেষীদের হাতে অধিকৃত।

৫.
মহান আল্লাহর যে কোন হুকুমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহই হলো কবিরা গুনাহ। প্রতিটি কবিরা গুনাহই ভয়ানক আযাব আনে -যেমন ইহকালে, তেমনি আখেরাতে। মহান আল্লাহতায়ালার হুকুম হলো, মুসলিমদের মাঝে একতা গড়া। সে হুকুম এসেছে সুরা আল ইমরানের ১০৩ নম্বর আয়াতে। সে হুকুম মান্য করে আরব, কুর্দি, ইরানী,তুর্কী, বারবার ইত্যাদি নানা ভাষার মুসলিমগণ একতা গড়েছিল। বিলুপ্ত করেছিল তাদের মাঝে ভাষার নামে গড়ে উঠা বহু হাজার বছরের পুরনো দেয়াল। ফলে মুসলিমগণ সেদিন গৌরব পেয়েছিল বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রের। 

কবিরা গুনাহ হলো মহান আল্লাহর সে হুকুম অমান্য করে ভাষা, বর্ণ ও এলাকার নামে অখণ্ড মুসলিম ভূমিকে খণ্ডিত করা। সে গুনাহর শাস্তির ঘোষণাটি শোনানো হয়েছে সুরা আল ইমরানের ১০৫ নম্বর আয়াতে। অথচ সে কবিরা গুনাহটি আরবগণ করেছে ১৯১৭ সালে ২২ টুকরায় বিভক্ত হয়ে। সে কবিরা গুনাহর শাস্তিও তাদের নিস্তার দেয়নি। ধ্বংসের আগুন জ্বলছে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে। আরবগণ লাগাতর শাস্তি পাচ্ছে ইহুদী, মার্কিনী ও রুশদের হাতে অধিকৃত হয়ে। তারা নিজ দেশে যেমন বোমার আঘাতে হাজার হাজার মরছে, তেমনি অপমানিত হচ্ছে নানা দেশের পথে ঘাটে উদ্বাস্তু রিফিউজী হয়ে।

বাঙালী মুসলিমগণ মুজিবের নেতৃত্বে সে কবিরা গুনাহটি করেছে পাকিস্তান ভাঙ্গার কাজে ১৯৭১ সালে ভারতীয় কাফেরদের দলে ভিড়ে। সে গুনাহর শাস্তি রূপে এখন তারা পরিণত হয়েছে ভারতের গোলাম রাষ্ট্রে। সে গোলামীর সাথে মুজিব আমলে জুটেছিল বিশ্বমাঝে ভিক্ষার তলাহীন ঝুলির অপমান। বিশ্বমাঝে এরূপ অপমানও কি কম শাস্তি? এরূপ অপমান বাঙালী মুসলিমদের কোন কালেই সইতে হয়নি। আরেক অপমান হলো, ভারতের পক্ষ থেকে চাপিয়ে দেয়া ভোট-ডাকাতকেও এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলে শ্রদ্ধা জানাতে হচ্ছে। কোন সভ্য জাতি কি সেটি করে। অথচ দুনিয়ার সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের তিন বার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিল বাঙালী মুসলিম। কায়েদে আযমের মৃত্যুর পর সে আসনে বসেছিল বাঙালী মুসলিম খাজা নাযিমুদ্দীন। 

নিজেদের কবিরা গুনাহকে জায়েজ করতে বাঙালীদের মুখে মুখে পশ্চিম পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে নানারূপ দোষের কথা। যেন বাঙালীরা নিজে ও তাদের ভারতীয় কাফের বন্ধুরা ফেরেশতা। তারা্ যে বহু লক্ষ বিহারীদের ঘরাড়ি ও ব্যবসা-বাণিজ্য কেড়ে নিয়ে পথে বসালো এবং হাজার হাজার বিহারীকে হত্যা করলো এবং বিহারী মহিলাদের ধর্ষণ করলো -সে কথা এসব ফেরেশতারা কখনোই মুখে আনে না। অথচ এসবও ইতিহাস। সে ইতিহাস বাঙালীদের পড়ানো না হলেও বিশ্বের বহু দেশে তা পড়ানো হয়।

আরবগণও ১৯১৭ সালে তুর্কি মুসলিমদের দোষ খুঁজেছিল এবং ঔপনিবেশিক ইংরেজদের ফেরশতা মনে করে গলা জড়িয়ে ধরেছিল। লক্ষণীয় হলো, তুর্কিদের বিশ্বমাঝে ইজ্জত বেড়েছে। তারা যে কোন আরব রাষ্ট্রের চেয়ে শক্তিশালী। পারমানবিক অস্ত্রধারী হওয়ার কারণে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী মুসলিম রাষ্ট্র রূপে পাকিস্তানেরও ইজ্জত বেড়েছে। তুরস্ক ও পাকিস্তান –উভয় দেশেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। উভয় দেশেই একাধীক বর্ণ ও ভাষাভাষী মানুষের সভ্য সহ-অবস্থান। অথচ সে সভ্য আচরন বিহারীরা বাংলাদেশে পাইনি।  অথচ এসব কথা বাঙালীরা মুখে আনে না। প্রশ্ন হলো, কবিরা গুনাহর আসামী আরব ও বাঙালী মুসলিমদের ইজ্জতও কি বেড়েছে? পেয়েছে ফ্যাসিবাদমুক্ত গণতন্ত্রের স্বাদ? দর্জির কাজ, চিংড়ি মাছ আর বিদেশীদের ঘরে নারী রপ্তানী বাড়িয়ে কি ইজ্জত মেলে? এসব নিয়ে আল্লাহর কাছে হিসাব দেয়ার আগে নিজেদেরই হিসাব নেয়া উচিত।          

৬.
ইসলামের পরাজয় দেখার বেদনাটি অতি তীব্র। দেহের ব্যাথা ঔষধে সারে, কিন্তু হৃদয়ের এ ব্যথা সারে না। মুসলিম ভূমিতে শরিয়তের বিচার না থাকাটি মহান আল্লাহতায়ালার বিধানের এক বিদনাদায়ক পরাজয়। সে পরাজয়টি প্রতিটি মুসলিম দেশে।  সে পরাজয় বাংলাদেশেও। শরিয়তী বিধান ছাড়া প্রতিটি বিধানই হারাম। অথচ সে হারাম বিধান বিজয়ী মুসলিম দেশগুলিতে।  এতে আনন্দ বেড়েছে শয়তানের। এটি কি কম দুঃখের? একজন ঈমানদার মহান আল্লাহতায়ালার বিধানের এরূপ পরাজয় মেনে নেয় কি করে?

মৃত দেহে ব্যথা থাকে না। তেমনি ইসলামের পরাজয় নিয়ে ব্যথা থাকে না মৃত ঈমানেও। মহান আল্লাহর শরিয়তী বিধানের পরাজয় নিয়ে তাই মুসলিমদের মাঝে কোন মাতম নাই। মাতম নাই বাঙালী মুসলিমদেরও।

৭.
যারা মহান আল্লাহতায়ালার প্রকৃত আশেক (আল্লাহপ্রেমী) তারা যুদ্ধ করে এবং সে যুদ্ধে প্রাণ দেয় আল্লাহর ইচ্ছা পূরণে। আল্লাহতায়ালা তো চান শরিয়তের প্রতিষ্ঠা। অথচ ভূয়া আশেকদের সে ভাবনা নাই। তাদের এজেন্ডা স্রেফ নিজেদের বাণিজ্য ও পসার বৃদ্ধি।

৮.
আবরারকে যারা হত্যা করলো তারা কোন পতিতা পল্লী বা ডাকাত পাড়ায় বেড়ে উঠেনি।তারা শিক্ষা নিয়েছে নটারডাম ও বুয়েটে। বাংলাদেশের শিক্ষা নীতি যে কতটা ব্যর্থ এ হলো তার প্রমান। এ শিক্ষা নীতি ছাত্রদের পরীক্ষায় ভাল নম্বর পেতে শেখায়, কিন্তু শেখায় না চরিত্রবান ভাল মানুষ রূপে বেড়ে উঠতে। পরীক্ষায় ভাল নম্বর পাওয়া এবং চরিত্রবান মানব রূপে বেড়ে উঠা যে এক নয় -সে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি গুরুত্ব পায়নি বাংলাদেশের শিক্ষানীতিতে।   

৯.
সব সময় মহান আল্লাহতায়ালার যিকির নিয়ে না বাঁচার বিপদটি ভয়ানক। তখন ঘাড়ের উপর মহান আল্লাহতায়ালা শয়তান বসিয়ে দেন। শয়তানের কাজ হয় তাকে বিভ্রান্ত করা। তখন তার জীবনের পথচলাটি হয় জাহান্নামের পথে। সে হুঁশিয়ারিটি শোনানো হয়েছে সুরা জুখরূফের ৩৬ নম্বর আয়াতে।

শয়তানের হাতে অধিকৃত হওয়ার মহাবিপদ থেকে বাঁচতে প্রকৃত মুসলিমকে তাই প্রতি কর্মে, প্রতি পেশায় এবং জীবনের প্রতিক্ষণে আল্লাহতায়ালার যিকির বা স্মরণকে সাথে নিয়ে চলতে হয়। সেটি যেমন রাজনীতিতে, তেমনি বুদ্ধিবৃত্তি, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও অর্থনীতিতে। রাজনীতিতে মহান আল্লাহতায়ালার সে যিকির বা স্মরণটি হলো তাঁর শরিয়তি আইন প্রতিষ্ঠার লাগাতর ফিকির ও প্রচেষ্টা। মুসলিম জীবনে সেটিই জিহাদ। একজন মুসলিমের পক্ষে রাজনীতিতে তাই ইসলামী চেতনাশূণ্য সেক্যুলার হওয়া অসম্ভব। কারণ, সেক্যুলার রাজনীতির অর্থই হলো মন থেকে ইসলামের প্রতি সর্বপ্রকার অঙ্গিকারকে বিদায় দেয়া। সে রাজনীতিতে ইসলামের প্রতি অঙ্গিকার চিহ্নিত হয় সাম্প্রদায়িকতা রূপে।

১০

বাংলাদেশে যারা ইসলামের নামে রাজনীতি করে তাদের একটি বিষয় পরিষ্কার করা উচিত। তারা কি শরিয়তের প্রতিষ্ঠা চায়? সেটি চাইলে এই একটি মাত্র বিষয়ে তারা কেন একতাবদ্ধ হতে পারে না? তাছাড়া শরিয়তের প্রতিষ্ঠা লক্ষ্য না হলে -সে রাজনীতি ইসলামী হয় কি করে? আওয়ামী লীগ ও বিএনপি –এ দুটি দলই সেক্যুলার দল। শরিয়তের প্রতিষ্ঠার বিষয়টি তাদের কোন এজেন্ডা নয়। তারা চায় দুনিয়ার কাফের মোড়লদের কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে রাজনীতি করতে। শরিয়তের কথা মুখে আনলে সেটি বিনষ্ট হবে। আল্লাহতায়ালার কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়া তাদের কাছে কোন এজেন্ডা নয়। অতএব এ দুটি দলের রাজনীতির সাথে একাত্ম হয়ে কি শরিয়তের প্রতিষ্ঠা সম্ভব? বৃহৎ দু’টি সেক্যুলার দলের সহযোগী হয়ে তাদের নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি হতে পারে, কিন্তু ইসলামের সাথে সেটি যে প্রচন্ড গাদ্দারি -তা নিয়ে কি কোন সন্দেহ থাকে? এমন গাদ্দারির কারণেই শরিয়ত প্রতিষ্ঠার কাজে বাংলাদেশে কোন অগ্রগতি হয়নি।

১১.

দেশ থেকে ঔপনিবেশিক কাফেরদের শাসন শেষ হয়েছে। কিন্তু ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদীদের ভয় এখনও মুসলিমদের মনে রয়ে গেছে। ফলে মুসলিমগণ রাজনীতিতে থাকলেও তাদের সে রাজনীতিতে শরিয়ত প্রতিষ্ঠার কোন আন্দোলন নাই। অথচ সেটি মুসলিম রাজনীতির অতি গুরুত্বপূরর্ণ বিষয়। তাদের ভয়, শরিয়ত প্রতিষ্ঠার কথা বললে তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদী প্রভুদের ক্রোধ বাড়বে। বাংলাদেশীদের ভয়, তাতে ক্রোধ বাড়বে ভারতেরও। তেমন একটি ভয়ের কারণেই অনেক গুলি ইসলামী দলও শরিয়তের কথা মুখে আনে না। শরিয়ত প্রতিষ্ঠা নিয়ে তারা কোন আন্দোলনেও নামে না। তারা ভয় করে সাম্রাজ্যবাদী কাফেরদের, আল্লাহতায়ালাকে নয়। অথচ মহান আল্লাহতায়ালার হুকুমঃ “লা তাখশাওহুম, আখশাওনি” অর্থঃ তাদের ভয় করো না, আমাকে ভয় কর”। ১০/১১/২০১৯

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *