শত্রুর ষড়যন্ত্র সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদতকে নিষিদ্ধ করা

ফিরোজ মাহবুব কামাল

 

শত্রুর জিহাদ ভীতি

ইসলামের শত্রুগণ নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাত, দোয়া-দরুদ ও মসজিদ-মাদ্রাসা দেখে ভয় পায়না। তারা ভয় পায় জিহাদ দেখে। কারণ, মুসলিম দেশে জিহাদ সংঘটিত হয় তাদের প্রতিরোধ ও নির্মূলের লক্ষ্যে। জিহাদই হলো মুসলিমদের প্রতিরোধ যুদ্ধের মূল হাতিয়ার। এটি মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে মোক্ষম deterrent। তাই যারা মুসলিম ভূমির উপর দখলদারি প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তারাই মুসলিমদের জিহাদশূণ্য দেখতে চায়। তখন সে মুসলিম ভূমিকে তারা সহজেই দখলে নিতে পারে। বাঙালি মুসলিমগণ জিহাদশূণ্য ছিল বলেই ১৭৫৭ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী সহজেই বাংলাকে দখলে নিতে পেরেছিল। অপরদিকে জনজীবনে জিহাদ ছিল বলেই আফগানিস্তান, ইরান ও তুরস্ককে তারা দখলে নিতে পারিনি।

যারা জিহাদশূণ্য এবং ধর্মকর্মকে শুধু নামাজ-রোজা, হজ্জ-যাকাত ও তাসবিহ-তাহলিলে সীমিত করে -তারা কখনোই শত্রুদের প্রতিরোধে জিহাদে খাড়া হয়না। এরা নামাজী, রোজাদার ও হাজী হলেও সত্যিকার মুসলিম নয়। তারা শত্রুদের জন্য রণাঙ্গণকে খালি ছেড়ে দেয়। সেটি তাদের মুনাফিকি। অথচ মুনাফিকির বদলে যাদের থাকে প্রকৃত ঈমান, তাদের থাকে জিহাদী চেতনা। তারা সর্ব সামর্থ্য দিয়ে শত্রুদের রুখতে রণাঙ্গণে হাজির হয়। এজন্যই ইসলামের শত্রুদের সকল আক্রোশ জিহাদী মুসলিমদের বিরুদ্ধে। ইসলামের এই শত্রুগণ তাদের শত্রুদের চিনতে ভূল করে না। তাই তাদের ষড়যন্ত্রটি হলো মুসলিমদের জিহাদশুণ্য করা তথা নিরস্ত্র করা। এজন্যই হাসিনার পুলিস জিহাদের বই পেলে জব্দ করতো বা জিহাদের উপর ওয়াজ করলে আলেমকে জেলে তুলতো। সেটি ছিল ভারতীয় এজেন্ডাও।

 

ষড়যন্ত্র প্রতিরোধহীন করা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলি মুসলিম দেশগুলির উপর চাপ দিচ্ছে স্কুল-কলেজের সিলেবাস থেকে জিহাদ বিষয়ক বিষয়গুলিকে বাদ দিতে। ভারতও সে নীতির প্রয়োগ চায় বাংলাদেশের স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসায়। তারা জিহাদকে বলছে সন্ত্রাস। মসজিদের খতিবদের উপয় চাপ দিচ্ছে খোতবায় জিহাদ নিয়ে আলোচনা না করতে। এভাবে ষড়যন্ত্র হচ্ছে মুসলিমদের জীবনে ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদতকে নিষিদ্ধ করার। শত্রুদের সে নীতি বাংলাদেশে প্রয়োগ করেছিল খুনি হাসিনা। অথচ জনগণের জিহাদী চেতনাই হলো শত্রুর বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্তিশালী deterrent -যা দেখে শত্রুরা হামলা করতে ভয় পায়। সে জিহাদী deterrent‌’য়ের কারণই কোন বিশ্বশক্তি এখন আফগানিস্তান, ইয়েমেন বা ইরান দখলে নিতে ভয় পায়। কারণ হামলা হলে যুদ্ধ হবে প্রতিটি জনপদে।

আগ্রাসী ভারতের বিরুদ্ধে আপামর বাঙালি মুসলিমের সে জিহাদী চেতনাই হতে পারতো সবচেয় সফল deterrent, পারমানবিক বোমা নয়। সে deterrent য়ের কারণে ভারত ১৯৪৮ সালে হায়দারাবাদ ও কাশ্মীর দখলে নিতে পারলেও পূর্ব পাকিস্তানকে দখলে নিতে পারিনি। অথচ তখন সেটি ভারতের জন্য একাত্তরের চেয়ে অনেক সহজ ছিল। কারণ, পূর্ব পাকিস্তানে তখন কোন ক্যান্টনমেন্টই ছিলনা। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এক হাজার সৈন্যও তখন পূর্ব পাকিস্তানে ছিলনা। ছিল না কোন ট্যাংক, কোন ভারী কামান। ছিল না কোন যুদ্ধবিমান। কিন্তু তখন ছিল বাঙালি মুসলিমদের মাঝে ছিল “লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান”য়ে জিহাদী চেতনা। ভারতীয় হিন্দুরা সেটিকেই ভয় পেত। সে চেতনার প্রকাশ তারা দেখেছে ১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্ট কলকাতার রাজপথে মুসলিম লীগের ঘোষিত Direct Action দিবসে।

কিন্তু ১৯৭১’য়ের আগেই বাঙালি সেক্যুলারিস্টগণ বাঙালি মুসলিমদের সে জিহাদী deterrent কে ধ্বংস করতে সমর্থ্য হয়। জনগণকে তারা ভাসিয়ে নেয় ইসলামশূণ্য সেক্যুলার চেতনায়। বাঙালি সেক্যুলারিস্টগণ আজও সেটিই চায়। কারণ, তারা হলো ইসলামের দেশী শত্রু। তাই তারা চায় ইসলামের বিদেশী শত্রুদের বিজয়কে সহজতর করতে। যেমনটি করেছিল ১৯৭১’য়ে। কারণ, ভারতের বিজয়কে তারা নিজেদের বিজয় বলে। সেটি যেমন তারা ১৯৭১’য়ের বলেছে, সে কথা আজও বলে। সে কথা যেমন সেক্যুলারিষ্ট আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের মুখ থেকে শোনা যায়, তেমনি শোনা সেক্যুলারিষ্ট বিএনপির নেতাদের মুখ থেকেও। বিএনপি’র শীর্ষ নেতা মীর্জা ফখরুল, গোলাম কবির রিজভী ও শামসুজ্জামান দুদু এরা সবাই ভারতকে বন্ধ মনে করে। আর যারা ভারতের ন্যায় একটি পরীক্ষিত শত্রু দেশকে বন্ধু মনে করে -তারা কি কখনো মুসলিম ও ইসলামের বন্ধু হতে পারে? তাই মুসলিমদের লড়াইটি শুধু বিদেশী শত্রুদের বিরুদ্ধে হলে হবে না, হতে হবে এসব দেশী শত্রুদের বিরুদ্ধেও।   

 

ষড়যন্ত্র জিহাদ নিষিদ্ধকরণের

প্রতিটি মুসলিম দেশে ইসলামের দেশী ও বিদেশী শত্রুগণ এক অভিন্ন লক্ষ্যে কাজ করতে সব সময়ই বদ্ধপরিকর। সেটি হলো, মুসলিমদের জিহাদশূণ্য করা -অর্থাৎ মুসলিমদের হাত থেকে deterrent কেড়ে নেয়া। বাংলাদেশও তাদের একই স্ট্রাটেজী। সেটি চায়, দেশটির উপর তাদের দখলদারিকে সহজতর করার লক্ষ্যে। কারণ তারা জানে, মুসলিমগণ জিহাদশূর্ণ হলে তাদের হামলার রুখতে তারা প্রতিরোধে দাঁড়াবে না। সেটি দেখা গেছে আফগানিস্তান ও ইরাকে। এ দেশ দুটির উপর যখন মার্কিন হামলা হয়, তখন এ দেশ দু’টির জিহাদী চেতনাশূণ্য সেক্যুলারিস্টগণ প্রতিরোধে খাড়া হয়নি। বরং আগ্রাসী মার্কিনীদের পক্ষ নিয়েছে। তেমনটি ১৯৭১ সালে দেখা গেছে বাংলার মাটিতে। তখন বাঙালি ফ্যাসিস্ট, সেক্যুলারিস্ট ও বাম কাপালিকগণ ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে না দাঁড়িয়ে বরং তাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছে এবং ভারতের ঘরে বিজয় তুলে দিয়েছে।  ৮/৬/২০২৫

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *