বিবিধ ভাবনা (৪৫)
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on April 29, 2021
- Bangla Articles, Bangla বাংলা, সমাজ ও রাজনীতি
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
১. এতো ব্যর্থতা কেন?
ইসলামের এজেন্ডা শুধু পরিশুদ্ধ চরিত্রের মানব সৃষ্টি নয়, বরং সেটি পরিশুদ্ধ পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের নির্মাণও। সেটি বুঝা যায় ইসলামের নীতিমালা ও ফরজ বিধানের দিকে নজর দিলে। ব্যক্তির কর্ম, চরিত্র ও চেতনায় পরিশুদ্ধির জন্য ইসলামের প্রেসক্রিপশন হলো কুর’আন শিক্ষা, নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত এবং তাসবিহ-তাহলিলের বিধান। সমাজ ও রাষ্ট্রের পরিশুদ্ধির জন্য প্রেসক্রিপশন হলো ইসলামের রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা, জিহাদ, শরিয়ত ও হুদুদ পালন, প্যান-ইসলামিক ঐক্য এবং শুরাভিত্তিক শাসন। এ প্রেসক্রিপশনের প্রয়োগ মুসলিমদের উপর বাধ্যতামূলক তথা ফরজ। পাখির দুটি ডানার একটি ভেঙ্গে গেলে পাখি উড়তে পারে না। তেমন পরিশুদ্ধ সভ্যতার নির্মাণে শুধু ব্যক্তির জীবনে পরিশুদ্ধি আনলে চলে না, পরিশুদ্ধি আনতে হয় সমাজ ও রাষ্ট্রের অঙ্গণেও।
তা্ই শুধু ব্যক্তির ইসলামীকরণ হলে চলে না, রাষ্ট্রেরও ইসলামীকরণ করতে হয়। এটিই নবীজী (সা:)’র সূন্নত। রাষ্ট্রের ইসলামীকরণের লক্ষ্যে নবীজী (সা:) নিজে ১০ বছর রাষ্ট্র প্রধানের আসনে বসেছেন। মুসলিমদের গৌরব কালে তাদের সফলতার মূল কারণটি হলো, সে আমলে মহান আল্লাহতায়ালা-প্রদত্ত প্রেসক্রিপশনের পূর্ণ প্রয়োগ হয়েছিল উভয় ক্ষেত্রেই। মুসলিমদের আজকের ব্যর্থতার কারণ, তাদের নিদারুন ব্যর্থতা উভয় ক্ষেত্রেই। ইসলামীকরণ যেমন হয়নি ব্যক্তি-জীবনে, তেমনি হয়নি রাষ্ট্রীয় জীবনেও। দেশে মসজিদ-মাদ্রাসার সংখ্যা বাড়লেও ইসলামী করণের কাজ হয়নি শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনীতি, আইন-আদালত ও প্রশাসনে। বরং দ্রুত গতিতে হয়েছে দুর্বৃত্তিতে জোয়ার আনার কাজ। দুর্বৃত্তিতে এতটাই বৃদ্ধি আনা হয়েছে যে একটি মুসলিম দেশ হয়েও বাংলাদেশ এ শতাব্দীর শুরুতে পর পর ৫বার দুর্নীতিতে বিশ্বে প্রথম হয়েছে। এটি কি কম লজ্জার?
রাষ্ট্র পরিশুদ্ধ করণের মূল হাতিয়ারটি হলো জিহাদ। এটিই ইসলামের সর্বশ্রেষ্ঠ ইবাদত। এ ইবাদতে বিনিয়োগ হয় ব্যক্তির অর্থ, মেধা, শ্রম ও রক্তের্। জিহাদের এ ফরজ বিধান প্রতিটি ঈমানদারকে দুর্বৃত্ত শক্তির নির্মূলে আমৃত্যু লড়াকু সৈনিকে পরিণত করে। এ জিহাদে প্রাণ গেলে সরাসরি জান্নাত জুটে। নবীজী (সা:)’র সাহাবীদের শতকরা ৬০ ভাগের বেশী শহীদ হয়েছেন। যে দেশে জিহাদ নাই সে দেশ অবশ্যই দুর্বৃত্তদের দখলে যায়। রাষ্ট্র তখন দেশবাসীকে জাহান্নামে নেয়ার বাহনে পরিনত হয়। দুর্বৃত্তকবলিত সে দুষ্ট রাষ্ট্রটি জাহান্নামে নেয়ার ভয়ানক কাজটি করে ইসলামবর্জিত শিক্ষা ব্যবস্থা, অশ্লিল সংস্কৃতি, ইসলাম বিরোধী মিডিয়া, বুদ্ধিবৃত্তির দুর্বৃত্তি এবং চুরি-গুম-খুন-সন্ত্রাসের রাজনীতির মাধ্যমে। পরিশুদ্ধির বদলে এদের হাতে দুষ্টকরণের কাজটিই তখন বেশী বেশী হয়। বাংলাদেশ তারই উদাহরণ। ফলে শাসকের যে স্থানে বসেছেন খোদ নবীজী (সা:), বাংলাদেশে সে আসনে বসেছে একজন দুর্বৃত্ত ভোটচোর। এটিই হলো বাংলাদেশে ১৬ কোটি মুসলিমের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। কিন্তু সে ব্যর্থতা অনুশোচনা ক’জনের? এ দুষ্ট প্রক্রিয়া থেকে বেড়িয়ে আসার ভাবনাই বা ক’জনের।
২. বেঈমানীর পরিচয়
মহান আল্লাহতায়ালাকে অস্বীকার করাই শুধু বেঈমানী নয়। বরং সুস্পষ্ট বেঈমানী হলো, রাজনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি, বিচার, অর্থনীতি এবং প্রশাসনে ইসলামের বিধ্যানগুলিকে মেনে না চলা। আদালতে কুফরী আইন, রাজীনীতিতে সেক্যুলারিজম, অর্থনীতিতে সূদ, অফিসে ঘুষ, সংস্কৃতিতে হিন্দুয়ানী এবং পোষাকে বেপর্দাগী –এগুলি কি ঈমানদারীর পরিচয়? সুস্পষ্ট বেঈমানী হলো ইসলামী রাষ্ট্র, ইসলামী শিক্ষা ও শরিয়তী আইনের প্রতিষ্ঠার বিরোধীতা করা। যেখানে ইসলাম সেখানেই এ বেঈমানদের শত্রুতা। এবং সে বেঈমানী নিয়েই বাংলাদেশের সেক্যুলারিস্টদের রাজনীতি ও বুদ্ধিবৃত্তি।
৩. সভ্যতা ও অসভ্যতার পরিচয়
জঙ্গল যতই গভীর হয় ততই সেটি হিংস্র পশুদের আস্তানা হয়। তাই জঙ্গলের পরিচয় মেলে সেখানে হিংস্র জীবজন্তুর পদচারণা দেখে। তেমনি দেশ যতই অসভ্য হয়, ততই সে দেশ দুর্নীতিপরায়নদের আস্তানা হয়। তাই দেশ কতটা অসভ্য –সেটির পরিচয় মেলে গুম, খুন ও সন্ত্রাসের অসভ্য নায়কদের শাসন দেখে। তখন মিছিল করলে লাশ হতে হয়, সরকারকে নিন্দা করলে জেলে যেতে হয়, নারীরা ধর্ষিতা হয় এবং নির্বাচনে ভোট ডাকাতি হয়।
অসভ্য সমাজের ন্যায় সভ্য সমাজকেও খালি চোখে দেখা যায়। সভ্য জনপদে কখনো হিংস্র পশুদের বসবাস থাকে না। হিংস্র পশু ঢুকলে সেটিকে হত্যা করা হয়। সভ্য সমাজে থাকে না অসভ্য ও দুর্নীতিপরায়ন ব্যক্তির শাসন। হিংস্র পশুকে যেমন তাড়ানো হয়, তেমনি তাড়ানো দুর্বৃত্তদেরও। তাই সে সভ্য সমাজে কখনোই খুনি, ভোটচোর এবং স্বৈরাচারি দুর্বৃত্তকে দেশের বন্ধু, পিতা, নেতা ও প্রধানমন্ত্রী করার ন্যায় অসভ্য কর্ম কখনোই ঘটেনা। কিন্তু বাংলাদেশে হয়। বাংলাদেশ যে কতটা অসভ্য দেশে পরিণত হয়েছে -এ হলো তারই প্রমাণ।
৪. শিক্ষায় অনীহা
যারা বোধশূণ্য এবং সে সাথে ঈমানশূণ্য -তারা ভাবে তাদের দায়িত্ব শুধু পানাহারে বাঁচা। পশুও এর চেয়ে বেশী কিছু ভাবে না। বোধশূণ্যতার আরো পরিচয়: তারা ভাবে, জ্ঞান লাভ বা বই পড়ার দায় তাদের নাই। ফলে তারা বই কেনে না, এবং বই পড়েও না। তারা ভাবে তাদের কানে জ্ঞানের কথা পৌঁছে দেয়ার দায় অন্যদের। একটি দেশের জনগণ কতটা নীচে নামছে -সেটি বুঝার জন্য তাই কোন গবেষণার পড়ে না। সেটি বুঝা যায় বইয়ের দোকানগুলির দিকে তাকালে। কতগুলি বই এবং কীরূপ বই বিক্রয় হয় বা পড়া হয় -তা দেখেই সেটি সঠিক ভাবে বলা যায়।
দেহ বাঁচাতে যেমন খাদ্য চাই, তেমনি ঈমান বাঁচাতে চাই কুরআনী জ্ঞান। ইসলামে জ্ঞানার্জন তাই ফরজ। তাই একজন মুসলিম বেনামাযী থাকবে সেটি যেমন ভাবা যায়না, তেমনি ভাবা যায় না সে নিরক্ষর বা অজ্ঞ থাকবে। ব্যক্তির অজ্ঞতা্ই সঠিক পরিমাপ দেয় তার ঈমানহীনতার। একজন ব্যক্তি ঈমান নিয়ে কতটা বেড়ে উঠতে চায় -সেটি বুঝা যায় কুর’আনের জ্ঞানলাভে তার আগ্রহ দেখে। এজন্যই ঈমানদার ব্যক্তি শুধু চাল,ডাল, মাছ, মাংস কেনে না, বই কেনাও জরুরি মনে করে। নিজের খাবার যেমন নিজে খায়, তেমনি নিজের জ্ঞান লাভের কাজটিও নিজে করে।
৫. কী বলে ভোটচোর সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী?
সম্প্রতি বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথা: কেউ আইনের উর্দ্ধে নয়, সবার বিচার করা হবে। এটি কি বিচারের নামে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি হুমকির বাণী? তার কথায় সামান্যতম সত্যতা থাকলে ভোটচুরির অপরাধে হাসিনাকে কেন রিমান্ডে নেয়া হয়না? সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজের খুনী ভাইকে কেন জেলে থেকে মুক্তি দেয়া হয়? এরা কি আইনের উর্দ্ধে? এই কি বিচারের নমুনা?
বাংলাদেশের পুলিশ পরিণত হয়েছে সরকারী দলের গুন্ডা বাহিনীতে। তাদের কাজ হয়েছে সরকার বিরোধীদের গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা ও তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া। কখনো বা ক্রসফায়ারে দিয়ে হত্যা করা। জনগণের কাজ হয়েছে রাজস্ব দিয়ে এ সরকারী গুন্ডাদের প্রতিপালন করা।
৬. যে বিপদ অপরাধীদের শাসনে
স্রেফ ক্ষমতা লাভের জন্য যে ব্যক্তি ভোট চুরি করতে পারে, সে ব্যক্তি ঠান্ডা মাথায় মানুষও খুন করতে পারে। হাসিনার সে খুনি চরিত্রটি ২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্ত্বরের গণহত্যায় দেখা গেছে। এবং সে চরিত্রটিই ২৬ মার্চ দেখা গেল ২১ জনকে হত্যা করাতে। ক্ষমতালোভী অপরাধীর হাতে দেশ যখন অধিকৃত হয় তখন দেশ জুড়ে এরূপ অপরাধই ঘটতে থাকে।
বাংলাদেশে সবচেয়ে শক্তিশালী পদটি প্রধানমন্ত্রীর। যার শক্তি বেশী, তার দায়িত্বও সবচেয়ে বেশী। কিন্তু সে শক্তিশালী ব্যক্তিটি যদি চোর বা ডাকাত হয়, তখন সে শক্তির বিনিয়োগ হয় চুরি-ডাকাতিতে। এখানেই বাংলাদেশের জন্য মহাবিপদ। শেখ হাসিনা গৃহবধু বা অফিসের কর্মচারী হলে এতো বিপদ হতো না। বাংলাদেশে সবচেয়ে শক্তিধর ব্যক্তি যে একজন চোর -তা নিয়ে কি সন্দেহ আছে? ভোটচুরি করে নিজের চরিত্র হাসিনা দেখিয়ে দিয়েছে। ফলে সরকার প্রধান রূপে তার বিশাল সামর্থ্য ব্যয় হচ্ছে চুরি-ডাকাতি বাড়াতে। এতে হাজার হাজার কোটি টাকা প্রতি বছর চুরি হয়ে যাচ্ছে দেশের ভান্ডার থেকে।
৭. অসভ্য রীতি
প্রতিটি সভ্য দেশেই চোরকে চোর এবং ডাকাতকে ডাকাত বলা হয়। একই ভাবে স্বৈরাচারিকে স্বৈরাচারি বলা হয় এবং ক্ষমতা থেকে তাকে নামিয়ে দেয়া হয়। তাদেরকে ঘৃণা করাই সভ্য রীতি। এবং অসভ্যতা ধরা পড়ে এ দুর্বৃত্তদের সন্মান করার মধ্য দিয়ে। কিন্তু বাংলাদেশের সমস্যা হলো, এ দেশে দুর্বৃত্তদের ঘৃণা করার সভ্য রীতি চলে না। ফলে এদেশে হাসিনার ন্যায় জঘন্য ভোটচোরকে মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী বলা হয়। এবং গণতন্ত্র হত্যাকারী বাকশালী মুজিবকে বঙ্গবন্ধু ও জাতির পিতা বলা হয়। কথা হলো, যে দেশে এমন অসভ্য আচরণ হয় সে দেশকে কি সভ্য দেশ বলা যায়? ২৯/০৪/২০১৮
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- মুসলিম দেশগুলিতে সেক্যুলারিস্টদের দখলদারি ও নাশকতা
- আবারো ডাকাতি হয়ে যাবে জনগণের ভোট
- সেক্যুলারিস্টদের ধর্মনিরপেক্ষতার মুখোশ এবং যুদ্ধ ইসলামের বিরুদ্ধে
- বাংলাদেশে হিফাজতে ইসলাম ও ইসলামের হিফাজতে ভয়ানক ব্যর্থতা
- তাবলীগ জামায়াত কতটা দূরে সরেছে ইসলাম থেকে?
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
RECENT COMMENTS
- Mohammad Arifur Rahman on জিন্নাহ’র সাদকায়ে জারিয়া ও মুজিবের গুনাহে জারিয়া
- সিরাজুল ইসলাম on জিন্নাহ’র সাদকায়ে জারিয়া ও মুজিবের গুনাহে জারিয়া
- Abdul Aziz on বিবিধ ভাবনা ৮২
- Fazlul Aziz on বাঙালি ও অবাঙালি মুসলিমের বৈষম্য এবং ফ্যাসিবাদী মিথ্যচার
- Fazlul Aziz on বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের তান্ডব: মুক্তি কীরূপে?
ARCHIVES
- March 2023
- January 2023
- December 2022
- November 2022
- October 2022
- September 2022
- August 2022
- July 2022
- June 2022
- May 2022
- April 2022
- March 2022
- February 2022
- January 2022
- November 2021
- October 2021
- September 2021
- August 2021
- July 2021
- June 2021
- May 2021
- April 2021
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018