বিবিধ ভাবনা-২

ফিরোজ মাহবুব কামাল

১.

ঈমানদারের প্রতিটি যুদ্ধই জিহাদ। জিহাদ ভিন্ন অন্য কোন যুদ্ধে ঈমানদার তার জানমালের বিনিয়োগের কথা ভাবতেই পারে না। এ জন্য প্রতিটি ঈমানদারই হলো শতভাগ জিহাদী। অপর দিকে ধর্মহীন সেক্যুলারদের জীবনে জিহাদ বলে কিছু নাই; শাহাদত বলেও কিছু নাই। ইসলামী চেতনা নিয়ে বাঁচা বা মরাকে তারা সাম্প্রদায়িকতা মনে। ফলে কোন যুদ্ধে তারা মরলে নিশ্চিত জাহাননামে যায়।

গরু-ছাগলও মানব কল্যাণে নিজের প্রাণ বিলিয়ে দেয়। কিন্তু বেঈমানেরা তাদের জানমালের বিনয়োগ করে শয়তানের এজেন্ডা পূরণে তথা মানবের অকল্যাণে। বাংলাদেশের বুকে আজ যেরূপ চোর-ডাকাত, ভোটডাকাত এবং খুনি ধর্ষকদের শাসন প্রতিষ্ঠা পেয়েছে তা তো তাদের কারণেই। তাই র্পবিত্র কোরআনে মহাজ্ঞানী মহান আল্লাহতায়ালা বেঈমানদেরকে গবাদী পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট বলেছেন। মহান আল্লাহতায়ালার সে ঘোষণাটি যে কতটা সত্য তা বাংলাদেশের মানুষ আজ স্বচোখে দেখছে। গবাদী পশু কখনোই ধর্ষণ, গুম-খুন, চুরি-ডাকাতি ও গণহত্যয় নামে না, কিন্তু মানবরূপী এ বেঈমানেরা নামে। বাঘ-ভালুকের ন্যায় হিংস্র পশুদের গরু-ছাগলও চিনে, ফলে তাদের থেকে দূরে থাকে। কিন্তু মানবরূপী এ পশুদের সে সামর্থ্য নাই। বাংলাদেশে এরাই ভারতের ন্যায় মৃসলিম হত্যাকারি দেশকে  শুধু একাত্তরে নয়, আজও বন্ধু গণ্য করে। যে ভারত নিজ দেশে মুসলিমদের নিরাপত্তা দিতে পারে না তারা বাংলাদেশের মুসলিমদের কল্যান করবে সেটি একমাত্র বেওকুপেরা্ই ভাবতে পারে।

 

ব্যক্তির জান, মাল ও মেধা এসবই হলো মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে অর্পিত আমানত। সে আমানতের ব্যবহারে ব্যক্তি কখনোই সার্বভৌম বা স্বেচ্ছাচারি হতে পারে না। তাকে সে আমানতের প্রয়োগ করতে হয় খেলাফতের দায়িত্ব পালনে। সে কাজে তাকে মেনে চলতে হয় মহান আল্লাহর দেয়া নির্দেশাবলি। এ হলো ঈমানদার হওয়ার মৌলিক দায়বদ্ধতা। এখানে অবাধ্যতা বা খেয়ানত হলে সে ব্যক্তি কাফেরে পরিণত হয়।

২.

ঈমানদার হওয়ার অর্থই হলো প্রতি কাজে ও জীবনের প্রতি পদে মহান আল্লাহতায়ালার কাছে দায়বদ্ধ হওয়া। তাই কোন ঈমানদার ব্যক্তি আল্লাহর দ্বীনের বিজয় ও মুসলিম রাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা ছাড়া অন্য কোন এজেন্ডা পূরণে জান ও মালের বিনিয়োগ করবে বা প্রাণ দিবে -তা ভাবাই যায় না। একারণেই কোন ঈমানদার জাতীয়তাবাদী, বর্ণবাদী বা স্বৈরাচারি হতে পারে না। এজন্যই একাত্তরে কোন ঈমানদার ব্যক্তি ভারতীয় কাফেরদের কোলে আশ্রয় নেয়নি। এবং তাদের অর্থ ও অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধেও নামেনি। অথচ সে সময়ে পূর্ব পাকিস্তানে বহু ইসলামী দল ছিল, এবং তাদের লক্ষ লক্ষ কর্মী ও সমর্থকও ছিল। কিন্তু তাদের কেউ ভারতের কাফের অধ্যুষিত দেশে যায়নি। তাদের অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধও করেনি। এজন্যই মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় কোন আলেম নাই, কোন পীর-মাশায়েখ নাই,মাদ্রাসার কোন ছাত্র নাই, মসজিদের কোন ইমাম বা মোয়াজ্জিন নাই। একটি মুসলিম দেশ ভাঙ্গার এমন কাজকে তারা শতভাগ হারাম গণ্য করেছে। বাংলাদেশের  ইতিহাসে এটি এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

একট মুসলিম দেশ ভাঙ্গার এরূপ শতভাগ হারাম কাজে জান,মাল ও মেধার বিনিয়োগ করেছে আওয়ামী লীগ, চীনপন্থি ও রুশপন্থি ন্যাপ ও  কম্যুনিষ্ট পার্টির  নেতাকর্মীগণ। একাজ ছিল নিতান্তই ইসলামী চেতনাশূণ্য সেক্যুলারদের কাজ। বাংলার মাটিতে বেশ্যাবৃত্তি, সুদ-ঘুষ, গুম-খুনের রাজনীতিকে তারা যেমন জায়েজ করে নিয়েছে, তেমনি জায়েজ করে নিয়েছে ইসলামের বিজয়রোধ  ও ভারতীয় পদসেবার রাজনীতিকেও। এরূপ ইসলামী চেতনাশূণ্যতা ও ভারতের প্রতি দায়বদ্ধতাকে ইসলামের বিপক্ষীয় শক্তি একাত্তরের চেতনা বলে প্রতিষ্ঠ দিয়েছে। একাত্তরে এ চেতনার মূল লক্ষ্য ছিল, বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানকে  ভাঙ্গা এবং পাকিস্তানের সর্ববৃহৎ জনগোষ্ঠি রূপে বিশ্ব রাজনীতিতে বাঙালী মুসলিমদের ভূমিকাকে বিলুপ্ত করা। এবং একাত্তরে ভারতীয় বাহিনীর বিজয়ের পর লক্ষটি হলো, বাংলাদেশকে ভারতের গোলাম রাষ্ট্র রূপে প্রতিষ্ঠা দেয়া এবং বাংলার  মুসলিম ভূমিতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাকে প্রতিহত করা। শুধু ভারত নয়, এ বাঙালী সেক্যুলার দুর্বৃত্তদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে বিশ্বের তাবত কাফের শক্তি। তাই ভোট চুরি হলে বা ইসলামপন্থিদের হত্যাকরা হলে এ শত্রু শক্তি সেটিকে নিন্দা না করে বরং উল্লাস করে।

৩.

ঈমানের প্রকাশ ঘটে জিহাদের মধ্যে। নামায়-রোযা মুনাফিকেরও থাকতে পারে। জিহাদের ময়দানে তারা নাই। সুরা হুজরাতের ১৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহতায়ালা ঈমানদারেরর সংজ্ঞা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আয়াতটিতে শুধু আল্লাহতায়ালা ও তাঁর রাসূলের ঈমানকেই অপরিহার্য করেননি, অপরিহার্য করেছেন নিজের জান ও মাল দিয়ে আল্লাহতায়ালার পথে জিহাদ। জিহাদ যেমন অস্ত্র দ্বারা হয়, তেমনি হয় কথা ও লেখনির দ্বারা। বহু মানুষ শহীদ হয় সত্য কথা বলা বা লেখার কারণে। তাই ইসলামের শত্রু প্ক্ষের হাতে শহীদ হওযার জন্য বহু মোজাহিদকে রণাঙ্গনে যেতে হয়নি। যেমন মিশরের ইখওয়ান নেতা হাসানুল বান্না, কোর’আনের বিখ্যাত মোফাচ্ছের শহীদ কুতুব ও ইরানী বুদ্ধিজীবী আলী শরিয়তি শহীদ হয়েছেন স্রেফ সত্য কথা বলা ও লেখার জন্য।

৪.

যারা ইসলামের বিজয় চায় না, বিরোধী শরিয়ত প্রতিষ্ঠার এবং গোলামী করে ভারতের ন্যায় কাফের শক্তির -তারা প্রকৃত বেঈমান। তারাই ইসলামের শত্রু। বড়ই বিস্ময়ের বিষয় হলো, এ নিদারুন সত্য কথাটি বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা পায়নি। একটি দেশের জন্য গ্লানিকর বিষয়টি ঘুর্ণিঝড়, ভূমিকম্প বা মহামারিতে বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রাণ নাশ নয়, বরং কোন দুর্বৃত্ত বেঈমানকে শাসক রূপে মেনে নেয়া। কোন ঈমানদার ব্যক্তিই এমন দুর্বৃত্তদের জাতির নেতা,পিতা বা বন্ধু বলতে পারেনা। যারা মহান আল্লাহতায়ালা ও তাঁর দ্বীনের বন্ধু নয় তারা মুসলিমদের বন্ধু হয় কি করে? অথচ বাংলাদেশের ন্য়ায় একটি মুসলিম দেশে সেটিই হচ্ছে। বড়ই আফসোসের বিষয় হলো, এ নিয়ে এমনকি আলেমদের মাঝেও কোন ক্ষোভ নাই।

৫.

কাফের শত্রুকে বন্ধু রূপে গ্রহন করাটি কবিরা গুনাহ। বাঙালীগণ  ১৯৭১য়ে সে গুনাহ করেছে ভারতকে বন্ধু রূপে গ্রহন করে। এমন জঘন্য পাপ তো আযাব ডেকে আনে। বাংলাদেশীদের উপর সে আযাব হলো চোর-ডাকাত ও ধর্ষকদের শাসন।

৬.

সম্প্রতি ভারতের অতি পরিচিত এজেন্ট শাহরিয়ার কবির বলেছে, ভারতের ঋণ কোনদিন শোধ করা যাবে  না। অথচ প্রকৃত সত্য হলো ভূলবার নয় বাংলাদেশীদের  বিরুদ্ধে  ভারতের নৃশংস অপরাধগুলো। এবং এখনো লাগাতর চলছে সে অপরাধের ধারা। মনিব যদি নিজ ঘরে গুম, খুন, চুরি-ডাকাতি এবং ধর্ষণের রাজত্ব কায়েম করে, তার পোষা ভৃত্যটি তা স্বচোখে দেখেও নিন্দা করে না, বরং নিজের দাসত্ব বাঁচাতে মনিবের প্রশংসায় গদগদ হয়। তেমনি অবস্থা শাহরিয়ার কবিরের ন্যায় ভারতীয় দাসদের।

 

ভারতীয়দের  অপরাধের তালিকাটি বিশাল। ১৯৭১’য়ে ভারতের সেনাবাহিনীর হাতে অধিকৃত হওয়ার পর শুরু হয় নৃশংস লুটতরাজ। তখন সীমান্ত বিলুপ্ত করে দেয় বাংলাদেশের খাদ্য ভারতে নিতে। তাতে নেমে আসে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। মৃত্য হয় লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশী মানুষের। ভারত কেড়ে নিচ্ছে পদ্মা, তিস্তাসহ বহু  নদ-নদীর পানি। একাত্তরের যুদ্ধ শেষে ডাকাতি করে নিয়েছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর  হাজার হাজার টাকার অস্ত্র। শাহরিয়ার কবিরের ন্যায় দাসেরা তা নিয়ে তার মনিব দেশ ভারতকে  নিন্দা করতে রাজী নয়।  বরং বাংলাদেশীদের  নসিহত দেয় ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞ ও নতজানু হতে।

৭.

চুরি-ডাকাতি, গুম-খুন ও স্বৈরাচার অতি গুরুতর অপরাধ। তবে আরো গুরুতর অপরাধ হলো এসব দুর্বৃত্তদের শাস্তি না দিয়ে নেতা, দেশের শাসক বা জাতির পিতার আসনে বসানো। এ অসভ্য কাজ কোন সভ্য জনগণের হতে পারে না। এটি নিরেট বিবেকহীনতা। মানব অসভ্য হয় অর্থের অভাবে নয়, বরং এরূপ বিবেকহীনতার কারণে। অধিকাংশ মানুষ জাহান্নামের আগুণে নিক্ষিপ্ত হবে চুরি-ডাকাতি, মানুষ খুন বা ধর্ষণের কারণে নয়, বরং বিবেকহীন বিশ্বাস ও আচরনের কারণে। বিবেকহীনতার কারণেই মানুষ মুর্তি, শাপ-শকুন ও দেব-দেবীকে যেমন পুজা করে তেমনি দুর্বৃত্ত জালেমদের দলের নেতা,জাতির পিতা ও দেশের শাসকের আসনে বসায়।   এবং সে বিবেকহীনতাই বাংলাদেশীদের মাঝে বেশী বেশী হচ্ছে। ফলে দেশটি ইতিহাস গড়ছে গুম, হত্যা, ধর্ষণ ও স্বৈরাচারের ন্যায় নানা রূপ অপরাধে।

অথচ আল্লাহর খলিফা রূপে দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমদের উপর দায়িত্ব ছিল সকল প্রকার অন্যায়ের নির্মূল ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা। দেশবাসী যে এক্ষেত্রে কতটা ব্য়র্থ -তা কি প্রমাণের অপেক্ষা রাখে? এ বিশাল ব্যর্থতা নিয়ে পরকালে মহান আল্লাহতায়ালার কাছে কি কোন পুরস্কার মিলবে? দেশে কতগুলি প্রাসাদ, ব্রিজ বা রাস্তা নির্মিত হলো, মাথাপিছু আয় বা বিদেশে রফতানি কতটা বৃদ্ধি পেল -মহান আল্লাহতায়ালা সে হিসাব চাইবেন না। বরং হিসাব চাওয়া হবে, কত জন অসভ্য মানুষ সভ্য হলো, কত জন বেঈমান ঈমানদার হলো এবং দেশের আদালতে শরিয়ত কতটা প্রতিষ্ঠা পেল -সেগুলি। প্রশ্ন হলো, মহান আল্লাহতায়ালার কাছে হিসাব দেয়ার আগে বাংলাদেশের মানুষ কতটা নিচ্ছে সে ব্যর্থতার হিসাব? এ ব্যর্থতা যে তাদের জাহান্নামে নিবে -সে হুশই বা ক’জনের? ৮/১০/২০২০                                     

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *