বিবিধ ভাবনা (২২)
- Posted by ফিরোজ মাহবুব কামাল
- Posted on February 7, 2021
- Bangla Articles, সমাজ ও রাজনীতি
- No Comments.
ফিরোজ মাহবুব কামাল
১.
ভীরু কাপুরুষেরা মরার আগেই মরার মত বাঁচে। ইজ্জত ও স্বাধীনতা নিয়ে বাঁচাতে তাদের রুচি থাকে না। পরাধীনতাকেও তারা স্বাধীনতা বলে। ১৯৭১’য়ের ১৬ ডিসেম্বরে ভারতের যে সামরিক বিজয় হলো এবং তার ফলে যে দাসত্ব প্রতিষ্ঠা পেলে -এ বাঙালী কাপুরুষেরা তা নিয়েও উৎসব করে। কাপুরুষদের কাছে যা জরুরি -তা হলো পানাহার। কারণ, দেহ নিয়ে বাঁচার জন্য একমাত্র সেটিই অপরিহার্য। তাদের জীবনে যুদ্ধ থাকে না, থাকে আত্মসমর্পণ। এদের উপর শাসন করা এজন্যই জালেম শাসকদের জন্য সহজ হয়ে যায়। নিজেদের ভোটের উপর ডাকাতীও তাদের কাছে সহনীয় হয়ে যায়। সহনীয় হয়ে যায় গুম, খুম, ধর্ষণ ও সন্ত্রাসের রাজনীতি। বাংলাদেশে এমন ভীরু-কাপুরুষদের সংখ্যাটি বিশাল। এজন্য্ই শেখ হাসিনার ন্যায় ভোটডাকাত গত ১২ বছর যাবত বিনা যুদ্ধে শাসন করতে পারছে। কোন সভ্য দেশে এরূপ দুর্বৃত্তের শাসন কি একদিনের জন্যও সম্ভব হতো? প্রথম দিনেই তাকে আস্তাকুঁড়ে ফেলতো।
২.
দল যার যার। কিন্তু দেশ তো সবার। বাংলাদেশে আজ ডাকাত পড়েছে। ডাকাত পড়লে কি ঘরে ঘুমানো যায়? ডাকাত পড়লে তো সভ্য মানুষ হাতের কাছে যা পায় তা নিয়ে ডাকাত তাড়াতে নামে। এ মুহুর্তে দেশ বাঁচানোর দায়ভারটি প্রতিটি দেশপ্রেমিক নাগরিকের। কে দেশপ্রেমিক আর কে গাদ্দার –সেটির প্রমাণ মেলে তো দেশ বাঁচানোর লড়াইয়ে।
দেশে চলছে দুর্বৃত্ত স্বৈরশাসন। অথচ বিরোধী দল এখনো ঘুমায়। তারা লড়াইয়ে নাই। এমন বিরোধী দলে কি দেশবাসীর কোন কল্যাণ আছে? এরা রাজনীতি করে ক্ষমতা দখল নিয়ে, দেশ বাঁচাতে নয়্। তবে দেশ তো জনগণের, কোন বিরোধী দলের নয়। দেশকে বাঁচাতে হলে তাই খোদ জনগণকে ময়দানে নামতে হবে। কোন দল বা নেতা তাদের সাহায্য করবে না। এবং এ আন্দলোনের নেতা বানাতে হবে কোন পার্টি অফিস বা ঘর থেকে নয়, বরং লড়াইয়ে ময়দানে যারা সামনের কাতারে তাদের মধ্য থেকে।
৩.
দুর্বৃত্তদের সন্মান করলে দেশে দুর্বৃত্ত জন্মায়। তখন দুর্বৃত্তিতে জোয়ার আসে; এবং শয়তানের এজেন্ডা বিজয়ী হয়। তাই ইসলামে দুর্বৃত্তদের পক্ষ নেয়া হারাম। মহান আল্লাহতায়ালা এমন হারাম কাজের শাস্তি দেন, দেশবাসীর উপর দুর্বৃত্ত শাসন চাপিয়ে। অথচ বাংলাদেশে দুর্বৃত্তদের পক্ষ নেয়ার ন্যায় হারাম কাজটি বেশী বেশী হয়েছে। দেশটিতে দুর্বৃত্তদের প্রতি সন্মান দেখানো হয়েছে মুজিবের ন্যায় মানবহত্যাকারী ও গণতন্ত্র হত্যাকারী এক বাকশালী ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচারিকে জাতি্র বন্ধু ও জাতির পিতা বানিয়ে। দুনিয়ার কোন দেশে কি কোন এরূপ দুর্বৃত্তকে কখনো সন্মানিত করা হয়েছে? ইসলামে ফরজ হলো দুর্বৃত্তদের নির্মূল। এটিই তো মুসলিম জীবনের মিশন। তাই মুসলিমকে শুধু মুর্তিপূজা ছাড়লে চলে না। দুর্বৃত্তি ও দুর্বৃত্তদেরও ছাড়তে হয়।
৪.
সেনাবাহিনীর কাজ হলো দেশকে প্রতিরক্ষা দেয়া। দেশ শাসন করা, দেশবাসীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা ও ভোটডাকাতি করে কোন দুর্বৃত্ত ভোটডাকাতকে ক্ষমতায় বসানো নয়। অথচ এসব অপরাধ করেছে জেনারেল আজিজের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী। আল-জাজিরা সে অপরাধের প্রমাণ পেশ করেছে। বাংলাদেশের আইনেও এটি গুরুতর অপরাধ। যে কোন সভ্য দেশেই এরূপ অপরাধের বিচার হয়। প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশে কি এরূপ অপরাধের বিচার হবে না? না হলে, বাংলাদেশে আদালত রাখা ও বিচারক প্রতিপালনের প্রয়োজনটি কী? এবং এ অপরাধী সেনাবাহিনী রেখেই বা লাভ কী? শুধু কি বার বার ডাকাতী হয়ে যাওয়া ও তাদের দ্বারা শাসিত হওয়ার জন্য?
৫.
বীরদের সন্মান করা এবং অপরাধীদের ঘৃণা করা -যে কোন সভ্য জাতির সংস্কৃতি ও রীতি। একমাত্র তখনই দুর্বৃত্ত শাসকের বিরুদ্ধে জনগণের মনে তীব্র ঘৃণা সৃষ্টি হয়। এবং আগ্রহ বাড়ে সভ্য ভাবে বাঁচায়। অথচ ডাকাত পাড়ার সংস্কৃতিটি ভিন্ন। সেখানে সবচেয়ে বড় ডাকাতকে নেতা করা ও সন্মান করা।
বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে ডাকাত পাড়ার সংস্কৃতি। ফলে হাসিনার মত সবচেয়ে বড় ভোটডাকাতও দেশের প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসে। এবং মাননীয় বলেও ভূষিত হয়্। একই ভাবে গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় শত্রু বাকশালী মুজিবও জাতির পিতা ও বঙ্গবন্ধুর খেতাব পায়! বাংলাদেশীদের মূল রোগটি কোথায় -সেটি বুঝতে কি এরপরও কিছু বাঁকি থাকে? তাই শুধু নেতা বা শাসক পাল্টালে চলবে না, চেতনার ভূমিও পাল্টাতে হবে।
৬.
সমাজে সভ্য রূপে বেড়ে উঠার সংস্কৃতিকে প্রতিষ্ঠা দেয়ার স্বার্থে যা জরুরি তা হলো, বন্ধ করতে হয় অপরাধীদের সন্মান দেখার নীতি। কারণ, অপরাধীদের সন্মান করলে সন্মান করা হয় তাদের অপরাধকে। তখন উৎসাহ পায় অপরাধীরা। তাই যা বন্ধ করা জরুরি তা হলো, মুজিবের ন্যায় গণতন্ত্র হত্যাকারী বাকশালী ফ্যাসিস্ট, ভারতের দালাল ও বহু হাজার মানুষের খুনিকে জাতির পিতা ও বঙ্গবন্ধু বলার রীতি। কারণ, মুজিবকে সন্মান করলে সমর্থন করা হয় তার বাকশালী স্বৈরাচার, মানব হত্যার রাজনীতি ও ভারতসেবী গোলামীকে। সে অপরাধ-মূলক লিগ্যাসীকে কবর দেয়ার প্রয়োজনে জরুরি হলো মুজিবের নামে গড়া বিভিন্ন রাস্তা, ব্রিজ ও প্রতিষ্ঠানের নামের ফলকগুলোকে খুলে ফেলা। কারণ, মুজিবের ন্যায় স্বৈরাচারীর নামে প্রতিষ্ঠান গড়ে সভ্য মানুষ গড়া যায় না; বরং তাতে উৎপাদন বাড়ে হাসিনার ন্যায় ভোটডাকাতদের।
অপর দিকে সন্মান জানানোর রীতি গড়তে হবে সে সব দেশপ্রেমিকদের প্রতি যারা জীবন দিয়েছে সত্য কথা বলতে গিয়ে। তাই পদ্মা ব্রিজের নাম হোক শহীদ আবরার ফাহাদ ব্রিজ। দেশ প্রেমের জন্য এতো নিষ্ঠুর ভাবে আর কাউকে হত্যা করা হয়নি। তাকে সন্মানিত করলে দেশে আরো আবরার ফাহাদ জন্ম নিবে। সে সাথে সন্মানিত করা হোক নূর হোসেন ও ডা. মানিকের মত ব্যক্তিদেরও যারা মানুষের অধিকার আদায়ে প্রাণ দিয়েছে।
৭.
মিথ্যার পাহাড় ধ্বংসে সত্যের সামর্থ্যটি বিশাল। বাংলাদেশের চাটুকর পত্র-পত্রিকা ও টিভি দুর্বৃত্ত হাসিনার পক্ষে মিথ্যার যে পাহাড় গড়েছিল -তা আল-জাজিরার একটি মাত্র ডক্যুমেনটারী উড়িয়ে দিয়েছে। দুর্বৃত্তগণ মিথ্যার জোয়ার গড়ছে বাংলাদেশের সমগ্র ইতিহাস জুড়ে। তারা মুজিবের ন্যায় এক নৃশংস ফ্যাসিস্টকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী -এ মিথ্যা লেবেল লাগিয়ে। নিজেদের প্রচার বাড়াতে তারা গোপন করেছে বখতিয়ার খিলজি, শাহ জালাল, শায়েস্তা খান, মজনু শাহ, তিতুমীর, হাজি শরিয়াতুল্লাহ, মহসিন উদ্দীন দুদু মিয়া, নবাব সলিমুল্লাহর ন্যায় বাংলার প্রকৃত মহান ব্যক্তিদের ইতিহাসকে। তাই মিথ্যার আবর্জনা সরাতে হবে ইতিহাসের পাতা থেকে। এজন্য বলিষ্ঠ ভাবে এবং ব্যাপক ভাবে তুলতে হবে সত্য কথাগুলো। তাই শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই হতে হবে বুদ্ধিবৃত্তিক অঙ্গণেও।
৮.
ব্যক্তির মনুষত্ব্য ও সভ্য রুচিটি দেখা যায়। হাসিনার চুরিডাকাতি, ভোটডাকাতি, গুম, খুন ও সন্ত্রাসের রাজনীতির দুর্বৃত্তি দেখেও যদি কারো মনে ঘৃণা না জাগে এবং তাকে যদি মাননীয় বলে -তবে বুঝতে তার মধ্যে মনুষত্ব্য বলে কিছু বেঁচে নাই। এক ডাকাত যেমন আরেক ডাকাতকে সন্মান করে, সে দুর্বৃত্ত ব্যক্তিও তেমনি আরেক দুর্বৃত্তকে সন্মান করে।
বাড়ীতে ডাকাত পড়লো আর সে বাড়ীর লোক ঘুমালো – সে বাড়ীর লোকদের কি সভ্য মানুষ বলা যায়? তেমনি দেশ ভোটডাকাতের দখলে গেল অথচ দেশবাসী লড়াইয়ে নামলো না -তাদেরকে কি সভ্য বলা যায়? ঘরকে যে ভালবাসে সে ঘরের পাহারা দেয়। তেমনি দেশকে যে ভালবাসে সে দেশকেও পাহারা দেয়। দেশের জন্য সেরূপ পাহারাদার না থাকলে সে দেশ হাসিনার ন্যায় ভোটডাকাতদের দখলে যায়। প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের ক’জন নাগরিক পাহারাদারীর সে কাজটি যথার্থ ভাবে করছে? সে কাজটি যে হয়নি, হাসিনার ন্যায় ভোটডাকাতের দখলদারী কি সেটিই সুস্পষ্ট করে না?
৯.
কোনটি হিংস্র পশু -সেটি চেনার কাজটি মানব জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ পাঠ। তেমনি আরেক গুরুত্বপূর্ণ পাঠ হলো, কে দেশের শত্রু -সেটি সঠিক ভাবে জানা। এবং সেটি জানার পর অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো সে শত্রুর নির্মূলে যুদ্ধ করা। একটি জাতি কতটা সভ্য ভাবে বেড়ে উঠবে সেটি দেশের ক্ষেতখামার বা কল-কারখানায় হয় না। সেটি হয় দেশের শত্রুর নির্মূলের রাজনৈতিক যুদ্ধে। সেটি না হলে দেশ শত্রু শক্তির দখলে যায়। তখন ক্ষেতখামার ও কল-কারখানায় উৎপাদন বাড়িয়ে লাভ হয় না, তখন বাঁচতে হয় গোলামীর তগমা নিয়ে। বাংলার বুকে যখন ব্রিটিশের ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠা পায তখন বাংলার অর্থনীতি বিশ্বে প্রথম ছিল এবং দেশটিতে বিশ্বের সেরা বস্ত্র মসলিন নির্মিত হতো। কিন্তু সে সময় শত্রুর চেনার কাজটি যেমন হয়নি, তেমনি শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কাজটিও হয়নি। আজও একই ব্যর্থতা বাংলাদেশীদের।
১০.
শেখ হাসিনা ও তার দল আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় অবদানটি হলো, দেশটিকে তারা জঙ্গলে পরিণত করেছে। জঙ্গলে আদালত থাকে না, আইনও থাকে না। ফলে অপরাধ করার বিস্তর জায়গা থাকলেও বিচার চাওয়ার কোন জায়গা থাকে না। একই অবস্থা বাংলাদেশে। দেশটিতে খুনের দায়ে কাউকে সাজা দেয়া হলে রাজনৈতিক কারণে তাকে মুক্ত করে দেয়া হয়। ফলে আল-জাজিরা জেনারেল আজিজ, ভোটডাকাত হাসিনা ও রাষ্ট্রপ্রধান আব্দুল হামিদের বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধের যে প্রমাণ পেশ করেছে, সে অপরাধীদের বিরুদ্ধে বিচারের কোন পথ নাই। ফলে জঙ্গলে যা হয় বাংলাদেশে অবিকল তাই হচ্ছে। ০৭/০২/২০২১
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- বিবিধ ভাবনা (৩২)
- সোসাল ইঞ্জিনিয়ারিং ও সাংস্কৃতিক কনভার্শন
- বিবিধ ভাবনা (৩১)
- বাঙালী মুসলিমের বিরুদ্ধে ভারতের কেন এতো আক্রোশ এবং প্রতিরোধই বা কীরূপে?
- অপরাধীদের রাজনীতি এবং বাঙালী মুসলিমের বিপদ
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
MOST READ ARTICLES
- বিবিধ প্রসঙ্গ-৫
- My COVID Experience
- The Hindutva Fascists & the Road towards Disintegration of India
- একাত্তরের প্রসঙ্গ ও কিছু আলেমের কান্ড
- বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস ও ভোটডাকাতদের নাশকতা
RECENT COMMENTS
- compare mobile phone deals unlimited data on বাঙালী মুসলিমের বিরুদ্ধে ভারতের কেন এতো আক্রোশ এবং প্রতিরোধই বা কীরূপে?
- Dr. Md. Kamruzzaman on বিবিধ ভাবনা (২৯)
- Md. Anisul Kabir Jasir on আত্মঘাতের পথে বাংলাদেশ: অভাব যেখানে শিক্ষা ও দর্শনের
- রেজা on শেখ মুজিবের সাথে কিছুক্ষণের স্মৃতি
- Mohammec on শেখ মুজিবের সাথে কিছুক্ষণের স্মৃতি
ARCHIVES
- March 2021
- February 2021
- January 2021
- December 2020
- November 2020
- October 2020
- April 2020
- March 2020
- February 2020
- January 2020
- December 2019
- November 2019
- October 2019
- September 2019
- August 2019
- July 2019
- June 2019
- May 2019
- April 2019
- March 2019
- February 2019
- January 2019
- December 2018
- November 2018