বিবিধ ভাবনা (১৬)

ফিরোজ মাহবুব কামাল

১.

ফরজ কেন দুর্বৃত্ত নির্মূল?

হাসিনা সরকারের চুরি-ডাকাতির পূর্ণ অধিকার আছে। অধিকার আছে ভোট ডাকাতির। অধিকার আছে রাজনৈতিক বিরোধীদের গুম, খুন ও ফাঁসিতে ঝুলানোর। অথচ জনগণের অধিকার নাই হক কথা বলার। অধিকার নাই রাস্তায় নেমে প্রতিবাদের। একেই বলা হয় স্বৈরশাসন। এবং এটিই হলো নিরেট অসভ্য শাসনের আলামত॥ জঙ্গলে চিৎকার দিয়ে হক কথা বলা যায়, পশুকেও গালী দেয়া যায়। কিন্তু স্বৈরশাসনের অসভ্যতায় নৃশংস ভোটডাকাতকেও গালী দেয়া যায় না। গালী দিলে গুম বা খুন হতে হয়।

যে দেশে এরূপ অসভ্য শাসন প্রতিষ্ঠা পায়, সে দেশে অসম্ভব সভ্য জীবন-যাপন। হাজার হাজার মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ করে বা শত শত স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে সে অসভ্যতা থেকে মুক্তি মেলে না। বাংলাদেশে যত মসজিদ-মাদ্রাসা আছে -তা বিশ্বের আর কোন দেশে নাই। দেশটিতে যত স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় আছে -বহু দেশে তা নাই। অথচ এই বাংলাদেশেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছে নৃশংস ভোট-ডাকাতদের বর্বর শাসন। জোয়ার বইছে চুরিডাকাতি, গুম, খুন, ধর্ষণ ও সন্ত্রাসের। দেশটি ৫বার দূর্নীতিতে বিশ্বে প্রথম হয়েছে। মানব ইতিহাসের কোন কালেই কোন জঙ্গলবাসীও এরূপ রেকর্ড গড়েনি; এ কলংকজনক ইতিহাস একমাত্র বাংলাদেশবাসীদের।

এজন্যই ইসলামে ফরজ কাজটি মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণে চাঁদা দেয়া নয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমাজকর্মটি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় গড়াও নয়। নবীজী(সা:) ও তাঁর সাহাবাগণ একটি কলেজ বা বিশ্ববিদ্যলয়ও গড়েননি। বরং সবচেয় গুরুত্বপুর্ণ ফরজ কর্মটি হলো অসভ্য শাসনের নির্মূলে জিহাদে নামা। অসভ্যদের নির্মূল ও সভ্য সমাজ প্রতিষ্ঠার জিহাদই হলো পৃথিবী পৃষ্ঠের উপর সর্বশ্রেষ্ঠ কল্যাণকর কর্ম। পবিত্র কোর’আন হলো সে জিহাদে মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া প্রেসক্রিপশন। মুসলিম জীবনের প্রায়োরিটি হলো এ প্রেসক্রিপশন নিয়ে কাজ করা।

জঙ্গলে মসজিদ-মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে লাভ হয় না। হিংস্র পশুগণ সে গুলোকে অকার্যকর করে দেয়। তেমনি দেশ দুর্বৃত্তদের হাতে অধিকৃত হলে, যত ভাল প্রতিষ্ঠানই গড়া হোক না কেন, দুর্বৃত্ত সরকার সেগুলোকে দুর্বৃত্ত উৎপাদনের কারখানায় পরিণত করে। বাংলাদেশ হলো তারই উদাহরণ। অথচ দেশ থেকে দুর্বৃত্তদের নির্মূল করা সম্ভব হলে পরিবার, মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রতি প্রতিষ্ঠান সৃষ্টিশীল উত্তম মানব উৎপাদনের ইন্ডাস্ট্রীতে পরিণত হয়। ইসলামের গৌরব যুগে তো তাই হয়েছিল। ফলে নির্মিত হয়েছিল সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সভ্যতা। এছাড়া আজও কি কোন বিকল্প পথ আছে? তাই মুসলিম জীবনে পবিত্রতম ঈমানী দায়ভারটি হলো, সে পরীক্ষিত মডেলটি নিয়ে কাজ করা।     

২.

ভারতের চাওয়া-পাওয়া
ভারত বাংলাদেশ থেকে কি চায় -সেটি কোন গোপন বিষয় নয়। ভারত চায়, বাংলাদেশ ভারতের গোলাম থাকুক; এবং দুর্বল হোক তার সেনাবাহিনী। চায়, বাংলাদেশের মানুষ ইসলাম থেকে দূরে সরুক এবং দূরে সরুক পাকিস্তানের মত মুসলিম দেশগুলো থেকে। ভারতের মুসলিমগণ খুন হোক, ধর্ষিতা হোক এবং মসজিদগুলো ধ্বংস হোক –কিন্তু বাংলাদশ যেন তার প্রতিবাদ না করে। ভারত চায়, বা্ংলাদেশের জনগণ ইসলামকে তথা শরিয়তী বিধানকে প্রতিষ্ঠার এজেন্ডা থেকে দূরে থাকুক। চায়, বাঙালী মুসলিমগণ বাঁচুক হিন্দু সংস্কৃতি নিয়ে এবং পথেঘাটে প্রতিষ্ঠা পাক মুর্তি।  চায়, নবীজী (সা:)’র ইসলাম –যাতে ছিল ইসলামী রাষ্ট্র, শরিয়তের প্রতিষ্ঠা, জিহাদ, মুসলিম ঐক্য -তা পুরাপুরি বিলুপ্ত হোক বাংলাদেশ থেকে। ভারত চায়, নিজেদের ইসলামী বিশ্বাস নিয়ে স্বাধীন ভাবে বাঁচার গণতান্ত্রিক অধিকার -জনগণের কেড়ে নেয়া হোক। কারণ, জনগণ সে অধিকার পেলে তারা ভারত-বিরোধী সরকার প্রতিষ্ঠা দিবে। লক্ষণীয় হলো, ভারত যা চায়, ভোটডাকাত হাসিনা সরকার অবিকল সেটিগুলোই প্রতিষ্ঠা দিচ্ছে।

৩.

সভ্য ভাবে বাঁচার খরচ
মানব জীবনে সবচেয়ে বড় খরচটি হয় সভ্য ভাবে বাঁচায়। খরচটি এখানে শুধু অর্থ, সময় ও মেধার নয়, বরং সেটি রক্তের। স্রেফ পানাহার নিয়ে বাঁচায় সে খরচ নাই। এমন কি পশুরাও সেটি পারে। ইসলামে সভ্য ভাবে বাঁচার লড়াইকে দেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ ইবাদতের তথা জিহাদের মর্যাদা। সভ্যতার সে মানদন্ডটি হলো সকল প্রকার অন্যায়ের নির্মূল এবং ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা। অন্য ধর্ম থেকে এখানেই ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য। অন্য ধর্মে এরূপ লড়াই বাধ্যতামূলক নয়।

হিংস্র পশু তাড়াতে অস্ত্র হাতে মাঠে নামতে হয়। তেমনি চোর-ডাকাত ধরতে ঘরের বাইরে নেমে লড়া্‌ইয়ে নামতে হয়। তেমনি শাসকের আসন থেকে দুর্বৃত্তদের নামাতে হয়। এভাবেই প্রতিটি সভ্য মানুষকে সভ্য ভাবে বাঁচার মূল্য দিতে হয়। নইলে নিরাপত্তা থাকে না। সমাজও সভ্যতর হয়না। অথচ সে সামর্থ্য ভীরু, কাপুরুষ ও বেঈমানদের থাকে না। ফলে তাদের বাঁচতে হয় অসভ্যতার জ্বালাতন সয়ে।

মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে মুসলিমদের জন্য নির্ধারিত মিশনটি হলো “আমিরু বিল মারুফ ওয়া নেহি আনিল মুনকার”। অর্থ: “ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অপরাধের নির্মূল।” এ মিশন নিয়ে বাঁচার কারণেই পবিত্র কোর’আনে মুসলিমদের শ্রেষ্ঠ জাতির মর্যাদা দেয়া। কিন্তু যারা ইসলাম থেকে দূরে সরে তাদের জীবনে সে মিশন থাকে না। তখন তারা বাঁচে অপরাধের প্রতিষ্ঠা নিয়ে। ফলে প্লাবন আসে চুরি-ডাকাতি, ভোট-ডাকাতি, গুম, খুন, সন্ত্রাস ও ধর্ষণের। তারই উদাহরণ হলো, আজকের বাংলাদেশ।

৪.

বাঙালী মুসলিমের গাদ্দারী ও আযাব
প্রতিটি ব্যক্তির জীবনেই যুদ্ধ থাকে। কারো জীবনে সে যুদ্ধটি স্রেফ নিজের প্রতিষ্ঠা দেয়া নিয়ে। কারো যুদ্ধ তার রাজা, নেতা বা দলকে বিজয়ী করা নিয়ে। কিন্তু জান্নাত একমাত্র তাঁরাই পাবে যারা যুদ্ধ করে মহান আল্লাহতায়ালার সৈনিক রূপে। ঈমানদারের সে যুদ্ধটি হয়, মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীন তথা শরিয়তকে বিজয়ী করতে।

বাংলাদেশীদের ব্যর্থতাটি এ ক্ষেত্রে বিশাল। তারা ভোট দেয়, সমর্থণ দেয় এবং রাজস্ব দেয় তাদের -যাদের এজেন্ডা ও যুদ্ধটি হলো মহান আল্লাহতায়ালার দ্বীন তথা শরিয়তকে পরাজিত রাখা। দেশে ভোটডাকাতদের শাসন প্রতিষ্ঠা পেয়েছে তো তাদের কারণেই। অধিকাংশ জনগণ দুর্বৃত্ত শাসনের আয়ু বাড়াচ্ছে সে শাসনের বিরুদ্ধে নীরব থকে। ইসলামের সাথে এর চেয়ে বড় গাদ্দারী্ আর কি হতে পারে? এ গাদ্দারী বিপর্যয় ও আযাব বাড়াবে শুধু দুনিয়ায় নয়, আখেরাতেও।

৫.

ঈমানী দায়ভার
প্রতিটি সমাজ ও রাষ্ট্রে মাত্র ২টি পক্ষ। এক). আল্লাহর পক্ষ: এরা চায় শরিয়তের আইন; চায় ইসলামী রাষ্ট্রের নির্মাণ। এবং চায়, দুর্বৃত্তদের শাসনের নির্মূল। দুই).শয়তানের পক্ষ: এরা চায়, শরিয়তের আইনের নির্মূল; চায় জনগণেরে চেতনা থেকে ইসলামী চেতনার বিলুপ্তি। বাংলাদেশে শয়তানের পক্ষটি হলো বিজয়ী পক্ষ। ঈমানদারের ঈমানী দায়ভারটি হলো, শয়তানী পক্ষের শাসনের বিদ্রোহ। এ দুর্বৃত্ত শাসন মেনে নেয়া হারাম। এবং আত্মসমর্পণে গাদ্দারী হয় মহান আল্লাহতায়ালার সাথে।

৬.
সামর্থ্যের খেয়ানত

মহান আল্লাহতায়ালা মানুষকে নানারূপ সামর্থ্য দিয়েছেন। সেটি যেমন দৈহিক সামর্থ্য, তেমনি অর্থ, মেধা ও বুদ্ধিবৃত্তিক সামর্থ্য। মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া সে সামর্থ্য দিয়ে কত বিস্ময়কর কর্মই না মানব করে। কিন্তু সে সামর্থ্যের কতটুকু আল্লাহর আইনকে বিজয়ী করার কাজে ব্যয় হলো -সে হিসাবের ভয় ক’জনের? সে ভয় না থাকাটি নিরেট বেঈমানী। মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া সামর্থ্যকে তাঁর দ্বীনের বিজয়ে ব্যয় না করাই তো বড় খেয়ানত। আর প্রতিটি খেয়ানতই তো আযাব ঢেকে আনে।

৭.

যুদ্ধ নেই ঈমানদারের
বেঈমানগণ শয়তানের এজেন্ডাকে বিজয়ী করায় আপোষহীন। বাংলাদেশে তারাই বিজয়ী পক্ষ। শয়তান যা চাই – সেগুলোকে্‌ই এরা প্রতিষ্ঠা দিয়েছে। তাদের রাজনীতিতে ইসলামপন্থিদের নির্মূলের যুদ্ধটি বিরামহীন। অথচ পরিতাপের বিষয় হলো, যারা নিজেদের মুসলিম রূপে পরিচয় দেয় তাদের জীবনে শয়তানকে পরাজিত করার লক্ষ্যে কোন যুদ্ধ নাই। বরং শয়তানী পক্ষের শাসনকে বাঁচাতে জনগণ স্বেচ্ছায় যেমন রাজস্ব দেয়, তেমনি সমর্থণও দেয়। শয়তানী শক্তির বিজয় বাড়লে তো পরাজয় বাড়ে ইসলামের। শয়তানী শক্তিকে এরূপ সাহায্য করা যে কবিরা গুনাহ -সে হুশ কি তাদের আছে?  

৮.

কলংক ডাকাতকে নেতা বানানোর
যে গ্রামের মানুষ ডাকাতকে নেতা বানায়, সভ্য মানুষেরা তাদেরকে মন থেকে ঘৃনা করে। সেটিই সভ্য মানুষের ফিতরাত। তেমনি যে দেশের মানুষ ভোটডাকাতকে প্রধান মন্ত্রী রূপে মেনে নেয় বিশ্ববাসীর কাছে সেদেশের মানুষের কোন ইজ্জত থাকে না। মানুষ তাদের ঘৃণার চোখে দেখে। ভোটডাকাত হাসিনা তাই কলংক বাড়িয়েছে বাংলাদেশীদের। বিদেশে পোষাক বা চিংড়ি বেঁচে বা মানব রপ্তানি করে কি সে ঘৃণা কমানো যায়? বাড়ে কি ইজ্জত?

৯.

শেখ হাসিনার অভিনয়

শেখ হাসিনা মাঝে মধ্যে দরদ দেখায় জনগণের প্রতি। প্রশ্ন হলো, জনগণের প্রতি সামান্য দরদ থাকলে সে কি জনগনের ভোটের উপর ডাকাতি করতে পারে? এ কাজ তো গণ-দুষমন ডাকাতদের। এরপরও হাসিনার দাবী, সে নাকি জনগণকে ভোটের অধিকার দিয়েছে! কত বড় নির্লজ্জতা! যার ঘরে ডাকাতি হলো তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে এ হলো ডাকাতের ভাল মানুষ সাজার অভিনয়।

 

১০.

অভাব ন্যূনতম সামর্থ্যের
কে ভাল মানুষ আর কে খারাপ -সেটি সূর্যের আলোর মত দেখা যায়। আগুণের উত্তাপ যেমন গোপন থাকে না, তেমনি গোপন থাকে না মানুষের চেতনা ও চরিত্র। ভাল মানুষের মহৎ গুণটি দেখা যায় দুর্বৃত্তকে ঘৃনা করার সামর্থ্যের মধ্যে। দুর্বৃত্তদের মাঝে সেটি থাকেনা। একমাত্র দুর্বৃত্তরাই দুর্বৃত্তদের ভাল বলে। তাই যারা ভোট ডাকাতকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলে তারা মন্ত্রী, এমপি, সচিব, লেখক, বুদ্ধিজীবী, প্রফেসর, ডাক্তার বা শিক্ষক হতে পারে, কিন্তু তারা কখনোই ভাল মানুষ হতে পারে না। ভাল মানুষ হওয়ার জন্য তো ভালকে ভালবাসা এবং দুর্বৃত্তকে ঘৃণা করার ন্যূনতম সামর্থ্যটুকু থাকতে হয়। ২৫/০১/২০২১।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *