বিচারের নামে পরিকল্পিত হত্যা এবং বিচারমুক্ত খুনি

আব্দুল কাদের মোল্লার সৌভাগ্য

অবশেষে স্বৈরাচারি শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীরা অতি পরিকল্পিত ভাবে আব্দুল কাদের মোল্লাকে হত্যা করলো। এ হত্যার জন্য হাসিনা সরকার যেমন বিচারের নামে বিবেকহীন ও ধর্মহীন বিচারকদের দিয়ে আদালত বসিয়েছে, তেমনি সে আদালেতে মিথ্যা সাক্ষিরও ব্যবস্থা করেছে। ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করার লক্ষ্যে ইচ্ছামত আইনও পাল্টিয়েছে। ফাঁসী ছাড়া অন্য কোন রায় মানা হবে না -আদালতকে সে হুশিয়ারিটি শোনাতে কোটি কোটি টাকা ব্যায়ে শাহবাগ চত্বরে দলীয় ক্যাডারদের দিয়ে সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। রাজপথে আওয়ামী-বাকশালীগণ ফাঁসীর যে দাবী তুলেছিল অবশেষে অবিকল সে দাবীই বিচারকগণ তাদের রায়ে লিখলেন। একটি দাঁড়ি-কমাও তারা বাদ দেয়নি।ফাঁসীতে ঝুলানোর জন্য যখন যা কিছু করার প্রয়োজন ছিল, হাসিনা সরকার তার সব কিছু্ই করেছে। তবে জনাব আব্দুল কাদের মোল্লার পরম সৌভাগ্য, মহল্লা খুনী বা সন্ত্রাসীর হাতে তাঁকে খুন হতে হয়নি। রোগজীবাণূর হাতেও তাঁর প্রাণ যায়নি। তাকে খুন হতে হয়েছে ইসলামের এমন এক চিহ্নিত শয়তানি জল্লাদদের হাতে -যাদের রাজনীতির মূল এজেন্ডাই হলো আল্লাহর শরিয়তি বিধানের প্রতিষ্ঠাকে প্রতিহত করা। তাদের কাছে পরম আনন্দের বিষয় হলো, রাষ্ট্রীয় জীবনে কোরআনের আইনকে পরাজিত অবস্থায় দেখা। আল্লাহর এরূপ প্রচন্ড বিপক্ষ শক্তির মোকাবেলায় সরাসরি তাদের সামনে দাঁড়িয়ে তাদেরই হাতে প্রাণ দেয়ার চেয়ে মুসলমানের জীবনে গৌরবজনক আর কি থাকতে পারে? যারা এভাবে প্রাণ দেয়, তারা মৃত্যুহীন প্রাণ পায়। সাহাবাগণ তো মহান আল্লাহর কাছে সবেচেয়ে প্রিয় ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষের সম্মান পেয়েছেন ইসলামের শত্রুদে হাতে এরূপ প্রাণদানের মধ্য দিয়ে। বাকশালী কীটগুলো কি কখনো শহীদের সে আনন্দের কথা অনুধাবন করতে পারে?

ইসলামের দুষমনদের কাছে শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদন্ডের শাস্তিও পছন্দ হয়নি। ফাঁসির দাবী নিয়ে তারা ঝাঁপিয়ে পড়েছে তাই রাজপথে। বাংলাদেশে যারা ভারতীয় কাফের শক্তির মূল এজেন্ট,তিনি ছিলেন তাদের পরম শত্রু।চরমচক্ষুশূল ছিলেন নাস্তিক ব্লগারদেরও।আল্লাহ ও রাসূলের বিরুদ্ধবাদী এসব বিদ্রোহীরা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় তাঁর মৃত্যুর দাবি নিয়ে শাহাবাগের মোড়ে দিনের পর দিন মিটিং করেছে। মূল দ্বন্দটি এখানে ইসলামের শত্রুপক্ষের সাথে শরিয়তের প্রতিষ্ঠাকামীদের। সে লড়াইয়ে জনাব আব্দুল কাদের মোল্লা ছিলেন ইসলামের পক্ষের শক্তির বিশিষ্ঠ নেতা। এমন এক লড়াই প্রান দেয়ার অর্থ,নিঃসন্দেহে শহীদ হওয়া। জনাব আব্দুল কাদের মোল্লা তাই শহীদ। তাকে মৃত বলাই হারাম। কারণ এমন শহীদদের মৃত বলতে নিষেধ করেছেন খোদ মহান আল্লাহতায়ালা। ফলে তাঁর জন্য এটি এক বিরাট পাওয়া।তার জীবনে সবচেয়ে বড় গৌরবটি হলো,নির্ঘাত মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়েও কোন মানুষের কাছে তিনি জীবন ভিক্ষা করেননি, কোন সাহায্যও চাননি। আল্লাহর পথে নির্ভয়ে জীবন দিয়ে তিনি গেয়ে গেলেন মহান আল্লাহতায়ালারই জয়গান। এ এক পরম সৌভাগ্য।

 

পরিকল্পিত খুন যেখানে রাষ্ট্রীয় শিল্প

কোন দেশ স্বৈরাচারি দুর্বৃত্তদের দ্বারা অধিকৃত হলে সে দেশে সবচেয়ে অসম্ভব হয়ে পড়ে ন্যায়বিচার। পরিকল্পিত খূন তখন রাষ্ট্রীয় শিল্পে পরিণত হয়। সে খূনের শিল্পে কারখানায় পরিণত হয় দেশের আদালত। ফিরাউন-নমরুদ, হালাকু-চেঙ্গিস, হিটলারের আমলে তাই ন্যায়বিচার মেলেনি। স্বৈরাচারি ফিরাউনের কাছে আল্লাহর রাসূল হযরত মুসা (আঃ)ও হত্যাযোগ্য গণ্য হয়েছে। হত্যাযোগ্য গণ্য হয়েছে বনি ইসরাইলের নিরপরাধ শিশুরাও। এরূপ স্বৈরাচারি শাসকই হযরত ঈসা (আঃ)কে শূলে চড়িয়ে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিল। ন্যায়বিচার অসম্ভব হয়েছিল বাকশালী মুজিবের আমলেও। মুজিবের আমলে ৩০ থেকে ৪০ হাজার মানুষকে বিনা বিচারে হত্যা করা হয়েছে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে। কিন্তু সে ভয়ানক অপরাধের অভিযোগে কাউকে কি আদালতে তোলা হয়েছে? বরং এসব খুনিদের আদালত সফল প্রটেকশ দিয়েছে। বরং স্বৈরাচারি খুনিদের প্রটেকশন দেয়াটিই দেশের আইনে পরিণত হয়েছে। সেরূপ আইনী প্রটেকশন নিয়েই সিরাজ সিকদারের খুনের পর শেখ মুজিব “কোথায় আজ সিরাজ সিকদার?” বলে সংসদে দাঁড়িয়ে আত্মপ্রসাদ জাহির করেছেন। এমন আচরণ কি কোন সুস্থ্ মানুষ করতে পারে? এটি তো মানসিক অসুস্থদের কাজ। নিষ্ঠুর মানবহত্যাও যে এসব অসুস্থ্য ব্যক্তিদের কতটা আনন্দ দেয় এ হলো তার নমুনা। আব্দুল কাদের মোল্লার খুন নিয়ে শেখ হাসিনা ও তার রাজনেতিক দোসরদের প্রচন্ড উৎসবের কারণ তো এরূপ মানসিক অসুস্থতা। সে অসুস্থ্যতা নিয়ে তারা রাজপথে উৎসবেও নেমে এসেছে। এরূপ অসুস্থ্ মানুষেরা ক্ষমতায় গেলে বা রাজনীতিতে স্বীকৃতি ও বৈধতা পেলে দেশে গুম,খুন, নির্যাতন ও নানারূপ অপরাধ বাড়ে। স্বৈরাচারি শাসনের এ হলো বড় আযাব। অথচ দেশে শরিয়ত প্রতিষ্ঠা পেলে শাসককেও তখন কাজীর সামনে খাড়া হতে হয়। খলিফা উমর (রাঃ)র ন্যায় ব্যক্তির ক্ষেত্রেও তাই ব্যতিক্রম ঘটেনি।

স্বৈরাচারি শাসকেরা পেশাদার খুনিদের দিয়ে শুধু যে পেটুয়া পুলিশ বাহিনী ও সেনাবাহিনী গড়ে তোলে তা নয়, তাঁবেদার আদালতও গড়ে। তখন দলীয় ক্যাডার বাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর পাশাপাশি এসব আদালতের বিচারকদেররও প্রধান কাজটি হয় সরকারের রাজনৈতিক শত্রুদের হত্যা করা। সে হত্যাকান্ডগুলোকে তখন ন্যায় বিচারের পোষাক পড়ানো হয়। এসব বিচারকদের লক্ষ্য ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা নয়। প্রকৃত অপরাধিদের শাস্তি দেয়াও নয়। বাংলাদেশে প্রতিদিন বহু মানুষ খুন হচ্ছে। বহু মানুষ গুম হচ্ছে। বহনারী ধর্ষিতাও হচ্ছে। কিন্তু সেসব খুন, গুম ও ধর্ষণের কি বিচার হচ্ছে? শাপলা চত্বরে বহু মানুষ নিহত হলো, বহুশত মানুষ আহতও হলো। রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ হলো,বহুহাজার কোটি টাকা লুট হলো শেয়ার বাজার থেকে। মন্ত্রীদের দূর্নীতির দায়ে বিশ্বব্যাংকের বরাদ্দকৃত পদ্মাব্রিজের বিশাল অংকের ঋণ বাতিল হয়ে গেল। এগুলির সবই শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কিন্তু এসব অপরাধ নিয়ে কি অপরাধীদের বিরুদ্ধে আদালতে কোন মামলা হয়েছে? সে মামলায় কি কারো শাস্তি হযেছে? বিচারকদের কি তা নিয়ে কোন মাথাব্যাথা আছে? এসব খুনি ও অপরাধিদের বিচার নিয়ে সরকারের মাথা ব্যাথা না থাকার কারণটি বোধগম্য।কারণ স্বৈরাচারি সরকারের তারা রাজনৈতিক শত্রু নয়। বরং তারা সরকারের নিজস্ব লোক। ফলে তাদের বিচার নিয়ে সরকারের যেমন মাথা নেই, তেমনি মাথাব্যাথা নাই বিচারকদেরও। একই কারণে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ১৯৫ জন অভিযুক্ত সদস্যদের বিচারেও শেখ হাসিনার আগ্রহ নেই। আদালতের ব্যস্ততা বরং হাসিনা সরকারের রাজনৈতিক শত্রুদের ফাঁসি দেয়া নিয়ে ব্যস্ত। আব্দুল কাদের মোল্লার হত্যাটি তাই হাসিনা সরকারের পক্ষ থেকে যেমন প্রথম হত্যা নয়, তেমনি শেষ হত্যাও নয়। হাসিনা সরকার টিকে থাকলে এ হত্যাকান্ড যে আরো তীব্রতর হবে সে আলামতটি সুস্পষ্ট।

 

খুনের লক্ষ্যে সাঁজানো হলো আদালত

ডাকাত দলের সর্দার সবচেয়ে নিষ্ঠুর খুনিদের দিয়ে তার ডাকাত দলকে সাঁজায়। তেমনি দুর্বৃত্ত স্বৈরাচারি শাসকও সরকারের প্রতিটি বিভাগকে সবচেয়ে পরিপক্ক দুর্বৃত্তদের হাতে তুলে দেয়। কারণ ভাল মানুষদের দিয়ে যেমন ডাকাত দলা গড়া যায় না, তেমনি তাদের দিয়ে স্বৈর-শাসনও চলে না। স্বৈর-শাসনের দুর্বৃত্তায়ান প্রকল্পটি তাই শুধু দেশের পুলিশ, প্রশাসন বা দলীয় কর্মীবাহিনীর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। বরং সে নীতির প্রকাপ পড়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালতেও। বিচারকের আসনগুলি তখন খুনিদের দখলে চলে যায়। অস্ত্রের সাথে বিচারকের কলমও তখন হত্যাকর্মে লিপ্ত হয়। ফলে স্বৈরাচারি শাসনামলে রাজপথে মিটিং-মিছিল করা বা পত্র-পত্রিকায় স্বাধীন মতামত প্রকাশ করাই শুধু কঠিন নয়, অসম্ভব হয়ে পড়ে ন্যায়বিচার পাওয়াও। তখন নিরপরাধ মানুষদের ফাঁসীতে ঝুলানো ব্যবস্থা করা হয়। মিসরে স্বৈরাচারি জামাল আব্দুন নাসেরে আমলে তাই সৈয়দ কুতুবের ন্যয় বিখ্যাত মোফস্সেরে কোরআনকে ফাঁসীতে ঝোলানো হয়েছে। আর আজ কাঠগড়ায় তুলেছে সে দেশের ইতিহাসে সর্বপ্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ড. মুরসীকে। অনুরূপ ঘটনা ঘটেছে তুরস্কেও। সেদেশের স্বৈরাচারি সামরিক জান্তারা নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রি আদনান মেন্দারাসকে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছিল। ইসলামি চেতনার অভিযোগে জেলে তুলেছে প্রধানমন্ত্রী নাযিমুদ্দীন আরবাকেনকে। আর আজ বাংলাদেশে ফাঁসিতে ঝুলানোর হলো আব্দুল কাদের মোল্লাকে। ফাঁসিতে ঝুলানোর ষড়যন্ত্র হচ্ছে আরো বহু ইসলামি ব্যক্তিকেই। হিংস্র নেকড়েগণ সমাজে বেঁচে থাকলে শিকার ধরবেই। সেটিই স্বাভাবিক। তাই সভ্য মানুষদের দায়িত্ব হলো নেকড়ে নির্মূল। এছাড়া সমাজে শান্তি আসে না। এ নির্মূল কাজে জিহাদ হলো ইসলামের হাতিয়ার। নামায রোযার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত বলা হয়েছে জিহাদকে।জীবনে প্রতি মাস ও প্রতিটি দিন রোযা রেখে বা প্রতিটি রাত ইবাদতে কাটিয়েও কেউ কি মৃত্যুর পর অমরত্ব পায়? সমাজে ও আল্লাহর কাছে সে মৃত রূপেই গণ্য হয়। কিন্তু জিহাদে মৃত্যু ঘটলে সে শহীদ ব্যক্তিকে মৃত বলাটি গুরুতর গুনাহ। কারণ, পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতায়ালা তাঁকে মৃত বলতে নিষেধ করেছেন, হুকুম দিয়েছেন জীবিত বলতে। তাই কোন শহীদকে মৃত বললে সে হুকুমের অবাধ্যতা হয়।পবিত্র কোরআনের সে হুকুমটি হলোঃ “এবং আল্লাহর রাস্তায় থাকার কারণে যাদেরকে কতল করা হয়েছে তোমরা তাদেরকে মৃত বলো না। বরং তারা তো জীবিত,যদিও তোমরা সেটি অনুধাবন করতে পারো না।” –সুরা বাকারা।

কে কতটা মানুষ না অমানুষ, সভ্য বা অসভ্য -সেটি পোষাক-পরিচ্ছদ বা চেহরা-সুরতে ধরা পড়ে না। ধরা পড়ে ন্যায়-অন্যায়ের বিচারবোধ থেকে। সে বিচার বোধ চোর-ডাকাত ও খুনিদের থাকে না। সে বিচারবোধটি না থাকার কারণেই ভয়ানক অপরাধও তাদের কাছে অপরাধ গণ্য হয় না। এটি হলো তাদের মনের অসুস্থ্যতা, সে সাথে অসভ্যতাও। সভ্য সমাজে এজন্যই এসব অসুস্থ্য ও অসভ্যরা চোর-ডাকাত-খুনি রূপে চিহ্নিত হয়। তেমনি একটি দেশ কতটা অপরাধীদের দ্বারা অধিকৃত সেটিও ধরা পড়ে সে দেশের আদালতের বিচার-আচারের মান থেকে। সভ্যদেশে তাই অতি ন্যয়নিষ্ঠ ও বিচারবোধ-সম্পন্ন ব্যক্তিদেরকে আদালতের বিচারক বানানো হয়। কিন্তু বাংলাদেশে সেটি ঘটেনি। কীরূপ অপরাধিদের দিয়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতকে সাঁজিয়েছে তার কিছু একটি বিবরণ দেয়া যাক। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের এক বিচারক হলেন সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। জামায়াত নেতা জনাব আব্দুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসীতে ঝোলানোর জন্য যে পাঁচজন বিচারককে নিয়ে এই মামলার বেঞ্চ গঠন করা হয়েছে, তাদের একজন হলেন এই সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। জামায়াত নেতাদের হত্যায় এই সুরেন্দ্র বাবুর আগ্রহ এতটাই তীব্র যে Skype scandal-এ জড়িত ট্রাইবুনালের অপর বিচারপতি নাজমুলকে তিনি বলেছেন, “তিনটা ফাঁসির রায় দাও তাহলে তোমাকে আমরা সুপ্রীম কোর্টে নিয়ে আসতেছি”। একথা বিচারপতি নাজমুল তার ব্রাসেলস্থ বন্ধুকে স্কাইপী যোগে বলেছেন। পত্রিকায় সে সংলাপটি হুবহু প্রকাশও পেয়েছে। সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তাই বিচার চান না, চান ফাঁসির রায়। এ কথা বলার অপরাধে যে কোন সভ্য দেশের আদালতে তার ন্যায় বিচারকের লেবাসধারি অপরাধীর কঠোর শাস্তি হতো। এবং অসম্ভব করা হতো বিচারকের আসনে বসা। কিন্তু বাংলাদেশে সেটি হয়নি। বরং তার এ খুনি মানসিকতার কারণেই হাসিনার কাছে তার কদর বেড়েছে। আব্দুল কাদের মোল্লার ন্যায় নিরাপরাধ মানুষকে ফাঁসিতে ঝোলানাো জন্য তো বিচারকের আসনে এমন নীতিহীন ও বিবেকহীন তাঁবেদার বিচারকই চাই। এজন্যই তার স্থান মিলেছে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতে। তেমনি আরেক বিচারক হলেন শামসুদ্দিন মানিক। অশালীন আচরণে ও বিতর্কিত বিচারকার্যে তিনি রেকর্ড গড়েছেন। তার বিরুদ্ধে বহু সিনিয়র আইনজীবী যেমন অভিযোগ তুলেছে তেমনি বহুশত পৃষ্ঠার প্রমানসহ অভিযোগনামা দাখিল করেছে বহু সাংবাদিক। কিন্তু কারো অভিযোগকে শেখ হাসিনা গুরুত্ব দেননি। কারণ, বিচারকের আসনে তার চাই তাঁবেদার আওয়ামী ক্যাডার। শেখ হাসিনা তাকে হাইকোর্ট থেকে উঠিয়ে সুপ্রীম কোর্টে বসিয়েছেন। এবং সেখান থেকে তুলে এনে আব্দুল কাদের মোল্লার মামলার আপিল ডিভিশানে বসিয়েছেন। কারণ, সে আওয়ামী লীগের ক্যাডার এবং আব্দুল কাদের মোল্লার মত নিরাপরাধ ব্যক্তিদের ফাঁসিতে ঝোলাতে সে আপোষহীন।

 

আইন বদলানো হলো স্রেফ খুনের স্বার্থে

ট্রাইবুনাল প্রথমে আব্দুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেয়নি, দিয়েছিল যাবজ্জীবন কারাদন্ড। তাঁকে ফাঁসি দিতে প্রয়োজন ছিল আইনের পরিবর্তন। সরকার তাঁর ফাঁসি দিতে এতটাই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিল যে সেটি সম্ভব করতে প্রচলিত আ্ইনে ইচ্ছামত পবিবর্তন এনেছে। অথচ আন্তুর্জাতিক আইনে রীতিবিরুদ্ধ। শুধু তাই নয়, আপিলের সুযোগ থেকে্ও তাঁকে বঞ্চিত করা হযেছিল। সরকারের যুক্তি, আব্দুল কাদের মোল্লা একজন যুদ্ধাপরাধী, সে কারণে তাঁর জন্য আপিলের সুযোগ নেই। আব্দুল কাদের মোল্লার মামলা প্রসঙ্গে এ্যামনেস্ট্রি ইন্টারন্যাশন্যালের বক্তব্যঃ “This is the first known case of a prisoner sentenced to death directly by the highest court in Bangladesh. It is also the first known death sentence in Bangladesh with no right of appeal. Death sentence without right of judicial appeal defies human rights law.”

বিচারে যে কতটা অবিচার হযেছে সেটিও দেখা যাক। যে সাক্ষীর কথার উপর ভিত্তি করে আব্দুল কাদের মোল্লাকে হত্যা করা হলো তার নাম মোমেনা বেগম। মোমেনা বেগম অন্যদের কাছ থেকে শুনেছে যে, যারা তার পরিবারের অন্যদের হত্যা করেছে তার মধ্যে কাদের মোল্লা বলে একজন ছিল। কিন্তু সে নিজে সে অভিযুক্ত কাদের মোল্লাকে স্বচোখে কখনোই দেখেনি। প্রশ্ন হলো বাংলাদেশে বহু গ্রামে ও বহু মহল্লায় কাদের মোল্লা বলে কেউ থাকতেই পারে। হয়তো সে সময় মীরপুরেও এমন কাদের মোল্লা একাধিক ছিল। কিন্তু সে যে ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার আমিরাবাদ গ্রামের মরহুম সানাউল্লা মোল্লার ছেলে আবদুল কাদের মোল্লা -সে খবর কি মীরপুরের এই মোমেনা বেগম জানতো? সামনা সামনি খাড়া করলে কি তাঁকে চিনতে পারতো? যে কোন খুনের মামলার সাক্ষিকে তার অভিযুক্ত আসামীকে লাইনে দাড়ানো অনেকে মধ্য থেকে খুঁজে বের করতে হয়। অথচ যারা তাঁকে ফাঁসি দিল তারা তা নিয়ে তদন্তের সামান্যতম প্রয়োজনও মনে করেনি। তারা শুধু কাদের মোল্লার নামের মিলটিই দেখেছে। সেটিকে একমাত্র দলীল রূপে খাড়া করে ফরিদপুরের আমিরাবাদ গ্রামের আব্দুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসিতে চড়ালো।

বিচারকগণ এটুকুও ভেবে দেখেনি, মীরপুরে খুনের ঘটনাটি ঘটেছে ২৫শের মার্চের কিছুদিন পর এপ্রিলের প্রথম দিকে। সে সময় আব্দুল কাদের মোল্লা কেন ঢাকাতে থাকতে যাবে? ঢাকাতে তাঁর কি কোন চাকুরি ছিল? তাঁর পিতার কি কোন বাড়ি ছিল? ঢাকায়  যাদের চাকুরি ও ঘরবাড়ি ছিল তারাও তো সে দুর্যোগ মুহুর্তে ঢাকা ছেড়ে মফস্বলে চলে যায়। আব্দুল কাদের মোল্লা তখন ছাত্র। এপ্রিলে ঢাকার কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কি খোলা ছিল? অতএব সে সময় ঢাকায় অনর্থক থাকার কি কোন কারণ থাকতে পারে? অপরদিকে মোমেনা বেগম মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর, মিরপুর জল্লাদখানা, আর আদালত -এই তিন জায়গায় তিন রকম কথা বলেছে। আদালতে আসার আগে অনেকগুলো সাক্ষাতকার দিলেও একবারের জন্যও আব্দুল কাদের মোল্লার নাম নেয়নি। ২০০৭ সালে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর কর্তৃপক্ষের কাছে দেয়া জবানবন্দীতে এই মামলার প্রধান সাক্ষী মোমেনা বেগম নিজের মুখে বলেন, হযরত আলী লষ্কর পরিবারের হত্যাকান্ডের দুইদিন আগে তিনি শ্বশুড়বাড়ি চলে যাওয়ায় প্রানে বেঁচে যান! অথচ ২০১২ তে কোর্টে এসে বলে, ঘটনার সময় সে উপস্থিত ছিল। এমন মিথ্যুকের কথায় কোন সভ্য দেশে কি কারো ফাঁসি হয়?

 

আদালত অধিকৃত অপরাধীদের হাতে

প্রতিটি খুনের মামলায় আদালতের মূল দায়িত্ব হলো খুনের মটিভটি খুঁজে বের করা। কোন সুনির্দিষ্ট মটিভ ছাড়া কেউ কাউকে খুন করা দূরে থাক,পাথরও ছুঁড়ে না। প্রতিটি খুনের পিছনে যেমন খুনি থাকে, তেমনি সে খুনির মটিভও থাকে। জনাব আব্দুল কাদের মোল্লা কোন পেশাদার খুনি নন,ফলে মানুষ খুন করা তার পেশা নয়। অথচ তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে তিন হাজার মানুষ হত্যার। অথচ তার বয়স তখন মাত্র ২২। সেটি হলে তো মানুষ খুনের কাজটি ফরিদপুরের সদরপুর থেকেই আরো অল্প বয়সে শুরু করতেন। তাছাড়া মানুষ খুনে তিনি কেন ঢাকার মীরপুরে আসবেন? কেনই বা সেটি মোমেনা বেগমের পরিবারে? কেন এত বড় খুনির হাতে তার নিজ এলাকায় কোন লাশ পড়লো না? কারণ খুনিরা যেখানে যায় সেখানেই তো তার নিজ খাসলতটা সাথে নিয়েই যায়। তাছাড়া তিনি একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। তার খুনও তাই রাজনৈতিক হওয়াটাই স্বাভাবিক। অথচ মোমেনা বেগমের পিতা ও তার পরিবারটি রাজনৈতিক দিক দিয়েও তেমন কেউ নন। ফলে এ খুনের মটিভটি রাজনৈতিকও নয়। আদালতের দায়িত্ব,এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করা।ব্যবসা-বানিজ্য বা অন্য কোন কারণে মোমেনা বেগমের পরিবারের সাথে আব্দুল কাদের মোল্লার বিবাদ ছিল -আদালত সে প্রমাণও হাজির করতে পরিনি।

একাত্তরের মার্চে ও এপ্রিলে হাজার হাজার বাঙালী ও বিহারি মারা গেছে নিছক ভাষা ও বর্ণগত ঘৃণার কারণে।সে বীভৎস হত্যাকান্ডগুলো যেমন বাঙালীদের হাতে হয়েছে তেমনি বিহারিদের হাতেও হয়েছে।তেমন হত্যাকান্ডে জড়িত হওয়ার জন্য তো ভাষা,বর্ণ ও আঞ্চলিক পরিচয় নিয়ে অতি উগ্র,সহিংস ও অসুস্থ মন চাই। তেমন অসুস্থ মনের খুনিরা সবচেয়ে বেশী সংখ্যায় গড়ে উঠেছিল শেখ মুজিব ও তার দল আওয়ামী লীগের হাতে। সে উগ্র সহিংসতাকে প্রবল করাই ছিল তাদের শেখ মুজিবের রাজনীতি।তাদের সংখ্যা ছিল সহিংস বিহারীদের চেয়ে বহু শতগুণ বেশী। সে কারণেই একাত্তরে বাঙালীদের চেয়ে বেশী মারা গেছে বিহারীরা। তাদেরকে ঘরবাড়ি ও দোকানপাট থেকে নামিয়ে রাস্তায়ও নামানো হয়েছে। আওয়ামী লীগারদের হাতে একাত্তরে হাজার হাজার বিহারী হত্যার বীভৎ বিবরণ পাওয়া যায় শর্মিলা বোসের ইংরেজীতে লেখা “ডেথ রেকনিং” বইয়ে। লগি বৈঠা নিয়ে এরাই নিরপরাধ মানব হত্যাকে ঢাকার রাজপথে উৎসবে পরিণত করেছে। শাহবাগ মোড়ে এরাই জামায়াত শিবির কর্মীদের লাশ নিয়ে সকাল বিকাল নাশতা করার আস্ফালন করে। আজও  সেসব খুনিদের হাতে শাপলা চত্বরসহ বাংলাদেশের নানা জনপদ রক্তলাল হচ্ছে।প্যান-ইসলামিক চেতনায় পরিপুষ্ট আব্দুল কাদের মোল্লার তেমন মানসিক অসুস্থতা ও সহিংসতা থাকার কথা নয়। তাছাড়া তেমন রোগ থাকলে তিনি বাঙালীদের উপর নয়,বিহারীদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তেন।সেটি হলে শুধু মীরপুরে নয়,এবং শুধু একাত্তরেই নয়,বার বার বহুস্থানেই তার হাতে বহু মানুষ লাশ হতো। বিচারকদের উচিত ছিল গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়গুলো বিবেচনায় আনা। আর সেটি না আনাই তো বিচারকের অপরাধ। সে কাজটি হলে বিচারকগণ হত্যার মটিভ খুঁজে পেতেন। ন্যায়বিচারেও সফল হতেন। কিন্তু আদালত তাতে পুরাপুরি ব্যর্থ হয়েছে। লক্ষণীয় হলো,আদালতের বিচারকগণ এ বিষয়গুলোর বিচার-বিবেচনায় কোন আগ্রহই দেখাননি। তাদের বিচারে একটি মাত্র আগ্রহই বার বার গুরুত্ব পেয়েছে তা হলো,আব্দুল কাদের মোল্লা,মাওলানা দিলাওয়ার হোসেন সাঈদী ও মাওলানা আবুল কালাম আযাদের মত ব্যক্তিদের দ্রুত হত্যা করা। এবং সে হত্যাকান্ডের উপর আদালতের পক্ষ থেকে ন্যায়বিচারের লেবাস চাপিয়ে দেয়া। ফিরাউন-নমরুদ,হালাকু-­চেঙ্গিজ ও হিটলারের সময় তো অবিকল তাই হয়েছে। বিচারপতি নাজমুলের স্কাইপি সংলাপে তো সে বিষয়টিই প্রকাশ পেয়েছে। দেশের সরকার ও তার প্রশাসন,পুলিশ,র‌্যাবই শুধু নয়,আদালতগুলিও যে কতটা অসুস্থ,অযোগ্য ও অপরাধী মানুষের দ্বারা অধিকৃত -সেটি কি এরপরও বুঝতে বাঁকি থাকে?

শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লা যুদ্ধকালীন পুরো সময়ে যে বাড়িতে লজিং ছিলেন তার বিবরণ তিনি আদালতকে দিয়েছেন । সে সময় ঐ লজিং বাড়ীতে তিনি দুই মেয়েকে পড়াতেন।  তাদের একজনের স্বামী এখন সরকারেরই কর্মকর্তা। ট্রাইবুনাল ঐ পরিবারের কাউকেই, বিশেষ করে ঐ দুই মেয়েকে আদালতে সাক্ষী রূপ হাজির হতে দেয়নি। শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লাই যদি “কসাই কাদের” হয়ে থাকে তবে যে “তিন হাজার মানুষকে হত্যা করেছে” বলে ট্রাইবুনাল বিশ্বাস করে, কীভাবে সম্ভব সে এই কসাই কাদের মোল্লাই যুদ্ধের পরপরই ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে শহীদুল্লাহ হল’র আবাসিক ছাত্র রূপে অধ্যয়নের সুযোগ পেল? বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি লাভের পর কী রূপে তিনি উদয়ন স্কুলে শিক্ষক রূপে নিযুক্তি পান? কী রূপে তিনি বাংলাদেশ রাইফেলস স্কুল এন্ড কলেজে শিক্ষকতা করেন? ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট রূপেই বা তিনি কীরূপে দুইবার নির্বাচিত হন? 

 

বিচারমুক্ত খুনি

সাধারণ মানুষেরা অপরাধ করলে তার শাস্তি হয়। কখনো কখনো আদালত তাদের বিরুদ্ধে ফাঁসির হুকুমও শোনায়। কোর্ট মার্শাল হয় সামরিক বাহিনীর অফিসারদের। কিন্তু বাংলাদেশের আদালতের বিচারকরূপী খুনিরা বিচারমুক্ত। অথচ আদালতের অঙ্গণে ভয়ানক অপরাধিরাও যে আছে -সে প্রমাণ তো প্রচুর। স্কাইপি সংলাপের মাধ্যেমে জনগণের সামনে তো সেটি প্রকাশও পেযেছে। প্রকাশ পেয়েছে আব্দুল কাদের মোল্লা, মাওলানা আবুল কালাম আযাদ ও মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর বিরুদ্ধে দেয়া রায়তেও। শুধু কি চোরডাকাতের শাস্তি দিলে দেশে শান্তি আসে? দেশের অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান হলো আদালত। আদালতের বিচারকের আসনে বসেছেন খোদ নবী-রাসূলগণ। অথচ বাংলাদেশে অতি গুরুত্বপূণ এ প্রতিষ্ঠানটি অধিকৃত হয়ে আছে সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, সামছুদ্দীন মানিক ও নাজমুলের মত নীতিহীন ও বিবেকহীন ব্যক্তিদের হাতে। একটি দেশে সবচেয়ে বড় বিপর্যয়টি ঘটে যদি দেশের বিচার ব্যবস্থা দুর্বৃত্তদের হাতে অধিকৃত হয়ে যায়। তাদের বিচারে তখন ভয়ানক অপরাধিরাও মুক্তি পেয়ে যায়, আর ফাঁসিতে ঝুলাতে হয় নিরপরাধ ব্যক্তিদের। তাছাড়া মুসলমানের ক্ষেত্রে সে দায়ভারটি আরো বেশী। কারণ, ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের নির্মূল তো মুসলমানের জীবনে আল্লাহ নির্ধারিত মিশন। সেটি না হলে সমাজে ইসলাম বাঁচে না। তেমনি মুসলিম রূপে বেড়ে উঠাও যায় না।অথচ দুর্বৃত্ত বিচারকগণ ইসলামের সে মহান মিশনটিকেই ব্যর্থ করে দেয়। তাদের যুদ্ধ তো খোদ আল্লাহর বিরুদ্ধে। শুধু চোরডাকাতদের অপরাধ নিয়ে বিচার বসলে দেশে শান্তি আসবে না। বিচারের কাঠগড়ায় খাড়া করতে হবে এসব দৃর্বৃত্ত বিচারকদেরও। চোর-ডাকাতদের চেয়েও তাদের অপরাধটি তো বেশী। চোর-ডাকাতগণ কিছু লোকের সম্পদ কেড়ে নেয়। আর দুর্বৃত্ত বিচারকগণ কেড়ে নেয় সুবিচার ও শান্তি। ইসলামের তাদের শাস্তিটা তাই কঠোর।

কিন্তু বাংলাদেশে বিচারকদের অপরাধগুলো সনাক্ত করার যেমন কোন লোক নেই, তেমনি তাদের শাস্তি দেয়ারও কেউ নাই। বরং তারাই যেন দেশের একমাত্র সার্বভৌম শক্তি। কোনটি ন্যায় আর  কোনটি অন্যায়, কোনটি পবিত্র আর কোনটি অপবিত্র সে রায়টিও এখন তারা দেয়া শুরু করেছে। সকল দলের নেতারা মিলে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রথাটি গ্রহণ করলো, আদালতের এক বিচারক সেটিকে বেআইনী বলে ঘোষিত করলেন। আর সে রায়ের মাধ্যমে দেশকে উপহার দেয়া হলো এক রাজনৈতিক মহাসংকট। আদালত ভাষা আন্দোলনে নিহতদের স্মৃতি স্তম্ভকেও পবিত্র রূপে ঘোষণা দিয়েছে। অথচ কোনটি পবিত্র আর কোনটি অপবিত্র -সেটি ধর্মীয় বিষয়। আদালতের বিচারকদের তা নিয়ে নাকগলানোর কিছু নাই। অথচ বাংলাদেশে বিচারকদের সেক্ষেত্রেই পদচারণা। যে কোন প্রতিষ্ঠান মাত্রই যে অপরাধীদের দ্বারা অধিকৃত হতে পারে -সেটি যেন বাংলাদেশের আদালতের বিচারকদের বেলায় চলে না। এমন একটি দুষিত ধারণার কারণেই বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা সবচেয়ে ব্যর্থ।

 

গণবিপ্লবের পথে দেশ

বাংলাদেশের জনগণের পিঠ এখন দেয়ালে ঠেকে গেছে। মুক্তিকামী মানুষের কাছে দুর্বৃত্তশাসন নীরবে সয়ে যাওয়ার দিন এখন শেষ। সময় এসেছে খুনিদের শাস্তি দেয়ার। প্রেক্ষাপট এখন গণবিপ্লবের। এ গণবিপ্লবের মালিকানা জনগণ এখন নিজ হাতে নিয়ে নিয়েছে। ফলে শত শত নেতা ও কর্মীদের গ্রেফতার করেও সরকার এ আন্দোলন আর থামাতে পারছে না। বরং যতই বাড়ছে গ্রেফতারের সংখ্যা, আন্দোলন ততই তীব্রতর হচ্ছে। এখন এটি শুধু আর রাজনীতি নয়। নিছক ভোট যুদ্ধও নয়, বরং পরিণত হয়েছে ইসলামি জনতার পবিত্র জিহাদে। বাংলাদেশ যে ইসলামের দুষমনদের হাতে অধিকৃত ভূমি সেটি জনগণের কাছে আজ আর গোপন বিষয় নয়। হাসিনা সরকার যে শুধু গণতন্ত্রের শত্রু -তা নয়। ভয়ানক শত্রু ইসলামেরও। মুর্তিপুজারিদের কাছে মহান আল্লাহ ও তাঁর ইবাদতের কোন গুরুত্ব নাই। বরং তাদের কাছে উপসনাযোগ্য হলো তাদের নিজহাতে গড়া মুর্তি। আল্লাহর অবাধ্যদের কাছে তেমনি পবিত্র নয় মহান আল্লাহর পবিত্র কোরআন। তাদের কাছে বরং পবিত্র হলো নয় নিজেদের রচিত শাসনতন্ত্র। নিজেদের প্রতিষ্ঠিত কায়েমী স্বার্থকে সুরক্ষা দেয়ার জন্যই তারা রচনা করেছে এ শাসনতন্ত্র। আর সে শাসনতন্ত্রের দোহাই দিয়ে যেমন নির্দেলীয় সরকারের বিরোধীতা করছে, তেমনি দেশকে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের দিকে ধাবিত করছে। আল্লাহর বিরুদ্ধে তাদের বিদ্রোহ এতটাই প্রকট যে, শাসনতন্ত্রে তারা মহান আল্লাহর উপর আস্থার বানিটিও তারা বিলুপ্ত করেছে।

 

মুমিনের জীবনে বাধ্যবাধকতা

মুসলমান হওয়ার সাথে প্রতিটি ঈমানদারের উপর কিছু অলংঘনীয় বাধ্যবাধকতা এসে যায়। সেটি আল্লাহর হুকুমের প্রতি সদাসর্বদা আনুগত্য ও মহান আল্লাহর ইজ্জতকে যে কোন মূল্যে সমুন্নত রাখা। তাই কোন দেশে মুসলমানের সংখ্যা বাড়লে সেখানে আল্লাহর সার্বভৌমত্বের প্রতিষ্ঠাও অনিবার্য হয়ে পড়ে। এবং সে ভূমিতে অতি স্বাভাবিক হয় শরিয়তের প্রতিষ্ঠা। রাজার সৈনিকেরা তার রাজ্য পাহারায় ও তার শাসন বহাল রাখায় যুদ্ধ করে ও প্রয়োজনে প্রাণও্র দেয়। সে কাজের জন্য যেমন মজুরি পায়, তেমনি সৈনিকের মর্যাদাও পায়। রাজার রাজ্য পাহারায় যে সৈনিক যুদ্ধ করে না সে কি সৈনিকের মর্যদা পায়? আর মুসলমানের মর্যাদাটি তো আল্লাহর সৈনিক রূপে। ফলে তাদের দায়বদ্ধতা খোদ মহান আল্লাহতায়ালার প্রতি। তারা আল্লাহর দ্বীনের বিজয়ে ও তার সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠায় যুদ্ধ করে। অর্থ, শ্রম, সময় ও প্রাণও দেয়। প্রতিদানে পায় জান্নাত। কে কতটা ঈমানদার সেটি তো যাচাই হয় আল্লাহর রাস্তায় কে কতটা কোরবানী দিল তা থেকে। মুমিনের জীবনে সে জিহাদ তাই অনিবার্য। মনের গভীরে ঈমান যে বেঁচে আছে সেটি তো বুঝা যায় সে জিহাদ থেকে। প্রাণশূণ্য মানুষের হাত-পা নড়াচড়াশূণ্য হয়। তেমনি ঈমানশূণ্য ব্যক্তির জীবনও জিহাদ শূণ্য হয়। একটি দেশে ইসলাম কতটা বিশুদ্ধ ভাবে বেঁচে আছে সেটি মসজিদে নামাযীর সংখ্যা দেখে বুঝা যায় না। সেটি বুঝা যায় সে সমাজে আল্লাহর শরিয়ত প্রতিষ্ঠায় জিহাদ কতটা চলছে তা থেকে। শয়তানি শক্তির ষড়যন্ত্রের শেষ নাই। ফলে সে ষড়যন্ত্রের মোকাবেলায় মু’মিনের জীবনে জিহাদেরর শেষ নেই। বরং সে জিহাদকেই অব্যাহত রাখাই হলো্ ঈমানদারের জীবনে সবচেয়ে বড় জিম্মাদারি। মুসলমানের জীবনে তাই ইসলামে দাখিল হওয়ার সাথে সাথেই আমরণ জিহাদ শুরু হয়ে যায়। সেটি যেমন সাহাবায়ে কেরামের জীবনে এসেছিল তেমনি এসেছিল তাদের অনুসারিদের জীবনে। ফলে তাদের আমলে শুধু মুসলিম রাষ্ট্রের ভূগোলই বাড়েনি, ইসলামি শরিয়তের প্রতিষ্ঠাও বেড়েছে। অপরদিকে শয়তানি শক্তির টার্গেট হলো, জিহাদ থেকে মুসলমানদের দূরে সরানো। নামায-রোযা পালন নিয়ে তাদের কোন আপত্তি নেই। আপত্তি নেই পীরের দরগাহ, দরগায় জিয়ারত, বা সূফিবাদ নিয়ে। বরং এগুলির পিছনের বিপুল অর্থব্যয়ে তারা রাজী।

 

ইস্যু স্রেফ সরকার পরিবর্তন নয়

মুসলমানের জীবনে তাই বড় ইস্যুটি সরকার পরিবর্তন নয়, সরকার পরিবর্তনের লক্ষ্যে বার বার নির্বাচনও নয়। বরং সেটি হলো আল্লাহতায়ালার দেয়া শরিয়তের পুরাপুরি প্রতিষ্ঠা। শয়তান তো চায়, নির্বাচন নিয়ে মুসলমানেরা বছরের পর ব্যস্ত থাক। এবং ভূলে থাক শরিয়তের প্রতিষ্ঠার বিষয়টি। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা এক সুবর্ণ সুযোগ এনে দিয়েছে ইসলামপন্থিদের সামনে। ইসলামের শত্রুপক্ষের দুর্গ এখান ধ্বসে পড়ার পথে। এমুহুর্তে আন্দোলনকে শুধু সরকার পরিবর্তনের আন্দোলনে সীমিত রাখলে সেটি হবে আল্লাহতায়ালা ও দ্বীনের সাথে সবচেযে বড় গাদ্দারি। তাতে ব্যর্থ হয়ে যাবে এ যাবত কালের সকল শহীদদের কোরবানি। নামায-রোযা পালনের দায়িত্ব যেমন প্রতিটি ঈমানদারের, তেমনি রাষ্ট্রের বুকে আল্লাহতায়ালার দ্বীনকে বিজয়ী করার দায়িত্বও প্রতিটি মু’মিনের। রোয হাশরের বিচার দিনে প্রতিটি ঈমানদারকে এ হিসাব অবশ্যই দিতে হবে, মহান আল্লাহর শরিয়তের প্রতিষ্ঠায় তার নিজের কোরবানিটা কত্টুকু?

কোন দেশ শয়তানি শক্তির হাতে অধিকৃত হলে সেখানে শরিয়তের প্রতিষ্ঠা অসম্ভব হয়ে পড়ে। আর শরিয়তের অনুসরণ ছাড়া কি ইসলাম পালন হয়? পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতায়ালা বার বার বলেছেন, “যারা আমার নাযিলকৃত আইন অনুযায়ী বিচার কার্য পরিচালনা করে না তারা কাফের, …তারাই যালিম, এবং …তারাই ফাসিক। -(সুরা মাযেদ)।তাই কোনটি মুসলমানের দেশ সেটি মসজিদ মাদ্রাসা দেখে বুঝা যায় না। ভারতের মত কাফের অধ্যুষিত  দেশেও এরূপ মসজিদ-মাদ্রাসার সংখ্যা বিপুল। সেটি বুঝা যায় সেদেশে শরিয়তের প্রতিষ্ঠা দেখে। অথচ বাংলাদেশে সে কাজটি হয়নি। শহীদের রক্ত উম্মহার জীবনে ঈমানের ট্রানফিউশন ঘটায়। তখন ঈমানে জোয়ার আসে। তাতে বলবান হয় শরিয়ত প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। তাই যে দেশে ভূমিতে যত শহীদ সে ভূমিতে ততই ঈমানের জোয়ার। সেখানে বলবান হয় শরিয়ত প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। শহীদ আব্দুল কাদের মোল্লার শাহাদত তাই বৃথা যাবে না। তার রক্ত যে বাংলাদেশের মানুষের জীবনে ঈমানের ট্রানফিউশন ঘটাবে সেটি সুনিশ্চিত। তাছাড়া ঈমানদারগণ যখন আল্লাহর রাস্তায় প্রাণ দেয়া শুরু করে সে ভূমিতে তো আল্লাহতায়ালা তার ফেরেশতা প্রেরণ শুরু করেন। ফলে বাংলাদেশে শয়তানের দুর্গের পতন যে অনিবার্য তা নিয়ে কি বিন্দুমাত্র সন্দেহ আছে? ১৩/১২/১৩

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *