বাংলাদেশে ভারতীয় স্বার্থের পাহারাদারদের সন্ত্রাস এবং স্বাধীনতার সংকট

ভিয়েতনামে যখন মার্কিন বাহিনীর আগ্রাসন ও গণহত্যা চলে তখন তার বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় প্রতিটি বড় বড় শহরে বহু প্রতিবাদ সভা ও মিছিল হয়েছে। অসংখ্য সভা ও মিছিল হয়েছে যখন সোভিয়েত রাশিয়ার হাতে আফগানিস্তান অধিকৃত হয়। ইরাকের উপর যখন মার্কিন হামলা হয় তখনও বাংলাদেশে বহু  প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিল হয়েছে। সেরূপ মিছিল-সমাবেশ সমগ্র বিশ্ব ব্যপী হয়েছে। ইরাকের বিরুদ্ধে হামলার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় জনসভাটি হয়েছে লন্ডনে। হাইড পার্কের সে সমাবেশে বিশ লাখের বেশী নরনারী জমায়েত হয়েছিল। সচেতন মানুষেরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে এভাবেই প্রতিবাদ মুখর হয়।

যুদ্ধ-জুলুম-নির্যাতনে বিরুদ্ধে ঘৃণা ও প্রতিবাদ না থাকাটাই মানবতার মৃত্যু। তখন মানব দেহ বেড়ে উঠে নিরেট পশুত্ব নিয়ে। সামনে কাউকে জবাই হতে দেখেও গরু-ছাগল নীরবে ঘাস খায়। এতেই পশুত্বের পরিচয়। কিন্তু হৃদয়ে মানবতা নিয়ে যারা বাঁচে তারা সেটি পারে না। জুলুমের বিরুদ্ধে যে ঘৃণা সেটি কোন সীমা-সরহাদ মানে না। এ কারণেই কোন গৃহে কেউ খুন বা ধর্ষিতা হলে -সেটি আর সে গৃহের অভ্যন্তরীণ বিষয় থাকে না। সে জুলুম রুখতে বিবেকবান মানুষ মাত্রই আওয়াজ তুলে এবং প্রয়জনে অস্ত্র হাতে ছুটে আসে। প্রশ্ন হলো, ছাত্র লীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও শেখ হাসিনার মাঝে সে মানবিক রূপটি কই? তারা তো ভারতের জালেম শাসকের পক্ষ নিয়েছে।

তাছাড়া মানুষ হওয়ার সাথে সাথে যারা মুসলিম পরিচয় নিয়ে বাঁচে তাদের কিছু বাড়তি দায়-দায়িত্বও থাকে। সে দায়িত্ব নিয়ে বাঁচার মধ্যেই প্রকৃত ঈমানদারী। তাই বিশ্বের কোন এক প্রান্তে যদি কোন মুসলিম ধর্ষিতা, আহত, নিহত বা অত্যাচারিত হয় এবং তা নিয়ে যদি কোন ব্যক্তির হৃদয়ে বেদনা না জাগে -তবে বুঝতে হবে সে ব্যক্তি আদৌ মুসলিম নয়। তার দেহে প্রাণ থাকতে পারে, তবে সে প্রাণে যে বিন্দুমাত্র ঈমান নাই –তা নিয়ে কোন সন্দেহ নাই।  বেদনার সে জায়গাটি হলো ঈমান। এমন বেদনাশূণ্য ব্যক্তিটি বাঙালী হতে পারে, হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টানও হতে পারে, কিন্তু সে কখনোই মুসলিম হতে পারে না। মাওলানা আবুল কালাম আযাদ তাই বলকান যুদ্ধকালীন সময়ে লিখেছিলেন, “যদি কোন তুর্কী সৈনিকের পা গুলিবিদ্ধ হয় আর সে গুলির আঘাতের বেদনা তুমি যদি হৃদয়ে অনুভব না করো -তবে খোদার কসম তুমি মুসলিম নও।” কারণ, মুসলিম হওয়ার শর্তই হলো অন্য মুসলিম ভাইয়ের বেদনায় পরম ব্যাথীত হওয়া এবং সে বেদনার প্রতিকারে কিছু করার ভাবনা নিয়ে বাঁচা।  অধিকৃত আফগান মুসলিমদের সে বেদনার উপশমে তাই হাজার হাজার মুজাহিদ বিশ্বের নানা কোণ থেকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে আফগানিস্তানে ছুটে এসেছিলেন।

মুসলিম মাত্রই তাই ঢাকার রাস্তায় ভারতে মুসলিম নির্যাতনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাবে সেটিই তো স্বাভাবিক। মুসলিমদের গৌরব কালে এরূপ ঘটনা ঘটলে শুধু প্রতিবাদ নয়, জালেম শক্তির বিরুদ্ধে রক্তাক্ষয়ী যুদ্ধও শুরু হত। মুসলিমের জীবনের মিশন কি স্রেফ নামায-রোযা, হজ্ব-যাকাত পালন এবং মসজিদ-মাদ্রসা নির্মাণ? মুল মিশন তো অন্যায় ও জুলুমের নির্মূল এবং ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা। ইসলামের যে শান্তির ধর্ম –তা তো এ ভাবে দুর্বৃত্তদের নির্মূলের মাধ্যমেই প্রমাণিত হয়। প্রকৃত ঈমানদারগণ এমন পবিত্র মিশনে নিজেদের জান-মাল তথা সকল সামর্থ্যের বিনিয়োগ করে। নবীজী (সাঃ)র সাহাবীদের ৭০% ভাগের বেশী এ কাজে শহীদ হয়েছেন। মানব ইতিহাসে অন্য কোন ধর্ম বা জাতির লোকেরা সেটি করেনি। বেঈমানদের বিনিয়োগটি হয় নিছক নিজের গোত্র, ভাষা, বর্ণ, দল বা জাতীয়তার গৌরব বাড়াতে। সত্য ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠায় তাদের কোন গরজ থাকে না। তারা নিজেরাই বরং দুর্বৃত্ত স্বৈর-শাসকে পরিণত হয় –যেমনটি শেখ মুজিবের ক্ষেত্রে হয়েছে। দুর্বৃত্তদের নির্মূল ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠায় প্রকৃত মুসলিমদের সে বিশাল কোরবানীর কারণেই সুরা আল-ইমরানের ১১০ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহতায়ালা তাদেরকে সমগ্র মানব সৃষ্টির মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মাহ রূপে ভূষিত করেছেন। অথচ শেখ হাসিনা ও তার অবৈধ সরকারের কাজ হয়েছে বাংলাদেশের মুসলিমদের ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের নির্মূলের সে অর্পিত কোর’আনী মিশন থেকে দূরে রাখা। এ মিশন রুখতে শেখ হাসিনা নিজে এবং তার দলের নেতা-কর্মীগণ ভারতের জালেম সরকারের পক্ষে সন্ত্রাসী লাঠিয়ালে পরিণত হয়েছে। সে লক্ষ্যে শেখ হাসিনা সফলতাটি যে কতটা বিশাল তারই প্রমাণ, ছাত্রলীগের কর্মীদের হাতে বুয়েটে আবরার ফাহাদের হত্যা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিপি নূরের উপর হামলা। তাদের উভয়ের অপরাধ, তারা মুখ খুলেছিল ভারতীয় অন্যায় ও জুলুমের বিরুদ্ধে।      

ভারতে মুসলিমদের বিরুদ্ধে শুধু যে হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন হচ্ছে তা নয়। ষড়যন্ত্র হচ্ছে তাদের নাগরিকত্ব হরণের। চেষ্টা হচ্ছে নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিতদেরকে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারি রূপে আখ্যায়ীত করা। এবং বাঙালী অনুপ্রবেশকারির লেবেল লাগিয়ে তাদেরকে ভারত থেকে বাংলাদেশে “পুশ ইন” করা। এ ষড়যন্ত্রের রূপায়নে ইতিমধ্যেই আসামে ১৯ লাখ বাসিন্দাকে নাগরিকত্বহীন করা হয়েছে। যাদেরকে নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে তাদের মধ্যে ৭ লাখ মুসলিম। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে্, তারা বাংলাদেশ থেকে অনুপ্রবেশকারী। এভাবে ভারত সরকার ভারতীয় মুসলিমদের সাথে বাংলাদেশকেও জড়িয়ে ফেলেছে। দিল্লিতে সরকারি ভাবে এ কথা জোরেশোরে বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ হিন্দু নির্যাতন হচ্ছে এবং হিন্দুগণ প্রাণ বাঁচাতে ভারতে আশ্রয় নিচ্ছে। ভারতের লোক সভায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সেরূপ একটি গুরুতর অভিযোগ এনেছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। তাই বিষয়টি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় হয় কি করে? প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের মানুষ এরূপ মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে নীরবই বা থাকে কী করে? অথচ বাংলাদেশের সরকার শুধু নীরবই থাকেনি, অন্যরা ভারতীয় মিথ্যাচার ও জুলুমের বিরুদ্ধে সরব হোক, সমাবেশ ও মিছিল করুক -সেটিও হাসিনার অবৈধ সরকার অসম্ভব করেছে। সেগুলি বাধা দিতে পেশী শক্তি নিয়ে ময়দানে নেমেছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীগণ। তাদের হাতে  আহত হয়েই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের ভিপি নূর এবং আরো অনেকে। পুলিশ হামলাকারিদের গ্রেফতার না করে প্রমাণ করলো সরকারেরও সম্মতি হয়েছে এরূপ সন্ত্রাসী হামালায়।

লক্ষণীয় বিষয় হলো, মুসলিম নির্যাতনের বিরুদ্ধে মিটিং-মিছিল ভারতে সম্ভব হলেও সেটি বাংলাদেশে অসম্ভব করে রেখেছে শেখ হাসিনা ও তার অবৈধ সরকার। এভাবে শেখ হাসিনা এবং তাঁর সাথীগণ প্রমাণ করলো ভারতীয়দের চেয়েও তারা অধীক ভারতীয়। ছাত্র লীগ ও আওয়ামী লীগের কর্মীগণ আবির্ভুত হয়েছে ভারতীয় লাঠিয়াল বাহিনীর ঠ্যাঙ্গারে রূপে। ভিপি নূর ও তাঁর সাথীদের উপর হামলাকারীদের অভিযোগ ভিপি নূর ভারতে অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে রাজনীতি করছে। সে অভিযোগের ভিত্তিতে হুশিয়ারি দিয়েছে, তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ঢুকতে দিবে না। এবং ঢুকার চেষ্টা হওয়াতে তাঁর উপর হামলাও হচ্ছে।

শেখ হাসিনার অবৈধ সরকারের ভারতসেবী আচরণের প্রমাণ বহু। বুকার প্রাইজ বিজয়ী ভারতীয় লেখিকা অরুন্ধতি রায় ভারতের নানা শহরে ভারত সরকারের নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা করেন। তিনি ঢাকাতেও এসেছিলেন। তাঁর আগমন উপলক্ষে ডক্টর শহীদুল আলম ঢাকার একটি সেমিনার কক্ষে সুধি সমাবেশর আয়োজন করেছিলেন। কিন্তু সরকার সেটি করতে দেয়নি। কারণ অরুন্ধতি রায়ের খ্যাতি হলো, ভারত সরকারের জুলুমের বিরুদ্ধে অতি নির্ভয়ে হক কথা বলায়। তিনি কথা বলেন কাশ্মীরে ভারতীয় বাহিনীর অধিকৃতি ও জুলুমের বিরুদ্ধেও। কিন্তু হাসিনার অবৈধ সরকার চায়নি বাংলাদেশের মাটিতে ভারতের ভারতীয় নীতির কোনরূপ নিন্দা হোক। এখানে কাজ করেছে শেখ হাসিনার ভারতপ্রীতিই শুধু নয়, ভারতভীতিও। 

গণতন্ত্রবিরোধী এমন নিষ্ঠুর আচরণ একমাত্র অবৈধ সরকারই করতে পারে। কারণ, অবৈধ সরকার মাত্রই জানে, জনগণের ভোট নিয়ে তারা ক্ষমতায় আসেনি। ফলে তাদের আচরণ যত নিষ্ঠুরই হোক, সে জন্য তারা জনগণের কাছে জবাবদেহীতে বাধ্য নয়। তাদের দায়বদ্ধতা ষোল আনা কেবল প্রভুদের প্রতি। হাসিনার ক্ষেত্রে সে প্রভু হলো ভারত সরকার। কারণ, ভারতীয় গোয়েন্দাদের সহযোগিতা নিয়েই শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের রাতে ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় বসেছে। আন্তর্জাতিক মহলে এরূপ একটি অবৈধ সরকারকে গ্রহণযোগ্য করতেও নানা দেশের রাজধানীতে কাজ করছে ভারতীয় কূটনৈতীক মহল। ফলে ভারতের প্রতি দায় পরিশোধ করতেই শেখ হাসিনা মাঠে নামিয়েছে তার লাঠিয়াল বাহিনীকে। ভিপি নূর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্রদের দ্বারা নির্বাচিত হলে কী হবে ক্যাম্পাসে প্রবেশে তাঁর উপর নিষেধাজ্ঞা লাগিয়েছে। একাত্তরে ইয়াহিয়া খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল নির্বাচনী বিজয়ের পরও মুজিবের হাতে ক্ষমতা দেয়া হয়নি। অথচ শেখ হাসিনা একই আচরণ করছে ভিপি নূরের বিরুদ্ধে।

যারা ভিপি নূরের মিছিল ও মিটিংয়ে বাধা দিচ্ছে তারা সেটি করছে “মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ”য়ের ব্যানারে। প্রশ্ন হলো, ভারত-বিরোধী আওয়াজ স্তব্ধ করার লক্ষ্যে “মুক্তিযুদ্ধ”য়ের নাম বা চেতনা ব্যবহারের হেতু কী? হেতুটি বিশাল। লক্ষ্য এখানে ১৯৭১’য়ে বাংলাদেশের জন্মে ভারতের অবদানকে স্মরণ করিয়ে দেয়া। তাদের কথা, বাংলাদেশের মাটিতে বসে ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলার অর্থ ভারতের প্রতি নিমক-হারামী। এটি গাদ্দারি। সেটি হতে দিতে তারা রাজী নয়।  “মুক্তিযুদ্ধ”য়ের চেতনাটি হলো ভারতের ভাত-মাছ, লবন-পানি খেয়ে তাদের অর্থ,অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ নিয়ে ভারতের আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় মুসলিম শক্তিকে খর্ব করা এবং ভারত বিরোধীদের নির্মূলে ভারতকে সাথে নিয়ে যুদ্ধ করা। যুদ্ধ শেষে তাজুদ্দীনের ৭ দফা এবং মুজিবের ২৫ দফার গোলামী চুক্তি মেনে নিয়ে বসবাস করা।

বাংলাদেশের মাটিতে পাকিস্তানের বিলুপ্তি ঘটেছে। একাত্তরের রাজাকারদের অধিকাংশেরই মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু যা হয়নি তা হলো ভারত-বিরোধী চেতনার বিলুপ্তি। বরং বিপুল ভাবে সেটি বেড়েছে। ভারতকে যারা একাত্তরে চিনতে ভূল করেছে, তারা এখন চিনছে। চিনতে সাহায্য করছে যেমন মুজিবের বাকশালী স্বৈরাচার তেমনি শেখ হাসিনার ভোট ডাকাতি ফ্যাসিবাদ। ভারতের ভয় দ্রুত বাড়ছে বর্ধিষ্ণু ভারত বিরোধীতার কারণে। তাই ভারত চায়, বাংলাদেশীদের মনে ভারতের একাত্তরের অবদানকে স্মরণ করিয়ে দেয়া। সেটি মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নামে। একাত্তরে যাদের ঘাড়ে অস্ত্র রেখে ভারত পাকিস্তান ভেঙ্গেছিল, এখনো তাদের ঘাড়ে অস্ত্র রেখেই ভারত-বিরোধীদের নির্মূল করতে চায়। চায়, একাত্তরেরর ন্যায় আরেকটি যুদ্ধ। সেটি করতেই প্রতিটি ভারত-বিরোধীই চিহ্নিত হচ্ছে রাজাকার রূপে। ফলে বিলুপ্তি ঘটছে না “মুক্তিযুদ্ধ” ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার। সে চেতনা ও যুদ্ধ আছে বলেই সে চেতনাধারীদের নির্মম প্রহারে প্রাণ হারালো বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ। এবং গুরুতর ভাবে আহত হলো ভিপি নূর ও তাঁর সাথীরা।

বাংলাদেশীদের সামনে পথ মাত্র দুটি। এক). “মুক্তিযুদ্ধ” ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে শেখ হাসিনা ও তার গুন্ডাগণ ভারতসেবী যে দুর্বৃত্ত গোলামী শাসন প্রতিষ্ঠা দিয়েছে সেটি মাথা নত করে মেনে নেয়া। এটিই হলো শেখ মুজিব, শেখ হাসিনা ও সিকিমের লেন্দুপ দর্জির পথ। এ পথটি হলো বাকশালী ফ্যাসিবাদ, গুম-খুন, ভোট ডাকাতি এবং রাস্তায় লাশ হওয়ার পথ। দুই). ভারতের গোলামী মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা নিয়ে বাঁচার পথ। স্বাধীনতার এ পথে চলতে হলে ভারতসেবীদের কাছে রাজাকার রূপে চিহ্নিত হওয়া ছাড়া উপায় নেই। কারণ, একাত্তরের রাজাকারদের চেতনা নিয়ে অনেকের ভূল ধারণা থাকলেও সেরূপ ভূল ভারত ও ভারতসেবীরা করে না। রাজাকারদের চিনতে তারা কখনোই সংশয়ে পড়ে না। তাদের জানা রাজাকারের চেতনার মূল কথাটি হলো, ভারতের গোলামী মুক্ত হয়ে স্বাধীন মুসলিম শক্তি রূপে বাঁচার চেতনা। সে সাথে ভাষা ও ভূগোলের সীমানা ডিঙ্গিয়ে বিশ্ব-মুসলিমদের সাথে প্যান-ইসলামিক ভাতৃত্বের চেতনা। সে চেতনার কারণেই ১৯৭১’য়ে বহু হাজার সাহসী যুবক পাকিস্তানকে বাঁচিয়ে রাখতে চেয়েছিল এবং ভারতসেবীদের পক্ষে বিশাল প্লাবন দেখেও তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছিল। কারণ, তারা বুঝেছিল ক্ষুদ্র ভূগোলে স্বাধীনতা বাঁচে না। সে জন্য বৃহৎ ভূগোল চাই। ১৯৪৭’য়ে তৎকালীন  বাঙালী মুসলিম নেতাগণ সেটি বুঝেছিল বলেই নিজ গরজে পূর্ব বাংলাকে পাকিস্তানভূক্ত করেছিল।

ইসলামী ভাতৃত্বের চেতনার ধারকগণ একাত্তরে পরাজিত হলেও সে চেতনাটি মারা যায়নি, বরং প্রবলতর হচ্ছে ক্যাম্পাসে, রাজপথে ও সোসাল মিডিয়াতে। ভারতীয় মুসলিমগণ নির্যাতিত, ধর্ষিতা ও নিহত হলে ঢাকার রাস্তায় তাই আওয়াজ উঠে। ভারত ও ভারতসেবী হাসিনার কাছে ভারতবিরোধী সে আওয়াজটি অসহ্য। এরূপ প্রতিবাদি আওয়াজকে তারা রাজাকারের আওয়াজ মনে করে। এজন্যই আবরার ফাহাদের ন্যায় একজন নিরেট দেশপ্রেমিক মেধাবী ছাত্রকে ভারতসেবী অসভ্য স্বৈরশক্তির হাতে লাশ হতে হলো। এবং আহত হলো ভিপি নূর ও তাঁর সাথীরা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী ভারতসেবীদের শাসনে কি এটিই স্বাভাবিক নয়? ফলে এরূপ বর্বর দমনমূলক শাসন যেমন মুজিব আমলে দেখা গেছে, দেখা যাচ্ছে হাসিনার আমলেও। ২৫/১২/২০১৯ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *