বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের স্নায়ুযুদ্ধ
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on March 27, 2019
- Bangla Articles, বাংলাদেশ
- No Comments.
যুদ্ধের শুরু সাতচল্লিশ থেকেই
যুদ্ধ শুধু গোলাবারুদে হয় না। অতি আগ্রাসী ও দেশধ্বংসী যুদ্ধ হয় গোলাবারুদ ছাড়াই। পূর্ব ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক দেশগুলোকে পাশ্চাত্যের পুঁজিবাদী শক্তির প্রভাব বলয়ে বন্দী করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্রদের একটি গোলাও ছুঁড়তে হয়নি। সেটি সম্ভব হয়েছে স্নায়ুযুদ্ধের ময়দানে বিশাল বিজয়ের ফলে। এটি এক শীতলযুদ্ধ। এখানে জয়-পরাজয় হয় অতি নীরবে। পূর্ব ইউরোপের এ দেশগুলো মার্কিন স্বার্থের এতটাই তাঁবেদারে পরিণত হয়েছে যে,পোলান্ড, আলবানিয়াসহ কয়েকটি দেশের সৈন্যরা আফগানিস্তান ও ইরাকে মার্কিন সৈন্যদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধও লড়েছে। স্নায়ু যুদ্ধ লড়তে হলে প্রয়োজন পড়ে বিশাল গুপ্তচর বাহিনীর,এবং সে সাথে সাংস্কৃতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও মিডিয়া সৈনিকের।ভারত সে যুদ্ধটি বাঙ্গালীর চেতনা রাজ্যে ১৯৪৭থেকেই লড়ে আসছে।তখন সে যুদ্ধের লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানের বিনাশ। আর এখন লক্ষ্য, বাংলাদেশের বিনাশ। গোলাবারুদের যুদ্ধে দেশ দখল হয়। আর স্নায়ুযুদ্ধে অধিকৃত হয় শত্রুদেশের জনগণের মনের ভূগোল। পরাজিত নাগরিকগণ তখন মানসিক গোলামে পরিণত হয়।
স্নায়ু যুদ্ধে ভারতের বিজয়টি বিশাল। ভারতের হাতে পাকিস্তানে পরাজয়ের শুরুটি মূলতঃ স্নায়ুযুদ্ধের ময়দানে। ভারত কাশ্মীর, হায়দারাবাদ ও সিকিমের ন্যায় পূর্ব পাকিস্তানের মানচিত্র দখলে নিতে না পারলেও পূর্ণ দখলদারি প্রতিষ্ঠা করেছিল শেখ মুজিব, তাজুদ্দীনসহ আওয়ামী নেতা-কর্মীদের মনের মানচিত্রে। একাত্তরের বহু আগেই এভাবে অধিকৃত হয় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের লক্ষ লক্ষ ছাত্র-শিক্ষক,সাংস্কৃতিক কর্মী ও বুদ্ধিজীবীর মনের ভূবন।অথচ ব্রিটিশ আমলে বাঙালী মুসলমানের মনের জগতে প্রবল ভাবে বেড়ে উঠেছিল প্যান-ইসলামিক চেতনা, মুসলিম ভাতৃত্ব ও ইসলামের বিজয়ে গভীর অঙ্গিকার।এবং উচ্চারিত হতো “নারায়ে তকবীর,আল্লাহু আকবর” ধ্বনি।বাংলাই ছিল সে সময় ভারতের বুকে মুসলিম জাগরণের মূল ঘাঁটি। ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান খেলাফত বাঁচাতে এই বাংলার বুকেই গড়ে উঠেছিল ইতিহাসের সর্বপ্রথম গণআন্দোলন “খেলাফত আন্দোলন”। প্যান-ইসলামিক সে চেতনা নিয়ে তারা অবাঙালী মুসলমানদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পাকিস্তান আন্দোলন করেছে এবং বিজয়ীও হয়েছে।সৃষ্টি হয়েছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তান –যার সংখ্যাগরিষ্ঠ নাগরিক ছিল বাংলাভাষী। কিন্তু ভারত-পরিচালিত স্নায়ুযুদ্ধের প্রকোপে সে চেতনার অচিরেই মৃত্যু ঘটে। ভারতীয় হিন্দুদের দখলে যায় লক্ষ লক্ষ বাঙালী মুসলমানের চেতনা রাজ্য। ফলে অবাঙালী মুসলমানের চেয়ে তখন বেশী আপন হতে শুরু করে ভারতের অবাঙালী কাফের। তেমন একটি আদর্শিক পরাজয়ের কারণেই ভারতের কোলে আশ্রয় নিতে মুজিব ও তার অনুসারিদের বিন্দুমাত্র শরম হয়নি। নিজদেশের ফজলুল হক,সহরোয়ার্দী, নাজিমুদ্দীনের চেয়ে ভারতের গান্ধি, নেহেরুর চেতনাই তাদের কাছে আপন মনে হয়। আর মন যে দিকে যায়, দেহও সেদিকে যায়। একাত্তরে তাই ভারতের অস্ত্র নিয়ে নবদিক্ষিত এ সেক্যুলারিস্টরা ভারতীয় এজেন্ডা পূরণে রণাঙ্গণে নেমেছিল। সাতচল্লিশের বাঙালী মুসলমানদের চেতনা ও বিশ্বাসের সাথে একাত্তরে এসে এভাবেই ঘটে সবচেয়ে বড় গাদ্দারি। এবং সেটি মুজিবের নেতৃত্বে। শেখ হাসিনাসহ আজকের আওয়ামী বাকশালীদের চেতনার রাজ্যে আজও সে ভারতীয় দখলদারিটি প্রকট। দেশ অধিকৃত হলে সে দেশের নদীর পানি ইচ্ছামত তুলে নেয়া যায়। বুকের উপর দিয়ে ইচ্ছামত ট্রানজিটও নেয়া যায়। বাজারও দখলে নেয়া যায়। ইচ্ছামত সম্পদ-লুট ও শিল্প-ধ্বংসও তখন সহজ হয়। মানুষ মারতে দুর্ভিক্ষও সৃষ্টি করা যায়। ভারত তো বাংলাদেশে সেগুলিই করছে। সেটি যেমন মুজিব আমলে, তেমনি হাসিনার আমলে।
শত্রুর যুদ্ধ কখনোই শেষ হয়। শুধু রণাঙ্গন ও কৌশল পাল্টায় মাত্র। রণকৌশল রূপেই ভারত এখন গোলাবারুদ ব্যবহার না করে শুরু করেছে ব্যাপক প্রচারণা যুদ্ধ। স্নায়ু যুদ্ধের মূল অস্ত্রটি হলো প্রচার। আর ভারত সে অস্ত্রের সংখ্যা বিপুল হারে বাড়িয়েছে। একাত্তরের আগে ছিল শুধু কলকাতা ও আগরতলা থেকে আকাশবানীর বেতার প্রচারণা। আর এখন বাংলাদেশের সীমান্ত ঘিরে অসংখ্য ভারতীয় চ্যানেল। বাংলাদেশের মানুষ যত না বাংলাদেশী চ্যানেল দেখে তার চেয়ে বেশী দেখে ভারতীয় চ্যানেল। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতপন্থিদের পত্রিকাও অসংখ্য। এসব পত্রিকা বহু কলামিস্ট ভারতীয়দের চেয়েও অধিক ভারতীয়। তাছাড়া তাদের পত্রিকায় ভারতীয় কলামিস্টগণও লিখছে মূক্তহাতে।একাত্তরের আগে সেটি ছিল না। ভারতের এ স্নায়ু যুদ্ধটি যে শুধু বাঙালী সেক্যুলারিস্টদের চেতনায় দখলদারি প্রতিষ্ঠা করেছে তা নয়, আঘাত হেনেছে কিছু কিছু ইসলামি দলের দুর্গেও। ফলে অধিকৃত হচ্ছে বহু ইসলামপন্থির মনের ভূবনও। তাই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের সামরিক বিজয় নিয়ে তারাও বিজয় মিছিল করে। ভারতের বিজয়ের এ ধারা আরো কিছু কাল চলতে থাকলে সে দিন আর বেশী দূরে নয় যখন ১৯৪৭ সালের পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা ও আজকের পৃথক বাংলাদেশ তাদের কাছে অপ্রয়োজনীয় মনে হবে। অখন্ড ভারতের মোহে তখন তারাও ভারতীয়দের সাথে গলা মিলিয়ে “জয়হিন্দ” স্লোগান তুলবে। জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের অনুসারিরা তো ভারতীয় কংগ্রেসের সাথে একই মঞ্চে সে অখন্ড ভারতের জিকির ১৯৪৭ সালের আগে থেকেই দিয়ে আসছে।
ভারত একাত্তরে তার সশস্ত্র বাহিনীকে তুলে নিলেও স্নায়ুযুদ্ধের সৈনিকদের তুলে নেয়নি। বরং তাদের সংখ্যা বিপুল ভাবে বাড়িয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিটি শহর,প্রতিটি থানা ও প্রতিটি ইউনিয়নে এখন ভারতীয় গুপ্তচর।ভারতপন্থি হাজার হাজার সৈনিকের অবস্থান যেমন বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকা ও টিভিতে, তেমনি প্রশাসন,শিক্ষাসংস্কৃতি, সামরিক ও বেসামরিক বাহিনীতে। এ সৈনিকদের প্রতিপালনে ও তাদের বিজয়ী করতে ভারত বিপুল অর্থও ব্যয় করছে। এমন কি ভারতীয় পত্রিকায় প্রকাশ, এবার আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করতে ভারতের বিনিয়োগ ১০০ কোটি রুপী। গত নির্বাচনে ছিল ৮০০ কোটি রুপী। এত বিনিয়োগের কারণ, ভারতীয় বর্ণহিন্দুদের উচ্চাশা। তারা চায় বিশ্বশক্তির মর্যাদা। সে লক্ষ্যে চাই বৃহৎ ভূগোল, চাই শত্রুমূক্ত দক্ষিণ এশিয়া।এজন্যই ১৯৪৭ সালে ভারত ভেঙ্গে পাকিস্তানের সৃষ্টি তাদের পছন্দ হয়নি। শুরু থেকে তাই দেশটির অস্তিত্বকেও তারা মেনে নিতে পারিনি।কারণ তাতে ভারতের ভূগোলই শুধু ছোট হয়নি, জনসংখ্যারও এক-তৃতীয়াংশ তখন বেরিয়ে গিয়েছিল।
ভারতের লক্ষ্য এখন দ্বিমুখী। এক, সুযোগ পেলেই ভূগোল বাড়ানো। দুই, প্রভাব বাড়ানো। ভূগোল বাড়াতে গিয়েই দখল করে নিয়েছে কাশ্মীর, হায়দারাবাদ, জুনাগড়, মানভাদর ও সিকিম। যে দেশগুলোকে ভারত এখনও গিলতে পারিনি, চায় তাদের উপর প্রভাব বাড়াতে। ভারত চায়,নিজ সীমান্ত ঘিরে সিকিম, ভুটান, নেপাল, শ্রীলংকার ন্যায় শক্তিহীন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দেশ।চায় সেসব দেশে নিজ-পণ্যের উম্মুক্ত বাজার। সেটি যেমন শিল্পপণ্যের,তেমনি সাংস্কৃতিক পণ্যের। পাকিস্তান এখন পারমানবিক অস্ত্রধারি একটি দেশ। সেটি ভারতের পছন্দ হয়নি। দেশটি আরো টুকরো করা তাই ভারতীয় বিদেশ নীতি। বাংলাদেশ ১৬ কোটি মানুষের দেশ। ফলে সম্ভাবনা রয়েছে পাকিস্তানের ন্যায় এক শক্তিশালী বাংলাদেশ উদ্ভবের। কিন্তু সেটি ভারতের পছন্দ নয়। ফলে বাংলাদেশকে পঙ্গু করাও ভারতের স্ট্রাটেজী। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের স্নায়ুযুদ্ধের মূল হেতু তো সেটিই।
ভারতীয়দের ইসলাম-আতংক
গত ২৮/১১/১৩ তারিখে কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা বাংলাদেশের উপর একটি রিপোর্ট ছেপেছে। রিপোর্টটি লিখেছেন নয়াদিল্লি থেকে জনৈক অগ্নি রায়। রিপোর্টটি পড়ে মনে হয়, এটি কোন সাংবাদিকের হাতে মাঠ-পর্যায় থেকে সংগৃহীত রিপোর্ট নয়। বরং লেখা হয়েছে ভারতীয় গোয়েন্দাদের সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে। উক্ত রিপোর্টে বলা হয়েছেঃ “ব্যাপক হিংসার ছক রয়েছে জামায়াতের,দিল্লির চিন্তা বাড়িয়ে নতুন রিপোর্ট বিদেশ মন্ত্রকের হাতে এসেছে। তাতে বলা হযেছে, ভোটের আগে বাংলাদেশে হিংসা ও নাশকতার বন্যা বইয়ে দেওয়ার জন্য তোড়জোড় করেছে জামায়াতে ইসলামি। এজন্য বিশাল তহবিল গড়া হয়েছে। আরো বলা হয়েছে, “শুধু জামায়াতই নয়,সন্ত্রাস-নাশকতার কাজে সঙ্গে রয়েছে বাংলাদেশের আনাচে কানাচে গোপনে বেড়ে ওঠা অন্তত ১০৮টি মৌলবাদী জঙ্গি সংগঠন। সাউস ব্লকের দুশ্চিন্তা আরও বাড়িয়ে,রিপোর্টে একথাও বলা হচ্ছে, রাস্তায় লড়ার জন্য কিশোরদের নিয়ে বিশেষ একটি কর্মীবাহিনী গড়া হচ্ছে। এদের মধ্যে বাছাই করা একটি অংশকে ফিদায়েঁ (তথা শহীদ) হওয়ার মতো মানসিক প্রশিক্ষণও দেয়া হচ্ছে।”
হিন্দু-মৌলবাদ ও হিন্দু-সন্ত্রাসের দেশ ভারত। সে সন্ত্রাসের শিকার হলো সেদেশের সংখ্যালঘু মুসলমানেরা। মুসলিম নির্মূল ও তাদের সহায়-সম্পদ ধ্বংস বা দখলে নেওয়াই দেশটির হিন্দু রাজনীতির সংস্কৃতি। সে সংস্কৃতির ধারায় ভারতীয় হিন্দুদের জীবনে যেমন প্রতিবছর বহুবার পুঁজা-পার্বণ আসে,তেমনি রক্তক্ষয়ী দাঙ্গাও আসে। মাত্র মাস খানেক আগে উত্তর প্রদেশের মুজাফ্ফর নগর জেলায় ঘটে গেল ভয়াবহ মুসলিম বিরোধী দাঙ্গা। সে দাঙ্গায় হত্যা করা হয়েছে বহু মুসলিম নারীপুরুষ ও শিশুকে। দগ্ধিভূত করা হয়েছে বহু ঘরবাড়ী ও দোকান পাঠ। বহু হাজার মুসলিম পরিবার নিজ ঘরবাড়ী ছাড়া উদ্বাস্তু। তারা আশ্রয় নিয়েছে প্রদেশের অন্য জেলায় বা অন্য নগরীতে। তারা নিজ গ্রাম ও নিজ বাড়ীতে ফিরতে পারছে না। না ফেরার কারণ,নিজ গ্রাম ও নিজ ঘরে ফিরলেই দেখতে পাবে,তাদের ভাই-বোন,পিতা-মাতা ও সন্তানদের যারা হত্যা করেছে এবং তাদের ঘরবাড়ী ও দোকানপাঠ জ্বালিয়েছে,তাদের সামনে তারাই বুকফুলিয়ে হাঁটছে। এত অপমান নিয়ে বাঁচাটি কি কখনো সুখের হয়? সরকার তাদের জানমালের কোন নিরাপত্তা দিতে পারছে না।
জঙ্গলে আগুন লাগলে সে আগুণ থামানোর কেউ থাকে না। হাজার হাজার গাছপালা ছারখার করার পর সেটি নিজে নিজেই থামে। তেমনি মানব অধ্যুষিত আরেক জঙ্গল হলো ভারত। গত ১৫ মার্চ ২০১৯’য়ে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দু’টি মসজিদে ৫০ মুসলিমকে হত্যা করা হয়। ঘটনার সাথে সাথে দেশের প্রধানমন্ত্রী সেখানে ছুটে গেছেন। শহরে পুলিশ নামানো হয়। মুসলিমদের কাছে গিয়ে তিনি সমবেদনা জানান। কিন্তু ভারেত সে সবের বালাই নাই। একবার মুসলিম বিরোধী দাঙ্গা দেশটিতে শুরু হলে সেখানে দাঙ্গাও থামানোর কেউ থাকে না। বহু শত নারীপুরুষ হত্যা ও বহুহাজার ঘরবাড়ি পোড়ানোর পর সেটি থামে। তাই যখন দিন-দুপুরে ভারতের ঐতিহাসিক বাবরি মসজিদটির ধ্বংসে হাজার হাজার মানুষ লিপ্ত হয় তখন সে বর্বর কাজটি রুখার কেউ ছিল না। ভারতের কোন মন্ত্রী,প্রশাসনের কোন কর্মকর্তা বা কোন রাজনৈতিক নেতাই সে ধ্বংসকর্মকে প্রশংসনীয় কর্ম বলে বিবৃতি দেননি।কিন্তু তারপরও সে বর্বর কর্মটি রুখার জন্য সমগ্র ভারতে কেউ ছিল না। সেটি দিনভর ঘটেছে অসংখ্য পুলিশ,প্রশাসনের হাজার হাজার কর্মকর্তা ও লক্ষ লক্ষ রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের চোখের সামনে। টিভির দৌলতে মসজিদ ধ্বংসের সে চিত্রটি দেখেছে প্রায় সমগ্র ভারতবাসী। স্বচোখে দেখেছেন তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরসীমা রাও। কিন্তু কেউ কোন উদ্যোগ নেননি সেটি থামানোর।দিনের আলোয় পুলিশ সেদিন কোন অপরাধীকে খুঁজে পায়নি।একই অবস্থা হয়েছে গুজরাতের মুসলিম বিরোধী নিধন যজ্ঞে। যখন সেখানে মুসলিমদের হত্যা, তাদের ঘরবাড়ী এই হলো ভারতের প্রকৃত অবস্থা।
ভয় শক্তিশালী বাংলাদেশের
নিজদেশের ভয়ানক সন্ত্রাসীদের নিয়ে দৈনিক আনন্দবাজারের কোন মাথা ব্যথা নেই। কারণ,হিন্দু সন্ত্রাসীদের হাতে মুসলমানদের জানমালের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হলেও তাতে ভারতের সেক্যুরিটির কোন সমস্যা হয় না। আনন্দবাজারের ভাবনা তো ভারতের বিশ্বশক্তি রূপে বেড়ে উঠা নিয়ে।মুসলমানদের নিরাপত্তা ড্রেনে গিয়ে পড়লেও তা নিয়ে তাদের সামান্যতম ক্ষোভ নেই। তারা বরং ভারতের বিপদ দেখে প্রতিবেশী দেশে ইসলামের জাগরণ দেখে। সেটি যেমন আফগানিস্তানে। তেমনি পাকিস্তানে ও বাংলাদেশে। তাই এসব দেশে ইসলাম রুখতে তাদের অর্থ, অস্ত্র ও মেধার বিনিয়োগও বিশাল। আফগানিস্তানে তালেবানদের বিজয় রুখতে তারা মার্কিন হানাদার বাহিনীর সাথে কাঁধে কাঁধ যোগ দিয়েছে। সেনাবাহিনী ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের নিজদেশে এনে প্রশিক্ষণও দিচ্ছে। ইসলাম রুখার সে গরজ নিয়েই বাংলাদেশে তারা আওয়ামী লীগ,জাতীয়পার্টি ও বামপন্থিদের পিছনে বিপুল বিনিয়োগ করছে। এবং তাদেরকে ইসলামের বিরুদ্ধে এক মঞ্চে এনে খাড়া করেছে।
বাংলাদেশে ইসলামপন্থিদের শক্তি বাড়লে তাতে ভারতের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ বাড়বে, এবং দেশটির নিজস্ব রাজনীতিতে অশান্তি বাড়বে -বিশেষ করে পাশ্চবর্তী পশ্চিমবঙ্গ,সেটি নিয়ে ভারত সরকার আতংকিত। আতংক আনন্দবাজারেরও। রিপোর্টটি পড়ে মনে হয়, ইসলামের এমন একটি জাগরণ নিয়ে ভারত যেন ভাবতেই পারিনি। আজ থেকে ৫ বছর আগে তাদের কল্পনাতেও সেটি আসেনি। তারা ভাবে,বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল হলো আওয়ামী লীগ। কলেকৌশলে ক্ষমতাদখল এবং বাহুবলে রাজপথ দখলে নেয়ার সামর্থ যেন একমাত্র তাদেরই। ভারতীয় পত্রপত্রিকা ও নীতি নির্ধারকদের সে ধারণাটি আরো প্রবলতর হয়েছিল শাহবাগ মোড়ে গণজাগরণ মঞ্চের আয়োজন থেকে। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে তারা ছিল হঠাৎ সৃষ্ট বুদবুদ। এবং তারা বেড়ে উঠেছিল সরকারি আয়োজনে। কিন্তু বাংলাদেশে রাজনীতির টেবিল উল্টে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে নতুন বাস্তবতা। গণজাগরণ মঞ্চের নেতারা এখন দেশের কোথাও প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করার সামর্থ রাখেনা। সে সামর্থ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীগণের নেই। তাদের নামতে হয় পুলিশের পাহারাদারিতে। মফস্বলের নেতারা তো বহু আগে থেকেই নিজ নিজ এলাকা ছেড়ে ঢাকায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশের মত ১৬ কোটি মানুষের একটি দেশে একাকী কোন সংগঠনের পক্ষে দেশব্যাপী হরতাল করে দেশকে অচল করে দেয়া যা তা ব্যাপার নয়। কিন্তু সে সামর্থ যে জামায়াতের আছে, এমনকি ছাত্র শিবিরেরও আছে, সে প্রমাণটিও বার বার মেলেছে। আর সেটি আতংকিত করেছে যেমন দৈনিক আনন্দবাজারকে, তেমনি ভারতীয় প্রশাসনকে।
ভ্রষ্ট ভারতীয় বিচারবোধ
আনন্দবাজারের ভ্রান্তিটা হলো, ইসলামের পক্ষে বাংলাদেশের জনগণের মাঝে যে বিপুল জনসমর্থণ আছে সেটি তারা দেখতে পায়নি। আর সে অন্ধত্বটি তাদের মনের। মন যা জানে না,চোখ কি তা দেখতে পায়? আওয়ামী বাকশালীদের ন্যায় তারাও জামায়াত-শিবিরকে স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি মনে করে। যারা একাত্তরে বাংলাদেশ সৃষ্টির বিরোধীতা করলো তারা বাংলাদেশের রাজনীতিতে শক্তিশালী দলে পরিণত হবে সেটি তারা ভাবতেই পারিনি। তবে একাত্তরে পাকিস্তান ভাঙ্গার বিরোধীতা করার অর্থ যে বাংলাদেশের স্বাধীন অস্তিত্বের বিরোধীতা করা নয় –তা নিয়ে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মনে কোন দ্বিধা-দ্বন্দ নেই। এমন একটি অটল বিশ্বাসের কারণেই একাত্তরের রাজাকারদের জনগণ ভোট দেয়,তাদেরকে মন্ত্রী রূপে বরণও করে নেয়। তাই শাহ আজীজুর রহমানকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী,আব্দুর রহমান বিশ্বাস বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট এবং সালাউদ্দীন কাদের চোধুরি ও আব্দুল আলীমদের মত ব্যক্তিদের মন্ত্রীরূপে মেনে নিতে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষদের কোনরূপ অসুবিধা হয়নি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তাতেও কোন রূপ ব্যাঘাত ঘটেনি। অথচ ভারত ও ভারতের প্রতি অনুগতদের পক্ষে তাদেরকে মেনে নেয়াটি অসম্ভব। তাদের বিজয়ে তারা বরং নিজেদের নিরাপত্তার প্রতি হুমকি দেখে। তাই এখন ষড়যন্ত্র চলছে তাদেরকে আওয়ামী সেবাদাসদের দিয়ে তাদেরকে ফাঁসীতে ঝুলিয়ে হত্যার। তাদের দৃষ্টিতে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি রূপে গণ্য হওয়ার জন্য শর্ত হলো,ভারতপন্থি হওয়া,একাত্তরে পাকিস্তান ভাঙ্গার পক্ষ নেয়া এবং সর্বদা ইসলামের বিপক্ষে অবস্থান নেয়া। আর এমন একটি ধারণার কারণে একাত্তরে যারা অখন্ড পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করেছিল,তারা যদি আজ বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষায় প্রাণদানও করে তবু্ও আওয়ামী বাকশালীগণ তাদেরকে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি রূপে গণ্য করতে রাজী নয়। অনুরূপ বিচার ভারতীয়দেরও। জামায়াত ও শিবিবের বহুসদস্যের জন্ম একাত্তরের পর। তাদের জীবনে পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করার যেমন সুযোগই জুটিনি, তেমনি সুযোগ মেলেনি পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশ সৃষ্টির কাজে অংশ নেয়ারও। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুরক্ষায় তারা যদি আজ জানমালের কোরবানীও দেয়,তবুও চিত্রিত হচ্ছে স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি রূপে। তাদের কথা, ইসলামি চেতনাধারি কোন ব্যক্তি বা দলই একাত্তরে পাকিস্তান ভাঙ্গা ও বাংলাদেশ সৃষ্টির পক্ষ নেয়নি। এ কাজ তো ছিল আওয়ামী সেক্যুলার ও সোসালিস্টদের কাজ। ফলে আজ তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি হয় কি করে? আর একাত্তরে যারা স্বাধীনতার শত্রু পক্ষে ছিল তারা জনসমর্থণ পাবে সেটি কি বিশ্বাস করা যায়? তাদের ডাকে দেশে হরতাল হবে সেটিই বা কি করে মেনে নেয়া যায়? ফলে তাদের হিসাব মেলে না? প্রশ্ন হলো,ইসলাম বিরোধী এমন রুগ্ন মানসিকতা নিয়ে কি হিসাব মেলানো যায়?
তবে জনগণ ঠিকই বুঝেছে,একাত্তরে পাকিস্তানের বিভক্তিকে যারা সমর্থণ করেনি তাদের সে চেতনা ও বিচারবোধটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা-বিরোধী ছিল না। এজন্যই সংসদ নির্বাচনে শাহ আজিজুর রহমান, খান আব্দুস সবুর খান, সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরি, আব্দুল আলীমের ন্যায় বহু ব্যক্তিকে জনগণ বিপুল ভোটে বার বার নির্বাচিত করেছে। এবং পরাজিত করেছে বহু মুক্তিযোদ্ধাদের। ভারত ও আওয়ামী বাকশালীদের কাছে তাদের সে বিজয় ভাল না লাগলেও সেটিই বাস্তবতা। তাছাড়া কোন দলের জনপ্রিয়তা কি সব সময় এক রকম থাকে? আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তাও যে চিরকাল বেঁচে থাকবে,সেটিও কি ভাবা যায়? মানুষের চাওয়া-পাওয়াতেও তো দিন দিন পরিবর্তন আসে। দিন বদলের সাথে সাথে তাই রাজনীতিও বদলে যায়।তখন নতুন নতুন দল জনপ্রিয়তা পায়।
বাকশালীদের কুকর্ম
আওয়ামী লীগ এখন গণধিকৃত। সেটির কারণ, হাসিনার সীমাহীন স্বৈরাচার এবং রাষ্ট্রের উপর আওয়ামী বাকশালীদের সীমাহীন ডাকাতি। ২০১৪ এবং ২০১৮’য়ের ভোট ডাকাতির পর জনগণের মনে সে ঘৃণা আরো বেড়েছে। তাদের স্বৈরাচারের ফলে অসম্ভব হয়েছে বিরোধী দলগুলির পক্ষে রাজপথে সভা-সমাবেশ করা। জামায়াত-শিবিরের নেতাদের উপর চলছে নির্যাতন। আওয়ামী বাকশালীদের লাগাতর ডাকাতি থেকে দেশের শেয়ার বাজার, রাষ্ট্রীয় ব্যাংক, সরকারি প্রকল্পের টেন্ডার, খাসজমি, এমন কি বিশ্বব্যাংকের ঋণের টাকা -কোন কিছুই রেহাই পায়নি। কোন দেশের জনগণ কি এমন ডাকাতদের ভোট দেয়? আওয়ামী লীগও সেটি বুঝে। এজন্যই নির্বাচনে বিজয়ী করার জন্য প্রয়োজন পড়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিলুপ্তি এবং সে সাথে একটি ষড়যন্ত্রের নির্বাচন। কিন্তু ভারত বাংলাদেশের রাজনীতির এ নতুন বাস্তবতাটি বুঝতে রাজী নয়, মেনে নিতেও রাজী নয়। মেকী জনপ্রিয়তার দোহাই দিয়ে আওয়ামী লীগের পুনঃনির্বাচনকে তারা জায়েজ বলতে চায়। আর সে ষড়যন্ত্রমূলক বিজয় রুখাটাই বাংলাদেশের রাজনীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যারাই সে লক্ষ্যে আপোষহীন দৃঢ়তা নিয়ে ময়দানে নামছে জনগণ তাদেরকেই স্বতঃস্ফুর্ত সমর্থণ দিচ্ছে। আওয়ামী বাকশালীদের ক্ষমতা থেকে নামানোর বিষয়টি জামায়াত-শিবিরের কাছে নিছক রাজনীতির বিষয় নয়, সেটি তাদের অস্তিত্ব বাঁচানোর বিষয়। ফলে তারা স্বৈরাচার-বিরোধী সংগ্রামে আপোষহীন হবে এবং সে লক্ষ্যে ত্যাগী হবে সেটি বাংলাদেশের জনগণও বুঝে। ফলে তাদের জনসমর্থণ যেমন বাড়ছে, তাদের ডাকে স্বতঃস্ফুর্ত হরতালও হচ্ছে।
গ্রামে ডাকাত পড়লে দলমত নির্বিশেষে হাতের কাছে যা পায় তা নিয়ে সবাই রাস্তায় নামে। তেমনি দেশ ডাকাতদের কবলে পড়লে তখন সমগ্র দেশবাসী রাস্তায় নেমে আসে। বাংলাদেশে তো সেটিই হয়েছে। তাই দেশে আজ “হাসিনা হঠাও” আন্দোলনের নামে যা কিছু হচ্ছে তার পিছনে যে শুধু জামায়াতে ইসলামী বা ছাত্র শিবির রয়েছে সেটি বললে ভূল বলা হবে। এর পিছনে রয়েছে প্রায় সমগ্র জনগণ। কিন্তু আনন্দবাজারের সাংবাদিকের চোখে সে চিত্র ধরা পড়েনি। ধরা পড়েনি ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনীর চোখেও। বরং সবকিছুর মধ্যে তারা শুধু জামায়াতে ইসলামী ও শিবির দেখতে পায়। এর কারণ ইসলাম-ভীতি। তারা জানে নির্বাচনে সেক্যুলারিস্টদের বিজয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আসবে না। তাতে ভারতের জন্য কোন সমস্যাও দেখা দিবে না। কিন্তু রাজনীতির হিসাব নিকাশ পুরাপুরি পাল্টে যাবে যদি ইসলামী পক্ষের শক্তি বিজয়ী হয়। এজন্যই ইসলামপন্থিদের রুখতে সকল ভারতপন্থি সেক্যুলারিস্ট ও স্বৈরাচারিদের উপর চাপ পড়ে। এরশাদও তাই ষড়যন্ত্রের নির্বাচনে যোগ দেয়। ৪ই ডিসেম্বর ডেইলি স্টার খবর ছেপেছে,“এরশাদ বলেছেন ভারতীয় পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিং তাকে জামায়াত-শিবিরের বিজয় রোধে নির্বাচনে অংশ নিতে চাপ দেয়।” কথিত সে ভারতীয় চাপের কারণে এরশাদের লোকেরা মন্ত্রী সভায় যোগ দেয় এবং নির্বাচনে প্রার্থী হতে কাগজপত্রও জমা দেয়। পানি পানে গরুর ইচ্ছা না থাকলে নদীরে ধারে জোর করে টেনে নিলেও গরু পানিতে মুখ লাগায় না। কিন্তু এরশাদের মধ্য সে দৃঢ়তাটুকুও নেই। নীতিহীনতা ও মেরুদন্ডহীনতা আর কাকে বলে? ভারতের সৌভাগ্য যে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এমন নীতিহীন ও মেরুদন্ডহীনদের সংখ্যা অসংখ্য। ফলে ভারতের পক্ষে কাজ করতে রাজী এমন লোকের অভাব হচ্ছে না।
বাংলাদেশে ইসলামের পক্ষের শক্তিগুলির শক্তি সঞ্চয়ের কারণ যেমন আওয়ামী বাকশালীদের সীমাহীন স্বৈরাচার, দূর্নীতি ও দুঃশাসন, তেমনি ভারতের আধিপত্যবাদী ভূমিকা। ঘরে আগুন লাগলে যারা সে আগুন থামানো জিহাদের নামবে তারা তো জনপ্রিয়তা পাবেই। আওয়ামী লীগ ও তার মিত্রদের কারণে বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে ভারত-অধিকৃত একটি করদ রাজ্যে। যারাই এ অধিকৃতির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলবে তারাই তো দেশের জনপ্রিয় শক্তি। সেটিই তো স্বাভাবিক। তারাই হবে গণধিকৃত যারা পক্ষ নিবে ভারতীয় দখলদারির। আফগানিস্তান যখন সোভিয়েত রাশিয়ার দ্বারা অধিকৃত হলো তখন যারা সে সোভিয়েত আগ্রাসনের পক্ষ নিয়েছিল তারাই আফগানদের মাঝে এবং সে সাথে সমগ্র মুসলিম বিশ্বে সবচেয়ে ঘৃনীত শক্তিতে পরিণত হয়েছিল। এরূপ বর্বর আগ্রাসনকে সমর্থণ করার কারণে শুধু আফগানিস্তানে নয়, সমগ্র বিশ্বজুড়ে বামপন্থিদের জনপ্রিয়তায় ব্যাপক ধ্বস নামে। অপর দিকে লড়াকু মুজাহিদদের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে উঠে। একই অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশে।
আনন্দবাজার লিখেছেঃ জামায়াতের পরিকল্পনা কার্যকর হলে একধাক্কায় (ভারতে) অনুপ্রবেশ বেড়ে যাবে। সেই সঙ্গে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ হয়ে ভারতে সন্ত্রাস আমদানির ঘটনাও বেড়ে যেতে পার। এর ফলে সবচেয়ে বেশী ধাক্কা লাগবে বাংলাদেশ-সংলগ্ন রাজ্য পশ্চিমবঙ্গে।” দৈনিক আনন্দবাজার এ রিপোর্টে হিংসা ছড়ানোর জন্য জামায়াতে ইসলামিকে দায়ী করেছে। অথচ বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশে সবচেয়ে সহিংসতা ঘটেছে পুলিশ, র্যাব, বিজিবী ও সশস্ত্র ছাত্রলীগ ক্যাডারদের হাতে। মাত্র বিগত কয়েকটি মাসেই ২৫০ বিরোধী নেতাকর্মী খুন করা হয়েছে। হাজার হাজার নিরীহ মানুষ রাজপথে আহত হয়েছে। মুসল্লিদের রক্তে রক্তলাল করা হয়েছে শাপলা চত্বর। কিন্তু আনন্দবাজার এ নিয়ে নীরব। আনন্দবাজার লিখেছে, আদালত জামায়াতে ইসলামি নিবন্ধন কেড়ে নিয়েছে। ফলে নিজেদের প্রতীক নিয়ে জামায়াত নেতাগণ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে পারবে না। তবে নিবন্ধন কেড়ে নেয়া যে অন্যায় সেটি আনন্দবাজার বলতে রাজী নয়। যেন দেশ শুধু আওয়ামী বাকশালীদের। অথচ গণতান্ত্রিক দেশে রাজনীতির অধিকার তো সবার। কারা স্বাধীনতার শত্রু,আর কারা মিত্র -সেটি বিচার করার দায়িত্ব তো ভোটারদের। অথচ জনগণের কাছ থেকে সে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়েছে হাসিনা সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত নির্বাচনি কমিশন ও আদালতের অনুগত বিচারকগণ।বাংলাদেশের আদালত অতীতে স্বৈরাচারি জেনারেলদের সামরিক অভ্যুর্থাণকেও ন্যায্য ও সংবিধানসম্মত বলে রায় দিয়েছে। অথচ নিষিদ্ধ ও সংবিধান বিরোধী রূপে ঘোষণা দিয়েছে ইসলামের প্রতি অঙ্গিকার নিয়ে প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলিকে।
আরোপিত যুদ্ধ
আনন্দবাজারের গভীর উদ্বেগ বাংলাদেশে বিপুল হারে মসজিদ-মাদ্রাসা,জিহাদী সংগঠন ও ইসলামি ব্যাংকের ন্যায় প্রতিষ্ঠান বেড়ে উঠা নিয়ে।এ দুশ্চিন্তা আওয়ামী বাকশালীদেরও। বাংলাদেশ হিন্দুসংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ নয়,এটি শতকরা ৯২ভাগ মুসলমানের দেশ। ফলে ভারতীয়গণ যদি ভেবে থাকেন,এখানে মন্দির,মন্ডপ বা রামকৃষ্ণ মিশনের ন্যায় প্রতিষ্ঠান বাড়বে তবে তারা স্বপ্নের জগতে আছে।এদেশে মসজিদ-মাদ্রাসা বাড়বে,ইসলামি সংগঠন বাড়বে,তেমনি ইসলামি ব্যাংক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানও বাড়বে।বাড়বে ইসলাম প্রতিষ্ঠার অঙ্গিকার নিয়ে অসংখ্য রাজনৈতীক দল ও সেগুলির কর্মীবাহিনী।বেগবান হবে শরিয়ত প্রতিষ্ঠার আন্দোলনও। কারণ সেটি না হলে মুসলমানের ঈমান বাঁচেনা। অতএব এ নিয়ে আনন্দবাজার বা ভারতীয় কর্তৃপক্ষের দুশ্চিন্তা বাড়লে তাতে বাংলাদেশের করণীয় কি থাকতে পারে? বাংলাদেশের জনগণ তো ভারতে শরিয়ত প্রতিষ্ঠার দাবি করে না। ভারতীয় হিন্দুমৌলবাদীদের নির্মূলে সেদেশের অভ্যন্তরে যুদ্ধেও নামছে না। তবে ভারত কেন বাংলাদেশে ইসলামি শক্তির বিজয় রুখতে ষড়যন্ত্র পাকায়?
বাংলাদেশের মানুষ যদি বাকশালী স্বৈরাচারের নির্মূল চায়,সেটি তো তাদের মৌলিক মানবিক অধিকার। তারা যদি ইসলামি শরিয়তের প্রতিষ্ঠা চায়,সেটিও তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। সে অধিকারকে খর্ব করার কোন উদ্যোগ নেয়া হলে তাতে যা অনিবার্য হবে সেটি হলো যুদ্ধ। প্রতিবেশী রূপে ভারতের দায়িত্ব হলো,বাংলাদেশের মানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছার প্রতি সম্মান দেখানো। সে সম্মানটুকু না দেখালে ভারত বাংলাদেশে বন্ধু পাবে কীরূপে? দু’দেশের মাঝে সুসম্পর্ক ও শান্তিপূর্ণ সহ-অব্স্থানই বা কীরূপে গড়ে উঠবে? ভারত যে বাংলাদেশের সাথে শান্তি নয় বরং যুদ্ধাবস্থা চায়,আনন্দবাজারের রিপোর্টটি কি সেটিরই আলামত নয়? ভারতীয় কামানগুলো বাংলাদেশের উপর গোলাবর্ষণ না করলেও অবিরাম গোলা বর্ষণ করে যাচ্ছে ভারতীয় পত্রিকাগুলো। সেটি বাংলাদেশের মানুষের চেতনার ভূমিতে। স্মায়ু-যুদ্ধ কালে তো সেটিই ঘটে।বাংলাদেশ তো আজ এমন এক লাগাতর যুদ্ধেরই শিকার।এমন যুদ্ধে কোন ঈমানদার কি নীরব ও নিষ্ক্রীয় থাকতে পারে? তাতে কি তার ঈমান বাঁচে? প্রথম সংস্করণ ০৫/১২/১৩ দ্বিতীয় সংস্করণ ২৭/০৩/২০১৯
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- মুসলিম বিশ্বে মার্কিনী সন্ত্রাস: প্রতিরোধ কীরূপে?
- রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, গণহত্যা ও আগ্রাসন যেখানে গণতন্ত্র
- আধিপত্য বিস্তারে আগ্রাসী মার্কিন প্রজেক্ট
- বিবিধ ভাবনা (১৪)
- বিভক্ত মুসলিম এবং অর্জিত আযাব
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
MOST READ ARTICLES
- বিবিধ প্রসঙ্গ-৫
- Political, religious & demographic dynamics in South Asia & threatened co-existence of people with pluralities
- My COVID Experience
- The Hindutva Fascists & the Road towards Disintegration of India
- দিল্লিতে সরকারি উদ্যোগে মুসলিম গণহত্যা