বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এত ষড়যন্ত্র কেন?
- Posted by Dr Firoz Mahboob Kamal
- Posted on March 27, 2019
- Bangla Articles, বাংলাদেশ
- No Comments.
গত ২রা জুলাই, ২০০৩, লন্ডনের দৈনিক গার্ডিয়ান পত্রিকায় বাংলাদেশের উপর জনৈক সাংবাদিক জন ভিডলের লেখা একটি প্রতিবেদন ছেপেছে। প্রতিবেদনটির সারকথা হলো, এক) বাংলাদেশে ইসলামী মৌলবাদের উত্থান ঘটেছে। তারা শিক্ষা, বিচার, আইন, চিকিৎসা, বিশ্ববিদ্যালয় ও নানা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অনুপ্রবেশ করছে। এমনকি দুইটি মন্ত্রনালয়ের উপরও দখল জমিয়েছে। দুই). ক্ষমতাসীন দলের কর্মী ও মৌলবাদীরা সংখ্যালঘু মহিলাদের ধর্ষণ করছে ও তাদের উপর নানা ভাবে নির্যাতন করছে। তিন). প্রাণ বাঁচাতে সংখ্যালঘুরা দেশ ছেড়ে ভারতে পাড়ী জমাচ্ছে। অভিযোগের সাথে চারটি খবরও ছেপেছে। প্রথমটি পার্বা দেলুয়া নামক গ্রামে জনৈক পূর্ণীমা রাণীর উপর গণধর্ষনের খবর। বলা হয়েছে, ঘটনাটি ঘটেছিল ১৮ মাস আগে। দ্বিতীয়টি ফাহিনজানা নামক গ্রামে ২০০ জন মৌলবাদীর দ্বারা ১০টি খৃষ্টান বাড়ী-লুন্ঠন। তৃতীয়টি ঢাকার অদূরে কামালপুরে কতিপয় গুন্ডাকতৃক অর্থের দাবীতে খৃষ্টানদের মারধর। চতুর্থটি দেউতলা বাজারে হিন্দুদের দেশত্যাগে ভীতিপ্রদর্শন। কোন জেলায় বা কোন থানায় পার্বা দেলুয়া ও ফাহিনজানা গ্রাম বা কোথায় সে দেউতলা বাজার রিপোর্টে সে কথা উল্লেখ করা হয়নি। শেষোক্ত তিনটি ঘটনার ক্ষেত্রে উল্লেখ করা হয়নি কোন দিন, সন ও তারিখ। ফলে সাংবাদিকতার জন্য যেগুলো অতিশয় জরুরী সেগুলিও পূরণ করা হয়নি। ফলে অন্য কোন ব্যক্তির পক্ষে এ রিপোর্টের সত্যতা নিয়ে তদন্তের রাস্তাও খোলা রাখা হয়নি।
অভিযোগ এনেছেন, গত দুই বছরে হাজার হাজার সংখ্যালঘু বাংলাদেশী সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে চলে গেছে। এতে নাকি বাংলাদেশের সংখ্যালঘু জনসংখ্যা দ্রুত হ্রাস পেয়েছে এবং নাটকিয় ভাবে বেড়েছে মুসলিম জনসংখ্যা। এর পক্ষে তিনি ঢাকা স্ট্যাটিসটিক্সের কথা বলেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কি সে ঢাকা স্ট্যাটিসটিক্স? বাংলাদেশে এমন কিছুর অস্তিত্ব আছে কি? জনসংখ্যার বৃদ্ধি ও হ্রাস নিয়ে নির্ভরযোগ্য হিসাব দিয়ে থাকে প্রতি ১০ বছর পর অনুষ্ঠিত দেশের জনসংখ্যা গণনা বা সেন্সাস। বিগত সেন্সাসে সংখ্যালঘু হ্রাসের এমন বিষয় ধরা পড়েনি যা জন ভিডল বলেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, বাংলাদেশ থেকে যাওয়া মানুষের সংখ্যা এমনকি ভারত থেকেও পাওয়া সম্ভব নয়। কারণ হিসাবে বলেছেন, ভারত নাকি তেমন তথ্য প্রকাশ করবে না। এটিও কি বিশ্বাস যোগ্য? যে ভারত মুসলমানদের বাংলাদেশে পুশ-ইন করার জন্য সদা ব্যস্ত এবং ফুঁলিয়ে ফাঁফিয়ে নানা তথ্য প্রায়ই প্রকাশ করে থাকে, তারা এমন বিপুল হিন্দু জনসংখ্যা স্থানান্তরের কথা কেন বলবে না যার জন্য বাংলাদেশ হিন্দু শূণ্য হতে যা্েচছ? জন ভিডলে বৃটিশ সরকারকেও তিরস্কার করেছেন। সেটির কারণ, বাংলাদেশকে রাজনৈতিক নিপীড়নমূক্ত দেশরূপে বৃটিশ সরকারের সাম্প্রতিক ঘোষণা। লক্ষনীয় হলো, বাংলাদেশের এ সুনাম আওয়ামী সরকারের আমলে ছিল না। বরং আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই গণতন্ত্র বিপন্ন হয়েছে। মানুষ জেল-জুলুম, হত্যা ও সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে। সে আওয়ামী সন্ত্রাস ও নির্যাতন থেকে বাঁচাতে বহু বাংলাদেশীকে বৃটেনে রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি বর্তমানে বদলে যাওয়ায় বৃটেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষণা দিয়েছে, আর কোন বাংলাদেশীকে রাজনৈতিক আশ্রয় দেয়া হবে না। বাংলাদেশের এটি এক বিরাট অর্জন, কিন্তু আওয়ামী প্রতিপক্ষ সহজ ভাবে মেনে নিতে পারছে না। সেটিরও প্রকাশ ঘটেছে এ নিবন্ধে।
এ নিয়ে দ্বিমত নেই যে সন্ত্রাস বাংলাদেশের প্রধানতম সমস্যা। প্রতিটি নাগরিক সন্ত্রাসের হাতে জিম্মি। কিন্তু প্রচন্ড আপত্তি রয়েছে গার্ডিয়ান যে ভাবে সেটিকে চিত্রিত করেছে তা নিয়ে। সন্ত্রাসীরা সর্বার্থেই দূর্বৃত্ত। ধর্ম নিয়ে তারা বাচবিচার করে না, তাদের লক্ষ্য এলাকায় প্রতিপত্তি, অর্থলাভ ও নারী-সম্ভোগ। হিংস্র পশু যেমন মানুষের ধর্ম দেখে আক্রমন করে না এরাও তেমনি হিন্দু মুসলিম বাছবিচার করে হানা দেয় না। অথচ গার্ডিয়ানের সংবাদদাতা এসব দূর্বৃত্তদের উপরও একটি ধর্মীয় পরিচয় এঁটে দিয়েছেন। সন্ত্রাসীদের ইসলামী মৌলবাদী বলে চিত্রিত করেছেন। সন্ত্রাসের অপরাধে এ অবধি বহু মানুষ বাংলাদেশের আদালতে দন্ডিতও হয়েছে। কিন্তু তাদের মধ্যে ক’জন ইসলামী দলের সদস্য বা মৌলবাদী সে তথ্য তিনি দেননি। সন্ত্রাসের কবলে প্রতিবছর যে হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে তাদেরই বা ক’জন সংঘালঘু? বরং সংখ্যালঘুদের বেছে বেছে যে দেশে নির্মূল করা হচ্ছে ও তাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করা হচ্ছে সেটি যে বাংলাদেশ নয়, বরং ভারত সে তথ্য তিনি উল্লেখ করেনি। গার্ডিয়ান সংবাদদাতার এ রিপোর্টকে শুধু অপপ্রচার বা পক্ষপাতদুষ্টতা বলে ভূল হবে, বরং এটি এক জঘন্য ষড়যন্ত্র। গার্ডিয়ানের সাংবাদিক জনকন্ঠ সম্পাদক তোয়াব খানের নাম নিয়েছেন। আরো যাদের নাম নিয়েছেন তারা হলেন আওয়ামী ঘরানার অতি পরিচিত বুদ্ধিজীবী এবং সাউথ-ইস্ট এশিয়া ইউনিয়ন এ্যাগেনেষ্ট ফান্ডামেন্টালিজমের সভাপতি কবির চৌধূরী, ’হটলাইন বাংলাদেশ’এর পরিচালক রোজালিন কোষ্টা এবং আওয়ামী উলামা লীগ নেতা আব্দুল আওয়াল। এভাবে নিজের বক্তব্য প্রমাণ করতে জন ভিডাল যেসব সাক্ষীসাবুদ হাজির করেছেন তারা সবাই পক্ষপাত দুষ্ট। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গণে এরা একটি বিশেষ মহলের চিহ্নিত ব্যক্তি। কোন আদালতে এমন ব্যক্তিদের মতামত গৃহীত হতে পারে না। পানি ঘোলা করে মাছ ধরার খায়েশ পুরন করতে আওয়ামী লীগ এ সব মত্লববাজ ব্যক্তিদের ময়দানে নামাবে সেটিই স্বাভাবিক। এ লক্ষেই গড়ে তোলা হয়েছে বিদেশী সাংবাদিকের সাথে এ আওয়ামী বুদ্ধিজীবীদের যোগসাজেশ। বিগত নির্বাচনকে অগ্রহনযোগ্য করার লক্ষ্যেও এ মহলটি বাংলার বদলে ইংরাজীতে বই লিখে বিদেশীদের কাছে বিতরনের ব্যবস্থা করেছিল। ফলে তাদের রাজনীতিতে বাংলাদেশের মানুষের চেয়ে বিদেশী প্রভূদের গুরুত্ব যে অধিক সেটি কি প্রমাণিত হয় না? আর একটি দেশের বিরুদ্ধে এটি কি কম ষড়যন্ত্র? অথচ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারদলীয় কর্মীদের দ্বারা ধর্ষণে সেঞ্চুরির উৎসব হয়েছে, থানার অভ্যন্তরে নারী ধর্ষিত ও খুন হয়েছে, রাজপথে নারীকে বিবস্ত্র করা হয়েছে। মসজিদে, মাদ্রাসায় এবং পত্রিকা অফিসে হামলা হয়েছে। জয়নাল হাজারীদের মত আওয়ামী সন্ত্রাসীদের ভয়ে মানুষ ঘর থেকে বছরের পর বছর পালিয়ে বেড়িয়েছি। জনসভায় দাঁড়িয়ে শেখ হাসিনা একটির বদলে দশটি লাশ ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন। লাঠি দেখানো হয়েছে আদালতকে। সিরাজ সিকদারের মত জেলবন্দীকে হত্যা করে পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে আওয়ামী নেতা শেখ মুজিব বলেছিলেন, ”কোথায় আজ সিরাজ সিকদার?’ হাজার হাজার বিরোধী কর্মীদের হত্যা করতে রক্ষী বাহিনী নামানো হয়েছে। এ সবই সন্ত্রাসের ইতিহাস। এবং হয়েছে আওয়ামী নেতাদের আশ্রয়ে ও প্রশ্রয়ে। বাংলাদেশ জুড়ে আজ যে সন্ত্রাসের আধিপত্য সেটির শুরু হয়েছিলতো এভাবেই।
বাংলাদেশে সন্ত্রাসের শিকড় এতই গভীরে পৌছেছে যে সেনাবাহিনী নামিয়েও নির্মূল করা যায়নি। সন্ত্রাসীদের হাতে বহু মানুষ প্রতিনিয়ত আহত ও নিহত হচ্ছে। ধর্ষিত হচ্ছে নারী। এ সন্ত্রাসের শিকার মুসলমান যেমন হচ্ছে তেমনি কিছু অমুসলমানও হ্েচছ। তবে অধিকাংশই মুসলমান। কিন্তু সে সত্যটি গার্ডিয়ান ছাপেনি। সাংবাদিকের আসল মতলব তাই দেশের আইনশৃঙ্খলা বা জননিরাপত্তা নয়। মূল উদ্দেশ্য অন্যত্র। নিবন্ধের বাঁকি অংশে তা প্রকাশ পেয়েছে। আর সেটি হলো ইসলাম ভীতি এবং সে ভীতি থেকে প্রসুত ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। এরও গভীরে রয়েছে ইসলামের উত্থান রোধকল্পে বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার ষড়যন্ত্র। সংবাদদাতা জন ভিডাল ইসলামপন্থি একটি দলের নাম নিয়ে লিখেছেন যে দলটি বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকায় দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করছে। দলটির অগ্রগতিকে তিনি দেখেছেন শরিয়ত প্রতিষ্ঠার পূর্বাভাস রূপে। ফলে এ ইসলামি দলটির অগ্রগতিকে জন ভিডাল সাংবাদিক-সূলভ নিরপেক্ষ দৃষ্টি দিয়ে দেখেননি, দেখেছেন ইসলামের শত্রুর দৃষ্টি নিয়ে। ইসলামের বিরুদ্ধে তিনি তার নিজ মনের বিষাক্ত বিষের প্রকাশ ঘটিয়েছেন একজন বাংলাদেশী আইনজ্ঞের জবান দিয়ে। উক্ত আইনজ্ঞ নাকি বলেছেন, ”দেশে একটি নিরব বিপ্লব হতে চলেছে। আমরা অন্ধকার যুগের দিকে ফিরে যাচ্ছি।” অর্থাৎ ইসলামের প্রতি বাংলাদেশের মানুষের স্বতঃস্ফুর্ত আগ্রহকে তিনি দেখেছেন আদিম বর্বরতার প্রতি আগ্রহরূপে। ইসলামের প্রতি এরূপ শত্রুতা-সূলভ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে একজন সাংবাদিক কি কখনও নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ট হতে পারে? জন ভিডালের এখানেই ব^্যর্থতা। তিনি আভির্ভূত হয়েছেন ইসলামের প্রতিপক্ষ এক রাজনৈতিক কর্মী রূপে। ভিড়ে গেছেন তোওয়াব খান ও কবির চৌধুরিদের দলে। তার এ নিবদ্ধের মূল সূত্র যে তারাই সেটিও তিনি গোপন রাখেননি। সাংবাদিকতার লেবাসে তিনি কলম ধরেছেন বাংলাদেশে ইসলামের সম্ভাব্য উত্থান রুখতে। ফলে এ নিবন্ধের লক্ষ্য, মার্কিন নেতৃত্বে মুসলমানদের বিরুদ্ধে দেশে দেশে যে ক্রসেড শুরু হয়েছে সে ক্রসেডে বাংলাদেশকেও একটি টার্গেট রাষ্ট্র রূপে চিহ্নিত করা। তিনি বৃটিশ সরকারকে উস্কিয়েছেন যেন বিষয়টিকে গুরুতর বিষয় রূপে গ্রহণ করে। লক্ষণীয় যে এ বিষয়ে তার ও আওয়ামী লীগের লক্ষ্য অভিন্ন। ইসলামের বিরুদ্ধে এ ক্রুসেডে আওয়ামী লীগ মার্কিনীদের ঘনিষ্ট মিত্র হতে যে আগ্রহী তা জানিয়ে পুস্তক প্রকাশ করে মার্কিন প্রশাসনের কাছে পৌঁছিয়েছে। তারা জানিয়েছে বাংলাদেশ তালেবান কবলিত হচ্ছে। সেটি রুখতে হলে তাদের সহয়তা ছাড়া উপায় নেই এবং সে সহয়তা তারা দিতেও প্রস্তুত। তবে সে জন্য তাদের দাবী তাদেরকে ক্ষমতায় বসাতে হবে। ক্ষমতার বাইরে থেকেও কি করে ইসলামের উত্থানরোধে পাশ্চাত্যের সহায়তা করা যায় সে লক্ষ্যকে সামনে রেখেই আওয়ামী বুদ্ধিজীবী বাহিনী কবির চৌধুরির নেতৃত্বে ’সাউথ-ইস্ট এশিয়া ইউনিয়ন এ্যাগেনষ্ট ফান্ডামেন্টালিজম’ নামে এনজিও খুলে ময়দানে নেমেছেন। ফলে জন ভিডল যে প্রজেক্ট নিয়ে সাংবাদিকতা করছেন সেটি তার একার নয়। বরং এ রিপোর্টে যেটি প্রকাশ পেয়েছে সেটি হলো আন্তর্জাতিক ইসলামের শত্রু মহলের সাথে তাদের কোয়ালিশনের বিষয়টি। আর এ কারণেই হংকংয়ের ’ফার ইষ্টার্ন ইকনমিষ্ট রিভিউ’, লন্ডনের গার্ডিয়ান বা বিভিন্ন ভারতীয় পত্রিকায় বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যে নিবন্ধগুলো ছাপা হয় তার সাথে এ বাহিনীর ঘনিষ্ট যোগসূত্র লক্ষ্য করা যায়।
জন ভিডাল তার নিবন্ধে জামায়াতে ইসলামের দুই জনকে কেন মন্ত্রী করা হলো সেটিকে আক্রমনের বিষয়ে পরিণত করেছেন। অথচ জামায়াতের দুই জন মন্ত্রী হয়েছেন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে, কোন সামরিক বা স্বৈরাচারি সরকারের হাত ধরে নয়। এটি নিছক এ কারণে যে বিগত নির্বাচনে এ দলটি গণরায় অর্জন করেছিল। গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি জন ভিডালের সামান্যতম আগ্রহ থাকলে এটি কি আদৌ সমালোচনার বিষয় হতো? জামায়াত থেকে দুই জন কেন সমগ্র মন্ত্রী পরিষদই গঠিত হতে পারে যদি সে লক্ষ্যে তারা প্রয়োজনীয জনসমর্থন পায়। কিন্ত দুই জন মন্ত্রীকে যারা কবুল করতে পারছে না তারা কি সেটি মেনে নিবে? অথচ যে কোন দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের হক রয়েছে নিজ বিশ্বাস ও আশা-আকাংখা নিয়ে বেড়ে উঠার। সে হক বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষেরও। কিন্তু সেটি দেশী ও বিদেশী ইসলাম বিরোধী মহল মানতে রাজি নয়। এটি ঠিক যে বাংলাদেশের মানুষ ইসলামের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে। এবং সেটি শুধু বাংলাদেশের একার ব্যাপার নয়, একই ভাবে আকৃষ্ট হচ্ছে সমগ্র মুসলিম বিশ্বজুড়ে। এটি সুনিশ্চিত যে ইসলাম-প্রেমী মানুষের ক্রমর্বধমান গণজোয়ারে ধর্মে অঙ্গিকারহীন সেকুলার গোষ্টি ভেসে যাবে এবং প্রতিটি মুসলিম দেশই তারা আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হবে। কথা হলো একটি জনগোষ্ঠী এ ভাবে ধর্মে আকৃষ্ট হবে এবং নিজেদের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও রাজনীতিতে তার প্রতিফলন ঘটাবে সেটি তো তাদের মৌলিক মানবিক অধিকার। সে অধিকার তো জন্মগত। পাশ্চাত্যের মানুষ যদি মদ্যপান, ব্যভিচার, উলঙ্গতা ও সমকামিতার ন্যায় আদিম পাপাচার নিয়ে বাঁচাকে নিজেদের মৌলিক অধিকার ভাবে তবে মুসলমানদেরও অধিকার রয়েছে ইসলামী বিশ্বাস ও তার শরিয়ত-সংস্কৃতি নিয়ে বাঁচার। এটিই হতে হবে আন্তর্জাতিক রাজনীতির ’রুল অব দি গেম’ তথা মূলনীতি। কিন্তু সমস্যা হলো পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রসমূহ সে মূল নীতি মানতে রাজি নয়। তারা শুধু নিজ পণ্যের বাজারই চায় না, চায় তাদের আদর্শ, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের প্রসারও। তাদের কাছে সেটিই গ্রহনযোগ্য যা তাদের সামগ্রিক আধিপত্য বিস্তারে সহায়ক। এজন্য গণতন্ত্র হত্যাই শুধু নয়, একটি ব্যাপক বিধ্বংসী যুদ্ধ চাপিয়ে দিতেও রাজি। ইরাক ও আফগানিস্তানে নিরাপরাধ মানুষ হত্যাকে একারণেই এরা স্পোর্টসে পরিণত করেছে। আলজেরিয়ার নির্বাচনে ইসলামপন্থিদের বিজয়কে রুখতে এজন্যই এরা একটি বর্বর সামারিক অভ্যূত্থাণকে উস্কিয়ে দিয়েছিল। প্রশ্ন হলো, এরা কি গণতন্ত্রের বন্ধূ হতে পারে? বাংলাদেশের নির্বাচিত সরকারের ইসলামপন্থি মন্ত্রীদের নিয়ে জন ভিডলের যে আপত্তি তার মূল কারণ কি এ মানসিকতা নয়?
বিশ্বের তাবত মুসলমানদের কাছে একটি বিষয় এখন পরিস্কার। গার্ডিয়ানে জন ভিডল যেটি লিখেছেন সেটি তার একার কথা নয়। মর্কিন আধিপত্যবাদীদের বক্তব্যকেই তিনি তুলে ধরেছেন মাত্র। লিখেছেনও আধিপত্যবাদী এ্যারোগ্যান্স বা উদ্ধতা নিয়ে। বাংলাদেশে কে মন্ত্রী হবার যোগ্য সে বিষয়ে জন ভিডলে যেভাবে নাক গলিয়েছেন সেটি সে এ্যারোগ্যান্সেরই প্রকাশ। মন্ত্রী কাদেরকে করা যাবে বা যাবে না সেটিই শুধু নয়, বাংলাদেশের ন্যায় দেশে কি রূপ আইন হবে, নারীরা কি ভাবে পোশাক পড়বে, বাচ্চাদের কি শেখানো হবে সেটিও তারা নির্ধারণ করতে চায়। মার্কিন নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন এখন আর শুধু দেশ দখল নিয়ে খুশি নয়। খুশি নয় ম্যাগডোনাল্ড বা কোকাকোলার বাজার-করণ নিয়ে। তাদের দাবী তাদের সংস্কৃতি, রূচিরোধ, মূল্যবোধ ও পাচাচারকে বিনা প্রতিবাদে গ্রহন করতে হবে। তাদের রুচী, আইনকানুন ও সংস্কৃতির বিপরীত যা কিছু তা স্বয়ং মহান আল্লাহর কাছ থেকে আসলেও বা নবীদের সূন্নত হলেও সেটিকে তারা বর্বরতা বলবে। সে সাথে সেগুলি পরিহারের দাবীও তুলবে। যেমনটি করছে ইসলামি শিক্ষা ও শরিয়তের বিরূদ্ধে। আফগানিস্তান, ইরাকসহ যেখানেই তারা দখল জমিয়েছে সেখানেই শরিয়তের শাসনকে অসম্ভব করে তুলছে। এমন কি সে দেশের সংখ্যাগরিষ্ট মানুষ চাইলেও। আফগানিস্তান দখলের পর তারা সে বিষয়টি অতিস্পষ্ট ভাবে ঘোষণা করেছে। পাশ্চাত্য শুধূ তাদের সামরিক আধিপত্যকেই বিশ্বময় করতে চায় না, বিশ্বময় করতে চায় তাদের মদ্যপান, উলঙ্গতা, ব্যাভিচার ও সমকামিতার ন্যায় নানাবিধ পাপাচারকেও। এগুলিকে বলছে গ্লোবাল ভ্যালুজ। চায়, বিশ্ববাসীর মূল্যবোধে পরিণত করতে। লক্ষ্যনীয় হলো পাশ্চাত্যের এ উদ্ধতাপূর্ণ দাবীকে মেনে নেওয়ার জন্য প্রতিটি মুসলিম দেশ তাঁবেদার ও দাসচেতনার কিছু মানুষও পেয়েছে। এরাই এনজিও বা রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করে মার্কিন সেবাদাস রুপে কাজও শুরু করেছে। অপর দিকে যারাই এ মার্কিন এরোগ্যান্সের বিরুদ্ধে মাথা তুলছে তাদেরকে সন্ত্রাসী আখ্যায়ীত করে তাদের বিরুদ্ধে সকল বিধ্বংসী মারণাস্ত্র ব্যবহার করছে। অপর দিকে লাঠিয়াল রূপে মাঠে নামাচ্ছে হামিদ কারজাইদের মত নব্য মীরজাফরদের। ফলে শুধু আফগানিস্তান, ইরাক, ফিলিস্তিন বা আলজেরিয়াই নয়, প্রতিটি মুসলিম দেশের রাজিনীতি এদের কারণে সংঘাতপূর্ণ হতে চলেছে। আর শান্তিপূর্ণ ভাবে সামনে এগুনোই অসম্ভব করে তুলছে। বাংলাদেশ তাই এর ব্যতিক্রম নয়। ফলে ষড়যন্ত্র নিছক গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের সরকারের বিরুদ্ধেই নয় বরং দেশটির সংখ্যাগরিষ্ট মানুষের আশা-আকাঙ্খা ও ধর্মীয় ঈমান-আক্বিদার বিরুদ্ধেও। বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার এটিই সবচেয়ে ভয়ানক ষড়যন্ত্র।
তবে এ ষড়যন্ত্রের শুরু আজ নয়, বরং দেশটির জন্মলগ্ন থেকেই। ষড়যন্ত্রটি শুধু একটি মাত্র ক্ষেত্রেও নয়। বরং সর্ব ক্ষেত্রে। এবং জন ভিডল এ কাজে একা নন। বাংলাদেশকে ব্যর্থরাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষে ইসলাম বিরোধী স্রামাজ্যবাদী পাশ্চাতের পাশাপাশি প্রধানতম ও প্রবলতম পক্ষ হলো ভারত। ১৯৭১ এ বাংলাদেশের সৃষ্টিতে ভারত এ জন্য যুদ্ধ করেনি যে তার পূর্ব সীমান্তে আণবিক শক্তিধর আরেক পাকিস্তানের উদ্ভব হবে। বুঝতে হবে এ যুদ্ধ ছিল ভারতের একান্তই নিজস্ব যুদ্ধ যা ১৯৬৫তে অসম্পূর্ণ ছিল। বস্তুতঃ একাত্তরের যুদ্ধে নানা ছলে বাংলাদেশ থেকে দেশটি সহায়তা নিয়েছে মাত্র। ভারত বাংলাদেশের স্বাধিনতার জন্য যুদ্ধ লড়েছে বা আজও স্বাধিনতার পক্ষে একথাটি যে কতটা অসত্য সেটি ভারত নিজেই প্রমাণ করেছে। এবং সেটি করেছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নানাবিধ ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে। প্রমান করছে বাংলাদেশের সীমান্তের উপর বার বার হামলা করে। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতের এ অব্যাহত ষড়যন্ত্রকে বুঝতে হলে আমাদের অতীত ইতিহাসকে অবশ্যই জানতে হবে। কারণ সে অতীতেই প্রথীত রয়েছে আজকের ষড়যন্ত্রের শিকড়। ইতিহাসের নিরেট সত্য হলো, পূর্ব বাংলার মুসলমানদের জীবনে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত শুরু হয় তখন যখন তারা বৃটিশের ১৯০ বছরের ঔপনিবেশিক শাসন ও অখন্ড ভারতের আসন্ন শৃঙ্খল ভেঙ্গে যাত্রা শুরু করে। সেটি ঘটে ১৯৪৭ এ। তবে সে শৃঙ্খল মুক্তি ভারতের ১৫ কোটি মুসলমানের জীবণে ঘটেনি। ফলে ১৯৪৭এর স্বাধীনতার গুরুত্ব বুঝতে হলে অধুনা ভারতের ১৫ কোটি মুসলমানের অবস্থার দিকে তাকাতে হবে যা বাংলাদেশের মুসলমানদের জন্যও হতে পারতো যদি তারা ১৯৪৭ সালে সঠিক সিদ্ধান্ত না নিত। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭০ মাত্র এ ২৩ বছরে বাংলার তৎকালীন সাড়ে সাত কোটি মানুষ যে সংখ্যক ডাক্তার, ইঞ্জিনীয়ার, কৃষিবিদ, আইনবিদ, শিক্ষক, প্রফেসর ও সরকারি চাকুরিজীবী তৈরী করে ভারতের মুসলমান তার ২০ ভাগের এক ভাগও করতে পারিনি। অথচ তারা ছিল সংখ্যায় দ্বিগুণ। ঔপনিবেশিক শাসনামলে তারা যে তিমিরে ছিল এখনও সে তিমিরেই রয়ে গেছে। সে দূর্দশারই এক করুণ চিত্র প্রকাশ পেয়েছে টাইম ম্যাগাজিনের পরিচালিত এক সাম্প্রতিক সমীক্ষায়। তাতে প্রকাশ পেয়েছে, ভারতের হিন্দুদের মাথা পিছু বাৎসরিক গড় আয় ৪৬১ ডলার এবং মুসলমানদের ১০৯ ডলার। অর্থাৎ মুসলমানদের মাথাপিছু আয় হিন্দুদের আয়ের সিকি ভাগের কম। অথচ বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু বাৎসরিক গড় আয় প্রায় ৪০০ ডলার অর্থাৎ ভারতের মুসলমানদের প্রায় চারগুণ। মুসলমানদের জনসংখ্যা ভারতের জনসংখ্যার শতকরা ১৩ ভাগ হওয়া সত্বেও সরকারি চাকুরিজীবীদের মধ্যে তাদের সংখ্যা মাত্র ৩ ভাগ। ১৯৪৭ এর পর এ অবধি দাঙ্গায় নিহত হয়েছে প্রায় ১০ লাখ মানুষ যার অধিকাংশই মুসলমান। মুসলমানদেরকে দরিদ্র, দলিত ও নির্যাতিত রাখার ভারতীয় প্রজেক্ট যে কতটা নির্মম ও নিষ্ঠুর এ পরিসংখ্যান সেটিই চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। ১৯৪৭ সালের নেতাদের দুরদৃষ্টির কারণে বাংলার মুসলমানেরা সে নিঃস্বকরণ, দলিতকরণ ও নির্মূলকরণ প্রক্রিয়া থেকে মুক্তি পায়। কিন্তু ১৯৭১ য়ের মেরুদন্ডহীন ও ভারতের প্রতি নতজানু আওয়ামী নেতৃত্ব তাদেরকে সে সুযোগ করে দেয়। কোন মুসলিম দেশে অমুসলিম বাহিনীকে আমন্ত্রণের মত জঘন্য হারাম কাজটিও অনুষ্ঠিত হলো এ দাস-নেতৃত্বের হাতে। ফলে পুণরায় হিংস্র হায়েনার কবলে পড়লো বাংলাদেশের মুসলমনেরা। যে প্রক্রিয়ায় ভারতের মুসলমানদের মেরুদন্ড চূর্ণকরা করা হচ্ছে সে একই প্রক্রিয়া শুরু হলো বাংলাদেশে। ১৯৪৭ য়ে উন্নতির যে ধারা শুরু হয়েছিল সেটি পশ্চিম পাকিস্তানে অব্যাহত থাকায় তারা তিন-তিনটি প্রকান্ড যুদ্ধের পরও আণবিক শক্তির অধিকারি মুসলিম বিশ্বের এক নাম্বার রাষ্ট্রে পরিণত হলো আর বাংলাদেশ পরিণত হলো ভিক্ষার তলাহীন ঝুড়িতে অর্থাৎ মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে তলার রাষ্ট্রটিতে। সুজলা সুফলা বাংলায়ও দুর্ভীক্ষ সৃষ্টিতে নয়া ইতিহাস রচিত হলো। সৃষ্টি হলো অসংখ্য জাল পড়া বাসন্তি। ডাস্টবিনে উচ্ছিষ্ট খাবারের তালাশে ক্ষুদার্ত মানুেষরা কুকুরের সাথে প্রতিযোগিতায় নামলো। বাংলার সমগ্র অতীতে ইতিহাসে এ ঘটনা বিরল। অর্থনৈতিক মেরুদন্ডকে স্থায়ী ভাবে বিচূর্ণ করার লক্ষ্যে একাত্তরে সামরিক দখলদারির শুরুতেই ভারত দেশটির শিল্প, অর্থনীতি ও শিক্ষার মত গুরত্বপূর্ণ ক্ষেত্রগুলোকে বিধ্বস্ত করে দেয়। হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ লুন্ঠন করে সেগুলি ভারতে নিয়ে যায়। সীমান্ত বাণিজ্যের নামে বিলুপ্ত করে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সীমান্ত। ফলে অর্থনৈতিক ভাবে দেশটি তলাহীন পাত্রে পরিণত হয়। বিদেশ থেকে প্রাপ্ত সাহায্য-সামগ্রীও চলে যায় ভারতে। সমগ্র সীমান্ত জুড়ে শুরু হয় চোরাকারবারি। দেশ পরিণত হয় ভারতীয় পণ্যের একচ্ছত্র বাজারে। ফলে ধ্বংস হয় দেশীয় শিল্প এবং বিপর্যস্ত হয় অর্থনীতি। তাঁবেদার রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও অনুগত লাঠিয়াল ছাত্রবাহিনী ও অনুগত শিক্ষকদের দিয়ে বিধ্বস্ত করে সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থাকে। বাংলাদেশে সিস্টেম লসের এটিই সবচেয়ে বড় খাত। কথা হলো, এভা্েব কি স্বাধীনতা বাঁচে? নিরাপত্তা পায় কি জনগণ? রক্ষা পায় কি অর্থনীতি? বস্তুতঃ স্বাধীনতা, অর্থনীতি ও জনগণ কোনটাই সেদিন বাঁচেনি। স্বাধিনতার নামে উপহার দেওয়া হয় নয়া পরাধিনতা। দূর্ভীক্ষে মৃত্যু ঘটানো হয় বহু লক্ষ মানুষের। রক্ষীবাহিনীর হাতে মৃত্যু ঘটে তিরিশ হাজারের বেশী রাজনৈতিক কর্মীর। তবে এখানেই শেষ নয়। বাংলাদেশের কোমর ভাঙ্গার কাজ এখনও শেষ হয়নি। দেশটির ভবিষ্যত বিপন্ন করতে তারা এখন নতুন পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ফারাক্কা বাঁধ দিয়ে দেশটির বিরাট ভূ-ভাগ বিপর্যস্ত করার পর এবার ফারাক্কার চেয়েও ক্ষতিকর পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে। প্রণয়ন করেছে ব্রম্মপুত্র, সুরমা, কুশিয়ারাসহ ভারত থেকে আসা সকল নদীর উৎসমুখে বাঁধ দিয়ে পানি অপসরণের ১২৪ বিলিয়ন ডলারের প্রজেক্ট। এত দিন পানির যে প্রধানতম ধারাটি বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল সেটিই নিয়ে যাবে মধ্য, পশ্চিম ও দক্ষিণ ভারতে। এতে বিপর্যস্ত হবে বাংলাদেশের কৃষি শুধু নয় বরং সমগ্র ভূপ্রকৃতি, জলবায়ু, প্রকৃত অর্থে দেশটির সমগ্র অস্তিত্ব।
বাংলাদেশের ভবিষ্যত নিয়ে যারা ভাবে বা দেশের উন্নয়নে যারা উদ্যোগ নিতে চায় তাদের অন্ততঃ এ ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে হবে। কারণ, কারা শত্রু আর কারা মিত্র সে বিষয়টি একমাত্র ইতিহাস থেকেই অর্জিত হতে পারে। বুঝতে হবে, অর্থনৈতিক পঙ্গুসাধনই ভারতীয় ষড়যন্ত্রের একমাত্র লক্ষ্য নয়। এ পঙ্গুত্বকে স্থায়ী করতে তারা দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক পঙ্গুত্বকেও অনিবার্য করতে চায়। কারণ জাতির জীবনে এটিই তো ইঞ্জিন। ফলে বাংলাদেশের অন্য কোন ক্ষেত্রে ভারতীয় পুঁজির বিনিয়োগ না হলেও বিস্তর বিনিয়োগ হয়েছে বুদ্ধিবৃত্তিÍ ক্ষেত্রগুলোতে। মিডিয়া, সাহিত্য, শিক্ষাঙ্গণ ও বুদ্ধিবৃত্তির অন্যান্য ক্ষেত্রজুড়ে ভারতীয় সেবাদাসদের রমরমা অবস্থান তো একারণেই। ফলে নিজেদের শোষণ ও ষড়যন্ত্রের পক্ষেও ভারত বাংলাদেশে বিপুল সমর্থক পাচ্ছে। তাদের পক্ষে কলম ধরছে বহু সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবী। এরা যে কতটা বিবেক শূণ্য এবং দেশপ্রেম-শূণ্য তার প্রমাণ, বাংলাদেশের ইজ্জতহানীর কাজকে তারা নিজেদের ব্যবসায় পরিণত করছে। তারা শুধু জন ভিডেলের মত সাংবাদিকদের কাজে মিথ্যা বয়ানই দেয়নি, বানোয়াট ভিডিও বানিয়ে বিদেশে পাচারেরও চেষ্টা করেছে। লক্ষণীয় হলো, মুজিব আমলের তলাহীন ঝুড়ির অবস্থান থেকে বাংলাদেশে যতই উপরে উঠছে ততই বাড়ছে তাদের ষড়যন্ত্র। একারণেই বাংলাদেশ আজ দ্বিমুখী ষড়যন্ত্র। একটি তার ভূগোল ও ভূপ্রকৃতির বিরুদ্ধে এবং অপরটি রাজনৈতিক ও ধর্মীয় স্বাধিনতা নিয়ে বেড়ে উঠার বিরুদ্ধে। উভয়টির অভিন্ন লক্ষ্য হলো, বাংলাদেশকে দ্রুত ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা। আর এ লক্ষ্যে এক দিকে যেমন কবির চৌধুরীর মত ব্যক্তিদের এনজিওগুলি বিদেশী শত্রুদের সাথে কোয়ালিশন গড়েছে, তেমনি রাজনৈতিক ময়দানেও ক্রসেডারদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছে বিশাল পঞ্চম বাহিনী। বাংলাদেশ তের কোটি মানুষের একটি দেশ। জনশক্তির গুণেই দক্ষিণ এশিয়ার প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে। সম্পদে এটি আফগানিস্তানের চেয়ে যেমন দূর্বল নয়, তেমনি শক্তিহীনও নয়। অথচ রাশিয়ার মত বৃহৎ শক্তির পতন হয়েছে এ নিঃস্ব আফগানীদের হাতেই। হাজার হাজার আণবিক বোমা ও ব্যালিস্টিক মিজাইল এদেশটিকে পরাজয় থেকে বাঁচাতে পারিনি। সে ভয় অন্যদের যে নাই তা নয়। আছে বলেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এত ষড়যন্ত্র। তাই দেশটির সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ইসলামে অঙ্গিকার নিয়ে এত আক্রোশ। ইসলাম দিতে পারে প্রতিরোধের দূর্দমনীয় সাহস। দিতে পারে উন্নততর সভ্যতার নির্মাণের অপ্রতিরোধ্য জজ্বা। তাই একদিকে যেমন চলছে তের কোটি মানুষকে ইসলামে অঙ্গিকার-শূণ্য করার প্রচেষ্টা তেমনি চলছে পানিশূণ্য করে মারার ষড়যন্ত্র। এ লক্ষ্যে এ মুহুর্তে বাঁচার পথ মাত্র একটিই তা হলো আল্লাহর উপর বিশ্বাসকে তীব্রতর করা। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষকে শক্তিতে পরিণত করা। এবং ইসলামের বিজয়ে অঙ্গিকারবদ্ধ করা। একমাত্র এ পথেই আল্লাহর সাহায্য প্রাপ্তি ত্বরান্বিত হতে পারে। আল্লাহতে অঙ্গিকার তীব্রতর হওয়ার কারণেই ফিরাউনের ধ্বংসে হযরত মূসা (সাঃ)কে য্দ্ধুও করতে হয়নি। এ কাজ আল্লাহপাক স্বয়ং নিজ হাতে নিয়েছিলেন। মুসলমানের কাজ নিছক আল্লাহর সাহায্যকারি হয়ে যাওয়া। আর মহান আল্লাহতো এমন সাহায্যকারিদের সাহায্য করতে সদাপ্রস্তুত। আল্লাহর সাহায্যের বদৌলতে বাংলাদেশের চেয়েও দরিদ্র অবস্থান থেকে মুসলমানেরা বিশ্বের প্রধান শক্তিতে পরিণত হয়েছিল। আমরা যে এখনও সাহায্য পাচিছ না তার কারণ আল্লাহর একনিষ্ঠ সাহায্যকারি রূপে নিজেদের পেশ করতে পারিনি। বুঝতে হবে শত্রুর কাছে আত্মাসমপর্ণে মূক্তি নেই। মুজিব ভারতের কাছে পরিপূর্ণ ভাবে আত্মসমর্পন করেছিলেন। ভারতকে খুশী করতে গিয়ে ইসলামের চর্চা ও ইসলামের প্রতিষ্ঠাকে সাংবিধানিক ভাবে নিষিদ্ধ করেছিলেন। স্বাক্ষর করেছিলেন ২৫ সালা দাস-চুক্তি। সমগ্র সীমান্তকে ভারতীয় পণ্যের জন্য উম্মূক্ত করেছিলেন এবং ভারতীয়দের হাতে তুলে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের ভূমি বেরুবাড়ী। কিন্তু তাতেও ভারতীয় নিষ্ঠুর শোষণ ও শোষণজনিত দূর্ভীক্ষ থেকে বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ বাঁচেনি। ফলে চিহ্নিত শত্রুর কাছে আত্মসমপর্ণের পথ শুধু অপমানেরই নয়, বিনাশেরও। আত্মসমর্পন বাড়াতে হবে একমাত্র আল্লাহতে। আর এটি মুসলমানের ঈমানী বাধ্যবাধকতাও। বাংলাদেশকে বাঁচাতে হলে প্রতিটি বাংলাদেশীর মনে এ বিশ্বাসকে দৃঢ়তর করতে হবে। আর এ বিশ্বাস বা ঈমানই তো মুসলমানের শক্তির মূল উৎস। এবং একমাত্র এ বিশ্বাসই পারে বহু মুখী এ ষড়যন্ত্র থেকে বাংলাদেশকে বাঁচাতে। প্রতিটি জীবিত দেহকে যেমন কোটি কোটি জীবানূর বিরুদ্ধে মোকাবেলা করেই বেঁচে থাকতে হয় তেমনি প্রতিটি উন্নয়নকামি জাতিকেও বাঁচতে হয় শত্রুর অবিরাম ষড়যন্ত্রকে মোকাবেলা করেই। সত্যতো এটাই, মুসলমানেরা তাদের সমগ্র ইতিহাসে তখনই সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল যখন তাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশী ষড়যন্ত্র ও হামলা হয়েছে। নবী (সাঃ)এর ১০ বছরের মদীনা জীবনে যতগুলো হামলা ও ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হয়েছে বাংলাদেশীরা তা বিগত কয়েক শত বছরেও করেনি। কিন্তু তাতে কি তাদের প্রতিষ্ঠা বেড়েছে। জাতি যে জন্য ধ্বংস ও পরাজিত হয় সেটি হলো প্রতিরোধে আগ্রহ না থাকায়। বাংলাদেশের মুসলমানদের জীবনে প্রতিরোধের সামর্থ্য ও আগ্রহ বৃদ্ধিই আজকের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। নইলে পরাজয়ই যে আমাদের নিয়তিতে পরিণত হবে সে বিষয়ে সন্দেহ আছে কি? (২৩/০৮/২০০৩)
(এ নিবন্ধটি মূল পেপাররূপে পেশ করা হয় ২৪শে আগষ্ট ২০০৩ সালে বাংলাদেশ ডেভলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (বিডিআই) আয়োজিত লন্ডনের ’টয়েনবি হল’ এর সুধী সমাবেশে)
ANNOUNCEMENT
ওয়েব সাইটটি এখন আপডেট করা হচ্ছে। আগের লেখাগুলো নতুন ওয়েব সাইটে পুরাপুরি আনতে কয়েকদিন সময় নিবে। ধন্যবাদ।
LATEST ARTICLES
- হিযবুল্লাহ ও হিযবুশ শায়তান
- উপেক্ষিত সাংস্কৃতিক যুদ্ধ এবং বাঙালী মুসলিমের বিপর্যয়
- গণতন্ত্র যেখানে গণহত্যা এবং জবরদখল যেখানে লেবারেশন
- দুর্বল থাকার আযাব ও শক্তিবৃদ্ধির ফরজ দায়ভার
- বিবিধ ভাবনা (১৫)
বাংলা বিভাগ
ENGLISH ARTICLES
MOST READ ARTICLES
- বিবিধ প্রসঙ্গ-৫
- Political, religious & demographic dynamics in South Asia & threatened co-existence of people with pluralities
- My COVID Experience
- The Hindutva Fascists & the Road towards Disintegration of India
- দিল্লিতে সরকারি উদ্যোগে মুসলিম গণহত্যা