অপরাধীদের শাসন এবং যুদ্ধ আল্লাহতায়ালার বিরুদ্ধে

হাইজ্যাক হয়েছে নবীজীর আসন

ন্যায়ের প্রতিষ্ঠায় এবং অন্যায়ের নির্মূলে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করে আদালতের বিচারকগণ। ইসলামে বিচারপতির মর্যাদা এই জন্যই বিশাল। ভূমি থেকে আাগাছা নির্মূল ও সে ভূমিতে ফসল ফলানোর দায়িত্ব যেমন কৃষকের,তেমনি দেশ থেকে দুর্বৃত্ত নির্মূল ও সুবিচার প্রতিষ্ঠার বড় দায়িত্বটি হলো আদালতের বিচারকদের।এ লক্ষ্যে রাষ্ট্রের অতি গুরুত্বপূর্ণ ইন্সটিটিউশন হলো আদালত। আদালতের বিচারকগণ যোগ্যবান হলে সেদেশ দুর্বৃত্তদের দ্বারা অধিকৃত হয় না। বিচারকগণ তখন দুর্বৃত্ত পেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রীকেও আদালতের কাঠগড়ায় তোলে। একটি দেশ কতটা ব্যর্থ সেটি পরিমাপের জন্য তাই চোর-ডাকাতদের সংখ্যা গণনার প্রয়োজন পড়ে না। দেশের আদালত কতটা কীরূপ বিচারকদের দ্বারা অধিকৃত –তা থেকেই সে হিসাবটি পাওয়া যায়। এ দিক দিয়ে বাংলাদেশের ব্যর্থতা কি কম? অতীতে বিচারপতির আসনে বসেছেন খোদ নবীরাসূলগণ। তাদের অবর্তমানে বসেছেন তাদেরই বিশ্বস্থ্য সাহাবাগণ। ইসলামের যখন গৌরবযুগ তখন সে আসনে বসেছেন সবচেয়ে জ্ঞানী, ফকীহ ও চরিত্রবান ব্যক্তিগণ। ইসলামে এটি অতি উচ্চপর্যায়ের ইবাদত। রাষ্ট্র জুড়ে এ পবিত্র ইবাদতটি প্রতিষ্ঠা না পেলে কোটি কোটি মানুষের নামায-রোযা ও হ্জ-যাকাত,অর্থনৈতিক উন্নয়নে বা শত শত কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় দুর্বৃত্তি ও অবিচার নির্মূল হয় না। প্রতিষ্ঠা পায় না সৎকর্ম ও ন্যায়-নীতি। ইসলাম যে শান্তির ধর্ম সেটিও তখন প্রমাণিত হয় না। দুর্বৃত্ত-অধিকৃত সে দেশটিতে তখন আস্তাকুঁরে গিয়ে পড়ে সুবিচার। তাই শ্রেষ্ঠ জাতির মর্যাদা দিতে গিয়ে মহান আল্লাহতায়ালা মুসলমানদের উপর যে প্রধান শর্তটি আরোপ করেছেন তা হলো ঈমানের পাশাপাশি ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা ও অন্যায়ের নির্মূল। যে দেশে যোগ্যতর বিচারপতি ও সুবিচারের অভাব,সেদেশে অসম্ভব হলো সভ্যতর সমাজের নির্মাণ।দেশ তখন ইতিহাস গড়ে অবিচার ও দুর্বৃত্তিতে।বাংলাদেশে তো সেটিই ঘটেছে।

কোনটি ন্যায়,আর কোনটি অন্যায় -সে জ্ঞান নিরক্ষর ব্যক্তিদেরও থাকে। কিন্তু সত্যের পক্ষে দাঁড়াবার নৈতীক বলটি সবার থাকে না।এমনকি বহু উচ্চ শিক্ষিতদেরও থাকে না।অতি দুর্বৃত্তরাও জানে কোনটি ন্যায়,আর কোনটি অন্যায়।জেনে বুঝে অন্যায়ের পক্ষ নেয় বলেই তারা দুর্বৃত্ত। আাদালতের বিচারকদের দায়িত্ব হলো,শুধু ন্যায়ের পক্ষ নেয়া নয়,অন্যায়কারিকে শাস্তি দেয়াও। এটি এক গুরু দায়িত্ব। তাই বিচারের কাজ ভীরু,কাপুরুষ ও স্বৈরাচারের কাছে আত্মসমর্পিত ব্যক্তির দিয়ে হয় না। কিন্তু সে সামর্থ বাংলাদেশের আদালতে ক’জন বিচারকের? সে নৈতীক বল কি আইন শাস্ত্রের উপর ডিগ্রি নিলে সৃষ্টি হয়? আইনের জ্ঞান,চিকিৎসাবিজ্ঞান,হিসাবজ্ঞান বা প্রকৌশলের জ্ঞান –এরূপ নানারূপ সেক্যুলার জ্ঞানে পেশাগত জানাশোনা বাড়ে। উপার্জনের সামর্থও বাড়ে। কিন্তু তা দিয়ে কি ন্যায়পরায়নতা,সততা বা নৈতীক বল বাড়ে? সে জন্য তো চাই ঈমানের বল। ঈমানের বলবৃদ্ধির জন্য চাই চেতনায় ঝাঁকুনি দেয়ার মত দর্শনের বল। চাই আধ্যাত্মীক বল। সে সামর্থ লাভে অপরিহার্য হলো মহান আল্লাহর কাছে জবাবদেহীতার ভয়। সে জন্য পেশাদারি জ্ঞানের বাইরেও প্রয়োজন পড়ে গভীর জ্ঞানার্জনের।

গরুর গাড়ির চাকা কি রেলগাড়িতে লাগানো যায়? যে পবিত্র আসনে মহান নবী-রাসূলগণ বসেছেন সে আসনে কোরআনী জ্ঞানে অজ্ঞ ও ইসলামে অঙ্গিকারহীন ব্যক্তিদের কি বসানো যায়? এমন কর্ম যে হারাম এবং মহান আল্লাহতায়ালার বিধানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ -সে বিষয়টি একজন মুসলমান ভূলে যায় কি করে? বিচারকের আসনে কি গুরুছাগলকে বসানো যায়?  যারা কাফের, যারা নাস্তিক,ইসলামের শরিয়তি বিধানে যারা আস্থাহীন এবং ইসলামের পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠার যারা বিরোধী –তারা যত ডিগ্রিধারিই হোক,পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতায়ালা তো তাদেরকে গরুছাগলের চেয়েও নিকৃষ্ট বলেছেন।তাদেরকে বিচারকের আসনে বসানো কি আদালতের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অবমাননা নয়? মুসলিম দেশে এমন হারাম কর্ম আদালতের অঙ্গণে চলতে থাকলে ঈমান নিয়ে ও আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ নিয়ে বাঁচাটিও যে সে আদালতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ রূপে চিহ্নিত হবে সেটি কি স্বাভাবিক নয়? ফিরাউনের আদালতে তো তাই হয়েছিল। বাংলাদেশেও তো আজ সেটিই হচ্ছে।

 

গণতন্ত্র হত্যায় আদালতের ব্যবহার

বাংলাদেশে বার বার আগ্রাসন ও নাশকতা ঘটেছে জনগণের মৌলিক অধিকারের বিরুদ্ধে। সেগুলো ঘটেছে ঔপনিবেশিক বিদেশী শক্তি এবং দেশী সামরিক বাহিনী ও ফ্যাসিবাদি রাজনৈতিক শক্তির হাতে। কিন্তু দেশের মানুষের মৌলিক অধিকারের বিরুদ্ধে সর্বশেষ নাশকতাটি ঘটিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালতের হাতে। সেটি বিচারের নামে। ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সে অসম্ভব সে উপলব্ধিটি ছিল সকল রাজনৈতিক দলের। সেটি যেমন অতীতে বহুবার প্রমাণিত হয়েছে, তেমনি প্রমাণিত হয়েছে ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির এবং ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে। দীর্ঘ দিনের সে অভিজ্ঞতা নিয়েই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানটি তাই গৃহিত হয়েছিল সর্বদলীয় সিন্ধান্তের ভিত্তিতে। অথচ কি আশ্চর্যের বিষয়! দেশের রাজনৈতিক বাস্তবতার যে মৌল বিষয়টি দেশের সবগুলো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীগণ বুঝতে পারলেও সেটিই বুঝতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকগণ। ফলে যে সম্মিলিত উপলব্ধির ভিত্তিতে দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান চালু হলো -সেটিকেই অবৈধ ঘোষণা দিল দেশের আদালত। আর এতে স্বৈরাচারি শেখ হাসিনা পেল,ইচ্ছামত ভোট ডাকাতির সুযোগ।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানকে অবৈধ বলে রায় দিয়েছে দেশের প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক। খায়রুল হক যে কতটা নীতিহীন ও মেরুদন্ডহীন সেটির প্রমাণ তিনি নিজেই দিয়েছেন। হাসিনা সরকারের পক্ষে রায় দেয়ার পর তিনি প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ১০ লক্ষ টাকা ত্রাণ নিয়েছেন। -(সূত্র- দৈনিক আমার দেশ,৩০/৫/১১)। প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক উদ্বাস্তু নন, গৃহহীন বা অর্থহীনও নন। তিনি উচ্চ বেতনের চাকুরি থেকে অবসর নিয়েছেন। ফলে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে ত্রাণ নেয়ার প্রয়োজনটি তার দেখা দেয় কি করে? খায়রুল হকের দেয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির বিলুপ্তির রায়টি সুযোগ করে দেয় ২০১৪ সালের নির্বাচনী ডাকাতির। ডাকাতির অর্থ কামাইয়ে কোনরূপ চাকুরি-বাকুরি বা ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রয়োজন পড়ে না। তেমনি ভোট ডাকাতির নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দীতায় নামার প্রয়োজন পড়ে না। তাই সরকারি দলের ১৫১ জন প্রার্থী নির্বাচন জিতেছে কোনরূপ প্রতিদ্বন্দিতা না করেই। যেসব সিটে নির্বাচন হয়েছে,সেসব আসনেও শতকরা ৫% জন ভোটারও ভোট দিতে যায়নি। খেলার মাঠে প্রতিদ্বন্দি দুই দল খেলতে না নামলে কি সে খেলা দেখতে দর্শক হাজির হয়? এমন খেলা তো অবশ্যই পরিত্যক্ত হয়। অথচ দেশের সংসদ নির্বাচন খেলাধুলার ন্যায় মামূলী বিষয় নয়। এখানে নির্ধারিত হয় জাতির ভবিষ্যৎ। তাই গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচনি কমিশনের দায়িত্ব হলো এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করা যাতে সরকারি ও বিরোধী দল –এ উভয় পক্ষের অংশগ্রহণই সুনিশ্চিত হয়। নইলে সে নির্বাচন পরিত্যক্ত হওয়াই স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু এমন প্রতিদ্বন্দীতাহীন নির্বাচন বাংলাদেশে স্থগিত হয়নি!

 

আলেমদের অপরাধ

বাংলাদেশের নগরবন্দরে যেমন বেশ্যাবৃত্তি,সুদ,ঘুষ,মদ্যপান,সন্ত্রাস ও চুরিডাকাতির ন্যায় অসংখ্য হারাম কর্ম প্রতিষ্ঠা পেয়েছে,তেমনি আদালতের পবিত্র অঙ্গনে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে ব্রিটিশ কাফেরদের রচিত হারাম আইন ও হারাম বিচার রীতি। অথচ এ হারাম নিয়ে বাংলাদেশের আলেম-উলামা,পীর-মাশায়েখ ও ইসলামি দলের নেতাকর্মিগণও নীরব। এমন নীরবতা কি কম অপরাধ? মুসলিম ভূমির আইন-আদালত কাফেরদের হাতে অধিকৃত হলে কোন ঈমানদার কি নীরব থাকতে পারে? সে নীরবতায় কি তা ঈমান বাঁচে? নবীজী (সাঃ) ও সাহাবায়ে কেরামের যুগে এরূপ হলে কি জিহাদ শুরু হতো না? পবিত্র কোরআনের ও হাদীসের জ্ঞান ছাড়া কোন ব্যক্তি সুবিচারের সামর্থ পাবে ও নৈতীক মেরুদন্ড পাবে -সেটি বিশ্বাস করাই তো পবিত্র কোরআন ও নবীজী (সাঃ)র সূন্নতের প্রতি অবমাননা। এমন অবমাননাকারি কি পরকালে মহান আল্লাহতায়ালা থেকে কল্যাণ পেতে পারে? মুসলমানদের থেকেই বা তারা সম্মান পায় কি করে? অথচ বাংলাদেশের আদালতে আল্লাহর দ্বীনের এমন অবাধ্য বিচারকদেরও মহামান্য বলতে হয়। মহান আল্লাহতায়ালার শরিয়তের প্রতিষ্ঠার যারা বিরোধী তাদের প্রতি এমন সম্মান প্রদর্শন কি খোদ আল্লাহতায়ালার সাথে মশকরা নয়? তা নিয়েই বা ভাবনা ক’জনের?

 

নবীজী (রাঃ)র আদালত ও বাংলাদেশের আদালত

ঈমানদারির দায়ভার শুধু নবীজী (সাঃ)র অনুকরণে নামায-রোযা,হজ-যাকাত আদায় করা নয়, তাঁর অনুকরণে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করাও।ইসলামে এটি ফরজ। কিন্তু সে ফরজ ইবাদতটি অসম্ভব হয় দুর্বৃত্তদের হাতে রাষ্ট্র অধিকৃত হলে। ন্যায় বিচারে মুসলমানগণ যখন ইতিহাস গড়েছিল তখন বিচার কাজের জন্য কোন প্রাসাদ ছিল না। বিচার বসতো মসজিদের মেঝে বা মাটির ঘরে জীর্ণ খেজুর পাতার উপর। সুবিচারের জন্য যা জরুরী তা হলো সুযোগ্য বিচারক। সুযোগ্য বিচারক গড়তে যা অপরিহার্য তা হলো ইসলামের গভীর জ্ঞান। সে জ্ঞানের মাধ্যমেই চেতনার ভূবনে বিপ্লব আসে,নির্মিত হয় বিচারকের অটুট মেরুদন্ড।সে জ্ঞানের বরকতেই ভেড়ার রাখালগণ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট বিচারকে পরিণত হয়েছিলেন। মহান আল্লাহতায়ালা এমন উন্নত মানুষ গড়ার মিশন শুরু করেছিলেন কোরআনী জ্ঞানের আলো জ্বালানোর মধ্য দিয়ে। পবিত্র কোরআনের প্রথম আয়াতটি তাই “ইকরা” তথা “পড়”। প্রতিটি নরনারীর উপর ফরজ হলো পবিত্র কোরআনের জ্ঞানার্জন। এ জ্ঞান ছাড়া মুসলিম রাষ্ট্রের আদালতে কেউ বিচারকের আসনে বসবেন সেটি কি ভাবা যায়? সে জ্ঞান ছাড়া প্রকৃত ঈমানদার রূপে বেড়ে উঠাই কঠিন।

মানুষের চেতনা ও চরিত্রে মূল বিপ্লবটি আসে শিক্ষা ও দর্শনের গুণে। শিক্ষা ও দর্শনের গুণেই মানুষ পায় মজবুত মেরুদন্ড। পায় ন্যায়নীতিপূর্ণ মূল্যবোধ। চোর-ডাকাতদের থেকে ঈমানদারের মূল পার্থক্যটি পানাহারে বা পোষাক-পরিচ্ছদে নয়,দৈহীক গুণেও নয়। সেটি এই শিক্ষা ও জীবন-দর্শনের কারণে। মহান নবীজী (সাঃ)র আগমনে আরবের মানুষের মাঝে খাদ্য-পানীয়,বংশ-মর্যাদা ও আবহাওয়ায় পরিবর্তন আসেনি। বরং পাল্টে গিয়েছিল আরব জনগণের আক্বিদা-বিশ্বাস তথা জীবন-দর্শন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সে দর্শনটি তারা পেয়েছিলেন মহাজ্ঞানী মহান আল্লাহতায়ালা থেকে। তাদের কাছে সেটি পৌঁছেছিল পবিত্র কোরআন মারফত। জ্ঞানচর্চার সে পবিত্র কাজটি শুধু স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে সীমিত রাখলে চলে না। স্রেফ স্বল্পকালীন ছাত্রজীবনের গন্ডিতে সীমিত রাখলেও চলে না। মুসলমান আমৃত্যু ছাত্র। জীবনের প্রতিদিন ও প্রতিরাত জুড়ে চলে তার জ্ঞানার্জন। জ্ঞানচর্চার সে কাজকে ব্যাপকতর ও গভীরতর করার স্বার্থে প্রতিটি ঘর ও প্রতিটি জনপদকে তখন পাঠশালায় পরিণত করতে হয়। ইসলামের প্রথম ১৩ বছরে কোন মসজিদ,মাদ্রাসা,কলেজ বা বিশ্ববিদালয় গড়া হয়নি। অথচ শুধু মুসলিম ইতিহাসে নয়,সমগ্র মানব ইতিহাসের সবচেয়ে চরিত্রবান,জ্ঞানী ও শক্ত মেরুদন্ডের মানুষগুলো সৃষ্টি হয়েছে সেই ১৩ বছরে। সেটি সম্ভব হয়েছে মু’মিনের মনে লাগাতর কোরআনের জ্ঞানকে বদ্ধমূল করার মহান আল্লাহতায়ালার নিজস্ব স্ট্রাটেজীর ফলে। কিন্তু রাষ্ট্রে সে অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজটি অসম্ভব হয় দুর্বৃত্তদের হাতে রাষ্ট্র অধিকৃত হলে।

 

ইন্ডাস্ট্রি ঈমানধ্বংসের

সাম্রাজ্যবাদি শাসনের যুগে ব্রিটিশগণ ভারতে যেসব শিক্ষা নীতি ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু করা হয়েছিল তার পিছনেও জঘন্য কু’মতলব ছিল। সেটি ছিল ব্রিটিশ স্বার্থের পাহারাদার ও ইংরেজ রাজকর্মচারিদের জন্য দোভাষী সৃষ্টি।লক্ষ ছিল মুসলমানদের ঈমান ধ্বংস। সে লক্ষ্যেই জোর দেয়া হয় ইংরাজী ভাষা শিক্ষার উপর। সে সময় মুসলমানদের বুদ্ধিবৃত্তিক পুষ্টির ভাষা ছিল ফার্সি। ঈমান পুষ্টি পেত সে ভাষা হতে। ফার্সি ছিল ভারতের রাষ্ট্র ভাষাও। অথচ সেটিকে বাদ দেয়া হয়। বুদ্ধিবৃত্তিক পুষ্টির ভাষাচর্চা নিষিদ্ধ হলে ঈমান যে মারা পড়বে সেটিই কি সুনিশ্চিত নয়? মুসলিম দেশে কাফের ব্রিটিশদের শাসনে মুসলমানদের শিল্প ধ্বংস হয়েছে সেটি সবচেয়ে বড় ক্ষতি নয়। বরং সবচেয়ে বড় ক্ষতিটি হয়েছে বুদ্ধিবৃত্তিক অঙ্গণে। এতে মারা পড়েছে বা অসুস্থ্য হয়েছে মুসলমানদের ঈমান।

ব্যক্তির আত্মায় বা চেতনায় জীবাণু পৌঁছাতে ভাষা পাইপ-লাইনের কাজ করে। ঔপনিবেশিক শাসনামলে ইংরেজী ভাষায় ইসলাম বিষয়ে জ্ঞানলাভের কোন বইপুস্তক ছিল না। বরং ছিল মুসলিম চেতনায় দূষণ সৃষ্টি ও ইসলাম থেকে দূরে সরানোর বিপুল সামগ্রী। ফলে সে সাহিত্যের ফলে মুসলিম মনে বেড়েছে ডি-ইসলামাইজেশন। এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি পরিণত হয়েছে ঈমানধ্বংসের বিশাল ইন্ডাস্ট্রিতে। সে ইন্ডাস্ট্রি আজও একই মিশন নিয়ে মুসলিম দেশগুলির প্রতি অঙ্গণে কাজ করছে। মুসলমানগণ বিপুল হারে খৃষ্টান না হলেও,ইংরেজ-প্রবর্তিত সে শিক্ষানীতির ফলে তারা ইসলাম থেকে প্রচন্ড ভাবে দূরে সরেছে। সে শিক্ষাব্যবস্থায় ডাক্তার,ইঞ্জিনীয়ার, কৃষিবিদ,হিসাববিদ বা নানারূপ পেশাদার রূপে অনেকে বেড়ে উঠলেও সে শিক্ষা থেকে তারা ঈমানে পুষ্টি পায়নি। ঈমানে সে অপুষ্টি ও দূষণের কারণেই কাফেরদের ন্যায় তারাও শরিয়ত, জিহাদ, খেলাফতের বিরোধী। এরূপ ইসলাম বিরোধীদের হাতেই বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশের আইন-আদালত,শিক্ষা-সংস্কৃতি, পুলিশ,সেনাবাহিনী ও প্রশাসন জিম্মি।

দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা ও হাসপাতালগুলো বিফল হলে সমগ্র দেশ অসুস্থ্য মানুষে ভরে উঠে। আর বিচার ব্যবস্থা কাজ না করলে দেশে দুর্বৃত্তদের প্লাবন আসে। তখন দেশ পূর্ণ হয় ভয়ানক অপরাধীদের দিয়ে। বাংলাদেশে তো সেটিই ঘটেছে। তাই ইসলামের অতি গুরুত্বপূর্ণ মিশন হলো শরিয়তের বিধানের উপর আদালতের প্রতিষ্ঠা। আইন-আদালত ও বিচারব্যবস্থার ব্যর্থতার কারণেই সমগ্র দেশ আজ দুর্বৃত্তদের দ্বারা অধিকৃত। চলছে ঘুষখোর ও নানারূপ অপরাধীদের রাজত্ব। বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় ব্যর্থ খাতটি তাই দেশের কৃষি,শিল্প,বাণিজ্য বা চিকিৎসা খাত নয়। বরং সেটি হলো দেশের আইন-আদালত ও বিচারব্যবস্থা। সে ব্যর্থতার কারণেই সুবিচার ও ন্যায়নীতি আজ  কবরে শায়ীত।

 

যুদ্ধ মহান আল্লাহতায়ালার এজেন্ডার বিরুদ্ধে

মানব জাতির সবচেয়ে বড় বিপর্যয়টি খাদ্যাভাবে,বস্ত্রাভাবে,অর্থাভাবে বা চিকিৎসার অভাবে ঘটে না। বরং সেটি ঘটে সুবিচারের অভাবে। অবিচার এবং আল্লাহর আইনের অবাধ্যতা বরং আল্লাহর আযাবকে অনিবার্য করে তোলে। সুবিচারের প্রতিষ্ঠা মহান আল্লাহতায়ালার কাছে এতই গুরুত্বপূর্ণ যে সেটিকে সুনিশ্চিত করতেই মহাজ্ঞানী রাব্বুল আলামীন শরিয়তি বিধান দিয়েছেন,এবং সে সাথে সে বিধানের প্রতিষ্ঠাকে নামায-রোযা,হজ-যাকাতের ন্যায় ফরয তথা বাধ্যতামূলক করেছেন। তিনি খাদ্য,বস্ত্র,রাস্তাঘাট বা শিল্প বাড়াতে এরূপ ওহী নাযিল করেনি। অথচ ওহী পাঠিয়েছেন সুবিচারের পথ দেখাতে। পবিত্র কোরআনে স্পষ্ট ভাবে হুশিয়ার করে দেয়া হয়েছে এ বলে,“যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান অনুযায়ী বিচার করে না তারাই কাফির, তারাই যালিম ও তারাই ফাসিক।” -(সূত্রঃ সুরা মায়েদা আয়াত ৪৪,৪৫,৪৭)।তাই কাফের হওয়ার জন্য পুতুল পুজারি বা নাস্তিক হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। মহান আল্লাহতায়ালার দেয়া শরিয়তি বিধানের প্রতিষ্ঠায় অনাগ্রহ বা বিরোধীতাই সে জন্য যথেষ্ঠ। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে কোন রূপ অস্পষ্টতা রাখা হয়নি।

মানব জাতির বড় প্রয়োজনটি স্রেফ সুযোগ্য কৃষক,শ্রমিক,শিক্ষক,চিকিৎসক,প্রকৌশলী বা বিজ্ঞানী নয়,বরং সবচেয়ে বড় প্রয়োজনটি হলো শরিয়তি বিচার ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা। সে কাজে প্রয়োজন হলো শরিয়তি আইনের উপর বিশেষজ্ঞ বিচারকদের। এবং পবিত্র কর্ম হলো শরিয়ত প্রতিষ্ঠার জিহাদ।পবিত্র কোরআনের পরিভাষায় এটি হলো জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ। মসজিদ-মাদ্রাসার সংখ্যা বাড়িয়ে,হাফিজ বা ক্বারির সংখ্যা বাড়িয়ে কি জিহাদের দায়ভার থেকে মুক্তি মেলে? খাদ্যপণ্য, শিল্পপণ্য বা বৈজ্ঞানিক সামগ্রিক বিদেশ থেকে কেনা যায়। কিন্তু শরিয়তি আদালতের ন্যায়-বিচারকদের বিদেশ থেকে আমদানি করা যায় না। তাদের গড়তে হয় নিজেদের মধ্য থেকে। নইলে সে ভূমিতে সুবিচার প্রতিষ্ঠা পায় না,সভ্য সমাজও নির্মিত হয় না। বাংলাদেশের বড় ব্যর্থতা তো এখানেই। নবীজী (সাঃ) ও সাহাবায়ে কেরামের জীবনে একটি দিনও শরিয়তি বিধান ছাড়া অতিবাহিত হয়নি। এমনকি উমাইয়া,আব্বাসীয়,উসমানিয়া ও মোগল আমলেও নয়।বাংলার সুলতানি আমল বা সিরাজুদ্দৌলার আমলেও নয়। মুসলিম দেশগুলিতে শরিয়ত আইনকে বিলুপ্ত করেছে সাম্রাজ্যবাদি কাফের ব্রিটিশগণ। আর তাদের প্রতিষ্ঠিত সে কুফরি বিচার ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রেখেছে তাদেরই মানসিক গোলাম ও কলাবোরেটরগণ। আজকের মুসলিম দেশগুলিতে ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যবাদি শাসনের এটিই হলো সবচেয়ে ক্ষতিকর লিগ্যাসি যা মুসলমানদেরকে মহান আল্লাহতায়ালার শত্রু রূপে খাড়া করছে। মুসলমানদের ভয়ংকর অপরাধ হলো তারা বাঁচিয়ে রেখেছে কাফেরদের সে ঈমানধ্বংসী লিগ্যাসী। বাংলাদেশের ন্যায় মুসলিম দেশের ইসলামি দলের নেতাকর্মী ও আলেমদের ব্যর্থতাও এ ক্ষেত্রে বিশাল। দেশের আলেম ও পীরমাশায়েখগণ দাফন-কাফন,হায়েজ-নেফাস, ঢিলাকুলুপ ও মেছাওয়াকের মসলা নিয়ে বিস্তর জ্ঞানদান করলেও শরিয়ত প্রতিষ্ঠার ফরজ বিষয়টি নিয়ে কোন উচ্চবাচ্য করেন না। ইসলামি দলের নেতাকর্মীগণ সরকারের পতন,নেতাদের মুক্তি বা নির্বাচনের দাবীতে রাস্তায় বিপুল সংখ্যায় নামলেও শরিয়তের প্রতিষ্ঠা নিয়ে একটি আওয়াজও তোলেন না। আল্লাহর দ্বীনের প্রতিষ্ঠায় এরূপ অবহেলা নিয়ে ইহকাল বা পরকালের কোথাও কি মহান আল্লাহতায়ালার করুণা জুটবে?

 

নিয়ন্ত্রণ ইসলাম চর্চায়

ভারতে ব্রিটিশের প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো মূলতঃ কাজ করেছে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনের পক্ষে একপাল অনুগত সেবক সৃষ্টির ইন্ডাস্ট্রি রূপে। সে শিক্ষানীতির প্রবক্তা লর্ড ম্যাকলে নিজেই তেমন এক উদ্দেশ্যের কথা ব্রিটিশ পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন। সে শিক্ষানীতি ব্রিটিশের দালাল সৃষ্টিতে অপূর্ব সফলতা দেখিয়েছে। এ দালাল  সৃষ্টির কারণেই একমাত্র প্রথম বিশ্বেযুদ্ধেই ব্রিটিশের সাম্রাজ্য রক্ষায় ১০ লাখ ভারতীয় যুদ্ধ করেছে এবং ৭৪ হাজার ১৮৭ জন ভারতীয় প্রাণ দিয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সে সংখ্যা ছিল আরো অধীক। ব্রিটিশ সাম্রাজ্য রক্ষায় ১৯৩৯ সালে প্রায় ২৫ লাখ ভারতীয় ব্রিটিশ বাহিনীতে সৈনিক রূপে নাম রিজিস্ট্রিভূক্ত করে। তারা যুদ্ধ করেছে এশিয়া ও আফ্রিকার নানা রণাঙ্গণে। মানব জাতির সমগ্র ইতিহাসে এটিই হলো একটি বিদেশী শক্তির পক্ষে কোন একটি দেশ থেকে সবচেয়ে বৃহৎ দালাল বাহিনী। অথচ সে ভারতের বুকেই ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ লড়তে সুভাষ বোস ২০-৩০ হাজার সৈন্য খুঁজে পেতেই্ প্রচন্ড হিমশীম খাচ্ছিলেন। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ সামরিক ও রাজনৈতিক অধীনতা থেকে মুক্তি মেলেছে এবং উপমহাদেশের ভূগোলও পাল্টে গেছে। কিন্তু ইংরেজদের প্রবর্তিত সেক্যেুলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে যারা ডিগ্রিপ্রাপ্তদের মনের ভুবন থেকে গোলামী এখনো দূর হয়নি। সে অভিন্ন ধারা আজও  অব্যাহত রয়েছে আজকের বাংলাদেশে।ফলে ব্রিটিশ কাফেরদের প্রবর্তিত কুফরি আইন ও বিচারব্যবস্থা এখনও বেঁচে আছে ১৫ কোটি মুসলিম অধ্যুষিত একটি দেশে। সাহাবায়ে কেরামের যুগে কি এটি ভাবা যেত? অথচ এরপরও আমরা নিজেদের তে ইসলামের অনুসারি মনে করি!

চোর-ডাকাতদের মহল্লায় কি ন্যায়নীতি প্রচার পায়? কদর পায় কি ন্যায়পরায়নতা? বিচার বসে কি ডাকাত দমনে? সেখানে তো প্রশংসা পায় চুরি-ডাকাতি,হত্যা ও হত্যায় নৃশংসতা। একই রূপ কদর্যতা বাড়ে দুর্বৃত্ত-কবলিত দেশে। তখন অপরাধ বাড়াতে ভূলিয়ে দেয়া হয় ধর্মের বাণী এবং ধর্মকর্মকে। রাজনীতিতে তখন গুরত্ব পায় এক খুনের বদলে ১০ খুনের রাজনীতি। বাংলাদেশে তো সেটিই হয়েছে। তাছাড়া দুর্নীতিতে যে দেশ ৫ বার বিশ্বে প্রথম হয় সে দেশে কি ভিন্নতর কিছু আশা করা যায়? ন্যায়বিচার ও ইসলামের শরিয়ত ভিত্তিক বিচার ব্যবস্থা কদর পাবে বা প্রতিষ্ঠা পাবে সেটিও কি আশা করা যায়? বাংলাদেশে মার্কসবাদ,লেলিনবাদ বা মাওবাদের প্রচার নিষিদ্ধ নয়। নিষিদ্ধ নয় বাইবেল প্রচার। নিষিদ্ধ নয় রামায়ান,বেদ বা ত্রিপঠক পাঠ। নিষিদ্ধ নয় বেশ্যাবৃত্তি, জুয়া, ঘুষ ও মদ্যপানের ন্যায় হারাম কর্মও। বরং পাপাচারের নিরাপত্তা বাড়াতে দেশের পতিতা পল্লিগুলিতে দিবারাত্র পুলিশ মোতায়েন করা হয়। অথচ মসজিদে মসজিদে সরকারের নজরদারি বেড়েছে নবীজী (সাঃ)র প্রচারিত সনাতন ইসলামের প্রচার রুখতে।

নবীজী (সাঃ)র ইসলামে জিহাদ ছিল,শরিয়তি ছিল,খেলাফত ছিল,শুরা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশে ইসলামের এ সনাতন রীতিগুলি চিহ্নিত হচ্ছে সন্ত্রাস রূপে। শরিয়তের দাবী নিয়ে রাস্তায় নামলে বা ঘরে জিহাদ বিষয়ক বই রাখলে জেলে তোলা হয়। আদালতে ঈমানদারদের স্থান নাই। সেখানে বরং বেছে বেছে বসানো হয় দলীয় ক্যাডারদের।মহান আল্লাহর শরিয়তি বিধানের পরাজয় দেখতেই এসব বিচারকদের আনন্দ। রাজনৈতিক শত্রু নির্মূলে দলীয় ক্যাডারগণ যেমন রাজপথে লাঠি ধরে,একই লক্ষ্যে তারা আদালতের উপরও অধিকার জমিয়েছে। বিচারকের আসনে বসে নিজ দলের পক্ষে ও ইসলামের বিরুদ্ধে এরাই কলম ধরছে। এরূপ পক্ষপাত-দুষ্ট ও দেশবাসীর স্বাধীনতার প্রতি অঙ্গিকারশূণ্য বিচারকদের দিয়েই ঔপনিবেশিক শাসকেরা অধিকৃত দেশগুলিতে মুক্তি আন্দোলনের অসংখ্য নেতাকর্মীকে ফাঁসিত ঝুলিয়ে হত্যা করেছে।আর বাংলাদেশ ও মিশরের ন্যায় দেশগুলিতে এখন তারা ব্যবহৃত হচ্ছে গণতন্ত্র হত্যার কাজে। এবং আদালতে চলছে সরকার বিরোধীদের ফাঁসিতে ঝুলানোর তুমুল তান্ডব।

 

যে অপরাধ জনগণের

প্রতিটি ঈমানদারকে শুধু পানাহারে বাঁচলে চলে না,ঈমানী দায়ভার নিয়ে বাঁচতে হয়। সে দায়ভার পালনে প্রয়োজনে যুদ্ধেও নামতে হয়। সে দায়ভার পালনে নবীজী (সাঃ)র শতকরা ৭০ ভাগের বেশী সাহাবী শহীদ হয়ে গেছেন। দায়িত্বপালনে গাদ্দারির কারণে ইহুদী জাতির লাগাতর আযাব ও অপমান নেমে এসেছে।তাদেরকেও স্বৈরাচারি ও সন্ত্রাসী শাসকের বিরুদ্ধে যুদ্ধের হুকুম দেয়া হয়েছিল। কিন্তু অবাধ্য ইহুদীগণ সে হুকুমের জবাবে হযরত মূসা (আঃ)কে বলেছিল, “যাও, তুমি ও তামার আল্লাহ গিয়ে যুদ্ধ করো। আমরা অপেক্ষায় থাকলাম।” জনপদে বাঘ-ভালুক নামলে সেটি তাড়ানোর দায়িত্ব ফেরেশতাদের নয়। সে দায়ভারটি মহল্লাবাসীদের নিতে হয়। তেমনি রাষ্ট্র জালেম শক্তির হাতে অধিকৃত হলে তাদের নির্মূলের দায়ভারটিও জনগণের। অন্যায় কে মেনে নেয়ার মধ্যে কোন সাধুতা বা ভদ্রতা নেই। বরং সেটি হলো কাপুরুষতা ও অন্যায়ের কাছে আত্মসমর্পণ। ইসলামে এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এ ধরণের অপরাধ পৃথিবী পৃষ্ঠে মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে কঠিন আযাব নামিয়ে নামে। মহান আল্লাহতায়ালার হুকুমের বিরুদ্ধে এটি এক প্রচন্ড বিদ্রোহও। মহিমাময় মহান আল্লাহতায়ালা শুধু নামায-রোযা,হজ-যাকাত পালনের নির্দেশই দেননি। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন “নেহী আনিল মুনকার” তথা রাষ্ট্র থেকে দুর্বৃত্তদের নির্মূলেও। সামর্থবান মানুষের মহল্লায় যেমন নেকড়া বাঘ বাঁচে না,মুসলিম সমাজে তেমনি আবু লাহাব ও আবু জেহেলদের ন্যায় ইসলামের শত্রুগণও বাঁচে না।তাদের বিরুদ্ধে ঈমানদারদের লাগাতর জিহাদ শুরু হয়। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ এক্ষেত্রে অনেক নীচে নেমেছে। আজ থেকে ৬০ বছর আগেও বাংলার সমাজ ও রাজনীতি বর্বর সন্ত্রাসীদের হাতে এতটা অধিকৃত হয়নি। মানুষ গুম ও খুনে পূর্বের কোন সরকারই এতটা সাহস পায়নি।কিন্তু এখন পায়।কারণ,কোটি কোটি মানুষ এমন অপরাধী খুনিদের শুধু ভোটই দেয় না,তাদের পক্ষে অনেকে লাঠিও ধরে।অনেকে কলমও ধরে।

শরীরে ক্যান্সারের আলামতগুলি স্বচোখে দেখার পরও সেটির চিকিৎসা না করাটি অপরাধ। রোগীকে সে অপরাধের শাস্তি পোহাতে হয় অকাল মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। একই রূপ অপরাধ বাংলাদেশীদেরও। দেশে রাজনীতি,প্রশাসন ও আইন-আদালতের নামে প্রাণনাশী ক্যান্সার বেড়ে উঠছে বহুকাল যাবত। সেটি এখন ফুলে ফেঁপে উঠেছে এবং দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে বিশ্বব্যাপী। সে দুর্গন্ধ টের পাচ্ছে হাজার হাজার মাইল দূরের বিশ্ববাসীও। ফলে বাংলাদেশের প্রশাসন ও আইন-আদালতের অপরাধ নি্য়ে বিশ্বের নানা প্রান্তর থেকে প্রবল প্রতিবাদ উঠেছে। বিচারকগণ স্বৈরাচারি সরকারের এজেন্ডা পূরণে রাজনেতিক বিরোধীদের হত্যায় নেমেছে -সে গুরুতর অভিযোগটিও উঠেছে। হ্ত্যার সে সরকারি অভিলাষটি প্রকাশ পেয়েছে একজন সাবেক বিচারপতির স্কাইপী সংলাপ থেকে। কিন্তু যে দেশবাসী সে রোগে আক্রান্ত তাদের মাঝে এ নিয়ে আন্দোলন কই? এটি কি কম বিস্ময়ের? অথচ এরূপ সন্ত্রাসী দুর্বৃত্তদের হাতে কোন কোন সভ্য দেশ অধিকৃত হলে সে অধিকৃতির বিরুদ্ধে তৎক্ষনাৎ যুদ্ধ শুরু হতো। কিন্তু বাংলাদেশে বেড়েছে নীরব আত্মসমর্পণ। মুসলমান তো প্রতিমুহুর্তে বাঁচে মহান আল্লাহর কাছে পূর্ণ আত্মসমর্পণ নিয়ে। প্রশ্ন হলো,মহান আল্লাহতায়ালার কাছে আত্মসমর্পণের পাশাপাশি এরূপ দুর্বৃত্ত স্বৈরাচারের কাছে আত্মসমর্পণও কি একত্রে চলতে পারে? তাতে কি ঈমান বাঁচে? পরকালে কি তাতে জান্নাত জুটবে? ১৫/১২/১৪; নতুন সংস্করণ ১৬/৩/২০১৯

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *